নিজস্ব প্রতিবেদক : খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ, সে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সময়মতোই নির্বাচন হবে। কে চোখ রাঙাল আর কে চোখ বাঁকাল, তা নিয়ে পরোয়া করেন না। ব্রাসেলসে ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম’ সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রশ্নোত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত শর্তহীনভাবে সংলাপের আশা প্রকাশ করেছেন। আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলটা কে? বিরোধী দল হচ্ছে, যাদের সংসদে আসন আছে। এর বাইরেরগুলো আমেরিকায়ও বিরোধী দল হিসেবে দেখে না। ট্রাম্পকে তারা কী বলবে? তারা তো তাদের বিরোধী দল। যদিও আমরা তাদের পদ্ধতিতে না।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই যে মানুষগুলো হত্যা করা হলো, তখন তাঁকে (পিটার হাস) প্রশ্ন করা হলো না কেন? যখন একটা উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছে, তখন তাঁরা বিচার দাবি করেছে। এখন যখন পুলিশ হত্যা করল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল তখন বিচার দাবি করল না কেন?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেভাবে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করেছে, এরপর খুনিদের সঙ্গে কিসের বৈঠক? কিসের আলোচনা? যারা এভাবে মানুষকে হত্যা করতে পারে, যারা উন্নয়ন কর্মকা- ধ্বংস করতে পারে, তাদের সঙ্গে ডায়ালগ? সে বসে ডিনার খাক, সে বসে ডায়ালগ করুক। এটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। খুনিদের সঙ্গে ডায়ালগ তার দেশের মানুষও চাইবে না। বিএনপি-জামায়াতকে মানুষ ঘৃণা করে। তাদের দুর্নীতির জন্য কানাডা থেকে লোক এসে সাক্ষ্য দিচ্ছে।’
২৮ অক্টোবরের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এখন তারা চুপ কেন? অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখন চুপ কেন? তাদের মানবিক বোধগুলো গেল কোথায়?’ দেশের বুদ্ধিজীবীরা চুপ কেন, সে প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কোন বিদেশি শক্তি আমাদের রাজনীতিতে চোখ রাঙাচ্ছে? নির্বাচন নিয়ে নানাজন নানা মন্তব্য করছেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে। কে চোখ রাঙাল আর কে চোখ বাঁকাল, ওটা নিয়ে পরোয়া করি না।’ দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু ঢাকার উন্নয়ন নয়, গ্রামেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবেও সংলাপ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা খুন করার পরও বলে, ডায়ালগ করতে হবে। কার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব।’
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ আয়োজন করে। এ কর্মসূচি উপলক্ষে সারা দেশ থেকে দলটির নেতা–কর্মীরা নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় সমবেত হন। তবে ওই দিন বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের এক নেতা নিহত হন। সংঘর্ষের কারণে বিএনপির মহাসমাবেশ প- হয়ে যায়। পরদিন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের গ্রপ্তার অভিযানের মুখে আত্মগোপনে গেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। এর মধ্যেই আজ থেকে সারা দেশে বিএনপির সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠক শেষ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো পক্ষের সংঘাতের জায়গা নেই। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশে উদ্বেগ প্রশমন এবং একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজতে সব পক্ষ শর্তহীন সংলাপে বসবে। তাঁর এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন হয়।
বিএনপির নেতৃত্ব নেই, আছে কিছু মাইকবাজ: মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া মিঞা জাহিদুল ইসলাম আরেফিকে নিয়ে বিএনপির বিতর্কিত ও হাস্যকর কর্মকা-ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আসলে তাদের নেতাই নেই, দলটির সমস্যা এটাই।’
ব্রাসেলস সফর নিয়ে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, একজন ফ্রড, ভুয়া সে এসে তাদের (বিএনপির) অফিসে বসে সাফাই গাইল। আর যখন ধরা পড়ল তখন বলল, জানে না। আসলে তাদের (বিএনপির) নেতাই নেই। দলটার সমস্যাটাই এটা। নেতৃত্ব নেই, আছে কিছু মাইকবাজ। সারাদিন মুখে মাইক লাগিয়ে কথা বলে। সেটাও এখন আবার আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে সেই সুবিধা নিয়ে কথা বলছে। ২৮ অক্টোবর বা পরবর্তীতে যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, কিছু অপরাধী জামিন পেয়ে ছুটে এসেছে। জামিন পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেহেতু এরা জামিন পেয়ে গেছে, এরা অপরাধ করছে। এদের দ্রুত সাজা দিয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত। এভাবে আগুন লাগাবে আর মানুষের ক্ষতি করবে এটা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। যারা এভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে, তাদের সাজাটা যেন ঠিকমতো হয়; সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, সেই হাতে শাস্তি দিলে তাহলে তারা কষ্ট বুঝতে পারবে। এ সময় দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দেশবাসীকে সজাগ ও সচেতন থাকার আহ্বান জানাই। যারা এসব অগ্নিসন্ত্রাস করছে তাদের ধরিয়ে দিন। এর আগে তারা যখন শুরু করেছে তখনও মানুষ ঠেকিয়েছে। এবারও মানুষই ঠেকাবে। ২৮ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনা সরকারের পক্ষে গেল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাভ-লোকসানের ব্যাপার না। মানুষকে হত্যা করছে, মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। বরং আমাদের লাভ-লোকসান না জিজ্ঞেস করে বিএনপির জিজ্ঞেস করা দরকার; তারা যে গুন্ডামি-সন্ত্রাসী, অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে-তাতে তারা কতটুকু লাভবান হচ্ছে। এটা আপনারা (প্রশ্ন করা সাংবাদিককে প্রধানমন্ত্রী) বরং বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করেন।