নিজস্ব প্রতিবেদক : টিকা নেওয়ার পরও কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের শারীরিক জটিলতা এবং ঝুঁকির মাত্রা কম থাকে বলে জানা যাচ্ছিল আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায়; এবার বাংলাদেশেও এক সমীক্ষায় একই ধরনের ফল মিলেছে। অর্থাৎ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের টিকা বিভিন্ন জটিলতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি কমাচ্ছে। টিকা নেওয়ার পরও যেকেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তাঁদের ঝুঁকি টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় কম। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এক গবেষণায় এ চিত্র পাওয়া গেছে। গত রোববার রাতে ওই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
আইইডিসিআরের গবেষণায় দেখা গেছে, দুই ডোজ টিকা নিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন-এমন রোগীদের তুলনায় টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত জটিলতা বেশি। টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তির হার এবং মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। গত মে ও জুন মাসে এ গবেষণা পরিচালনা করে আইইডিসিআর।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআর বলছে, করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা যারা নিয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টের সমস্যা, হাসপাতালে ভর্তির হার এবং মৃত্যুঝুঁকি টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় কম দেখা গেছে। সে কারণে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি অবশ্যই দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন আইইডিসিআরের গবেষকরা।
গত মে ও জুন মাসে দেশে যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জাতীয় তালিকা থেকে দ্বৈবচয়ন ভিত্তিতে ১ হাজার ৩৩৪ জনকে নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়। তাদের সবার বয়স ছিল ৩০ বছরের বেশি।
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৯২ জন কোনো টিকা নেননি। বাকি ৭৪২ জন অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। অর্থাৎ, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৫৫ শতাংশ টিকা নিয়েও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। টিকার দুই ডোজ নিয়েছেন এমন ৩০৬ জন টিকা নেওয়ার অন্তত ১৪ দিন পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
টিকা গ্রহণকারীদের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতির পাশাপাশি তাদের রোগের গতিবিধি পর্যালোচনা করা হয়েছে এই গবেষণায়।
আইইডিসিআর বলছে, টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত জটিলতায় ভুগেছেন ১১ শতাংশ। আর দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে এই হার ছিল ৪ শতাংশ। অক্রান্তদের মধ্যে যারা আগে থেকে বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা) ভুগছিলেন, তাদের বিষয়টি আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করেছে আইইডিসিআর। এ ধরনের রোগীদের মধ্যে যারা টিকা নেননি, তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের জটিলতায় ভোগার হার দেখা গেছে পূর্ণ টিকা গ্রহণকারীদের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি। যারা দুই ডোজ টিকা নিয়েও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৭ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। আর যারা টিকা নেননি, তাদের ২৩ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। আর যে কোভিড রোগীরা আগে থেকেই বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে ভুগছিলেন, তাদের মধ্যে টিকা পাওয়া ব্যক্তিদের ১০ শতাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। অথচ টিকা না নেওয়া রোগীদের মধ্যে এই হার ৩২ শতাংশ।
একাধিক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত টিকা নেওয়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের চেয়ে ১৬ শতাংশ পয়েন্ট বেশি ছিল। আইইডিসিআর বলছে, টিকা গ্রহণকারীরা আক্রান্ত হলেও তাদের আইসিইউতে কম নিতে হয়েছে এবং মৃত্যুও কম হয়েছে বলে এ গবেষণায় উঠে এসেছে। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কোভিড রোগীদের মধ্যে টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের ১৯ জনকে আইসিইউতে নিতে হয়েছে, যা ৩ শতাংশ। আর দুই ডোজ টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৩ জনকে আইসিইউতে যেতে হয়েছে, যা ১ শতাংশের কম। করোনাভাইরাসের টিকা নেননি এমন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ শতাংশ বা ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে । অন্যদিকে টিকা নিয়েছেন এমন ১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
টিকায় কমছে করোনার জটিলতা ও মৃত্যুঝুঁকি : আইইডিসিআরের গবেষণা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ