নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসায় পাইকারি দাম কমলেও এর প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি খুচরা বাজারে। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর শ্যামবাজারে সরজমিনে ঘুরে পেঁয়াজের পাইকারি আড়তগুলোতে দেখা যায়, মুড়িকাটা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে এর প্রভাব খুচরা বাজারে পড়তে দেখা যায়নি। গত শুক্রবার থেকে পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা আল আমিন ট্রেডার্সের পরিচালক মো. রুহুল আমিন বলেন, পেঁয়াজের দাম কমে গেছে, এখন মুড়িকাটা পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। কিন্তু তারপরও খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনতে ভয় পাচ্ছে। কারণ খুচরা ব্যবসায়ীরা মনে করছে যদি পেঁয়াজের দাম আরও কমে যায় তখন তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হবে। মেসার্স নিউ আলমাছ ট্রেডার্স পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ৬৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসায় ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা একেবারেই নেই। তারপরেও বুধবার পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের প্রতিকেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারের খুচরা পেঁয়াজের দোকানগুলোতে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমলেও প্রায় আগের দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। শ্যামবাজার নদীর পাড়ের পাইকারি দোকানগুলোর পাশেই ফুটপাতে পেঁয়াজের খুচরা বিক্রেতারা প্রতি পাল্লা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৪৫০-৫০০ টাকা এবং লক্ষ্মীবাজার দোকানগুলোতেও একই দৃশ্য চোখে পড়েছে। কেজি প্রতি প্রায় গড়ে ৪০-৫০ টাকা বেশি বিক্রি করছে এই খুচরা ব্যবসায়ীরা। আবুল কালাম (৪৫) নামে এক ভোক্তা বলেন, ‘পাইকারি আড়তের পাশে এই অবস্থা, তাহলে দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে কি অবস্থা! পেঁয়াজের দাম কমেছে শুনে আমি শ্যামবাজার আসি কিন্তু দামের তেমন কোনো হেরফের হয়নি।’ বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টনের একটু বেশি। গত অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টনের মতো। তবে ক্ষেত থেকে তুলে সংরক্ষণ করা পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে প্রতিবছর ১০ থেকে ১২ লাখ টন আমদানি করতে হয়, যার ৯০ শতাংশের বেশি আসে ভারত থেকে। এ জন্য ভারত পেঁয়াজে রপ্তানির ওপর কোনোরকম নিষেধাজ্ঞা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়ে। গত বৃহস্পতিবার ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ পেঁয়াজের বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে তারা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি না করার ঘোষণা দেয়। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর ভারত প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করে দেয়, যা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বজায় থাকবে বলা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও আবার বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে কোনো দেশের সরকার অনুরোধ করলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে।