প্রত্যাশা ডেস্ক : ভারতে ফের করোনাভাইরাসে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। এ নিয়ে টানা চার দিন ধরে দৈনিক শনাক্ত চার লাখ ছাড়ালো। গতকাল রোববার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও চার লাখ তিন হাজার ৭৩৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। একই সময়ে দৈনিক মৃতের সংখ্যাও চার হাজার ছাড়িয়েছে। তবে শনিবারের তুলনায় তা সামান্য কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৯২ জনের।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯ মে রোববার পর্যন্ত ভারতে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দুই কোটি ২২ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৪ জন। এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ৪২ হাজার ৩৬২ জনের।
আক্রান্তের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থতার সংখ্যাও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন লাখ ৮৬ হাজার ৪৪৪ জন। এখনও পর্যন্ত মোট এক কোটি ৮৩ লাখ ১৭ হাজার ৪০৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ এই মুহূর্তে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩৭ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪৮ জন। ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নমুনা পরীক্ষা ও টিকাদানের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মোট ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৪২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩০ কোটি ২২ লাখ ৭৫ হাজার ৪৭১ জনের। টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৩ জন টিকা পেয়েছে।
ভারতজুড়ে লকডাউনের তাগিদ আইএমএ-এর, মোদি সরকারের ভূমিকায় হতাশা : কোভিডের বাড়বাড়ন্তের প্রতিকার হিসেবে দেশজুড়ে পূর্ণ লকডাউনের সুপারিশ করেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। শনিবার এক বিবৃতিতে নিজেদের এমন সুপারিশের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে সংকটময় অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত উদাসীন মনোভাব ও অনুপযুক্ত পদক্ষেপ দেখে আমরা স্তম্ভিত।’
আইএমের অভিযোগ, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কার্যত ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলেছে সরকার। মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা না বুঝেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বিবৃতিতে আলাদা আলাদা রাজ্যে স্বতন্ত্রভাবে ১০-১৫ দিনের লকডাউনের বদলে দেশজুড়ে পূর্ণ লকডাউনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আইএমএ বলছে, তাদের প্রস্তাব সত্ত্বেও লকডাউন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ এখন প্রতিদিন চার লাখের বেশি করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। দেশজুড়ে অক্সিজেন সংকটের জন্যও মোদি সরকারকে একহাত নিয়েছে আইএমএ। সংস্থাটি বলছে, প্রকৃতপক্ষে ভারতে যথেষ্ট অক্সিজেন রয়েছে, কিন্তু বিতরণ ব্যবস্থায় ভুল হচ্ছে। শুধু আইএমএ নয়, কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতা নিয়ে মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেট। জার্নালটি বলছে, বিপর্যয়ের সময় মোদি যেভাবে নিজের সমালোচনা দমনে উঠেপড়ে লেগেছিলেন, তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে মোদি সরকারের কোনও পরিকল্পনাই নেই। বিজেপি নেতাদেরও বক্তব্য মোটামুটি একই রকমের। তার মধ্যেই কোভিডের এই ধাক্কার পরেও যাতে মোদির জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ থাকে, তার স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ নিয়ে চিন্তিত তারা। বিজেপি নেতারা মানছেন, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশজুড়ে মৃত্যুর মিছিল এবং তার সঙ্গে অক্সিজেন, টিকার অভাবের ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই আঙুল উঠেছে। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে মোদির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার গ্রাফ নি¤œমুখী হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা মনে করছেন, রাজ্যের নির্বাচনে শেষ দুই-তিন দফার ভোটে কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্রের ব্যর্থতার খেসারত দিতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেই সংকট উত্তরণে দেশজুড়ে লকডাউনের তাগিদ দিয়েছে আইএমএ। সূত্র: জি নিউজ।
ভারতে টানা চার দিন ধরে চার লক্ষাধিক করে সংক্রমণ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ