ঢাকা ০১:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ একদিনে রেকর্ড আটজনের মৃত্যু

  • আপডেট সময় : ০২:৫৩:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩
  • ৭৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বাড়ছে। কিন্তু ডেঙ্গুরোগীদের শতভাগ বা পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরবরাহ করতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অনেক বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য অধিদপ্তরের হাতে নেই। ফলে ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত যে তথ্য অধিদপ্তর দিচ্ছে সেটিকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকৃত বাস্তব চিত্র বলা যাবে না। তবে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলছে অধিদপ্তর।
গতকাল সোমবার দেশের চলমান ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গুর নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন।
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। যা চলতি বছর একদিনে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ জনে। এর আগে গত ১৫ জুলাই ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ সাতজনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৮৯ ডেঙ্গুরোগী। এ নিয়ে বর্তমানে ৫ হাজার ৪৪১ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, রোববার (১৬ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৮৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৪৭ জন ও ঢাকার বাইরের ৭৪২ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৩৫৩ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯১২ জন। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে ডা. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর নমুনা পরীক্ষার সব তথ্য আমাদের কাছে নেই। কোভিডের সময় তথ্য সংরক্ষণ আমাদের জন্য পসিবল ছিল, কারণ সেটির ডিজিটাল সিস্টেম ছিল। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই ডাটা এন্ট্রি অপারেটর প্রোভাইড করা হয়েছিল। যে কারণে কোভিডের প্রায় শতভাগ তথ্য আমরা সরবরাহ করতে পারতাম। এ গোটা প্রক্রিয়াটির জন্য অনেক জনবল প্রয়োজন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুরোগীদের যথাসাধ্য তথ্য সরবরাহের আমরা চেষ্টা করছি। পরবর্তী সময়ে অটোমেশন সিস্টেম চালু হলে অটোমেটিক আমরা তথ্যগুলো পেয়ে যাবো। তখন আর তথ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না। ডা. শাহাদাৎ হোসেন আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে আমারদের যোগাযোগ ছিল না। কোভিডের সময় তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া শুরু করি। আরও ৩০টি হাসপাতাল আগামী কদিনের মধ্যে ডেঙ্গুরোগীর তথ্য দেবে। এ তথ্যগুলো দিতে এরই মধ্যে আমরা সেসব হাসপাতালকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ক্রমান্বয়ে প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল যেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে শতভাগ তথ্য দেয়, সে ধরনের উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি। তিনি বলেন, ডেঙ্গুবিষয়ক যে তথ্যগুলো আমরা নিয়মিত দিই, এর বাইরেও বেসরকারি কিছু তথ্য আমাদের কাছে আসে, কিন্তু সেগুলো ইনকমপ্লিট হওয়ায় আমরা সেসব তথ্য দিতে পারি না। আমাদের কিন্তু শুধু কতজন রোগী ভর্তি আছে বা আক্রান্ত হয়েছে, সেগুলো পেলেই হয় না, রোগীর নাম, বাবার নামসহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাও নিতে হয়। এমনকি সেগুলো আবার সিটি করপোরেশনেও পাঠাতে হয়। আশা করি, ভবিষ্যতে এ জায়গাটি নিয়ে আমরা আরও ইমপ্রুভ করবো। এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। প্রতিটি হাসপাতালে আমাদের ডেঙ্গু কর্নার আছে, ইনফরমেশন ডেস্ক আছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় যারা কাজ করবে, তাদের আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটি হাসপাতালেই পর্যাপ্ত শয্যা প্রস্তুত আছে। তিনি বলেন, শুধু ডিএনসিসি ডেডিকেটেড ডেঙ্গু হাসপাতালেই ৮০০টি শয্যা রেখেছি। এছাড়া মুগদা হাসপাতালে ৬০০টি, ঢাকা মেডিকেলে ১২০টি, সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ১৯৫টি, শিশু হাসপাতালে ৪৪টি, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১২০টি, কুর্মিটোলায় ২৫০টি, কুয়েত মৈত্রীতে ৭২টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, ঢাকা সিটির বাইরে দেশের প্রতিটি উপজেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত ডেঙ্গুর পৃথক কর্নার এবং শয্যা প্রস্তুত আছে। ফলে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার আরও বাড়লেও চিকিৎসাসেবায় আমাদের প্রস্তুতির কোনো কমতি নেই।
ডিএনসিসি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ঘোষণা, হটলাইন চালু: ডেঙ্গু রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ৮০০ শয্যার ডিএনসিসি হাসপাতালকে ‘ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। চালু করা হয়েছে হটলাইন সেবা। এছাড়া সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার এক সরকারি তথ্যবিবরণীতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, এর আগে সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের ডেঙ্গু বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু হ্রাসে আপডেটেড ডেঙ্গু চিকিৎসা গাইডলাইন সরবরাহ করা হয়েছে। তথ্যবিবরণীতে আরও জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে ১৬২৬৩ হটলাইন সেবা চালু রয়েছে।
বদলে গেছে ডেঙ্গুর লক্ষণ: বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি ডেঙ্গুর লক্ষণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁদের মতে ডেঙ্গুর সাম্প্রতিক লক্ষণগুলো আগে যেমন ছিল, এখন তা পাল্টেছে। আগে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো ছিল – > শুরুতেই জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, চামড়ায় লালচে দাগ।
সম্প্রতি ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে: প্রায় সময় জ্বর আসছে না, প্রাথমিক পর্যায়েই ডায়ারিয়া ও শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, বমি, পেটে-বুকে পানি আসা, শরীরে খিঁচুনি।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিপিইর ৯ নির্দেশনা: ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে ৯টি নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। গত রোববার (১৬ জুলাই) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সংশ্লিষ্ট সকল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অবহিত করা যাচ্ছে যে- দেশে এডিস মশার বিস্তার ও এর মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নি¤েœাক্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন, সতর্ক হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
১. অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এর আশেপাশে যেসব জায়গায় স্বচ্ছ পানি জমার সম্ভাবনা থাকে (যেমন- প্রতিষ্ঠানের ছাদ, নির্মাণাধীন ভবন, ফুলের টব, বাগান, নালা, পানির ট্যাপের আশেপাশের এলাকা, পানির পাম্প, ফ্রিজ বা এসির পানি জমার স্থান, পানির বদনা, বালতি, হাইকমোড, আইসক্রিম বক্স, প্লাস্টিক বক্স, ডাবের খোসা, নারিকেলের মালা, টায়ার ইত্যাদি) সেসব জায়গা চিহ্নিত করে একদিন পরপর পরিষ্কার করতে হবে।
২. অব্যবহৃত পানির পাত্র ধ্বংস অথবা উল্টে রাখতে হবে যেন পানি না জমে। ৩. অব্যবহৃত হাই কমোডে হারপিক ঢেলে ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে। ৪. লো-কমোডের প্যানে হারপিক ঢেলে বস্তা বা অন্য কিছু দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। ৫. কোনো জায়গায় জমা পানি থাকলে লার্ভিসাইড স্প্রে করতে হবে অথবা জমা পানি নিষ্কাশন করতে হবে। দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। ৬. ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার সঙ্গে সমন্বিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ৭. ডেঙ্গু জ্বরে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুস্থ থাকতে হবে। ৮. শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়গুলো অবহিত করতে হবে। ৯. উপরের সকল বিষয়গুলো বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত উদ্যোগ রাখতে হবে।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ একদিনে রেকর্ড আটজনের মৃত্যু

আপডেট সময় : ০২:৫৩:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু সংক্রমণের হার বাড়ছে। কিন্তু ডেঙ্গুরোগীদের শতভাগ বা পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরবরাহ করতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অনেক বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য অধিদপ্তরের হাতে নেই। ফলে ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত যে তথ্য অধিদপ্তর দিচ্ছে সেটিকে দেশে ডেঙ্গুর প্রকৃত বাস্তব চিত্র বলা যাবে না। তবে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলছে অধিদপ্তর।
গতকাল সোমবার দেশের চলমান ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গুর নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন।
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। যা চলতি বছর একদিনে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ জনে। এর আগে গত ১৫ জুলাই ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ সাতজনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৮৯ ডেঙ্গুরোগী। এ নিয়ে বর্তমানে ৫ হাজার ৪৪১ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, রোববার (১৬ জুলাই) সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৮৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৪৭ জন ও ঢাকার বাইরের ৭৪২ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৩৫৩ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯১২ জন। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে ডা. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর নমুনা পরীক্ষার সব তথ্য আমাদের কাছে নেই। কোভিডের সময় তথ্য সংরক্ষণ আমাদের জন্য পসিবল ছিল, কারণ সেটির ডিজিটাল সিস্টেম ছিল। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই ডাটা এন্ট্রি অপারেটর প্রোভাইড করা হয়েছিল। যে কারণে কোভিডের প্রায় শতভাগ তথ্য আমরা সরবরাহ করতে পারতাম। এ গোটা প্রক্রিয়াটির জন্য অনেক জনবল প্রয়োজন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুরোগীদের যথাসাধ্য তথ্য সরবরাহের আমরা চেষ্টা করছি। পরবর্তী সময়ে অটোমেশন সিস্টেম চালু হলে অটোমেটিক আমরা তথ্যগুলো পেয়ে যাবো। তখন আর তথ্য সরবরাহে কোনো সমস্যা হবে না। ডা. শাহাদাৎ হোসেন আরও বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে আমারদের যোগাযোগ ছিল না। কোভিডের সময় তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া শুরু করি। আরও ৩০টি হাসপাতাল আগামী কদিনের মধ্যে ডেঙ্গুরোগীর তথ্য দেবে। এ তথ্যগুলো দিতে এরই মধ্যে আমরা সেসব হাসপাতালকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ক্রমান্বয়ে প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল যেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে শতভাগ তথ্য দেয়, সে ধরনের উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি। তিনি বলেন, ডেঙ্গুবিষয়ক যে তথ্যগুলো আমরা নিয়মিত দিই, এর বাইরেও বেসরকারি কিছু তথ্য আমাদের কাছে আসে, কিন্তু সেগুলো ইনকমপ্লিট হওয়ায় আমরা সেসব তথ্য দিতে পারি না। আমাদের কিন্তু শুধু কতজন রোগী ভর্তি আছে বা আক্রান্ত হয়েছে, সেগুলো পেলেই হয় না, রোগীর নাম, বাবার নামসহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাও নিতে হয়। এমনকি সেগুলো আবার সিটি করপোরেশনেও পাঠাতে হয়। আশা করি, ভবিষ্যতে এ জায়গাটি নিয়ে আমরা আরও ইমপ্রুভ করবো। এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। প্রতিটি হাসপাতালে আমাদের ডেঙ্গু কর্নার আছে, ইনফরমেশন ডেস্ক আছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় যারা কাজ করবে, তাদের আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটি হাসপাতালেই পর্যাপ্ত শয্যা প্রস্তুত আছে। তিনি বলেন, শুধু ডিএনসিসি ডেডিকেটেড ডেঙ্গু হাসপাতালেই ৮০০টি শয্যা রেখেছি। এছাড়া মুগদা হাসপাতালে ৬০০টি, ঢাকা মেডিকেলে ১২০টি, সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ১৯৫টি, শিশু হাসপাতালে ৪৪টি, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১২০টি, কুর্মিটোলায় ২৫০টি, কুয়েত মৈত্রীতে ৭২টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, ঢাকা সিটির বাইরে দেশের প্রতিটি উপজেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত ডেঙ্গুর পৃথক কর্নার এবং শয্যা প্রস্তুত আছে। ফলে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার আরও বাড়লেও চিকিৎসাসেবায় আমাদের প্রস্তুতির কোনো কমতি নেই।
ডিএনসিসি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ঘোষণা, হটলাইন চালু: ডেঙ্গু রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ৮০০ শয্যার ডিএনসিসি হাসপাতালকে ‘ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। চালু করা হয়েছে হটলাইন সেবা। এছাড়া সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ ডেঙ্গু কর্নার চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার এক সরকারি তথ্যবিবরণীতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে জানানো হয়েছে, এর আগে সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ১০০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সব হাসপাতালে চিকিৎসকদের ডেঙ্গু বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু হ্রাসে আপডেটেড ডেঙ্গু চিকিৎসা গাইডলাইন সরবরাহ করা হয়েছে। তথ্যবিবরণীতে আরও জানানো হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে স্বাস্থ্যসেবা পেতে ১৬২৬৩ হটলাইন সেবা চালু রয়েছে।
বদলে গেছে ডেঙ্গুর লক্ষণ: বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি ডেঙ্গুর লক্ষণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁদের মতে ডেঙ্গুর সাম্প্রতিক লক্ষণগুলো আগে যেমন ছিল, এখন তা পাল্টেছে। আগে ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো ছিল – > শুরুতেই জ্বর, শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, চামড়ায় লালচে দাগ।
সম্প্রতি ডেঙ্গুর লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে: প্রায় সময় জ্বর আসছে না, প্রাথমিক পর্যায়েই ডায়ারিয়া ও শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, বমি, পেটে-বুকে পানি আসা, শরীরে খিঁচুনি।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ডিপিইর ৯ নির্দেশনা: ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে ৯টি নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। গত রোববার (১৬ জুলাই) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন সংশ্লিষ্ট সকল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের অবহিত করা যাচ্ছে যে- দেশে এডিস মশার বিস্তার ও এর মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নি¤েœাক্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন, সতর্ক হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
১. অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এর আশেপাশে যেসব জায়গায় স্বচ্ছ পানি জমার সম্ভাবনা থাকে (যেমন- প্রতিষ্ঠানের ছাদ, নির্মাণাধীন ভবন, ফুলের টব, বাগান, নালা, পানির ট্যাপের আশেপাশের এলাকা, পানির পাম্প, ফ্রিজ বা এসির পানি জমার স্থান, পানির বদনা, বালতি, হাইকমোড, আইসক্রিম বক্স, প্লাস্টিক বক্স, ডাবের খোসা, নারিকেলের মালা, টায়ার ইত্যাদি) সেসব জায়গা চিহ্নিত করে একদিন পরপর পরিষ্কার করতে হবে।
২. অব্যবহৃত পানির পাত্র ধ্বংস অথবা উল্টে রাখতে হবে যেন পানি না জমে। ৩. অব্যবহৃত হাই কমোডে হারপিক ঢেলে ঢাকনা বন্ধ করে রাখতে হবে। ৪. লো-কমোডের প্যানে হারপিক ঢেলে বস্তা বা অন্য কিছু দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে। ৫. কোনো জায়গায় জমা পানি থাকলে লার্ভিসাইড স্প্রে করতে হবে অথবা জমা পানি নিষ্কাশন করতে হবে। দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। ৬. ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার সঙ্গে সমন্বিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ৭. ডেঙ্গু জ্বরে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সুস্থ থাকতে হবে। ৮. শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়গুলো অবহিত করতে হবে। ৯. উপরের সকল বিষয়গুলো বাস্তবায়নে ব্যক্তিগত উদ্যোগ রাখতে হবে।