ঢাকা ০২:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

সবকিছুর দাম বাড়লেও মাঝিদের বাড়ে

  • আপডেট সময় : ১০:৩৫:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৩
  • ১২০ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদন : ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর খোলামুড়া ঘাটে ৩০ বছর ধরে নৌকা চালান সেলিম মাঝি। খেয়া পারাপারের আয় দিয়েই চলে তার ছয় জনের সংসার। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়াসহ নানান খরচ সামাল দিয়ে এখন আর খেয়া পারাপারের আয় দিয়ে সংসার টানতে পারছেন না সেলিম মাঝি। তিনি জানান, ২০১০ সালে এই ঘাটে খেয়া পারাপারের ভাড়া ছিল দুই টাকা। সে বছর ভাড়া বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হয়। এরপর গত ১৩ বছরে বাজারে সবকিছুর দাম বাড়লেও, খেয়া পারাপারের ভাড়া আর বাড়েনি। খোলামুড়া ঘাটে সেলিম মাঝির মতো আরও প্রায় ১০০ মাঝি নৌকা চালান। তাদের সবাই বিভিন্ন সময় ভাড়া বাড়ানোর কথা বললেও ঘাটের ইজারাদাররা ভাড়া বাড়াতে দেন না বলে অভিযোগ তাদের। স্থানীয় কয়েকজন জানান, খেয়া পারাপারের ভাড়া না বাড়িয়ে ইজরাদাররা ঘাটের প্রবেশ ফি বারবার বাড়ান। এতে নদী পার হতে যাত্রীদের ১০ টাকা খরচ হলেও মাঝিরা ভাড়া পান মাত্র পাঁচ টাকা। আবার দিন শেষে নৌকার মালিককে জমা বাবদ ১০০ টাকা এবং ঘাটে ১০০ টাকা দিতে হয় মাঝিদের। এ ছাড়া লাইনম্যানকে ১০ টাকা ও পাহারাদারকে দিনে ১০ টাকা করে দিতে হয়। এতে সারা দিন নৌকা চালানোর পর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার বেশি আয় করতে পারেন না তারা। সরেজমিনে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজ ঘাট, চম্পাতলি ঘাট, খোলামুড়া ঘাট ও সোয়ারি ঘাট এলাকায় এমন অবস্থা দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন ঘাটে এখন প্রায় ৬০০ বইঠাচালিত নৌকা চলাচল করে। অধিকাংশ মাঝিই এসব নৌকা ভাড়া নিয়ে চালান। ওয়াইজ ঘাটের মাঝি সাহাবুদ্দিন জানান, ১০ বছর আগে তিনি যখন নৌকা কেনেন, তখন খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। এখন সেই একই নৌকা বানাতে খরচ হয় ৩০ হাজারেরও বেশি। অথচ তখন নদী পারাপারের যে ভাড়া ছিল এখনও তাই আছে। আক্ষেপ করে সাহাবুদ্দিন মাঝি বলেন, সবকিছুর দাম বাড়ে, নৌকার দামও বাড়ে অথচ মাঝিদের আর দাম বাড়ে না। সোয়ারি ঘাট এলাকায় স্বপন মাঝি বলেন, সব ঘাটেই নৌকা পার হতে পাঁচ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। গত ১০ বছরে ঘাটে প্রবেশ ফি এক টাকা থেকে বেড়ে পাঁচ টাকা হয়েছে অথচ নৌকা পারাপারের ভাড়া এক টাকাও বাড়েনি। সারা দিন কষ্ট করে ৫০০ টাকাও থাকে না। তার মধ্যে প্রতিদিন চালানো সম্ভব হয় না। মাস শেষে যা থাকে, তা দিয়ে পরিবারের খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। বুড়িগঙ্গার মাঝিদের মানবেতর জীবন নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বোটম্যান বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ইন্তাজুল হক মিন্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাঝিরা এখানে ইজারাদারদের হাতে জিম্মি। তারা নিজেদের আয় বাড়াতে বারবার ঘাটের প্রবেশ ফি বাড়ালেও নৌকার ভাড়া বাড়ায় না। জানা গেছে, বুড়িগঙ্গার ঘাটগুলোতে ভাড়া নির্ধারণ করে দেন ঘাটের ইজারাদাররা। ইজারা নেওয়ার পর ঘাটের প্রবেশ ফি বাড়ানোতে তাদের আগ্রহ থাকলেও মাঝিদের পারাপার ভাড়া তারা বাড়াতে চান না। ঘাটগুলোর প্রবেশপথে যারা টাকা তোলেন, তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, একেকটি ঘাটে প্রতিদিন ১০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ পারাপার হয়। তবে নৌকা পারাপারের ভাড়া বৃদ্ধি বা ঘাটের প্রবেশ ফি বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাট-সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ঘাটের ইনচার্জ (ইজারাদারের নিয়োগকৃত) বলেন, ইজারাদারদের আসলে কিছু করার নেই। একদিকে সরকার প্রতিবছর দরপত্রের হার বাড়াচ্ছে। আবার বিভিন্ন জায়গাতেও ঘাট থেকে তোলা টাকা পাঠাতে হয়। মাঝিদের ভাড়া না বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘাটের ফি বৃদ্ধির পর আবার মাঝিদের ভাড়া বাড়ালে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হতে পারে এমন আশঙ্কায় ইজারাদাররা তা বৃদ্ধি করেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, বুড়িগঙ্গায় বিভিন্ন ঘাটে চলমান নৌকাগুলোর পরিচালনভার ইজারাদারদের হাতেই থাকে। তারা চাইলে ইজারার শর্তের ভেতরে থেকে ভাড়া কামাতে বা বাড়াতে পারেন। ১৩ বছর ধরে ভাড়া না বাড়ায় মাঝিদের মানবেতর জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নৌকার মাঝিদের বিআইডব্লিউটিএতে অভিযোগ করা উচিত। অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যাবস্থা নিতে পারবে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সবকিছুর দাম বাড়লেও মাঝিদের বাড়ে

আপডেট সময় : ১০:৩৫:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৩

প্রতিবেদন : ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর খোলামুড়া ঘাটে ৩০ বছর ধরে নৌকা চালান সেলিম মাঝি। খেয়া পারাপারের আয় দিয়েই চলে তার ছয় জনের সংসার। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়াসহ নানান খরচ সামাল দিয়ে এখন আর খেয়া পারাপারের আয় দিয়ে সংসার টানতে পারছেন না সেলিম মাঝি। তিনি জানান, ২০১০ সালে এই ঘাটে খেয়া পারাপারের ভাড়া ছিল দুই টাকা। সে বছর ভাড়া বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হয়। এরপর গত ১৩ বছরে বাজারে সবকিছুর দাম বাড়লেও, খেয়া পারাপারের ভাড়া আর বাড়েনি। খোলামুড়া ঘাটে সেলিম মাঝির মতো আরও প্রায় ১০০ মাঝি নৌকা চালান। তাদের সবাই বিভিন্ন সময় ভাড়া বাড়ানোর কথা বললেও ঘাটের ইজারাদাররা ভাড়া বাড়াতে দেন না বলে অভিযোগ তাদের। স্থানীয় কয়েকজন জানান, খেয়া পারাপারের ভাড়া না বাড়িয়ে ইজরাদাররা ঘাটের প্রবেশ ফি বারবার বাড়ান। এতে নদী পার হতে যাত্রীদের ১০ টাকা খরচ হলেও মাঝিরা ভাড়া পান মাত্র পাঁচ টাকা। আবার দিন শেষে নৌকার মালিককে জমা বাবদ ১০০ টাকা এবং ঘাটে ১০০ টাকা দিতে হয় মাঝিদের। এ ছাড়া লাইনম্যানকে ১০ টাকা ও পাহারাদারকে দিনে ১০ টাকা করে দিতে হয়। এতে সারা দিন নৌকা চালানোর পর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার বেশি আয় করতে পারেন না তারা। সরেজমিনে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজ ঘাট, চম্পাতলি ঘাট, খোলামুড়া ঘাট ও সোয়ারি ঘাট এলাকায় এমন অবস্থা দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন ঘাটে এখন প্রায় ৬০০ বইঠাচালিত নৌকা চলাচল করে। অধিকাংশ মাঝিই এসব নৌকা ভাড়া নিয়ে চালান। ওয়াইজ ঘাটের মাঝি সাহাবুদ্দিন জানান, ১০ বছর আগে তিনি যখন নৌকা কেনেন, তখন খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। এখন সেই একই নৌকা বানাতে খরচ হয় ৩০ হাজারেরও বেশি। অথচ তখন নদী পারাপারের যে ভাড়া ছিল এখনও তাই আছে। আক্ষেপ করে সাহাবুদ্দিন মাঝি বলেন, সবকিছুর দাম বাড়ে, নৌকার দামও বাড়ে অথচ মাঝিদের আর দাম বাড়ে না। সোয়ারি ঘাট এলাকায় স্বপন মাঝি বলেন, সব ঘাটেই নৌকা পার হতে পাঁচ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। গত ১০ বছরে ঘাটে প্রবেশ ফি এক টাকা থেকে বেড়ে পাঁচ টাকা হয়েছে অথচ নৌকা পারাপারের ভাড়া এক টাকাও বাড়েনি। সারা দিন কষ্ট করে ৫০০ টাকাও থাকে না। তার মধ্যে প্রতিদিন চালানো সম্ভব হয় না। মাস শেষে যা থাকে, তা দিয়ে পরিবারের খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। বুড়িগঙ্গার মাঝিদের মানবেতর জীবন নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বোটম্যান বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ইন্তাজুল হক মিন্টু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাঝিরা এখানে ইজারাদারদের হাতে জিম্মি। তারা নিজেদের আয় বাড়াতে বারবার ঘাটের প্রবেশ ফি বাড়ালেও নৌকার ভাড়া বাড়ায় না। জানা গেছে, বুড়িগঙ্গার ঘাটগুলোতে ভাড়া নির্ধারণ করে দেন ঘাটের ইজারাদাররা। ইজারা নেওয়ার পর ঘাটের প্রবেশ ফি বাড়ানোতে তাদের আগ্রহ থাকলেও মাঝিদের পারাপার ভাড়া তারা বাড়াতে চান না। ঘাটগুলোর প্রবেশপথে যারা টাকা তোলেন, তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, একেকটি ঘাটে প্রতিদিন ১০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ পারাপার হয়। তবে নৌকা পারাপারের ভাড়া বৃদ্ধি বা ঘাটের প্রবেশ ফি বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ঘাট-সংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ঘাটের ইনচার্জ (ইজারাদারের নিয়োগকৃত) বলেন, ইজারাদারদের আসলে কিছু করার নেই। একদিকে সরকার প্রতিবছর দরপত্রের হার বাড়াচ্ছে। আবার বিভিন্ন জায়গাতেও ঘাট থেকে তোলা টাকা পাঠাতে হয়। মাঝিদের ভাড়া না বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘাটের ফি বৃদ্ধির পর আবার মাঝিদের ভাড়া বাড়ালে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হতে পারে এমন আশঙ্কায় ইজারাদাররা তা বৃদ্ধি করেন না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, বুড়িগঙ্গায় বিভিন্ন ঘাটে চলমান নৌকাগুলোর পরিচালনভার ইজারাদারদের হাতেই থাকে। তারা চাইলে ইজারার শর্তের ভেতরে থেকে ভাড়া কামাতে বা বাড়াতে পারেন। ১৩ বছর ধরে ভাড়া না বাড়ায় মাঝিদের মানবেতর জীবন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নৌকার মাঝিদের বিআইডব্লিউটিএতে অভিযোগ করা উচিত। অভিযোগ পেলে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যাবস্থা নিতে পারবে।