ঢাকা ০১:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই শিশুর সাজার ব্যাখ্যা জানতে চায় হাই কোর্ট

  • আপডেট সময় : ০১:২৯:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১
  • ৮০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাল্যবিয়ের অভিযোগে নিজের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুই শিশুকে সাজা দেওয়ার বিষয়ে নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়ার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
সাজা বাতিল করে দুই শিশুর মুক্তি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের এখতিয়ার প্রশ্নে শুনানির পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

এ ঘটনায় সুলতানা রাজিয়াকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হয়েছে নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষ থেকে। এর জবাবে তিনি যে ব্যাখ্যা দেবেন সেটিই আগামী ২৬ অগাস্টের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। আর আইনি সহায়তাকারী সংস্থা ব্লাস্টের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম।
বাল্যবিয়ের অভিযোগে গত রোবববার নিজের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুই শিশুকে এক মাসের আটকাদেশ দেন সুলতানা রাজিয়া।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির তা আদালতের নজরে আনেন। তার আবেদনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে শিশুদের সাজা দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি দ-প্রাপ্ত দুই শিশুর তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশনা চান। সেদিন বিকেলই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম দুই শিশুকে মুক্তির নির্দেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাই কোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান আদালতের আদেশটি নেত্রকোণার জেলা প্রশাসককে জানাতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, হাই কোর্টের আদেশ হওয়ার আগেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা বাতিল করে দুই শিশুকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এদিকে আইনজীবী শিশির মনিরের আবেদনটি বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের একক বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। শিশির মনির শুনানিতে বলেন, “দুই শিশুকে মুক্তি দেওয়ার খবর আমি দেখেছি। নেত্রকোণার ডিসি আমাকে ফোন দিয়ে কথাও বলেছেন। তিনি আমাকে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করেছেন।
“ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রযোজ্যতা নিয়ে সারা দেশজুড়েই একটা মিসকনসেপশন আছে। এটিই প্রথম ঘটনা না, এরকম অনেক ঘটনাই ঘটছে।”
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এ সময় বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে হাই কোর্টের নানা রকম জাজমেন্ট আছে। তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের এখতিয়ার নিয়ে একটি মামলা আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
এ সময় শিশির মনির বলেন, “ওটা আমার আলোচ্য বিষয় না। এ নিয়ে আমি কিছু বলব না। সেদিন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্বে ছিলেন না। আমার ধারণা মিসকনসেপশনের ভিত্তিতে তিনি এটা (ক্ষমতা) প্রয়োগ করেছেন। এখানেই বিষয়টির শেষ করা উচিৎ না।
“উনাকে নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যে কারণ দর্শাতে বলেছেন, সেটির একটি অনুলিপি হাই কোর্টে দাখিল করার আদেশ দিতে পারেন। দেখা দরকার কোন ধারণার উপর ভিত্তি করে এ ঘটনাটা (দুই শিশুকে সাজা দেওয়া) ঘটেছে। এখানেই শেষ করে না দিয়ে এটা আপনার (উচ্চ আদালতের) সামনে আসা উচিত। তাই আমার আরজি হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া দরকার।”
আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম বলেন, “একজন প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তা এরকম বেআইনি কাজ করতে পারে! এর বিরুদ্ধে অবশ্যই অ্যাকশন নেওয়া উচিৎ। সারা দেশেই এরকম অনিয়ম হচ্ছে। আমার সাবমিশন হচ্ছে, জনপ্রশাসন সচিব মহোদয়কে নির্দেশনা দেন তার (সুলতানা রাজিয়া) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। না হইলে এসব থামবে না।”
এ পর্যায়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, “উনি (সুলতানা রাজিয়া) খবর পেয়েছেন যে বাল্যবিবাহ হচ্ছে, এটা প্রিভেন্ট করার জন্য উনি ব্যবস্থা নিয়েছেন, এটা তিনি নিতেই পারেন। যেটা দেখা গেল যে, বর-বউকে সাজা দিয়ে দিয়েছেন।”

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ৭ ও ৮ ধারা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে শাস্তির বিধান আছে।
বিচারক তখন বলেন, “বাল্যবিয়ে হয়ে থাকলে কমপিটেন্ট কোর্ট সাজা দেবে। যেহেতু আমাদের একটা জাজমেন্ট হয়ে গেছে এবং শিশু আইন অনুযায়ী সে (সুলতানা রাজিয়া) তো তা করতে পারে না।”
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, “তাহলে তো শিশু আইনের এই বিধানটাকে বেআইনি ঘোষণা দরকার ছিল। উনাদের (আবেদনকারী আইনজী ও ব্লাস্টের আইনজীবী) ওইটাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। আইন থাকলে তো প্রয়োগ করতে হবে।
“এ আইনটা করাই হয়েছে বাল্য বিবাহ নিরোধ করার জন্য। তাহলে এটার কী হবে, এটাও তো বিশেষ আইন।”
বিচারক বলেন, “সেটা ঠিক আছে। বাল্যবিবাহ হলে শিশুদের সাজা দেওয়া যাবে আইনে বলে দেওয়া হল। শিশুদের সাজাটা কীভাবে হবে? এখন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটা প্রিভেইল করবে না শিশু আইন প্রিভেইল করবে? শিশু আইনে যদি বলা থাকে অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন তাহলেৃ.
“আরেকটা বিষয় হল, আমি যতটুকু নিউজ পড়েছি, তাতে দেখেছি যে উনি (সুলতানা রাজিয়া) তার চেম্বারে বসে আদেশ দিয়েছেন। এটা কি ভ্রাম্যমাণ আদালতে পারে?”
অ্যাটর্নি জেনারেল জবাবে বলেন, “প্রক্রিয়া বা প্রয়োগগত বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলছি না।” বিচারক তখন বলেন, “সবটাই আপনাকে দেখতে হবে। আপনি দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল। আইন কোথায় কীভাবে আছে দেখতে হবে।” অ্যাটর্নি জেনারেল তখন বলেন, “না এটা (কার্যালয়ে ভ্রম্যমাণ আদালত বসানো) তিনি পারেন না। উনাকে স্পটে বসাতে হবে, চেম্বারে পারবেন না।” বিচারক বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত চেম্বারে বসানোর সুযোগ নেই, থানায় বসেও বিচার করার সুযোগ নেই। শুধু এই ঘটনা নয়, অনেক ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা দেখা যাচ্ছে।
“আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখি। হয়তো ঘটনাটা একটা ঘটেছে, হয়তো শাস্তিযোগ্য অপরাধই হয়েছে। কিন্তু দেখা যায় যে, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ঘটনা ঘটার দুই দিন-তিন দিন পরে গিয়ে ভ্যাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দিচ্ছেন।”
অ্যাটর্নি জেনারেলও তখন বলেন, “না, এটা তারা পারেন না।”
বিচারক বলেন, “এরকম ঘটনা ঘটছে। সুতরাং এগুলো আপনারা সরকারের কাছে বলেন। যখন ম্যাজিস্ট্রেটদের ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং হয়, মোবাইল কোর্ট কীভাবে চলবে, চালাতে হবে, কীভাবে এর প্রয়োগ করবে এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
পত্রিকায় প্রকাশিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রয়োগ সংক্রান্ত একটি ঘটনা উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেলকে এসব বিষয় নিয়ে মন্ত্রপরিষদ বিভাগের সাথে আলোচনা করতে বলেন বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আশ্বস্ত করেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সাথে কথা বলবেন। ব্লাস্টের আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম তখন পত্রিকায় প্রকাশিত দুই শিশুর সাজা বাতিলের একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শিশুদের সাজা সরাসরি বাতিল করে দিয়েছেন। বেআইনি না হলে উনি বাতিল করলেন কীভাবে। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “ঠিক আছে। ওই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, তার একটা অনুলিপি ২৬ অগাস্টের মধ্যে হাই কোর্টে প্রেরণ করতে বলছি। নেত্রকোণার সিনিয়র জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটা অনুলিপি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। আমরা দেখি কী ব্যাখ্যা উনি (সুলতানা রাজিয়া) দেন। কী কনসেপশনে উনারা কাজ করছেন ফিল্ড লেভেলে।” অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এসময় আদালতের আদেশ জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারকে সংশ্লিষ্টদের মেইল করতে বলেন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ছিনতাইয়ের শিকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বাসায় আসামির ছেলে

ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুই শিশুর সাজার ব্যাখ্যা জানতে চায় হাই কোর্ট

আপডেট সময় : ০১:২৯:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অগাস্ট ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাল্যবিয়ের অভিযোগে নিজের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুই শিশুকে সাজা দেওয়ার বিষয়ে নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়ার ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
সাজা বাতিল করে দুই শিশুর মুক্তি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের এখতিয়ার প্রশ্নে শুনানির পর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।

এ ঘটনায় সুলতানা রাজিয়াকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হয়েছে নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষ থেকে। এর জবাবে তিনি যে ব্যাখ্যা দেবেন সেটিই আগামী ২৬ অগাস্টের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। আর আইনি সহায়তাকারী সংস্থা ব্লাস্টের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম।
বাল্যবিয়ের অভিযোগে গত রোবববার নিজের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুই শিশুকে এক মাসের আটকাদেশ দেন সুলতানা রাজিয়া।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির তা আদালতের নজরে আনেন। তার আবেদনে ভ্রাম্যমাণ আদালতে শিশুদের সাজা দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি দ-প্রাপ্ত দুই শিশুর তাৎক্ষণিক মুক্তির নির্দেশনা চান। সেদিন বিকেলই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম দুই শিশুকে মুক্তির নির্দেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাই কোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান আদালতের আদেশটি নেত্রকোণার জেলা প্রশাসককে জানাতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, হাই কোর্টের আদেশ হওয়ার আগেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা বাতিল করে দুই শিশুকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এদিকে আইনজীবী শিশির মনিরের আবেদনটি বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের একক বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। শিশির মনির শুনানিতে বলেন, “দুই শিশুকে মুক্তি দেওয়ার খবর আমি দেখেছি। নেত্রকোণার ডিসি আমাকে ফোন দিয়ে কথাও বলেছেন। তিনি আমাকে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করেছেন।
“ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রযোজ্যতা নিয়ে সারা দেশজুড়েই একটা মিসকনসেপশন আছে। এটিই প্রথম ঘটনা না, এরকম অনেক ঘটনাই ঘটছে।”
বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম এ সময় বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে হাই কোর্টের নানা রকম জাজমেন্ট আছে। তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের এখতিয়ার নিয়ে একটি মামলা আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
এ সময় শিশির মনির বলেন, “ওটা আমার আলোচ্য বিষয় না। এ নিয়ে আমি কিছু বলব না। সেদিন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্বে ছিলেন না। আমার ধারণা মিসকনসেপশনের ভিত্তিতে তিনি এটা (ক্ষমতা) প্রয়োগ করেছেন। এখানেই বিষয়টির শেষ করা উচিৎ না।
“উনাকে নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট যে কারণ দর্শাতে বলেছেন, সেটির একটি অনুলিপি হাই কোর্টে দাখিল করার আদেশ দিতে পারেন। দেখা দরকার কোন ধারণার উপর ভিত্তি করে এ ঘটনাটা (দুই শিশুকে সাজা দেওয়া) ঘটেছে। এখানেই শেষ করে না দিয়ে এটা আপনার (উচ্চ আদালতের) সামনে আসা উচিত। তাই আমার আরজি হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া দরকার।”
আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম বলেন, “একজন প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তা এরকম বেআইনি কাজ করতে পারে! এর বিরুদ্ধে অবশ্যই অ্যাকশন নেওয়া উচিৎ। সারা দেশেই এরকম অনিয়ম হচ্ছে। আমার সাবমিশন হচ্ছে, জনপ্রশাসন সচিব মহোদয়কে নির্দেশনা দেন তার (সুলতানা রাজিয়া) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। না হইলে এসব থামবে না।”
এ পর্যায়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, “উনি (সুলতানা রাজিয়া) খবর পেয়েছেন যে বাল্যবিবাহ হচ্ছে, এটা প্রিভেন্ট করার জন্য উনি ব্যবস্থা নিয়েছেন, এটা তিনি নিতেই পারেন। যেটা দেখা গেল যে, বর-বউকে সাজা দিয়ে দিয়েছেন।”

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ৭ ও ৮ ধারা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে শাস্তির বিধান আছে।
বিচারক তখন বলেন, “বাল্যবিয়ে হয়ে থাকলে কমপিটেন্ট কোর্ট সাজা দেবে। যেহেতু আমাদের একটা জাজমেন্ট হয়ে গেছে এবং শিশু আইন অনুযায়ী সে (সুলতানা রাজিয়া) তো তা করতে পারে না।”
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, “তাহলে তো শিশু আইনের এই বিধানটাকে বেআইনি ঘোষণা দরকার ছিল। উনাদের (আবেদনকারী আইনজী ও ব্লাস্টের আইনজীবী) ওইটাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। আইন থাকলে তো প্রয়োগ করতে হবে।
“এ আইনটা করাই হয়েছে বাল্য বিবাহ নিরোধ করার জন্য। তাহলে এটার কী হবে, এটাও তো বিশেষ আইন।”
বিচারক বলেন, “সেটা ঠিক আছে। বাল্যবিবাহ হলে শিশুদের সাজা দেওয়া যাবে আইনে বলে দেওয়া হল। শিশুদের সাজাটা কীভাবে হবে? এখন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটা প্রিভেইল করবে না শিশু আইন প্রিভেইল করবে? শিশু আইনে যদি বলা থাকে অন্য আইনে যাই থাকুক না কেন তাহলেৃ.
“আরেকটা বিষয় হল, আমি যতটুকু নিউজ পড়েছি, তাতে দেখেছি যে উনি (সুলতানা রাজিয়া) তার চেম্বারে বসে আদেশ দিয়েছেন। এটা কি ভ্রাম্যমাণ আদালতে পারে?”
অ্যাটর্নি জেনারেল জবাবে বলেন, “প্রক্রিয়া বা প্রয়োগগত বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলছি না।” বিচারক তখন বলেন, “সবটাই আপনাকে দেখতে হবে। আপনি দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল। আইন কোথায় কীভাবে আছে দেখতে হবে।” অ্যাটর্নি জেনারেল তখন বলেন, “না এটা (কার্যালয়ে ভ্রম্যমাণ আদালত বসানো) তিনি পারেন না। উনাকে স্পটে বসাতে হবে, চেম্বারে পারবেন না।” বিচারক বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত চেম্বারে বসানোর সুযোগ নেই, থানায় বসেও বিচার করার সুযোগ নেই। শুধু এই ঘটনা নয়, অনেক ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা দেখা যাচ্ছে।
“আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখি। হয়তো ঘটনাটা একটা ঘটেছে, হয়তো শাস্তিযোগ্য অপরাধই হয়েছে। কিন্তু দেখা যায় যে, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ঘটনা ঘটার দুই দিন-তিন দিন পরে গিয়ে ভ্যাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দিচ্ছেন।”
অ্যাটর্নি জেনারেলও তখন বলেন, “না, এটা তারা পারেন না।”
বিচারক বলেন, “এরকম ঘটনা ঘটছে। সুতরাং এগুলো আপনারা সরকারের কাছে বলেন। যখন ম্যাজিস্ট্রেটদের ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং হয়, মোবাইল কোর্ট কীভাবে চলবে, চালাতে হবে, কীভাবে এর প্রয়োগ করবে এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
পত্রিকায় প্রকাশিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রয়োগ সংক্রান্ত একটি ঘটনা উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেলকে এসব বিষয় নিয়ে মন্ত্রপরিষদ বিভাগের সাথে আলোচনা করতে বলেন বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আশ্বস্ত করেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সাথে কথা বলবেন। ব্লাস্টের আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম তখন পত্রিকায় প্রকাশিত দুই শিশুর সাজা বাতিলের একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, নেত্রকোণার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শিশুদের সাজা সরাসরি বাতিল করে দিয়েছেন। বেআইনি না হলে উনি বাতিল করলেন কীভাবে। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “ঠিক আছে। ওই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, তার একটা অনুলিপি ২৬ অগাস্টের মধ্যে হাই কোর্টে প্রেরণ করতে বলছি। নেত্রকোণার সিনিয়র জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটা অনুলিপি আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। আমরা দেখি কী ব্যাখ্যা উনি (সুলতানা রাজিয়া) দেন। কী কনসেপশনে উনারা কাজ করছেন ফিল্ড লেভেলে।” অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এসময় আদালতের আদেশ জানিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারকে সংশ্লিষ্টদের মেইল করতে বলেন।