সা¤প্রতিককালে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কন্যা ড. নোভা আহমেদ কোনো এক সভায় বলেছেন-আমি আমার মায়ের কন্যা, মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই। কিছুটা দুঃখ-অভিমানে-কষ্টে পিতৃহীন নারী এই কথাগুলো হয়তো বলেছেন।
উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী এই নারী অবলীলায়, অকপটে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কিছু অংশ বলেছিলেন। অনুতাপের স্বীকারোক্তি হিসেবে আরো বলেছিলেন-মৃত মানুষ নিয়ে কখনো খারাপ কথা বলতে হয় না। তার বাবা-মায়ের বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হবার পরে তার বাবা ভাইয়ের পড়াশুনার খরচটুকু দেননি। নিদারুণ-নিষ্ঠুর কথাগুলো শুনতে দর্শকদের যতটুকু কষ্ট লেগেছে, যাদের জীবনে এই ঘটনা ঘটেছে-তারাই শুধু এই মর্মান্তিক সত্যবচন প্রতিমুহূর্তে উপলব্ধি করতে পারে। ড. নোভা আহমেদ আরো জানিয়েছেন-তাদের মনে হতো রাত বুঝি আর কোনদিন সকাল হবে না। দর্শকদের ভরসা জাগিয়ে আরো বলেছেন সকাল অবশ্যই হবে, ধৈর্য্য রাখতে বলেছেন।
ধৈর্য্য এক পরম ব্রত জীবন বাঁকে। ধৈর্য্যের সীমারেখা অসীম মায়েদের জন্য। অসংখ্য মা ধৈর্য্যের কষ্টিপাথরে প্রতিনিয়ত নিজেদের পরীক্ষা দিচ্ছে। মায়েরা দুঃখ, কষ্টে কখনো হারে না। মায়েরা লড়াই করে যায় জীবনের প্রতি মুহূর্তে। চেনা, অচেনা, অজানা গন্তব্যে মায়েরা সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করে সন্তান প্রতিপালনে অবিচল থাকে। রাস্তার পাশে পাগল নারী কখনো মনের ভুলে নিজের সন্তানকে ফেলে অন্যত্র চলে যায় না। বাঘিনী সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে তার সন্তানকে বাঘের ছোবল থেকে দূরে রাখে। মা যেন সর্বজান্তা প্রতি মুহূর্তে যতœশীল আচরণে তার সন্তানকে আগলে রাখে নিরাপত্তার চাদরে। অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে বাঁচানোর তাগিদে মা ভিক্ষাবৃত্তি করে। মা নামের মানুষটা নিজে না খেয়ে ও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয় কষ্ট গোপন করে।
সন্তানকে বাচাঁনোর জন্য মা নিদ্বির্ধায় অঙ্গ দান করে। সন্তানকে অভিশপ্ত গলি থেকে ফিরিয়ে আনতে মা বদ্ধপরিকর হয়। সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে, জমের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে মা দুর্নিবার চেষ্টা করে।
মা হয় লড়াকু। কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন-‘পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা নেই।’ বাবা কি কখনো খারাপ হয়? তবে কিছুক্ষেত্রে বাবা নামক মানুষটা কিছুটা স্বার্থপর হয় অথবা বাবা অনেক সময় সন্তানের দুর্ভাগ্যের কারণ হয়। যা কোনো সন্তানের কাম্য নয়। সন্তানের জন্য বাবাহীন জগৎ ভারসাম্য বিহীন পৃথিবী। বাবা বেঁচে থাকাকালীন দায়িত্বহীন আচরণ, নির্লিপ্ত আচরণ প্রদর্শন সন্তানের জন্য পাহাড়সম দুঃখের বোঝা। এই বোঝার ভার বহন সন্তানের জন্য ভীষণ কষ্টের, তীব্র যন্ত্রণা আর দুঃখের। মায়েরা কখনো সন্তানকে ছেড়ে যায় না; তবে কিছু বাবা সন্তানকে এড়িয়ে যায়। সম্ভবত এই কারণেই মায়েদের নিয়ে একটি অমৃত বাণী প্রচলিত আছে-এড়ফ রং হড়ঃ বাবৎু যিবৎব ঃযধঃ’ং যিু যব পৎবধঃবং সড়ঃযবৎ…..ফিচার লিখেছেন আইনজীবী ফারজানা কাশেমী।