ঢাকা ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫

বাজারে কী করেন গোয়েন্দারা

  • আপডেট সময় : ০২:০০:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে সরকার যখন গলদঘর্ম, কয়েকমাস আগে ঠিক তখনই ঘোষণা আসে- বাজার নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দাদের মাঠে নামার। এমনকি বিভিন্ন সময় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তরাও জানান এ তথ্য। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধানও সম্প্রতি বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিবি পুলিশ কাজ করছে বলে গণমাধ্যমকে জানান। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে বাজারে নামা গোয়েন্দাদের নিয়ে। তাদের প্রশ্ন- গোয়েন্দাদের তো বাজারে দেখি না, প্রকৃতপক্ষে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে কী কাজ করেন। যদিও গোয়েন্দা নামানোর ঘোষণায় বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নাগালের মধ্যে আসেনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এ অবস্থায়ই হঠাৎ করে মাঝে-মধ্যেই সিন্ডিকেটের কারসাজিতে হু হু করে বেড়ে যায় চিনি, তেল, পেঁয়াজ ও আলুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। এক রাতের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্য কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা শুধু জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। আর কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কালোবাজারি ও বাজারে গড়ে ওঠা অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে দুটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য নিয়ে যায় প্রায়ই। একেক সময় একেকজন কর্মকর্তা আসেন তথ্য নিতে। আমরা (ভোক্তা অধিদপ্তর) কারসাজি, মজুত বা অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির দায়ে যেসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করি বা যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করি- গোয়েন্দারা সেই তথ্যগুলো সংগ্রহ করেন আমাদের কাছ থেকে। এরপর তারা এসব তথ্য নিয়ে কী করেন তা জানা নেই।’ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে আমাদের অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালাচ্ছেন। এ অভিযান চলমান থাকবে।’
দেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জরিমানা করে থাকে বা সিলগালা করে থাকে- ওই প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করি আমরা। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির যোগসাজশ আছে কিনা তা-ও নীরবে তদন্ত করা হয়। অনেকক্ষেত্রে আমাদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ভোক্তা অধিদপ্তর বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে থাকে। আমরা মাঠ পর্যায়ে থেকেও তথ্য সংগ্রহ করি। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের উপযুক্ত সংস্থাকে তথ্যগুলো সরবরাহ করা হয়।’ জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কাজ না করলে বাজার আরও অস্থির হতো। আমরা নীরবে কাজ করে থাকি। বাজারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা যেসব অভিযান চালিয়েছে বা ব্যবস্থা নিয়েছে, ওইসব অর্জনের মূল কাজটিই আমরা করে থাকি। আমাদের মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা নিয়মিত বাজারে দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। প্রতিবেদন দাখিল করে থাকেন।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু এখনই না। গোয়েন্দারা বাজার মনিটরিং করে আসছে সব সময়ই। কালোবাজারিদের শনাক্তে মূল তৎপরতাই চালাচ্ছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।’ বাজারে ডিবি পুলিশ নামার ঘোষণা দেওয়া ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমাদের একটি সেল বাজার মনিটরিংয়ের কাজ করে যাচ্ছে। এই সেল অসাধু ব্যবসায়ী, মজুতকারী ও দাম বৃদ্ধিকারীদের ধরতে ক্রেতা সেজে বাজারে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করলেই তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এই অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা বেশ কয়েকজন কালোবাজারিকে আইনের আওতায় এনেছি। আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি।’ সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই সারা দেশে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং পণ্য মজুও ও কালোবাজারি রোধে বাজার নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হাতের নাগালে আসেনি বাজার দর। বরং শীতকালিন সবজি থেকে শুরু করে পেঁয়াজ আলুসহ দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের। তাহলে বাজার মনিটরিংইয়ে কী করছেন গোয়েন্দারা- এমন প্রশ্ন এখন সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে। জানা গেছে, বাজার ঘিরে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু সিন্ডিকেট। দিন দিন বেশ সক্রিয় হয়ে উঠছে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা। নানা অজুহাতে যখন তখন কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাড়াচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদপে নেওয়া উচিত জানিয়ে ক্রেতারা বলছেন, অজুহাত বুঝি না, দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাজারে কী করেন গোয়েন্দারা

আপডেট সময় : ০২:০০:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

বিশেষ সংবাদদাতা : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে সরকার যখন গলদঘর্ম, কয়েকমাস আগে ঠিক তখনই ঘোষণা আসে- বাজার নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দাদের মাঠে নামার। এমনকি বিভিন্ন সময় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তরাও জানান এ তথ্য। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধানও সম্প্রতি বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিবি পুলিশ কাজ করছে বলে গণমাধ্যমকে জানান। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে বাজারে নামা গোয়েন্দাদের নিয়ে। তাদের প্রশ্ন- গোয়েন্দাদের তো বাজারে দেখি না, প্রকৃতপক্ষে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে কী কাজ করেন। যদিও গোয়েন্দা নামানোর ঘোষণায় বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নাগালের মধ্যে আসেনি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এ অবস্থায়ই হঠাৎ করে মাঝে-মধ্যেই সিন্ডিকেটের কারসাজিতে হু হু করে বেড়ে যায় চিনি, তেল, পেঁয়াজ ও আলুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। এক রাতের ব্যবধানে কোনো কোনো পণ্য কেজিতে ২০-৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা শুধু জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। আর কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কালোবাজারি ও বাজারে গড়ে ওঠা অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে দুটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য নিয়ে যায় প্রায়ই। একেক সময় একেকজন কর্মকর্তা আসেন তথ্য নিতে। আমরা (ভোক্তা অধিদপ্তর) কারসাজি, মজুত বা অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির দায়ে যেসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করি বা যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করি- গোয়েন্দারা সেই তথ্যগুলো সংগ্রহ করেন আমাদের কাছ থেকে। এরপর তারা এসব তথ্য নিয়ে কী করেন তা জানা নেই।’ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে আমাদের অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান চালাচ্ছেন। এ অভিযান চলমান থাকবে।’
দেশের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর জরিমানা করে থাকে বা সিলগালা করে থাকে- ওই প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে পরবর্তীতে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করি আমরা। এছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির যোগসাজশ আছে কিনা তা-ও নীরবে তদন্ত করা হয়। অনেকক্ষেত্রে আমাদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ভোক্তা অধিদপ্তর বিভিন্ন অভিযান চালিয়ে থাকে। আমরা মাঠ পর্যায়ে থেকেও তথ্য সংগ্রহ করি। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের উপযুক্ত সংস্থাকে তথ্যগুলো সরবরাহ করা হয়।’ জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা কাজ না করলে বাজার আরও অস্থির হতো। আমরা নীরবে কাজ করে থাকি। বাজারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা যেসব অভিযান চালিয়েছে বা ব্যবস্থা নিয়েছে, ওইসব অর্জনের মূল কাজটিই আমরা করে থাকি। আমাদের মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা নিয়মিত বাজারে দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে থাকেন। প্রতিবেদন দাখিল করে থাকেন।’

এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু এখনই না। গোয়েন্দারা বাজার মনিটরিং করে আসছে সব সময়ই। কালোবাজারিদের শনাক্তে মূল তৎপরতাই চালাচ্ছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।’ বাজারে ডিবি পুলিশ নামার ঘোষণা দেওয়া ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমাদের একটি সেল বাজার মনিটরিংয়ের কাজ করে যাচ্ছে। এই সেল অসাধু ব্যবসায়ী, মজুতকারী ও দাম বৃদ্ধিকারীদের ধরতে ক্রেতা সেজে বাজারে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করলেই তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এই অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা বেশ কয়েকজন কালোবাজারিকে আইনের আওতায় এনেছি। আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি।’ সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই সারা দেশে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং পণ্য মজুও ও কালোবাজারি রোধে বাজার নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হাতের নাগালে আসেনি বাজার দর। বরং শীতকালিন সবজি থেকে শুরু করে পেঁয়াজ আলুসহ দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের। তাহলে বাজার মনিটরিংইয়ে কী করছেন গোয়েন্দারা- এমন প্রশ্ন এখন সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে। জানা গেছে, বাজার ঘিরে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু সিন্ডিকেট। দিন দিন বেশ সক্রিয় হয়ে উঠছে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা। নানা অজুহাতে যখন তখন কোনো ঘোষণা ছাড়াই বাড়াচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর পদপে নেওয়া উচিত জানিয়ে ক্রেতারা বলছেন, অজুহাত বুঝি না, দ্রব্যমূল্য কমাতে হবে।