নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা-১৩। শেরেবাংলা নগর, মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকা নিয়ে জাতীয় সংসদের ১৮৬ নম্বর আসন। এটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। ১৯৯১ থেকে ২০০১ টানা তিনবার বিএনপি ও ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে এ আসনটি। সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকলেও জনসমর্থনে কাছাকাছি অবস্থানে বিএনপি।
প্রায় চার লাখ ভোটার ও ২০ লাখ মানুষের বসবাস এখানে। এলাকার কিছু অংশ অভিজাত। আবার কিছুটা নি¤œ আয়ের মানুষের বসবাস আছে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে জয় নিশ্চিত করতে চায় আওয়ামী লীগ। বিএনপিও হাতছাড়া করতে চায় না। তবে বিএনপি এখন নির্বাচন বাদ দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে ব্যস্ত। এজন্য তারা এদিকে মনোযোগী নয়। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও প্রার্থীরা এলাকায় বেশ সক্রিয়।
এখানে বর্তমান এমপি সাদেক খানের বাইরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সাত্তার।
সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এলাকায় বেশ সক্রিয়। প্রতি জুমায় একেক মসজিদে নামাজ পড়ে গণসংযোগ করেন। এলাকার সাংগঠনিক ও সামাজিক নানা আচার অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কৃষি মার্কেটে আগুনের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে এলাকা বেশ সাড়া ফেলেছেন। তিনি বলেন, ‘২০০৮ থেকে দুই মেয়াদে আমি ঢাকা-১৩ আসনে এমপি ছিলাম। এলাকাটি ছিল সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য, দিনে দুপুরে বেবিটেক্সি যেতে চাইতো না ছিনতাইয়ের কারণে, মাদকের স্বর্গরাজ্য ছিল। আমি এই দুর্গ ভেঙে দিয়েছি। আমি আমার প্রাণ উজাড় করে মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগরের জন্য কাজ করেছি। সেখানকার নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণও আমার প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা দেখিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এবার আমি এমপি হইনি। কিন্তু এ এলাকার মানুষ আমার কাছে এসে ফিরে যায়নি। যার যা কাজ, সব সময় করে দেই। আমি প্রতি শুক্রবার একেক মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাই, মানুষের সঙ্গে কথা বলি। কৃষি মার্কেট আগুনে পুড়লো, আমি তখন মদিনা মুনাওয়ারায় ছিলাম, সেখান থেকে ছুটে এসে তাদের দেখতে গেছি। তাদের জীবন-জীবিকায় ফিরিয়ে আনতে যাবতীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।’
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যেমনভাবে আমার প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে, তেমনি অন্য সাধারণ মানুষেরও ভালোবাসা ও অকুণ্ঠ সমর্থন আমার প্রতি রয়েছে। যে কারণে আমি মনোনয়ন চাইবো। নেত্রী মনোনয়ন দিলে ঢাকা-১৩ আসনে আমি একটি মডেল নির্বাচন করে দেখাবো।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘আমি ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়েছি। আগামীতেও চাইবো।’
বক্তব্য নিতে বর্তমান এমপি সাদেক খানকে দুই সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। মোবাইলের খুদে বার্তায়ও তিনি সাড়া দেননি। নেতাকর্মীরা বলছেন, তিনি অসুস্থ। তবে তিনিসহ মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সবাই সাংগঠনিকভাবে সক্রিয়। নেতাকর্মী ও আওয়ামী সমর্থকরা চান, এখানে সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানককে মনোনয়ন দেওয়া হোক। কারণ তিনি নেতাকর্মী ও ভোটারদের ব্যক্তিগত, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। নানান সমস্যা সমাধান করেন। মোহাম্মদপুর থানা স্বেচ্ছসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক বাবু বলেন, ‘মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাই সক্রিয়। তবে সাবেক এমপি নানক ভাই বেশি সক্রিয়। উনি সাংগঠনিক প্রোগ্রামের পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানেও যাচ্ছেন। বিভিন্ন সময়ে জনসাধারণের কাছে যাচ্ছেন। তারই এখানে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
এলাকাটি ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকায় মশার উপদ্রব ও কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত আছে কিছুটা। এছাড়া নির্মাণকাজের সময় গোপনে চাঁদাবাজিও হয়। চাঁদ উদ্যানের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘এলাকায় মশার উপদ্রব আছে। গোপনে চাঁদাবাজি হয় কিছুটা। বিশেষ করে নির্মাণকাজ চায়, সেটা নিয়ে খুচরা মাস্তানদের দৌরাত্ম্য চোখে পড়ে। এছাড়া বাকি সবকিছু ঠিক আছে।’
শাহজাহান রোডের বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো সমস্যা নেই। এলাকায় কোনো সংকট চোখে পড়েনি। বেশ পরিপাটি। তবে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত আছে কিছু। এরা বিভিন্ন সময় রাস্তাঘাটে বিব্রতকর পরিবেশ তৈরি করে।’ স্বাধীনতার পর থেকে এ আসনটিতে বিএনপির আধিপত্য ছিল। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ দখলে নিয়েছে। এখনো তাদেরই হাতে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ২০১৮ সালের নির্বাচেন একই দলের সাদেক খান নির্বাচিত হন। ঢাকা-১৩ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৬৯। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯২ হাজার ৬১২ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৮০ হাজার ১৫৭ জন।
ঢাকা-১৩ আসনে মাঠে সক্রিয় নানক, মনোনয়নপ্রত্যাশী আরও ৩
জনপ্রিয় সংবাদ