আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধসেনারা (কমব্যাট) চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইরাক ত্যাগ করবে। তবে ইরাকি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার কাজ অব্যাহত রাখবে মার্কিন সেনারা। গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
হোয়াইট হাউসে ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-খাদেমির সঙ্গে বৈঠকের পর এই ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। গতকাল সোমবার বাইডেনের সঙ্গে খাদেমির বৈঠক হয়। বৈঠকে ইরাকে আর বিদেশি যুদ্ধসেনার প্রয়োজন নেই বলে বাইডেনের কাছে তুলে ধরেন ইরাকি প্রধানমন্ত্রী।
বাইডেন জানান, ইরাকে নতুন একটা পর্যায় শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
ইরাকি প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তাদের সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। তাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে—অর্থনীতি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি।
ইরাকে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা রয়েছে। তারা জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) মোকাবিলায় স্থানীয় বাহিনীগুলোকে সহায়তা করছে।
বাইডেনের ঘোষণার পরও ইরাক সমসংখ্যক মার্কিন সেনা থাকতে পারে। তারা ইরাকি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেবে। ফলে বাইডেনের ঘোষণাকে ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি সহায়তামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত বছর ইরাকের রাজধানী বাগদাদে দেশটির ইরান-সমর্থিত এক শিয়া নেতা ও ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলায়মানি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন। এ ঘটনার পর থেকে ইরাকে মার্কিন সেনাদের উপস্থিতির বিষয়টি একটি বড় ইস্যু হয়ে ওঠে।
ইরান-সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো ইরাক থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দাবি জোরদার করে। তারা এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খাদেমির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ইরাকি প্রধানমন্ত্রী খাদেমি ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। বাইডেনের ইরাক থেকে মার্কিন যুদ্ধসেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা খাদেমির জন্য স্বস্তি বয়ে আনতে পারে।
আইএসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জোটের লড়াইয়ের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে ইরাকে সবশেষ মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল। মোতায়েন করা সেনাদের মধ্যে বেশির ভাগ সদস্যকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রত্যাহার করে নেন।
বাগদাদ প্রায় তিন বছর আগে ঘোষণা দেয় যে ইরাকে আইএস পরাজিত হয়েছে। তবে দেশটিতে এখনো আইএস সক্রিয় রয়েছে। তারা সময়-সময় রক্তক্ষয়ী হামলা চালাচ্ছে।
অন্যদিকে, ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনারা প্রায়ই ইরানপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দিক থেকে হামলার নিশানা হচ্ছে বলে অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। এখন বাইডেন ইরাক থেকে মার্কিন যুদ্ধসেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের ইতি টানছেন।
চলতি বছর আফগানিস্তান থেকেও সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করবে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, জর্জ ডব্লিউ বুশের শুরু করা আফগান যুদ্ধেরও সমাপ্তি ঘটাচ্ছেন বাইডেন।
বছরের শেষ নাগাদ ইরাক ছাড়বে মার্কিন যুদ্ধসেনা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ