নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ছয়তলা বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে ছয় ভরি সোনা, দুই লাখ টাকাসহ বিভিন্ন দামি জিনিস চুরি হয়। গ্রিল কেটে চুরির এ ঘটনা ঘটে গত ২৬ জুন। এর দুই দিন পর ছিল পবিত্র ঈদুল আজহা। লোকজন ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ায় বাসাটি ‘টার্গেট’ করা হয়েছিল।
ওই চুরির ঘটনায় করা মামলার তদন্তে নেমে সম্প্রতি মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে রেজওয়ান আহমেদ (৩৮) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পুলিশের এই বিশেষায়িত শাখা বলছে, গত ১৫ বছরে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় পাঁচ শতাধিক বাসায় গ্রিল কেটে চুরি করেছেন রেজওয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় অন্তত পাঁচটি মামলা রয়েছে। আগেও একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, কলাবাগান, নিউমার্কেট, গুলশান ও বনানী এলাকায় বাসাবাড়িতে চুরি করেন রেজওয়ান। নেশার টাকা জোগাতে প্রতি মাসে চার থেকে পাঁচটি বাসায় চুরি করেন তিনি। রেজওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি জানায়, সন্ধ্যার দিকে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ‘টার্গেট’ ঠিক করেন রেজওয়ান। যে বাসায় আলো জ্বলছে না বা বারান্দায় কাপড়চোপড় ঝুলছে না, তিনি ধরে নেন, ওই বাসায় কেউ নেই। পরে গভীর রাতে বা ভোরে বাসার পেছনের দিক দিয়ে ওই বাসায় ওঠেন। তাঁর সঙ্গে গ্রিল কাটার যন্ত্র থাকে।
‘স্পাইডারম্যানের’ মতো দেয়াল বেয়ে ওপরে উঠে প্রথমে বারান্দা ও জানালার গ্রিল কাটেন। পরে ভেতরে ঢুকে সোনা, টাকাপয়সাসহ দামি জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যান।
ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, হাজারীবাগ এলাকার একটি বস্তিতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন রেজওয়ান। সেখানে একটি চামড়ার কারখানায় কাজ করতেন তাঁর বাবা। স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর কিছুদিন বড় ভাইয়ের ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। এইচএসসি পাস করার পর বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আড্ডা দেওয়া শুরু করেন। জিজ্ঞাসাবাদে রেজওয়ান ডিবিকে জানান, তাঁর স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হওয়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি নাট্য কর্মশালায় প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। একটি শর্টফিল্মে অভিনয়ও করেছিলেন। ওই অভিনয়ের সূত্রে কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। সেই বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ফেনসিডিলের নেশায় আসক্ত হন। পরে নেশার টাকা জোগাড় করতে ফরহাদ নামের এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে গুলশান-বনানী এলাকায় চুরি শুরু করেন। রেজওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি জানায়, শুরুতে তিনি একটি ভ্যান নিয়ে ফরহাদের সঙ্গে থাকতেন। ফরহাদ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে চুরি করতেন। সেখান থেকে ভাগ পেতেন রেজওয়ান। পরে ফরহাদের কাছ থেকে চুরির কৌশল রপ্ত করে নিজেই চুরি শুরু করেন। এরপর ১৫ বছর ধরে চুরি করে আসছেন রেজওয়ান। ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, নেশায় পড়ে অনেক সৃজনশীল ব্যক্তিও নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। চুরি-ছিনতাই করে নেশার টাকা জোগাড় করেন। এটা খুবই দুঃখজনক।


























