নিজস্ব প্রতিবেদক :ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে বঙ্গবন্ধু টানেল কবে উদ্বোধন হবে, সেই তারিখ জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি জানিয়েছেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে ফার্মগেইট পর্যন্ত অংশ আগামী ২ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হবে। আর কর্ণফুলী নদীর নিচে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রিভার টানেলের উদ্বোধন করা হবে ২৮ অক্টোবর। দুটো প্রকল্পই উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল সোমবার বনানীর সেতু ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ঢাকা শহরের যানজট নিরসনসহ ভ্রমণ সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।”
পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় এ পর্যন্ত যত অবকাঠামো প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সবচেয়ে বড়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এ উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য হবে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। মূল উড়ালসড়কে ওঠানামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প থাকবে।র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াচ্ছে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পের সার্বিক কাজের ৬৫ শতাংশ অগ্রগতির তথ্য দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০২৪ সালের জুন মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। “প্রকল্পটি ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডোরের সড়ক পথের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এছাড়া প্রকল্পটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সংযুক্ত হলে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজতর হবে। এতে করে ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।” ২০১১ সালে হাতে নেওয়া এ প্রকল্প চালু হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। তবে নানা জটিলতায় প্রায় এক যুগ পিছিয়েছে নির্মাণ কাজ।
থাইল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানি ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (৫১%), চীনের শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (৩৪%) এবং সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড (১৫%) যৌথ উদ্যোগে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে ২ হাজার ৪১৩ কো ৮৪ লাখ টাকা। বাকি টাকা দেবে নির্মাতা কনসোর্টিয়াম। আর কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালে অনুমোদনের দুই বছর পর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর সময় এ কাজ কিছুটা গতি হারায়। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে একটি নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বানানো হয়েছে এ টানেল। নির্মাণ কাজ করছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টানেলের টিউব দুটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অপর টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মত। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেইন রয়েছে। এটির ‘সাউথ টিউব’ দিয়ে আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম শহরে এবং উজানের দিকের ‘নর্থ টিউব’ দিয়ে চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমির দিক থেকে আনোয়ারার দিকে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজও রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।
বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পের শুরুর দিকে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। অনুমোদনের দুই বছর পরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে ব্যয় বাড়িয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা করা হয়।