নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারীর দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যয়কর অবস্থা এখন চলছে দেশে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউন দিয়ে রাখলেও সংক্রমণ-মৃত্যু কোনোটিই কমছে না। এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী, তা ঠিক করতে গুরুত্বপূর্ণ এক সভায় বসছে সরকার।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এই বৈঠক হবে। তিনি বলেন, “কালকে আমরা মিটিং করব। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সচিবালয়ে বড় মিটিং অনুষ্ঠিত হবে।”
দেশে দৈনিক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু দুটো ক্ষেত্রেই রেকর্ড গড়ার দিনে এই সিদ্ধান্ত জানালেন তিনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সোমবার জানায়, এদিন সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে রেকর্ড ১৫ হাজার ১৯২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত এবং ২৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসের ডেল্টা সংক্রমণে গত কয়েক মাস ধরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও এক দিনে এত আক্রান্ত ও মৃত্যু বাংলাদেশ আগে দেখেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউন জারি করা হলেও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় নয় দিন তা শিথিল করা হয়েছিল। ঈদের ছুটির পরেই সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড হল। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, অগাস্ট মাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। চলমান ‘কঠোর লকডাউন’ ৫ অগাস্ট পর্যন্ত চালানোর ঘোষণা রয়েছে। সংক্রমণ কমাতে বিশেষজ্ঞরা লকডাউনের পক্ষে বললেও তা আবার মানুষকে জীবিকার সঙ্কটে ফেলছে, সেটাও সরকারকে ভাবতে হচ্ছে। এই দোটানার মধ্যে লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তা মঙ্গলবারের সভায়ই ঠিক হবে। ‘বড়’ সভা বললেও এই সভায় কারা কারা থাকছেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছিলেন, সংক্রমণ যে গতিতে ছড়াচ্ছে, তাতে এখন কঠোর বিধি-নিধেষের কোনো বিকল্প নেই।
বিধিনিষেধে শিল্প-কারখানা খোলা রাখলে ব্যবস্থা : করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শিল্পকারখানা খোলার প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান। খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত মিল-কারখানা; কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহন, সংরক্ষণ এবং ওষুধ শিল্পকারখানা বাদে সব শিল্পকারখানা, সরকারি-বেসরকারি অফিস বিধিনিষেধে বন্ধ থাকার কথা। বিধিনিষেধের মধ্যেও অনেকে শিল্পকারখানা চালু রেখেছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ খুলে থাকলে তা পর্যবেক্ষণ করছি, কারা খুলছে? যদি খুলে থাকে, প্রমাণ পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে কঠোর বিধিনিষেধের কোনো বিকল্প নেই। করোনা যেভাবে ছড়িয়ে গেছে, সে বিষয় নিয়ে আজ ক্যাবিনেটে আলোচনা হয়েছে।’ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘রাস্তায় যখন মানুষ নামছে, তখন বলছে আমার চাকরিতে যেতে হচ্ছে। আসলে এটার সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করছি। তারা যে সব নাম বলছে, সেগুলো চেক করার চেষ্টা করছি।’ মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা (করোনা) যে পরিস্থিতিতে ছড়িয়ে গেছে, এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কঠিনভাবেই তো প্রজ্ঞাপন জারি করেছি। এ ব্রেকটা খুব দরকার।’ বিধিনিষেধ কঠোর হওয়ার কথা আপনি বলেছিলেন, কিন্তু সেটি মাঠে দেখা যাচ্ছে না- এ বিষয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘যেহেতু গার্মেন্টস ও রপ্তানিমুখী কলকারখানাগুলো বন্ধ রেখেছি, লাখ লাখ শ্রমিক আসা-যাওয়া করতো, সেগুলো কমেছে, এগুলো ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণ আছে, যে কারণে মানুষ বাইরে আসছে। অযৌক্তিক কারণে বের হলে কিন্তু আইনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতাল থেকে শুরু করে জরুরি সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষ বাধাহীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে।’ পোশাক কারখানা খুলে দেয়ার বিষয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা এখন পর্যন্ত নেই বলেও জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ২৩ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। এই বিধিনিষেধ থাকবে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত।
মহামারী নিয়ন্ত্রণে করণীয় নিয়ে বৈঠকে বসছে সরকার
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ