ঢাকা ০১:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

ফিরে দেখা ২০২৩ পুলিশেও ছিল বড় অপরাধী

  • আপডেট সময় : ০২:৪৩:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৪ সালকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে সবাই। তারপরও ২০২৩ সালে দেশে কি কি ঘটেছিল, তা হয়ত একবার ভাববে সবাই। যারা পত্রিকা পড়েন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনলাইনেও সে-সমস্ত ঘটনাগুলোকে একবার পড়ে নেবে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে অন্যায়, অপরাধ, হামলা-মামলা, গ্যাং কালচারসহ হত্যার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু দুষ্টু সদস্যও অপরাধে জড়িয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের অভিযোগ ওঠে। আর্থিক দুর্নীতিও করেছেন কেউ কেউ।
‘শ্রেষ্ঠ’ মাদক উদ্ধারকারী পুলিশ ‘অর্থ খেকো’!
এ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরপরই পুলিশের ভূমিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দেশজুড়ে আলোচনাও হয়। ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জহির উদ্দিন আহমেদ নামে এক উপপরিদর্শক (এসআই)। তিনি কাজ করতেন পল্লবী থানায়।
২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত পল্লবী থানায় দায়িত্ব পালন করেন এসআই জহির। তার ঝুলিতে ‘শ্রেষ্ঠ মাদক উদ্ধারকারী’ থেকে ‘শ্রেষ্ঠ বিস্ফোরক উদ্ধারকারী’, ‘শ্রেষ্ঠ চোরাই গাড়ি উদ্ধারকারী’ পুলিশ সদস্যের পুরষ্কার রয়েছে। পল্লবী থানায় গিয়ে তার টেবিলে অসংখ্য ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেটও দেখা গিয়েছিল।
মুদ্রার যেমন দুটি পিঠ, এসআই জহির উদ্দিনেরও ছিল দুটি চেহারা। সাধু পুলিশের অপর পিঠে জহির ছিলেন একজন ‘অর্থ খেকো’। শ্রেষ্ঠত্বের আড়ালে তার অপরাধ কর্মকা- অনেক। যা সামনে আসে সোমবার (২৪ জুলাই) রাতে পল্লবীর ১১ নম্বর আদর্শ নগরে পুলিশের অভিযানে বৈশাখী নামে এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনার পর। এসআই জহিরসহ ৩ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তিন লাখ টাকা দাবির অভিযোগ তুলেছিল নিহতের পরিবার। ভুক্তভোগীদের দাবি, টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বৈশাখীর সামনে তার মা লাভলীকে নির্যাতন করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর তিনতলার একটি ঘরে বৈশাখীর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। ঘরটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল।
এ ঘটনায় পুলিশের একটি বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে এসআই জহির উদ্দিনসহ তার টিমের ৩ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে একটি গোপন প্রতিবেদন দিয়েছিল পুলিশ। যাতে বলা হয়, ঘটনার দিন জহির ও তার টিমের লোকজন সোর্স (পুলিশের ফর্মা) পাঠিয়ে লাভলীর কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে না চাইলে পুলিশ তাকে থানায় নিতে চায়। এ সময় লাভলীর মেয়ে বৈশাখী তার মাকে ছেড়ে না দিলে আত্মহত্যার হুমকি দেয়। এসআই জহির ও তার টিমের সদস্যরা মাদক কারবারিদের আটক ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদকের আস্তানায় হানা দিয়ে টাকা আদায় করেন। প্রত্যেক আস্তানা থেকে তারা সপ্তাহে ৫-৬ হাজার টাকা নেন। একই থানায় দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে স্থানীয় মাদক কারবারিদের সঙ্গে জহিরের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। পুলিশের অপর দুই সদস্য সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফেরদৌস, কনস্টেবল মো. মেসবাহ উদ্দিন এসব ঘটনায় তার সঙ্গী ছিলেন।
এসব ব্যাপারে কথা হলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া ‘দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর এসআই জহিরকে কাফরুল থানায় বদলি করা হয়। সেখান থেকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয় তাকে।
সোর্স বা ফর্মা কান্ড
পুলিশের আশকারা পেত তাদের সোর্স বা ফর্মারা। এ ঘটনাও পল্লবী থানার। লাবলু নামে এক ফর্ম থানায় বসে টিকটক ভিডিও বানিয়ে প্রকাশ করলে বিষয়টি গণমাধ্যমের দৃষ্টিগোচর হয়। পুলিশের এসব ফর্মা মদ, গাঁজা, ইয়াবা বেচা-কেনা- সেবনে সিদ্ধহস্ত। মাথার ওপর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) হাত থাকায় তারা ছিল ডর-ভয়হীন।
পল্লবী থানার এসআই তারেকুর রহমান শুভ, এসআই তাপস, এসআই উজ্জ্বল, এসআই মাহমুদুল হাসান, এসআই জহির ও ফেরদৌস, এসআই আল আমিন, এসআই কামরুল ও আজাদের বিরুদ্ধে সোর্স বা ফর্মাদের ‘লাই’ দেওয়ার অভিযোগ আছে। তাদের সব ফর্মাই বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী। এসব অপরাধীদের কাছ থেকে পুলিশের এসব সদস্য সব সময়ই কিছু না কিছু পেতে থাকেতন। অপরাধীকে প্রশ্রয় দেওয়ায় পল্লবীর থানার এ পুলিশ সদস্যরাও অপরাধী।
জানা গেছে, পল্লবীতে আরজু, হারুন ওরফে ইয়াবা হারুন, ওয়াহিদ, সুমন, মামুন, টিটু, মোশারফ, সায়মন, মনির, আলামিন, চুন্নু, জন্সু, কালা স্বপনসহ অন্তত ১০০ সোর্স আছে এই উপপরিদর্শকদের। তারা সবাই বিভিন্ন অপরাধে দোষী।
দুই এসআই’র ছিনতাইকা-
রাজধানীর শাহ আলী থানায় কর্মরত ছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) তুহিন কাজী ও মশিউর রহমান তাপস। সাধারণের বন্ধু বলে পুলিশ বিবেচিত হলেও এ দুজন ছিলেন উল্টো। তারা ছিনতাই করতেন। তুহিন-তাপস ছিনতাই করতেন ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে। গত ১৯ ডিসেম্বর তাদের গ্রেপ্তার করেছে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ। মো. শাহাদাৎ সরদার নামে এক ভুক্তভোগী মামলার ভিত্তিতে পুলিশের এ দুই সদস্য গ্রেপ্তার হন। শাহাদাৎ তার মামলার এজাহারে জানান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এসআই তুহিন-তাপসের শিকার হন তিনি। তার কাছ থেকে একই দিনে কয়েকধাপে ৯ লাখ ১৯ হাজার ২৯ টাকা ছিনতাই করেছেন তারা। ব্যাপক মারধরও করেছেন। নিয়ে গেছেন মোবাইল ফোনও।

এসআই তুহিন-তাপস ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়েছিলেন। তাদের আদালতে নেওয়ার পর রিমান্ড আবেদন করা হয়। সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হলে আদালত তিনদিনের সময় দেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এ ব্যাপারে বলেন, আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত আমাদের প্রায় ২ লাখ দশ হাজার জনের পুলিশ বাহিনী। ২-৪ জন দুষ্টু লোকজন যে নেই কখনো অস্বীকার করি না। আমাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার মানসিকতার লোক থাকতে পারে। তারা যখন অপরাধ করে সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা ডিটেক্ট করতে পারি। মানুষ যখন অভিযোগ করে, সেটা যখন প্রমাণিত হয় তখন আমরা আমাদের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হই না। আমাদের সৌন্দর্য হচ্ছে, আমাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিচলিত হয় না।
বাহিনীর সদস্য হওয়ার পরেও যদি কেউ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে, অথবা ফৌজদারি কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত হয়- তখন সে পুলিশ না সাধারণ মানুষ এটি বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নাই। আমরা তখন তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করি। যদি আমাদের বাহিনী সদস্যও হয় অবশ্যই সে একজন অপরাধী। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও ডিপার্টমেন্টাল সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফৌজদারি ব্যবস্থায় মামলা হবে, আসামি গ্রেপ্তার হবে ও বিচারের জন্য সোপর্দ হবে। সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি এবং সেই ব্যবস্থা চলমান থাকবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ফিরে দেখা ২০২৩ পুলিশেও ছিল বড় অপরাধী

আপডেট সময় : ০২:৪৩:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২৪ সালকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষার প্রহর গুনছে সবাই। তারপরও ২০২৩ সালে দেশে কি কি ঘটেছিল, তা হয়ত একবার ভাববে সবাই। যারা পত্রিকা পড়েন, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনলাইনেও সে-সমস্ত ঘটনাগুলোকে একবার পড়ে নেবে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে অন্যায়, অপরাধ, হামলা-মামলা, গ্যাং কালচারসহ হত্যার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু দুষ্টু সদস্যও অপরাধে জড়িয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের অভিযোগ ওঠে। আর্থিক দুর্নীতিও করেছেন কেউ কেউ।
‘শ্রেষ্ঠ’ মাদক উদ্ধারকারী পুলিশ ‘অর্থ খেকো’!
এ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরপরই পুলিশের ভূমিকার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দেশজুড়ে আলোচনাও হয়। ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জহির উদ্দিন আহমেদ নামে এক উপপরিদর্শক (এসআই)। তিনি কাজ করতেন পল্লবী থানায়।
২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত পল্লবী থানায় দায়িত্ব পালন করেন এসআই জহির। তার ঝুলিতে ‘শ্রেষ্ঠ মাদক উদ্ধারকারী’ থেকে ‘শ্রেষ্ঠ বিস্ফোরক উদ্ধারকারী’, ‘শ্রেষ্ঠ চোরাই গাড়ি উদ্ধারকারী’ পুলিশ সদস্যের পুরষ্কার রয়েছে। পল্লবী থানায় গিয়ে তার টেবিলে অসংখ্য ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেটও দেখা গিয়েছিল।
মুদ্রার যেমন দুটি পিঠ, এসআই জহির উদ্দিনেরও ছিল দুটি চেহারা। সাধু পুলিশের অপর পিঠে জহির ছিলেন একজন ‘অর্থ খেকো’। শ্রেষ্ঠত্বের আড়ালে তার অপরাধ কর্মকা- অনেক। যা সামনে আসে সোমবার (২৪ জুলাই) রাতে পল্লবীর ১১ নম্বর আদর্শ নগরে পুলিশের অভিযানে বৈশাখী নামে এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনার পর। এসআই জহিরসহ ৩ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তিন লাখ টাকা দাবির অভিযোগ তুলেছিল নিহতের পরিবার। ভুক্তভোগীদের দাবি, টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বৈশাখীর সামনে তার মা লাভলীকে নির্যাতন করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর তিনতলার একটি ঘরে বৈশাখীর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। ঘরটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল।
এ ঘটনায় পুলিশের একটি বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে এসআই জহির উদ্দিনসহ তার টিমের ৩ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে একটি গোপন প্রতিবেদন দিয়েছিল পুলিশ। যাতে বলা হয়, ঘটনার দিন জহির ও তার টিমের লোকজন সোর্স (পুলিশের ফর্মা) পাঠিয়ে লাভলীর কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি টাকা দিতে না চাইলে পুলিশ তাকে থানায় নিতে চায়। এ সময় লাভলীর মেয়ে বৈশাখী তার মাকে ছেড়ে না দিলে আত্মহত্যার হুমকি দেয়। এসআই জহির ও তার টিমের সদস্যরা মাদক কারবারিদের আটক ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে মাদকের আস্তানায় হানা দিয়ে টাকা আদায় করেন। প্রত্যেক আস্তানা থেকে তারা সপ্তাহে ৫-৬ হাজার টাকা নেন। একই থানায় দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে স্থানীয় মাদক কারবারিদের সঙ্গে জহিরের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। পুলিশের অপর দুই সদস্য সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফেরদৌস, কনস্টেবল মো. মেসবাহ উদ্দিন এসব ঘটনায় তার সঙ্গী ছিলেন।
এসব ব্যাপারে কথা হলে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া ‘দুষ্টু গরুর থেকে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর এসআই জহিরকে কাফরুল থানায় বদলি করা হয়। সেখান থেকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয় তাকে।
সোর্স বা ফর্মা কান্ড
পুলিশের আশকারা পেত তাদের সোর্স বা ফর্মারা। এ ঘটনাও পল্লবী থানার। লাবলু নামে এক ফর্ম থানায় বসে টিকটক ভিডিও বানিয়ে প্রকাশ করলে বিষয়টি গণমাধ্যমের দৃষ্টিগোচর হয়। পুলিশের এসব ফর্মা মদ, গাঁজা, ইয়াবা বেচা-কেনা- সেবনে সিদ্ধহস্ত। মাথার ওপর পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) হাত থাকায় তারা ছিল ডর-ভয়হীন।
পল্লবী থানার এসআই তারেকুর রহমান শুভ, এসআই তাপস, এসআই উজ্জ্বল, এসআই মাহমুদুল হাসান, এসআই জহির ও ফেরদৌস, এসআই আল আমিন, এসআই কামরুল ও আজাদের বিরুদ্ধে সোর্স বা ফর্মাদের ‘লাই’ দেওয়ার অভিযোগ আছে। তাদের সব ফর্মাই বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী। এসব অপরাধীদের কাছ থেকে পুলিশের এসব সদস্য সব সময়ই কিছু না কিছু পেতে থাকেতন। অপরাধীকে প্রশ্রয় দেওয়ায় পল্লবীর থানার এ পুলিশ সদস্যরাও অপরাধী।
জানা গেছে, পল্লবীতে আরজু, হারুন ওরফে ইয়াবা হারুন, ওয়াহিদ, সুমন, মামুন, টিটু, মোশারফ, সায়মন, মনির, আলামিন, চুন্নু, জন্সু, কালা স্বপনসহ অন্তত ১০০ সোর্স আছে এই উপপরিদর্শকদের। তারা সবাই বিভিন্ন অপরাধে দোষী।
দুই এসআই’র ছিনতাইকা-
রাজধানীর শাহ আলী থানায় কর্মরত ছিলেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) তুহিন কাজী ও মশিউর রহমান তাপস। সাধারণের বন্ধু বলে পুলিশ বিবেচিত হলেও এ দুজন ছিলেন উল্টো। তারা ছিনতাই করতেন। তুহিন-তাপস ছিনতাই করতেন ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে। গত ১৯ ডিসেম্বর তাদের গ্রেপ্তার করেছে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ। মো. শাহাদাৎ সরদার নামে এক ভুক্তভোগী মামলার ভিত্তিতে পুলিশের এ দুই সদস্য গ্রেপ্তার হন। শাহাদাৎ তার মামলার এজাহারে জানান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এক ছোটভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে এসআই তুহিন-তাপসের শিকার হন তিনি। তার কাছ থেকে একই দিনে কয়েকধাপে ৯ লাখ ১৯ হাজার ২৯ টাকা ছিনতাই করেছেন তারা। ব্যাপক মারধরও করেছেন। নিয়ে গেছেন মোবাইল ফোনও।

এসআই তুহিন-তাপস ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়েছিলেন। তাদের আদালতে নেওয়ার পর রিমান্ড আবেদন করা হয়। সাতদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হলে আদালত তিনদিনের সময় দেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার এ ব্যাপারে বলেন, আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত আমাদের প্রায় ২ লাখ দশ হাজার জনের পুলিশ বাহিনী। ২-৪ জন দুষ্টু লোকজন যে নেই কখনো অস্বীকার করি না। আমাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার মানসিকতার লোক থাকতে পারে। তারা যখন অপরাধ করে সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা ডিটেক্ট করতে পারি। মানুষ যখন অভিযোগ করে, সেটা যখন প্রমাণিত হয় তখন আমরা আমাদের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হই না। আমাদের সৌন্দর্য হচ্ছে, আমাদের সদস্যদের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিচলিত হয় না।
বাহিনীর সদস্য হওয়ার পরেও যদি কেউ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে, অথবা ফৌজদারি কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত হয়- তখন সে পুলিশ না সাধারণ মানুষ এটি বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নাই। আমরা তখন তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করি। যদি আমাদের বাহিনী সদস্যও হয় অবশ্যই সে একজন অপরাধী। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও ডিপার্টমেন্টাল সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফৌজদারি ব্যবস্থায় মামলা হবে, আসামি গ্রেপ্তার হবে ও বিচারের জন্য সোপর্দ হবে। সেই ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি এবং সেই ব্যবস্থা চলমান থাকবে।