ঢাকা ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

পরমাণু শক্তি আমরা শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করব ঃ হাসিনা

  • আপডেট সময় : ০২:১৭:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র নির্মূল ও নিষিদ্ধকরণ চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরমাণু শক্তি আমরা শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করব। সেজন্য আমরা ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি। সেইসঙ্গে একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই কর্তৃপক্ষ ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (ওঅঊঅ)’ সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। এতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সফল বাস্তবায়নে রাশিয়া সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল বৃহস্পতিবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে ইউরেনিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেস্কি লিখাচেভ। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি যুক্ত ছিলেন ভার্চুয়ালি। ঐতিহাসিক এই কমিশনিংয়ের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সস্পর্ক বহু পুরনো। সমতা ও সম্মান এই সম্পর্কের ভিত্তি। যৌথ এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে সবসময় রাশিয়া পাশে থাকবে। ২০২৪ সালের প্ল্যান্টটির প্রথম ইউনিট ও ২০২৬ সালেই উৎপাদনে আসবে দ্বিতীয় ইউনিট। শিডিউল অনুযায়ী শেষ হবে এর নির্মাণকাজ। পুতিন বলেন, এখানে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছে। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ রক্ষা করবে, রূপপুরে এমন প্রযুক্তিই ব্যবহার করা করেছে রোসাটম। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো লাইফটাইমে বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগতসহ সব সহায়তা করবে রাশিয়া। ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে যে সনদ আজ দেওয়া হলো, তার মাধ্যমে পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে বাংলাদেশের প্রথম এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। দুপুর ৩টার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান। এরপর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। স্বাগত বক্তব্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আজ ইউরেনিয়াম ক্লাবে প্রবেশ করছে। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে গিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সব সংস্থার শর্ত প্রতিপালন করেছি। এই কেন্দ্রটি পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পেয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন বলেন, এটি আমাদের গর্বের প্রকল্প। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আগামী বছর জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা সফল হবো। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ওঅঊঅ ও রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ‘রূপকল্প-২০২১’-এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্লান-২০১০’ প্রণয়ন করি। আবার রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিই। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে। তাছাড়া, ওঅঊঅ শুরু থেকেই আমাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। এজন্য আমি রাশিয়ান ফেডারেশন সরকার, ওঅঊঅ, এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি রুশ ফেডারেশনের মহামান্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’ এ সময় তিনি ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি সই এবং বিশেষ আতিথেয়তার স্মৃতিচারণ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে ওঅঊঅ-এর সাবেক মহাপরিচালক ইউকিও আমানো-এর আমন্ত্রণে ভিয়েনা সফরের সময় ওঅঊঅ-এর সদর দফতরে বিশেষজ্ঞবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করি। এ প্রকল্পে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাদের সার্বিক সহায়তা ও মনিটরিংয়ের আহ্বান জানাই। সেই থেকে ওঅঊঅ আমাদের এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা দিয়ে আসছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৭ ও ২০১৮ সালে আমি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করি। ২০২১ ও ২০২২-এ এই কেন্দ্রের যথাক্রমে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করি। আজ এই কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি যুক্ত হলো। বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকে রাশান ফেডারেশন যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যেহেতু বন্ধুপ্রতিম ভারতেও একইরকম একটি প্রকল্প হচ্ছে- সেজন্য আমাদের কিছু জনবলকে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা ভারতেও পাঠিয়েছি।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য আমরা পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছি। যেকোনো ধরনের দুর্যোগে আমাদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকটা খেয়াল রেখে এই প্ল্যান্টের ডিজাইন প্রণয়ন ও নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া, ব্যবহৃত জ্বালানি (স্পেন্ট ফুয়েল) ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা রাশান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছি। রাশান ফেডারেশন এসব স্পেন্ট ফুয়েল তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আমাদের প্রিয় স্বদেশ আজ পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা এসডিজি পুরস্কার, ‘চ্যাম্পিয়ান অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার, ‘সাউথ-সাউথ’ পুরস্কার অর্জন করেছি। তাছাড়া, জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক সংক্রান্ত স্বীকৃতিসহ অনেক আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছি। আমরা জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে দেশ পরিচালনা করছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য দারিদ্র দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা, সার্বজনীন শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃ-স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা কৃষি গবেষণায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। গত ১৫ বছরে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল নিয়ে এখন আমাদের তরুণ প্রজন্ম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান আহরণ করছে।’ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমনস্ক তরুণ প্রজন্মই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দেশ: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন দফা সরকারে থাকার কারণে আজ আমরা বিশ্বের ঐহিত্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি। অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সেগুলোর সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার লিখিত ভাষণে এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে; স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ বীর শহিদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সালাম জানাই।’ ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বন্ধুপ্রতিম রাশান ফেডারেশনের সরকার এবং জনগণের প্রতি- যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অসামান্য সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমাদের এই স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন সময় পেয়েছিলেন। পাকিস্তানিরা এ দেশের জন্য ধ্বংসস্তুপ ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি। স্বাধীন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি টাকাও রিজার্ভ মানি ছিল না। রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ, স্কুল-কলেজ, মসজিদহাসপাতাল সবই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, পাক-বাহিনী ২৭৮টি রেলব্রিজ এবং ২৭০টি সড়ক সেতু গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, ২টি পোর্টে মাইন পুঁতে রেখেছিল, রাশিয়া ও ভারতসহ অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রদের সহায়তা নিয়ে জাতির পিতা পোর্টসহ প্রায় সকল অবকাঠামো ব্যবহার উপযোগী করেছিলেন। তিনি দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করেছিলেন; জিডিপি প্রবৃদ্ধি রেকডর্ ৯ শতাংশের উপরে অর্জন করেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল- তিনি বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন। তিনি ১৯৫৬-’৫৭ সালে প্রাদেশিক সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতিরোধ এবং গ্রামীণ সহায়তা মন্ত্রী থাকাকালে এ অঞ্চলে উৎপাদনমূখী শিল্পায়নের ওপর জোর দিয়ে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি এবং পূর্ব বাংলার রূপপুরে একটিসহ মোট দু’টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ’৭০ সাল পর্যন্ত নামমাত্র জমি অধিগ্রহণ ছাড়া সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তারা কিছুই করেনি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র নয় মাসেই একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। ‘গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব’ শিরোনামে সেই সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ-এ যুক্ত করেছিলেন- “নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবন যাত্রার মানের ক্সবষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে ক্সবদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।” সে লক্ষ্যে তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন; সমুদ্র সম্পদ এমনকি খনিজ সম্পদ জাতীয়করণ করেছিলেন এবং বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে আমাদের গ্যাস ফিল্ডগুলো কিনে নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নিদের্শ দিয়েছিলেন।’ বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম.এ. ওয়াজেদ মিয়াকে প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী কিছু কাজও হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর এই মেগা প্রকল্পটিসহ সব জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মকা- থেমে যায়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এরপর দীর্ঘ ২১ বছর পাকিস্তানি কায়দায় এই দেশ পরিচালিত হয়েছিল। গণতন্ত্র ছিল না। এই ২১ বছর আমরাই জনগণের ভোট-ভাতের জন্য সংগ্রাম করেছি। ’৭৫-এর পর ৬ বছর আমাদের রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। পিতা-মাতা-ভাইদের এবং আত্মীয়-স্বজন হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। মানবাধিকার বলে তখন কিছুই তো ছিল না। খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দূতাবাসগুলোতে চাকরি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সংবিধানের ওপর খড়গ চালানো হয়েছিল। দুঃখী মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছিল।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করি। ২০২০ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট ও পলিসি স্টেটমেন্ট অন পাওয়ার সেক্টর রিফর্মস’ প্রণয়নও অনুমোদন করি। ১৯৯৬ সালে আমরা জ্বালানি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করি। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করি। ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার এ্যাকশন প্লান-২০০০’ প্রণয়ন করি। ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই আমাদের নেওয়া সকল জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি/প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। আবারও হিংস্র জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বেপরোয়া লুটপাট এবং সেনা শাসনের পুরু আবরণে গণতন্ত্র ঢাকা পড়ে। তবে ২০০৮ সাল থেকে পরপর ৩ দফা সরকারে থাকার কারণেই আমরা আজ বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি। অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সেগুলোর সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দেশ।’

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘ক্ষমতায় থাকতে’ ইউনূস মৌলবাদীদের ‘একখানে করেছেন’: গয়েশ্বর

পরমাণু শক্তি আমরা শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করব ঃ হাসিনা

আপডেট সময় : ০২:১৭:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র নির্মূল ও নিষিদ্ধকরণ চুক্তি বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরমাণু শক্তি আমরা শান্তি রক্ষায় ব্যবহার করব। সেজন্য আমরা ‘বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি। সেইসঙ্গে একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই কর্তৃপক্ষ ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (ওঅঊঅ)’ সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। এতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সফল বাস্তবায়নে রাশিয়া সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল বৃহস্পতিবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে ইউরেনিয়াম আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের মহাপরিচালক আলেস্কি লিখাচেভ। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি যুক্ত ছিলেন ভার্চুয়ালি। ঐতিহাসিক এই কমিশনিংয়ের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ্বালানির যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সস্পর্ক বহু পুরনো। সমতা ও সম্মান এই সম্পর্কের ভিত্তি। যৌথ এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে সবসময় রাশিয়া পাশে থাকবে। ২০২৪ সালের প্ল্যান্টটির প্রথম ইউনিট ও ২০২৬ সালেই উৎপাদনে আসবে দ্বিতীয় ইউনিট। শিডিউল অনুযায়ী শেষ হবে এর নির্মাণকাজ। পুতিন বলেন, এখানে ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছে। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশ রক্ষা করবে, রূপপুরে এমন প্রযুক্তিই ব্যবহার করা করেছে রোসাটম। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো লাইফটাইমে বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগতসহ সব সহায়তা করবে রাশিয়া। ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে যে সনদ আজ দেওয়া হলো, তার মাধ্যমে পারমাণবিক স্থাপনা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে বাংলাদেশের প্রথম এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র। দুপুর ৩টার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান। এরপর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। স্বাগত বক্তব্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আজ ইউরেনিয়াম ক্লাবে প্রবেশ করছে। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে গিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সব সংস্থার শর্ত প্রতিপালন করেছি। এই কেন্দ্রটি পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পেয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন বলেন, এটি আমাদের গর্বের প্রকল্প। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আগামী বছর জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা সফল হবো। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ওঅঊঅ ও রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ‘রূপকল্প-২০২১’-এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ‘পাওয়ার সেক্টর মাস্টার প্লান-২০১০’ প্রণয়ন করি। আবার রূপপুর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিই। বন্ধুরাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে। তাছাড়া, ওঅঊঅ শুরু থেকেই আমাদের নানাভাবে সহায়তা করে আসছে। এজন্য আমি রাশিয়ান ফেডারেশন সরকার, ওঅঊঅ, এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি রুশ ফেডারেশনের মহামান্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’ এ সময় তিনি ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি সই এবং বিশেষ আতিথেয়তার স্মৃতিচারণ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে ওঅঊঅ-এর সাবেক মহাপরিচালক ইউকিও আমানো-এর আমন্ত্রণে ভিয়েনা সফরের সময় ওঅঊঅ-এর সদর দফতরে বিশেষজ্ঞবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করি। এ প্রকল্পে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাদের সার্বিক সহায়তা ও মনিটরিংয়ের আহ্বান জানাই। সেই থেকে ওঅঊঅ আমাদের এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা দিয়ে আসছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৭ ও ২০১৮ সালে আমি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটের কংক্রিট ঢালাইয়ের উদ্বোধন করি। ২০২১ ও ২০২২-এ এই কেন্দ্রের যথাক্রমে ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ এর রিঅ্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপন করি। আজ এই কেন্দ্রে পারমাণবিক জ্বালানি যুক্ত হলো। বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকে রাশান ফেডারেশন যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যেহেতু বন্ধুপ্রতিম ভারতেও একইরকম একটি প্রকল্প হচ্ছে- সেজন্য আমাদের কিছু জনবলকে প্রশিক্ষণের জন্য আমরা ভারতেও পাঠিয়েছি।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে এবং ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য আমরা পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছি। যেকোনো ধরনের দুর্যোগে আমাদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে দিকটা খেয়াল রেখে এই প্ল্যান্টের ডিজাইন প্রণয়ন ও নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া, ব্যবহৃত জ্বালানি (স্পেন্ট ফুয়েল) ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা রাশান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছি। রাশান ফেডারেশন এসব স্পেন্ট ফুয়েল তাদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আমাদের প্রিয় স্বদেশ আজ পৃথিবীর বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা এসডিজি পুরস্কার, ‘চ্যাম্পিয়ান অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার, ‘সাউথ-সাউথ’ পুরস্কার অর্জন করেছি। তাছাড়া, জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক সংক্রান্ত স্বীকৃতিসহ অনেক আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেছি। আমরা জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে দেশ পরিচালনা করছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য দারিদ্র দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা, সার্বজনীন শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃ-স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা কৃষি গবেষণায় অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছি। গত ১৫ বছরে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল নিয়ে এখন আমাদের তরুণ প্রজন্ম চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান আহরণ করছে।’ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমনস্ক তরুণ প্রজন্মই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দেশ: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিন দফা সরকারে থাকার কারণে আজ আমরা বিশ্বের ঐহিত্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি। অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সেগুলোর সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার লিখিত ভাষণে এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে; স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ বীর শহিদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সালাম জানাই।’ ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বন্ধুপ্রতিম রাশান ফেডারেশনের সরকার এবং জনগণের প্রতি- যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অসামান্য সহযোগিতা করেছিলেন এবং আমাদের এই স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন সময় পেয়েছিলেন। পাকিস্তানিরা এ দেশের জন্য ধ্বংসস্তুপ ছাড়া কিছুই রেখে যায়নি। স্বাধীন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একটি টাকাও রিজার্ভ মানি ছিল না। রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ, স্কুল-কলেজ, মসজিদহাসপাতাল সবই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, পাক-বাহিনী ২৭৮টি রেলব্রিজ এবং ২৭০টি সড়ক সেতু গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, ২টি পোর্টে মাইন পুঁতে রেখেছিল, রাশিয়া ও ভারতসহ অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্রদের সহায়তা নিয়ে জাতির পিতা পোর্টসহ প্রায় সকল অবকাঠামো ব্যবহার উপযোগী করেছিলেন। তিনি দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করেছিলেন; জিডিপি প্রবৃদ্ধি রেকডর্ ৯ শতাংশের উপরে অর্জন করেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল- তিনি বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন। তিনি ১৯৫৬-’৫৭ সালে প্রাদেশিক সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতিরোধ এবং গ্রামীণ সহায়তা মন্ত্রী থাকাকালে এ অঞ্চলে উৎপাদনমূখী শিল্পায়নের ওপর জোর দিয়ে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি এবং পূর্ব বাংলার রূপপুরে একটিসহ মোট দু’টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ’৭০ সাল পর্যন্ত নামমাত্র জমি অধিগ্রহণ ছাড়া সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তারা কিছুই করেনি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মাত্র নয় মাসেই একটি সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। ‘গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব’ শিরোনামে সেই সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদ-এ যুক্ত করেছিলেন- “নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবন যাত্রার মানের ক্সবষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করিবার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চলে ক্সবদ্যুতীকরণের ব্যবস্থা, কুটিরশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ-ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল রূপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।” সে লক্ষ্যে তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন; সমুদ্র সম্পদ এমনকি খনিজ সম্পদ জাতীয়করণ করেছিলেন এবং বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো থেকে আমাদের গ্যাস ফিল্ডগুলো কিনে নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের নিদের্শ দিয়েছিলেন।’ বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম.এ. ওয়াজেদ মিয়াকে প্রস্তাবিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী কিছু কাজও হয়েছিল। দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর এই মেগা প্রকল্পটিসহ সব জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মকা- থেমে যায়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এরপর দীর্ঘ ২১ বছর পাকিস্তানি কায়দায় এই দেশ পরিচালিত হয়েছিল। গণতন্ত্র ছিল না। এই ২১ বছর আমরাই জনগণের ভোট-ভাতের জন্য সংগ্রাম করেছি। ’৭৫-এর পর ৬ বছর আমাদের রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। পিতা-মাতা-ভাইদের এবং আত্মীয়-স্বজন হত্যার বিচার চাইতে পারিনি। মানবাধিকার বলে তখন কিছুই তো ছিল না। খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। আমাদের দূতাবাসগুলোতে চাকরি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। সংবিধানের ওপর খড়গ চালানো হয়েছিল। দুঃখী মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছিল।’ শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করি। ২০২০ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ‘ভিশন স্টেটমেন্ট ও পলিসি স্টেটমেন্ট অন পাওয়ার সেক্টর রিফর্মস’ প্রণয়নও অনুমোদন করি। ১৯৯৬ সালে আমরা জ্বালানি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করি। ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করি। ‘বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার পাওয়ার এ্যাকশন প্লান-২০০০’ প্রণয়ন করি। ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় এসেই আমাদের নেওয়া সকল জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচি/প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। আবারও হিংস্র জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বেপরোয়া লুটপাট এবং সেনা শাসনের পুরু আবরণে গণতন্ত্র ঢাকা পড়ে। তবে ২০০৮ সাল থেকে পরপর ৩ দফা সরকারে থাকার কারণেই আমরা আজ বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছি। অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সেগুলোর সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। আজকের বাংলাদেশ এক বদলে যাওয়া দেশ।’