প্রত্যাশা ডেস্ক : প্রেম, সাম্য, মানবতা আর বিদ্রোহের কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র (২৭ আগস্ট) জীবনাবসান হয় বিদ্রোহী কবির। দীর্ঘদিন নির্বাক থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যু হয় কবির। ‘মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই’-কবির এই ইচ্ছা স্মরণে রেখে তাঁকে সমাহিত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশেই।
তাঁর প্রয়াণ দিবসে আজ (২৭ আগস্ট) যথাযোগ্য মর্যাদায় গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতীয় কবিকে স্মরণ করবেন তার ভক্ত এবং বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবির সমাধি প্রাঙ্গণে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাবেন তারা।
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অনন্য। বিশ ও ত্রিশের দশকে অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি। তিনি আমাদের জাতীয় কবি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন। জাতীয় কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে নজরুলের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সফল। রবীন্দ্র-উত্তর সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। নজরুল তার কবিতা, গান ও উপন্যাসে পরাধীন ভারতে, বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে তুলনা করেছেন ধূমকেতুর সঙ্গে। বলেছেন, ‘আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু/দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন’। আর কবি ধূমকেতুর মতো প্রলয়-নাচনে কাঁপন জাগিয়ে হতভম্ব করে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ রাজশক্তিকে।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে (১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী। ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ-দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময়। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে অসুস্থ কবিকে ভারত থেকে সপরিবার বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর তিনি ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র বর্তমান শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (তৎকালীন পিজি হাসপাতালে) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। জাতীয় কবির প্রয়াণ দিবস নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। ঢাকা, ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও কুমিল্লায় কবির স্মৃতিবিজড়িত স্থানসহ সারাদেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আজ আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া সকালে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় কবি নজরুলের ৪৭তম প্রয়াণ দিবস আজ
জনপ্রিয় সংবাদ