ঢাকা ০৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫

উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ গড়ার ইশতেহার আওয়ামী লীগের

  • আপডেট সময় : ০২:৪০:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৮২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে’ উত্তরণের স্বপ্ন দেখানো আওয়ামী লীগ উন্নত সমৃদ্ধ জাতির কাতারে পৌঁছানোর যাত্রা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে।
সেজন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা, দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখা, পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় এনে তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার অঙ্গীকার করেছে দলটি। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের হাতে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতা দেওয়া হলে এবং বিগত বছরগুলোতে নেওয়া দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে।
সেজন্য আবারও নৌকায় ভোট চেয়ে তিনি বলেছেন, “আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দেব।”
২০০৮ সালের ‘দিনবদলের সনদ’, ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, ২০১৮ সালের ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এর পর আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে-‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত ১৫ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজানো হয়েছে ৯৮ পৃষ্ঠার এই ইশতেহার।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা, যিনি গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য আমরা ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’-এই চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিই।
“স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছি। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।”
এবারের ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মত ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বিশেষ অগ্রাধিকার: ১. দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো। ৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৭. নি¤œ আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা। ৯.আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। ১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
সুশাসনের অঙ্গীকার: গত ১৫ বছরে অনেক উন্নয়নের পরও যেসব ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে, তার মধ্যে ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং খেলাপি ঋণের বিষয়টি অন্যতম। এবারে ইশতেহারে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হওয়ার অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা বলেছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং এক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে বিধি নির্ধারিত সঞ্চিতি রাখে তা নিশ্চিত করা হবে। আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনে উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, “রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।”
শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল ও দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করার প্রতিশ্রুতিও এসেছে ইশতেহারে। নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেছেন, “মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে। “আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।”
আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পক্ষে আওয়ামী লীগ ‘সবসময়ই সোচ্চার’ দাবি করে শেখ হাসিনা বলেছেন, “সামাজিক বৈষম্য নিরসন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাঙ্খিত শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। যেখানে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে।
“বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।” নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, “মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে। “আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।”
আবার ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ যা করবে: ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বেকার যুবকদের সর্বশেষ হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ যুবদের অনুপাত আগামী ৫ বছরে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। আগামী ৫ বছরে ২ লাখ জন যুবকদের মাঝে ৭৫০ কোটি টাকা যুব ঋণ বিতরণ করা এবং ২ লাখ ৫০ হাজার জন যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আমরা তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখা হবে। শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহী করে তোলা হবে। বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে অনিশ্চয়তা লাঘব করবে। ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত থাকবে। কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ অব্যাহত থাকবে। ২০২৮ সালের মধ্যে গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা দেড় গুণ বাড়ানো হবে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে ভাড়াভিত্তিক ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হবে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করা হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। সমগ্র অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়া টাস্কফোর্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হবে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন অধিকতর স্পষ্ট করা হবে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বহির্বিশ্বে যে ‘অপপ্রচার’, সে বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সব ধরনের হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ চলমান থাকবে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াবে এবং তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী শিক্ষকের অনুপাত ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হবে। দরিদ্র ও দুর্বলতর জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আরও প্রসারিত করা হবে। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে একটি ইউনিক হেলথ আইডি প্রদান এবং হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। সকলের জন্য সমান সুযোগ রেখে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হবে। স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স চালু, হেলদি এজিং স্কিমের আওতায় প্রবীণদের অসংক্রামক রোগব্যাধি নিরাময় এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণে দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে জেরিয়াট্রিক সেবা প্রচলনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অটিস্টিক শিশুদের জন্য গৃহীত বিশ্বে সমাদৃত কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে। অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রয়োগে বাধা দূর করা হবে। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণ করা হবে। ডোপ টেস্ট নীতিমালা বা বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ ১২টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সাহায্য ও বাসস্থান প্রদান কর্মসূচি সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অসঙ্গতি দূর এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান অব্যাহত থাকবে।
আরো একবার সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে অনুষ্ঠানস্থলে আসার পর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর দেওয়া বক্তব্য ও ইশতেহার প্রণয়নের নানা দিক তুলে ধরেন নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য দেন এরপর। একটি অডিও-ভিডিও উপস্থাপনার পর ইশতেহার ঘোষণা করতে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে একটি ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করেছে তার দল। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা দ্বাদশ নির্বাচনি ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে। “আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে সবসময়ই যে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি, এমন দাবি করব না। তবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যা বলি তা বাস্তবায়ন করি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন তার প্রমাণ।” লিখিত বক্তৃতায় শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বলেন, “বিগত ১৫ বছরের সরকার পরিচালনার পথ-পরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকা- পরিচালনা করব।”
মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে টাকার মানের অবনতি এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি। এ সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয়, এ সমস্যা ধনী-গরিব সকল দেশের। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা সম্প্রসারণসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নি¤œবিত্ত ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবের। আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা এই অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারব, ইনশাআল্লাহ।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে ব্রত নিয়ে তিনি রাজনীতি করে আসছেন, সেই পথ থেকে তিনি সরে যাবেন না। “আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই,” বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। দশম সংসদ নির্বাচনের মত এবারও ভোট বর্জন করে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। শেখ হাসিনার কথায় সে প্রসঙ্গও আসে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস করে ‘নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ’ কোনদিনই পূরণ হবে না।
“জনগণের ম্যান্ডেট পাবে না-এটা বুঝতে পেরে আগে থেকে এবার তারা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে যানবাহন পোড়ানো, মানুষ হত্যা, রেল-লাইন উপড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। মা ও শিশুর অগ্নিদগ্ধ লাশ সকলের বিবেককে প্রচ-ভাবে নাড়া দিয়েছে। এই ধরনের হীন কাজ আর সহ্য করা যায় না। জনগণের সাড়া না পেয়ে ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে এসব নাশকতা চালিয়ে জান-মালের ক্ষতি করছে। সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ কোনদিনই পূরণ হতে দেবে না এ দেশের জনগণ।”
দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে।” তার দাবি, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে’ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে। জাতির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আসুন, আরও একবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।”
খেলাপি ঋণ আদায় ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতি: দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে আরও কঠোর হয়ে সুশাসন নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশ থেকে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্তের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এই ইশতেহার তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতির নৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হল দুর্নীতি। কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
“আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা হবে।” দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত ১৫ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজানো হয়েছে তাদের ৯৮ পৃষ্ঠার ইশতেহারে।
এবার দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মত ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দুর্নীতি প্রতিরোধে ক্ষমতাসীন সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের টোল ফ্রি নম্বর ১০৬-এর মাধ্যমে জনগণ যেকোনো স্থান থেকে বিনা খরচে জানতে পারছে। আমাদের অঙ্গীকার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি মোকাবিলায় কার্যকর পন্থা ও উপায় নির্বাচনপূর্বক তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
“দুর্নীতি দমন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধের নিমিত্তে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন, নাগরিক সনদ রচনা, তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন এবং অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।”
অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য ও দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ চলমান থাকবে। প্রশাসনে দুর্নীতি নিরোধের জন্য ভূমি প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, আদালত, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ করা হবে। “শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল ও দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করা হবে।”
গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অবকাঠামো ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন প্রশংসা পেলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে খেলাপি হওয়া ঋণের কারণে সমালোচনাও পেতে হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির হিসাবে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ১৯টি ব্যাংকে ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ৯২ হাজার কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো নিয়ে ১৫ বছরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই হিসাব দিয়েছে সংস্থাটি। সিপিডি বলছে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ আদায়ে আরও কঠোর হওয়ার অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং এক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে বিধি নির্ধারিত সঞ্চিতি রাখে তা নিশ্চিত করা হবে। মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নীতি সুদ হার ব্যবহারকে ‘প্রধান উপায়-উপকরণ’ হিসাবে প্রয়োগ করা হবে।”
টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে। আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।
“আইনের শাসন ও মানবাধিকারের সপক্ষে আওয়ামী লীগ ‘সবসময়ই সোচ্চার’। সামাজিক বৈষম্য নিরসন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাঙ্ক্ষিত শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। যেখানে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।” জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর, উন্নত, মানবিক ও জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে কাজ করেছে।
“ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্মার্ট ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।”
দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাস: দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাসে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনব।” ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ এর আওতায় গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “গ্রামের যুবসমাজের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমাতে গ্রামেই আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।” কৃষি ক্ষেত্রে ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত থাকবে। বাণিজ্যিক কৃষি, জৈবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো-টেকনোলজিসহ গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে। “কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ অব্যাহত থাকবে।” এবার টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের জন্য ভোটের লড়াইয়ে নামার অনেক আগেই নির্বাচনি স্লোগান ঠিক করে ফেলে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা এখন দেশবাসীকে দেখাচ্ছেন ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ইশতেহার প্রণয়ন উপ কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুস রাজ্জাক ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ গড়ার ইশতেহার আওয়ামী লীগের

আপডেট সময় : ০২:৪০:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে’ উত্তরণের স্বপ্ন দেখানো আওয়ামী লীগ উন্নত সমৃদ্ধ জাতির কাতারে পৌঁছানোর যাত্রা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে।
সেজন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা, দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখা, পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় এনে তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার অঙ্গীকার করেছে দলটি। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের হাতে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতা দেওয়া হলে এবং বিগত বছরগুলোতে নেওয়া দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে।
সেজন্য আবারও নৌকায় ভোট চেয়ে তিনি বলেছেন, “আপনারা আমাদের ভোট দিন, আমরা আপনাদের উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধি দেব।”
২০০৮ সালের ‘দিনবদলের সনদ’, ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’, ২০১৮ সালের ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ এর পর আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে-‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত ১৫ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজানো হয়েছে ৯৮ পৃষ্ঠার এই ইশতেহার।
গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা, যিনি গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য আমরা ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’-এই চারটি স্তম্ভের সমন্বয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিই।
“স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছি। আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।”
এবারের ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মত ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বিশেষ অগ্রাধিকার: ১. দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। ৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো। ৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৭. নি¤œ আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা। ৯.আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। ১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
সুশাসনের অঙ্গীকার: গত ১৫ বছরে অনেক উন্নয়নের পরও যেসব ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে সমালোচনায় পড়তে হয়েছে, তার মধ্যে ব্যাংক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং খেলাপি ঋণের বিষয়টি অন্যতম। এবারে ইশতেহারে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হওয়ার অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা বলেছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং এক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে বিধি নির্ধারিত সঞ্চিতি রাখে তা নিশ্চিত করা হবে। আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনে উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, “রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।”
শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল ও দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করার প্রতিশ্রুতিও এসেছে ইশতেহারে। নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেছেন, “মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে। “আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।”
আইনের শাসন ও মানবাধিকারের পক্ষে আওয়ামী লীগ ‘সবসময়ই সোচ্চার’ দাবি করে শেখ হাসিনা বলেছেন, “সামাজিক বৈষম্য নিরসন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাঙ্খিত শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। যেখানে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে।
“বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।” নির্বাচিত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করে শেখ হাসিনা বলেন, “মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে। “আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।”
আবার ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ যা করবে: ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বেকার যুবকদের সর্বশেষ হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ যুবদের অনুপাত আগামী ৫ বছরে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। আগামী ৫ বছরে ২ লাখ জন যুবকদের মাঝে ৭৫০ কোটি টাকা যুব ঋণ বিতরণ করা এবং ২ লাখ ৫০ হাজার জন যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আমরা তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখা হবে। শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহী করে তোলা হবে। বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে অনিশ্চয়তা লাঘব করবে। ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত থাকবে। কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ অব্যাহত থাকবে। ২০২৮ সালের মধ্যে গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা দেড় গুণ বাড়ানো হবে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে ভাড়াভিত্তিক ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হবে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করা হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। সমগ্র অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়া টাস্কফোর্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হবে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন অধিকতর স্পষ্ট করা হবে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বহির্বিশ্বে যে ‘অপপ্রচার’, সে বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সব ধরনের হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ চলমান থাকবে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াবে এবং তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী শিক্ষকের অনুপাত ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হবে। দরিদ্র ও দুর্বলতর জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আরও প্রসারিত করা হবে। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে একটি ইউনিক হেলথ আইডি প্রদান এবং হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। সকলের জন্য সমান সুযোগ রেখে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হবে। স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স চালু, হেলদি এজিং স্কিমের আওতায় প্রবীণদের অসংক্রামক রোগব্যাধি নিরাময় এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করা হবে। প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণে দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে জেরিয়াট্রিক সেবা প্রচলনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। অটিস্টিক শিশুদের জন্য গৃহীত বিশ্বে সমাদৃত কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে। অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রয়োগে বাধা দূর করা হবে। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণ করা হবে। ডোপ টেস্ট নীতিমালা বা বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ ১২টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সাহায্য ও বাসস্থান প্রদান কর্মসূচি সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অসঙ্গতি দূর এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান অব্যাহত থাকবে।
আরো একবার সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে অনুষ্ঠানস্থলে আসার পর জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর দেওয়া বক্তব্য ও ইশতেহার প্রণয়নের নানা দিক তুলে ধরেন নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও দলের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য দেন এরপর। একটি অডিও-ভিডিও উপস্থাপনার পর ইশতেহার ঘোষণা করতে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে একটি ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি করেছে তার দল। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা দ্বাদশ নির্বাচনি ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে। “আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে সবসময়ই যে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি, এমন দাবি করব না। তবে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কথামালার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। আমরা যা বলি তা বাস্তবায়ন করি। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন তার প্রমাণ।” লিখিত বক্তৃতায় শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে বলেন, “বিগত ১৫ বছরের সরকার পরিচালনার পথ-পরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি তার দায়ভার আমাদের। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকা- পরিচালনা করব।”
মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে টাকার মানের অবনতি এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে পারিনি। এ সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয়, এ সমস্যা ধনী-গরিব সকল দেশের। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা সম্প্রসারণসহ নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নি¤œবিত্ত ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্দশা লাঘবের। আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা এই অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারব, ইনশাআল্লাহ।”
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে ব্রত নিয়ে তিনি রাজনীতি করে আসছেন, সেই পথ থেকে তিনি সরে যাবেন না। “আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই,” বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। দশম সংসদ নির্বাচনের মত এবারও ভোট বর্জন করে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। শেখ হাসিনার কথায় সে প্রসঙ্গও আসে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস করে ‘নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ’ কোনদিনই পূরণ হবে না।
“জনগণের ম্যান্ডেট পাবে না-এটা বুঝতে পেরে আগে থেকে এবার তারা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হয়েছে। হরতাল-অবরোধের নামে যানবাহন পোড়ানো, মানুষ হত্যা, রেল-লাইন উপড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। মা ও শিশুর অগ্নিদগ্ধ লাশ সকলের বিবেককে প্রচ-ভাবে নাড়া দিয়েছে। এই ধরনের হীন কাজ আর সহ্য করা যায় না। জনগণের সাড়া না পেয়ে ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে এসব নাশকতা চালিয়ে জান-মালের ক্ষতি করছে। সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ কোনদিনই পূরণ হতে দেবে না এ দেশের জনগণ।”
দেশবাসীর উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে।” তার দাবি, ‘একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে’ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে। জাতির উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আসুন, আরও একবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।”
খেলাপি ঋণ আদায় ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতি: দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে আরও কঠোর হয়ে সুশাসন নিশ্চিতের ওপর জোর দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দেশ থেকে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং অবৈধ অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্তের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এই ইশতেহার তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতির নৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হল দুর্নীতি। কেবল আইন প্রয়োগ ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
“আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা হবে।” দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত ১৫ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজানো হয়েছে তাদের ৯৮ পৃষ্ঠার ইশতেহারে।
এবার দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মত ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দুর্নীতি প্রতিরোধে ক্ষমতাসীন সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনের টোল ফ্রি নম্বর ১০৬-এর মাধ্যমে জনগণ যেকোনো স্থান থেকে বিনা খরচে জানতে পারছে। আমাদের অঙ্গীকার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি মোকাবিলায় কার্যকর পন্থা ও উপায় নির্বাচনপূর্বক তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
“দুর্নীতি দমন কমিশনের চাহিদা মোতাবেক বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধের নিমিত্তে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন, নাগরিক সনদ রচনা, তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন এবং অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।”
অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য ও দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ চলমান থাকবে। প্রশাসনে দুর্নীতি নিরোধের জন্য ভূমি প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, আদালত, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ করা হবে। “শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল ও দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করা হবে।”
গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অবকাঠামো ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন প্রশংসা পেলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে খেলাপি হওয়া ঋণের কারণে সমালোচনাও পেতে হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির হিসাবে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি ১৯টি ব্যাংকে ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে ৯২ হাজার কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো নিয়ে ১৫ বছরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই হিসাব দিয়েছে সংস্থাটি। সিপিডি বলছে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ আদায়ে আরও কঠোর হওয়ার অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং এক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে বিধি নির্ধারিত সঞ্চিতি রাখে তা নিশ্চিত করা হবে। মুদ্রা সরবরাহ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নীতি সুদ হার ব্যবহারকে ‘প্রধান উপায়-উপকরণ’ হিসাবে প্রয়োগ করা হবে।”
টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে আমরা সদা তৎপর। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি কার্যকর সংসদই পারে কেবল জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে। আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা আরও সুদৃঢ় করব।
“আইনের শাসন ও মানবাধিকারের সপক্ষে আওয়ামী লীগ ‘সবসময়ই সোচ্চার’। সামাজিক বৈষম্য নিরসন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাঙ্ক্ষিত শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য। যেখানে আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।” জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর, উন্নত, মানবিক ও জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে কাজ করেছে।
“ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্মার্ট ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলা হবে।”
দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাস: দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাসে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনব।” ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ এর আওতায় গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “গ্রামের যুবসমাজের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমাতে গ্রামেই আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।” কৃষি ক্ষেত্রে ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত থাকবে। বাণিজ্যিক কৃষি, জৈবপ্রযুক্তি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো-টেকনোলজিসহ গ্রামীণ অকৃষিজ খাতের উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন মোকাবিলায় উপযুক্ত কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে। “কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ অব্যাহত থাকবে।” এবার টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের জন্য ভোটের লড়াইয়ে নামার অনেক আগেই নির্বাচনি স্লোগান ঠিক করে ফেলে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা এখন দেশবাসীকে দেখাচ্ছেন ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও ইশতেহার প্রণয়ন উপ কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুস রাজ্জাক ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।