নিজস্ব প্রতিবেদক: ডেঙ্গু এখন আর শুধু রাজধানীবাসীর নয়, সারা দেশেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তার বেশির ভাগই ঢাকার বাইরের।
এডিস মশাবাহিত রোগের দেশজুড়ে বিস্তারের মধ্যে এবছর এই প্রথম ঢাকার চেয়ে বাইরের রোগী বেশি দেখা গেল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে মোট ১৭৫৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৯১০ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে; ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৪৫ জন। তাদের নিয়ে এবছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ২৭ হাজার ৫৪৭ জনে। শুধু জুলাই মাসের ১৯ দিনেই ভর্তি হয়েছেন ১৯ হাজার ৫৬৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ১৭ হাজার ২৪৩ জন এবং ঢাকার বাইরে জেলাগুলোতে ১০ হাজার ৩০৪ জন। যে ২৭ হাজারের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৯ হাজার ৫৬৯ জনই জুলাই মাসের ১৯দিনের। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫৯৩৭ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩৫২২ জন এবং ঢাকার বাইরে ২৪১৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে আরও ৯ জন মারা গেছেন। তাদের নিয়ে এ রোগে এবছর মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়াল ১৫৫ জনে। তাদের মধ্যে ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে চলতি জুলাই মাসের ১৯ দিনে।
গত একদিনে যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ৮ জন মারা গেছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং ১ জন ঢাকার বাইরে। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ জনের। জুলাইয়ের প্রথম ১৯দিনেই সেই সংখ্যা বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১০৩৬ জন এবং জুন মাসে ৫৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুন মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন। এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।
ডেঙ্গুতে আরও ৯ মৃত্যু, হাসপাতালে ১৭৫৫ জন
এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৫৫ জন এবং এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন। এরমধ্যে ঢাকায় মারা গেছেন ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ জন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু ১৫৫ জন। ৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য থেকে এসব জানা যায়। ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৮৪৫ জন ঢাকার এবং ঢাকার বাইরে ৯১০ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৫ হাজার ৯৩৭ জন রোগী ভর্তি আছে। এরমধ্যে ঢাকাতেই ৩ হাজার ৫২২ জন, আর বাকি ২ হাজার ৪১৫ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে। এই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫৪৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। ছাড়া পেয়েছেন ২১ হাজার ৪৫৫ জন।
কাজে ফিরছেন প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা
ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় ও চারটি শর্তসাপেক্ষে আগামীকাল শনিবার (২২ জুলাই) থেকে কর্মস্থলে ফিরছেন প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ কথা জানায় সংগঠনটি। সংগঠনের সভাপতি ডা. জাবির হোসেন বলেন, আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জুলাই ভাতার পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়। তাছাড়া প্রতিমাসে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা, কর্মদিবস কমিয়ে কর্ম ঘণ্টা ঠিক রেখে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ দেওয়া, আন্দোলনের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর ওপর অ্যাকাডেমিক হয়রানি না করার আশ্বাসও দেওয়া হয়। সেসব আশ্বাসের ভিত্তিতে এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আগামী শনিবার থেকে কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো যদি বাস্তবায়িত করা না হয়, তাহলে ফের আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাব।
যে চার আশ্বাসে কর্মস্থলে ফিরছেন-
ভাতা ৫ হাজার বাড়িয়ে সাময়িকভাবে ২৫ হাজার করা হয়েছে। এবং আগামী ৬ মাস পর সেটা আরও এক দফায় বাড়ানো হোক; ভাতা প্রতিমাসে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক (ঋঈচঝ ট্রেইনিদের); কর্মদিবস কমিয়ে কর্ম ঘণ্টা ঠিক রেখে প্রাইভেট প্রাকটিসের সুযোগ করে দেওয়া হোক (রেসিডেন্ট এবং নন রেসিডেন্টদের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে পাশ হওয়ার ভিত্তিক); আন্দোলনের কারণে কোনো ছাত্র-ছাত্রীর ওপর একাডেমিকভাবে কোনো হ্যারাসমেন্ট করা যাবে না। আগামীকাল শনিবার (২২ জুলাই) প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়ে চিকিৎসকরা কর্মস্থলে যোগ দেবেন বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে। এ সময় পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি অ্যাসোসিয়েশনের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুন নবী উপস্থিত ছিলেন।
ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বাইরের রোগী বেশি আরও ৯ মৃত্যু, হাসপাতালে ১৭৫৫ জন
জনপ্রিয় সংবাদ