উৎস ধ্বংস করতে বাসাবাড়ির বেইজমেন্টেও নতুন কীটনাশক (লার্ভিসাইড) বিটিআই ছিটানো হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.আতিকুল ইসলাম।
কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে চলার মধ্যে মশা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এই ওষুধ ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি। সোমবার থেকেই এ জৈব কীটনাশক মাঠ পর্যায়ে ছিটানোর কাজ শুরু হয়েছে। এই কীটনাশকের পুরো নাম ব্যাসিলাস থুরিংয়েইনসিস ইসরায়েলেনসিস। এটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট একটি ব্যাকটেরিয়া, যা মাটিতে পাওয়া যায়। ১৯৭৫ সালে ইসরায়েলের একটি পরিত্যক্ত পুকুরে প্রথম এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। বনানীর ৪৭ নম্বর সড়কের পাশে গুলশান লেকে বিটিআই ছিটানোর মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। উদ্বোধন শেষে মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মশা নিয়ে জরিপে তথ্য অনুযায়ী যত লার্ভা পাওয়া যায় তার ৪৩ শতাংশই মেলে বাড়ির বেইজমেন্টে। এজন্য এসব জায়গায় বিটিআই প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএনসিসি। এ কাজে নগরবাসীর সহায়তা চেয়ে তিনি বলেন, “বেইজমেন্ট আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও বেইজমেন্টে ওষুধ দেওয়া আমাদের কথা না। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা দেব। আমি নগরবাসীকে অনুরোধ করছি আপনারা আমাদের সাহায্য করবেন আমরা যেন বেইজমেন্টে গিয়ে বিটিআই দিয়ে আসতে পারি।” মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন দেশে এ ধরনের জৈব কীটনাশক বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশেও এটা চালু করা যায় কি না তা ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। “এটা যদি ফার্মেসিতে অ্যাভেইলেবল হয়, তাহলে যে কেউ এটা কিনে ব্যবহার করতে পারবে। আমি অনুরোধ করব যারা এ ধরনের ব্যবসা করতে চান তারা বিষয়টি ভেবে দেখতে পারেন। সিটি করপোরেশন তো ব্যবসা করবে না।”
মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, “এটা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন। গত ৪০ বছর ধরে ঢাকায় মশার লার্ভা ধংসে টেমিফস ওষুধ ব্যবহার করা হত। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত পাশের দেশ ভারতেও বিটিআই ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশেও কীটতত্ত্ববিদসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পর বিটিআই ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। “তারা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন বিটিআই আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। অনেক প্রক্রিয়া শেষে বিটিআই আনা হয়েছে। আজ এটার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগ শুরু হয়েছে।”
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বিটিআই প্রয়োগের সুফল পেতে সঠিকভাবে পরিমাপ করাটা জরুরি। এজন্য আগামী পাঁচদিন এ বিষয়ে ডিএনসিসির কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে ছিটানো হবে ওই জৈব কীটনাশক।
“এর মিশ্রণ তৈরির একটা মাপ আছে, দশ লিটার পানিতে ৩টা প্যাকেট অর্থাৎ ৭৫ গ্রাম বিটিআই দিতে হবে। এক গ্রাম বিটিআই ছিটাতে হবে এক স্কয়ার মিটার এলাকায়। ৭৫ গ্রাম ওষুধ ৭৫ স্কয়ার মিটার জায়গায় দিতে হবে, এটা নিশ্চিত করাই মূল বিষয়। এই অংকটা শেখা, ৭৫ মিটার জায়গার জন্য কয়টা স্টেপ দিতে হবে জানা জরুরি। এসব বিষয়েই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তাদের।” এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ৭৩২ জনে। এর মধ্যে অগাস্টের প্রথম ৬ দিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪ হাজার ৯০০ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩১৩ জনের। তাদের মধ্যে ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে অগাস্টের ছয় দিনে। অর্থাৎ, প্রতিদিন ১০ জন বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে ডেঙ্গুতে।
ডেঙ্গুতে আরো ১৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৭৫১: এদিকে রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত (একদিনে) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন করে ২৭৫১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১১৯ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬৩২ জন। গতকাল সোমবার (৭ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৫৭২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৪ হাজার ৬৫২ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪ হাজার ৯২০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৪৮৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৬ হাজার ৭২০ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩২ হাজার ৭৬৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৯ হাজার ৫৮৪ জন। ঢাকায় ৩১ হাজার ৮১০ এবং ঢাকার বাইরে ২৭ হাজার ৭৭৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৩২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এডিস মশার উৎস ধ্বংসকারী কীটনাশক লার্ভিসাইড বিটিআই প্রয়োগ শুরু
জনপ্রিয় সংবাদ