ঢাকা ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
শ্রমিক আন্দোলন বিস্তৃত হচ্ছে

শ্রমিক আন্দোলন বিস্তৃত হচ্ছে

  • আপডেট সময় : ০৩:২২:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩
  • ১১১ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক :  শ্রমিক বিক্ষোভ ক্রমেই বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল আশুলিয়ায় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের। এই বিক্ষোভের কারণে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে অর্ধ শতাধিক কারখানায়। এছাড়া কালিয়াকৈরের সফিপুর ও গাজীপুরে চন্দ্রায় পুলিশ বক্স, হাসপাতাল ও দোকানপাটে শ্রমিকদের ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে মিরপুরে পোশাক শ্রমিক-আ.লীগ-পুলিশ ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের আশুলিয়ার ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয় তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও ঘোষবাগ এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম
তৃতীয় দিনের মত শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়ার প্রধান দুই সড়কে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে সড়কের পাশের সমস্ত দোকানপাট ও শপিংমল। সড়কে থানা পুলিশের পাশাপাশি শিল্প পুলিশ-১, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ান, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকেরা কারখানায় উপস্থিত হয়ে তাঁদের হাজিরা নিশ্চিত করার পরপরই বের হয়ে পড়েন। এরপর তারা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকেরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকেরা বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পুলিশের ওপর থেমে থেমে হামলা করতে থাকেন। বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে পলাশবাড়ী ও ইউনিক এলাকায়ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকেরা নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে কাঠের টুকরো ফেলে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। তখন পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পলাশবাড়ী এলাকার স্কাইলাইন কারখানার শ্রমিক আরিফুর রহমান বলেন, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে বহিরাগত ২০-২৫ জন লোক লাঠিসোঠা হাতে তাদের কারখানায় প্রবেশ করে। তারা শ্রমিক পরিবহনের গাড়ি ও ট্রাক ভাঙচুর শেষে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলে যায়। এই শ্রমিক জানান, হামলাকারীদের দেখে কারখানার শ্রমিক মনে হয়নি। ইউনিক এলাকার ব্যবসায়ী শাহজালাল মিয়া বলেন, “আমরা সকাল-বিকেল দোকান বসাই। গত তিন দিন ধরে সকাল থেকে আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। “এমন পরিস্থিতিতে দোকানে ক্রেতারাও আসে না। আর টিয়ারগ্যাসে নাক মুখ জ্বলে। ফলে ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।” গামের্ন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, আন্দোলনের কারণে আশুলিয়ার ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, ঘোষবাগ ও পলাশবাড়ী এলাকার অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে। শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, “অধিকাংশ শ্রমিক শান্ত এবং নিরীহ। তারা কাজেও আসছে, অনেক কারখানায় কাজ চলছে। কিছু কিছু শ্রমিক উচ্ছৃঙ্খলতা প্রদর্শন করছে।” তাদেরকে বিভিন্ন মহল থেকে ইন্দন দেয়া হচ্ছে, উস্কানো হচ্ছে দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা অলরেডি কিছু মহলের পরিচয় নিশ্চিত করেছি। উচ্ছৃঙ্খল যে শ্রমিক রয়েছে তাদেরকে এখান থেকে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছি। তারা যেন এখানে সহিংসতামূলক কার্যক্রমে না করতে পারে আমরা সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।” এ ছাড়া শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে কিছু কিছু কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আবার কিছু কিছু আংশিক চলছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ বক্স, হাসপাতাল ও দোকানপাটে শ্রমিকদের ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ: শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরের সফিপুর ও গাজীপুর মহানগরীর চন্দ্রায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স, ওয়ালটন প্লাজা শোরুম ও একটি প্রাইভেট হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও সফিপুর এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, আন্দোলনরত শ্রমিকরা সফিপুরে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করে। চন্দ্রা ওয়ালটন ফ্যাক্টরির সামনে ওয়ালটন প্লাজা শোরুম, সফিপুর তানহা হাসপাতাল ও কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনরত পোশাকশ্রমিকরা। গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানা শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছে। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) গাজীপুর মহানগরীর ডিবিএল গ্রুপের জিন্নাত কমপ্লেক্স, মিতালী ফ্যাশন, রিপন নিটওয়্যার, তুসুকা গ্রুপের ৫টি পোশাক কারখানা, মাল্টি ফ্যাবস, এবলম নিটওয়্যার, আলিম নিট টেক্স, পিএন কম্পোজিট, জিএমএস কম্পোজিট, মুকুল কম্পোজিটসহ অধিকাংশ কারখানা আজ থেকে ২/৩ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কালিয়াকৈর থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুলিশ বক্সে ও হাসপাতালের আগুণ নিয়ন্ত্রণে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আছেন। কালিয়াকৈরের মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান, পুলিশ বক্সে আগুন দিয়েছে শ্রমিকরা। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আসাদ মিয়া জানান, পুলিশের একটি ট্রাফিক বক্স পুড়িয়ে ফেলেছে শ্রমিকরা।
মিরপুরে পোশাক শ্রমিক-আ.লীগ-পুলিশ ত্রিমুখী সংঘর্ষ: রাজধানীর মিরপুরে পোশাক শ্রমিক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত ১৫টি বাস, ২টি মার্কেট, একটি ব্যাংকের শাখা ও ২টি পোশাক কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে এ সংঘর্ষ শুরু হয় বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেশ কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছে। মিরপুর-১১ তে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা দেওয়ার চলাকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাস্তায় নামে। পরবর্তী সময়ে তিন পক্ষের মধ্যেই ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও পিকেটিং চলে। এবিষয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নাজমুল বলেন, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ও পিকেটিংয়ের ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশও মাঠে নামে। শ্রমিকরা এখন রাস্তায় আছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য এসেছেন বিষয়টি সুরাহা করার জন্য।
শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে: ডিসি জসিম: মিরপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনে নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে কালশী রোডে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। জসিম উদ্দিন বলেন, সারা দেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে দুই একদিনের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে তারা সড়কে নেমেছে। আমরা বলেছি তোমাদের শ্রম মন্ত্রণালয় ও শ্রম অধিদপ্তর আছে, বিজিএমই একটি সিদ্ধান্ত নেবে।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

শ্রমিক আন্দোলন বিস্তৃত হচ্ছে

শ্রমিক আন্দোলন বিস্তৃত হচ্ছে

আপডেট সময় : ০৩:২২:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক :  শ্রমিক বিক্ষোভ ক্রমেই বড় আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল আশুলিয়ায় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের। এই বিক্ষোভের কারণে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে অর্ধ শতাধিক কারখানায়। এছাড়া কালিয়াকৈরের সফিপুর ও গাজীপুরে চন্দ্রায় পুলিশ বক্স, হাসপাতাল ও দোকানপাটে শ্রমিকদের ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে মিরপুরে পোশাক শ্রমিক-আ.লীগ-পুলিশ ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের আশুলিয়ার ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয় তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর ও ঘোষবাগ এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম
তৃতীয় দিনের মত শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়ার প্রধান দুই সড়কে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে সড়কের পাশের সমস্ত দোকানপাট ও শপিংমল। সড়কে থানা পুলিশের পাশাপাশি শিল্প পুলিশ-১, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ান, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে। পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকেরা কারখানায় উপস্থিত হয়ে তাঁদের হাজিরা নিশ্চিত করার পরপরই বের হয়ে পড়েন। এরপর তারা বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধের চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকেরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। এ সময় শ্রমিকেরা বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পুলিশের ওপর থেমে থেমে হামলা করতে থাকেন। বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে পলাশবাড়ী ও ইউনিক এলাকায়ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকেরা নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়ক ও বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে কাঠের টুকরো ফেলে আগুন ধরানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করে। তখন পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পলাশবাড়ী এলাকার স্কাইলাইন কারখানার শ্রমিক আরিফুর রহমান বলেন, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে বহিরাগত ২০-২৫ জন লোক লাঠিসোঠা হাতে তাদের কারখানায় প্রবেশ করে। তারা শ্রমিক পরিবহনের গাড়ি ও ট্রাক ভাঙচুর শেষে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলে যায়। এই শ্রমিক জানান, হামলাকারীদের দেখে কারখানার শ্রমিক মনে হয়নি। ইউনিক এলাকার ব্যবসায়ী শাহজালাল মিয়া বলেন, “আমরা সকাল-বিকেল দোকান বসাই। গত তিন দিন ধরে সকাল থেকে আন্দোলন শুরু করে শ্রমিকরা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। “এমন পরিস্থিতিতে দোকানে ক্রেতারাও আসে না। আর টিয়ারগ্যাসে নাক মুখ জ্বলে। ফলে ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি।” গামের্ন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, আন্দোলনের কারণে আশুলিয়ার ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, ঘোষবাগ ও পলাশবাড়ী এলাকার অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে। শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, “অধিকাংশ শ্রমিক শান্ত এবং নিরীহ। তারা কাজেও আসছে, অনেক কারখানায় কাজ চলছে। কিছু কিছু শ্রমিক উচ্ছৃঙ্খলতা প্রদর্শন করছে।” তাদেরকে বিভিন্ন মহল থেকে ইন্দন দেয়া হচ্ছে, উস্কানো হচ্ছে দাবি করে পুলিশ সুপার বলেন, “আমরা অলরেডি কিছু মহলের পরিচয় নিশ্চিত করেছি। উচ্ছৃঙ্খল যে শ্রমিক রয়েছে তাদেরকে এখান থেকে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছি। তারা যেন এখানে সহিংসতামূলক কার্যক্রমে না করতে পারে আমরা সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।” এ ছাড়া শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে কিছু কিছু কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আবার কিছু কিছু আংশিক চলছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ বক্স, হাসপাতাল ও দোকানপাটে শ্রমিকদের ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ: শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরের সফিপুর ও গাজীপুর মহানগরীর চন্দ্রায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স, ওয়ালটন প্লাজা শোরুম ও একটি প্রাইভেট হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও সফিপুর এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, আন্দোলনরত শ্রমিকরা সফিপুরে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করে। চন্দ্রা ওয়ালটন ফ্যাক্টরির সামনে ওয়ালটন প্লাজা শোরুম, সফিপুর তানহা হাসপাতাল ও কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনরত পোশাকশ্রমিকরা। গত সোমবার (২৩ অক্টোবর) থেকে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানা শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছে। মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) গাজীপুর মহানগরীর ডিবিএল গ্রুপের জিন্নাত কমপ্লেক্স, মিতালী ফ্যাশন, রিপন নিটওয়্যার, তুসুকা গ্রুপের ৫টি পোশাক কারখানা, মাল্টি ফ্যাবস, এবলম নিটওয়্যার, আলিম নিট টেক্স, পিএন কম্পোজিট, জিএমএস কম্পোজিট, মুকুল কম্পোজিটসহ অধিকাংশ কারখানা আজ থেকে ২/৩ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কালিয়াকৈর থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পুলিশ বক্সে ও হাসপাতালের আগুণ নিয়ন্ত্রণে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আছেন। কালিয়াকৈরের মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান, পুলিশ বক্সে আগুন দিয়েছে শ্রমিকরা। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আসাদ মিয়া জানান, পুলিশের একটি ট্রাফিক বক্স পুড়িয়ে ফেলেছে শ্রমিকরা।
মিরপুরে পোশাক শ্রমিক-আ.লীগ-পুলিশ ত্রিমুখী সংঘর্ষ: রাজধানীর মিরপুরে পোশাক শ্রমিক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত ১৫টি বাস, ২টি মার্কেট, একটি ব্যাংকের শাখা ও ২টি পোশাক কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে এ সংঘর্ষ শুরু হয় বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেশ কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছে। মিরপুর-১১ তে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা দেওয়ার চলাকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাস্তায় নামে। পরবর্তী সময়ে তিন পক্ষের মধ্যেই ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও পিকেটিং চলে। এবিষয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) নাজমুল বলেন, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজনের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ও পিকেটিংয়ের ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশও মাঠে নামে। শ্রমিকরা এখন রাস্তায় আছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য এসেছেন বিষয়টি সুরাহা করার জন্য।
শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে: ডিসি জসিম: মিরপুরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনে নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে কালশী রোডে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। জসিম উদ্দিন বলেন, সারা দেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে দুই একদিনের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে তারা সড়কে নেমেছে। আমরা বলেছি তোমাদের শ্রম মন্ত্রণালয় ও শ্রম অধিদপ্তর আছে, বিজিএমই একটি সিদ্ধান্ত নেবে।