ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিস কর্তৃক ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভুট্টা বীজের প্রণোদনা তালিকায় নাম থেকেও বীজ ও সার কিছুই পাননি একটি গ্রামের কৃষকরা। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামে। এই গ্রামে ৫০ জন কৃষকের নাম উল্লেখ করে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ ও নুসরাত আক্তার ভুট্টার বীজ ও সার প্রদানের জন্য কৃষি অফিসে জমা দেন। জমাকৃত তালিকা অনুযায়ী কালীগঞ্জ কৃষি অফিস থেকে যথাসময়ে প্রতি কৃষকের জন্য দুই কেজি ভুট্টার বীজ ও ৩০ কেজি সার প্রদান করা হলেও প্রকৃতপক্ষে উপকারভোগী কৃষকরা বীজ ও সার পাননি বলে অভিযোগ করেন। এমনকি ভুট্টার বীজ ও সার প্রণোদনার তালিকায় তাদের নাম কীভাবে গেলো এবং সরকারের দেওয়া বীজ, সার কে বা কারা তুলে নিলো সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। সরেজমিনে ভুট্টা প্রণোদনার তালিকায় নাম থাকা আলাইপুর গ্রামের কৃষক নায়েব আলী, বিল্লাল হোসেন, ইসরাইল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল হালিম ও আলী আকবরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কালীগঞ্জ কৃষি অফিস থেকে তারা ভুট্টার কোন বীজ ও সার পাননি। তারা আরও জানান, গ্রামের মাঠে ভুট্টার তেমন চাষ নেই। বীজ-সার পেলে তারাও ভুট্টা চাষে আগ্রহী। কৃষি অফিসের লোকজন কৃষকদের খোঁজ নেয় না। তাদের মাঠে দেখাও যায় না। তালিকায় নাম থাকার পরও সার-বীজ না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমরা পাইনি এটাই সত্য। অফিসের লোকেরা আমাদের নাম ব্যবহার করে এগুলো তুলে নিয়েছে কিনা জানা নেই।’ শুধু ভুট্টার বীজ নয় সরিষা ও ধানের বীজের প্রণোদনাতেও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের বঞ্চিত করে নামে-বেনামে সরকারি বীজ-সার গায়েব করে দিচ্ছেন বলেও তারা জানান। প্রান্তিক কৃষকদের বিভিন্ন ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার যে প্রণোদনা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে মাঠপর্যায়ে তার সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রকৃত কৃষকরা সরকারি প্রণোদনার বীজ ও সার পাচ্ছেন না। আর এসব দেখভালের দায়িত্বে যারা আছেন তারা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে মাঠপর্যায়ে সরকারের গৃহীত মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের ন্যায্য পাওনা ফিরিয়ে দিতে ও অনিয়ম দুর্নীতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায় না। উপজেলার সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘ভুট্টার প্রণোদনার তালিকাটি আমি করিনি। আমার সহকর্মী (একই ইউনিয়নের দায়িত্বরত) তোফায়েল আহমেদ করেছেন। আপনি তার সঙ্গে কথা বলেন। তালিকা, বীজ ও সার কোথায় গেলো এ ব্যাপারে উনি ভালো বলতে পারবেন।’ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘প্রণোদনার ভুট্টার বীজ ও সারের ব্যাপারে কথা বলতে হলে অফিসে এসে আমার স্যার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলুন।’ তালিকায় থাকা কৃষকদের ভুট্টার বীজ ও সার কোথায় গেলো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি উত্তর না দিয়ে মুঠোফোনের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, ‘প্রণোদনার বীজ-সার কৃষকের না পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তালিকায় একটু সমস্যা আছে। আর অভিযোগের ব্যাপারটি আমি খতিয়ে দেখছি।’
জনপ্রিয় সংবাদ