ঢাকা ০৩:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

নিপা ভাইরাস: ঝুঁকি এড়াতে রস উৎসব নিরুৎসাহিত করুন

  • আপডেট সময় : ১২:০৬:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়; যারা সুস্থ হয়ে ওঠেন তাদেরও নানা ধরনের স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে সচেতনতাই প্রাণঘাতী এ রোগ থেকে বাঁচাতে পারে বলে সতর্ক থাকার পরামর্শ উঠে এসেছে এক সেমিনারে। এজন্য খেজুরের কাঁচা রস পান না করা, রস উৎসবের মাধ্যমে খেজুর রস খেতে অন্যকে উৎসাহিত না করার পরামর্শও দিয়েছেন সেমিনারে অংশ নেওয়া জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি গাছ থেকে পড়া আধা খাওয়া ফল না খেতে এবং সব ধরনের ফল ধুয়ে খাওয়ার পরামর্শ তাদের। রোববার ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরে ‘নিপা ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ে অবহিতকরণ’ সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এমন মত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, নিপা ভাইরাস বাংলাদেশে বড় মহামারি আকারে না এলেও রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে না তা বলা যায় না। এ রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি এজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। সেমিনারে আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, নিপা ভাইরাস বাদুড় থেকে মানুষে ছড়ায়, আবার আক্রান্ত ব্যক্তি থেকেও অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আগে শুধু খেজুর গাছ আছে এমন জেলায় নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যেত। কিন্তু এখন খেজুর গাছ নেই এমন জেলায়ও রোগী পাওয়া গেছে।
“এটা হয়েছে খেজুর রস নিয়ে প্রচারণার জন্য। মানুষ এক জায়গা থেকে রস খেতে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। আবার অনলাইনের অর্ডার করলে খেজুর রস বাসায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে রোগটিও নতুন নতুন এলাকায় চলে যাচ্ছে।” আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, শীতের সময় খেজুরের রস খাওয়ার উৎসব হয়। এটাকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। খেজুরের রস ঝুঁকিপূর্ণ হলেও খেজুরের গুড় নিরাপদ। “৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় নিপা ভাইরাস মরে যায়। কাজেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা গুড়ে এই ভাইরাস বাঁচতে পারবে না। এজন্য রস না খেয়ে গুড়ের পিঠা, পায়েস খেলে ঝুঁকি নেই।” সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী শারমিন সুলতানা।
তিনি বলেন, দেশে মেহেরপুরে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো নিপা ভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০০৪ সালে রোগটি বাড়তে থাকে ও মৃত্যুর ব্যাপকতা দেখা দেয়। ওই বছর ৬৭ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫০ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালের পর থেকে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে। এ বছর ২০২৩ সালে ১৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৩৯ জন মানুষের নিপা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার ৭০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সেমিনারে জানানো হয়, ২০২৩ সালে রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী এবং নরসিংদীতে রোগী পাওয়া গেছে। এরমধ্যে নরসিংদী জেলায় নিপা ভাইরাস পাওয়া গেছে প্রথমবারের মতো। দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া গেছে। আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক এবং নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্রোরা বলেন, এ রোগের কোনো টিকা নেই। তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। নিপা ভাইরাস নিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকার সুযোগ নেই।
“এই রোগে আক্রান্ত হলে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, কাজেই কেইস ফ্যাটালিটি খুব হাই। যেসব এলাকায় খেজুর গাছ নেই কিন্তু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। মানে জীবানুর সোর্স এখানেও থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। বাদুর ছাড়াও অন্যান্য সোর্স যদি খুঁজে বের করতে না পারি তাহলে বিপদ।” সেমিনারে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর, ওয়ানহেলথ বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক ডা. নীতিশ দেবনাথসহ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বজ্রপাতে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু

নিপা ভাইরাস: ঝুঁকি এড়াতে রস উৎসব নিরুৎসাহিত করুন

আপডেট সময় : ১২:০৬:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়; যারা সুস্থ হয়ে ওঠেন তাদেরও নানা ধরনের স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়। এ কারণে সচেতনতাই প্রাণঘাতী এ রোগ থেকে বাঁচাতে পারে বলে সতর্ক থাকার পরামর্শ উঠে এসেছে এক সেমিনারে। এজন্য খেজুরের কাঁচা রস পান না করা, রস উৎসবের মাধ্যমে খেজুর রস খেতে অন্যকে উৎসাহিত না করার পরামর্শও দিয়েছেন সেমিনারে অংশ নেওয়া জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি গাছ থেকে পড়া আধা খাওয়া ফল না খেতে এবং সব ধরনের ফল ধুয়ে খাওয়ার পরামর্শ তাদের। রোববার ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরে ‘নিপা ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি বিষয়ে অবহিতকরণ’ সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এমন মত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, নিপা ভাইরাস বাংলাদেশে বড় মহামারি আকারে না এলেও রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে না তা বলা যায় না। এ রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি এজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। সেমিনারে আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, নিপা ভাইরাস বাদুড় থেকে মানুষে ছড়ায়, আবার আক্রান্ত ব্যক্তি থেকেও অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছেন। আগে শুধু খেজুর গাছ আছে এমন জেলায় নিপা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যেত। কিন্তু এখন খেজুর গাছ নেই এমন জেলায়ও রোগী পাওয়া গেছে।
“এটা হয়েছে খেজুর রস নিয়ে প্রচারণার জন্য। মানুষ এক জায়গা থেকে রস খেতে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। আবার অনলাইনের অর্ডার করলে খেজুর রস বাসায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে রোগটিও নতুন নতুন এলাকায় চলে যাচ্ছে।” আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, শীতের সময় খেজুরের রস খাওয়ার উৎসব হয়। এটাকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। খেজুরের রস ঝুঁকিপূর্ণ হলেও খেজুরের গুড় নিরাপদ। “৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় নিপা ভাইরাস মরে যায়। কাজেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা গুড়ে এই ভাইরাস বাঁচতে পারবে না। এজন্য রস না খেয়ে গুড়ের পিঠা, পায়েস খেলে ঝুঁকি নেই।” সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী শারমিন সুলতানা।
তিনি বলেন, দেশে মেহেরপুরে ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো নিপা ভাইরাস শনাক্ত হয়। ২০০৪ সালে রোগটি বাড়তে থাকে ও মৃত্যুর ব্যাপকতা দেখা দেয়। ওই বছর ৬৭ জন আক্রান্তের মধ্যে ৫০ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালের পর থেকে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে। এ বছর ২০২৩ সালে ১৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৩৯ জন মানুষের নিপা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার ৭০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সেমিনারে জানানো হয়, ২০২৩ সালে রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী এবং নরসিংদীতে রোগী পাওয়া গেছে। এরমধ্যে নরসিংদী জেলায় নিপা ভাইরাস পাওয়া গেছে প্রথমবারের মতো। দেশের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া গেছে। আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক এবং নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্রোরা বলেন, এ রোগের কোনো টিকা নেই। তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। নিপা ভাইরাস নিয়ে নিশ্চিন্তে বসে থাকার সুযোগ নেই।
“এই রোগে আক্রান্ত হলে ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়, কাজেই কেইস ফ্যাটালিটি খুব হাই। যেসব এলাকায় খেজুর গাছ নেই কিন্তু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। মানে জীবানুর সোর্স এখানেও থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। বাদুর ছাড়াও অন্যান্য সোর্স যদি খুঁজে বের করতে না পারি তাহলে বিপদ।” সেমিনারে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর, ওয়ানহেলথ বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক ডা. নীতিশ দেবনাথসহ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।