নিজস্ব প্রতিবেদক : সংসদ নির্বাচনের তফসিলের প্রতিবাদে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ঘিরে ১৫ ঘণ্টায় সারাদেশে বাস-ট্রাক-ট্রেনসহ ১১টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬ থেকে রোববার সকাল ৯টার মধ্যে ঢাকাসহ দেশের পাঁচ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এসব অগ্নিসংযোগের খবর পান তারা। এর মধ্যে ঢাকা নগরে পাঁচটি, রাজশাহী বিভাগের নাটোর, বগুড়া ও জয়পুরহাটে তিনটি, চট্টগ্রামের ফেনী ও কুমিল্লায় দুটি এবং ময়মনসিংহের জামালপুর একটি অগ্নি নাশকতার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, ‘দুর্বৃত্তদের’ দেওয়া আগুনে বাস পুড়েছে ছয়টি, আর ট্রাক একটি। এছাড়া জামালপুরের সরিষাবাড়ী রেল স্টেশনে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে দেওয়া আগুনে তিনটি বগি পুড়ে গেছে। এসব যানবাহন ছাড়াও একটি কভার্ড ভ্যান, একটি অটোরিকশা এবং একটি পিকআপ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিটের ১০৭ জন সদস্য এসব ঘটনায় আগুন নেভাবে কাজ করেছেন বলে জানান তালহা বিন জসীম। পাঁচ দফা অবরোধের পর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে সারা দেশে বিএনপির ৪৮ ঘণ্টা হরতাল শুরু হয়েছে রোববার সকাল ৬টায়, যা শেষ হবে মঙ্গলবার সকাল ৬টায়। বিএনপির এই আন্দোলনের শুরু ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে দলটির মহাসমাবেশ ঘিরে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে সেই সমাবেশ প- হয়ে গেলে ২৯ অক্টোবর হরতাল ডাকে দলটি।
একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর সারা দেশে প্রথম দফার অবরোধ করে তারা। এরপর সব মিলিয়ে পাঁচ দফায় ১১ দিন অবরোধের পর রবি ও সোমবার ডাকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধে সমমনা দলগুলোও সমর্থন দিচ্ছে। এছাড়া বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীও আলাদাভাবে একই কর্মসূচি দিয়েছে। এই হরতাল-অবরোধের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই যানবাহনে আগুন দেওয়ার খবর আসছে। তাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
হরতালে নাশকতা ঠেকাতে সারাদেশে ২৩৫ প্লাটুন বিজিবি: বিএনপির ৪৮ ঘণ্টা হরতালে নাশকতা ঠেকাতে ঢাকাসহ সারাদেশে ২৩৫ প্লাটুন বিজিবি নেমেছে। এর মধ্যে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে টহল দিচ্ছে ২৮ প্লাটুন বিজিবি। সাধারণত প্রতি প্লাটুনে ৩০ জন বিজিবি সদস্য থাকেন। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড-বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম গতকাল রোববার সকালে এক বার্তায় বলেন, “সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ২৩৫ প্লাটুন বিজিবি টহল দিচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি প্লাটুন স্ট্যান্ডবাই রয়েছে।”
কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে তা-ব চালায় বিএনপির নেতাকর্মীরা: রাজধানীর পল্টনে গত ২৮ বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশে হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশকে মারধরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজন গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এছাড়া গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। গ্রেপ্তাররা হলেন- বিএনপি কর্মী ইসমাঈল পাটওয়ারী, শ্যামপুর থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল সাঈদ রনি, শ্যামপুর থানার ৪৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য সচিব এসএম মুরাদ হোসেন মামু এবং যুবদলের কর্মী মাকসুদুর রহমান মাসুদ, মোস্তফা কামাল সুমন। আর বাসে আগুন দেওয়ার অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী আল আমিনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে নেতাকর্মীরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। গতকাল রোববার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশের দিন কমলাপুর রেলওয়ে অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশকে মারধর করে। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইসমাঈল পাটওয়ারী দুটি সবুজ রঙের প্লাস্টিকের লাঠি নিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ওপর হামলা করে। এছাড়া বিএনপি নেতা আবদুস সামাদের কর্মী সাঈদ রনি, মুরাদ ও মাসুদ প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজেও তাদের দেখা গেছে। গ্রেপ্তার মোস্তফা কামাল সুমন ২৮ অক্টোবর সমাবেশের দিন পুলিশের ওপর হামলা করে এক পুলিশ সদস্যের দাঁত ভেঙে ফেলে। এমনকি এই ঘটনার ছবি প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছে ‘দাঁত ভাঙা জবাব দিয়েছি’। ঘটনার দিন সুমনের সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের পরিচয় আমাদের জানিয়েছে, বলে জানান ডিবি প্রধান হারুন। তিনি জানান, গত ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজধানীর বংশালে আকাশ পরিবহনে যাত্রীবেশে উঠে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আল আমিন নামে এক বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেদিন সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ থেকে গাজীপুর রুটে চলাচল করা আকাশ পরিবহনের একটি গাড়িতে যাত্রীবেশে কয়েকজন মিলে ওঠে। পরে গাড়িতে আগুন দিয়ে তারা নেমে যায়। গ্রেপ্তাররা ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। পাশাপাশি এই নাশকতা তাদের পূর্বপরিকল্পিত ছিল বলেও জানান ডিবি প্রধান।