ঢাকা ০৬:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গু বুঝবেন যেসব লক্ষণে

  • আপডেট সময় : ১০:২৩:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩
  • ১৬১ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: বর্ষায় অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ঘটে ডেঙ্গু ভাইরাসের মাধ্যমে। এই ভাইরাসের বাহক এডিস নামক স্ত্রী মশকী। এর কামড়েই ডেঙ্গু হয়। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে ৩-১৩ দিনের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে জ্বর হলেই ধরে নেওয়া যাবে না সেটা ডেঙ্গু জ্বর। এর আলাদা কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেগুলো শরীরে দেখা দিলে বুঝতে হবে সাধারণ জ্বর নয় বরং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় জ্বর হলেই উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জেনে নিন ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল জ্বরের লক্ষণসমূহ-
* ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচ- ব্যথা হয়ে থাকে।
* জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
* তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে।
* শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়।
* এছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়।
* এই জ্বরের আরেক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’।
* জ্বর হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র্যাশ। যা অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো।
* পাশাপাশি বমি বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে।
* রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে ও রুচি কমে যায়।
* সাধারণত ৪ বা ৫ দিন জ্বর থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায়। কারও ক্ষেত্রে ২ বা ৩ দিন পর আবারো জ্বর আসে। যাকে বাই ফেজিক ফিভার বলে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর
* রোগীর এই অবস্থাটি সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-
* শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন- চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে, নারীদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।
* এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস হয়। আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম
* ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণগুলো হলো-
* রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।
* নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
* শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়।
* প্রস্রাব কমে যাওয়।
* হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
যদিও ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এই জ্বর সাধারণত নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। তবে কিছু লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে-
* শরীরের যে কোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে।
* প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।
* শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে।
* প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
* জন্ডিস দেখা দিলে।
* অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
* প্রচ- পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
ঘরে চিকিৎসা নিতে করণীয়-
* পর্যাপ্ত বিশ্রাম (জ্বর চলাকালীন এবং জ্বরের পর এক সপ্তাহ) নিতে হবে।
* স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খাবেন। যেমন-খাবার স্যালাইন, টাটকা ফলের রস ইত্যাদি।
* এ ছাড়া গ্লুকোজ, ভাতের মাড়, বার্লি, ডাবের পানি, দুধ/হরলিকস, বাসায় তৈরি স্যুপ ইত্যাদি খেতে পারেন।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সাধারণ জ্বর নাকি ডেঙ্গু বুঝবেন যেসব লক্ষণে

আপডেট সময় : ১০:২৩:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩

স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা ডেস্ক: বর্ষায় অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ঘটে ডেঙ্গু ভাইরাসের মাধ্যমে। এই ভাইরাসের বাহক এডিস নামক স্ত্রী মশকী। এর কামড়েই ডেঙ্গু হয়। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ালে ৩-১৩ দিনের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে জ্বর হলেই ধরে নেওয়া যাবে না সেটা ডেঙ্গু জ্বর। এর আলাদা কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেগুলো শরীরে দেখা দিলে বুঝতে হবে সাধারণ জ্বর নয় বরং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় জ্বর হলেই উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জেনে নিন ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল জ্বরের লক্ষণসমূহ-
* ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচ- ব্যথা হয়ে থাকে।
* জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
* তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে।
* শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়।
* এছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়।
* এই জ্বরের আরেক নাম ‘ব্রেক বোন ফিভার’।
* জ্বর হওয়ার ৪ বা ৫ দিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়, যাকে বলা হয় স্কিন র্যাশ। যা অনেকটা এলার্জি বা ঘামাচির মতো।
* পাশাপাশি বমি বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে।
* রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে ও রুচি কমে যায়।
* সাধারণত ৪ বা ৫ দিন জ্বর থাকার পর তা এমনিতেই চলে যায়। কারও ক্ষেত্রে ২ বা ৩ দিন পর আবারো জ্বর আসে। যাকে বাই ফেজিক ফিভার বলে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর
* রোগীর এই অবস্থাটি সবচেয়ে জটিল। এই জ্বরে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও উপসর্গের পাশাপাশি আরও সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-
* শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন- চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত হতে, কফের সঙ্গে, রক্তবমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত বা কালো পায়খানা, চোখের মধ্যে এবং চোখের বাইরে, নারীদের বেলায় অসময়ে ঋতুস্রাব অথবা রক্তক্ষরণ শুরু হলে অনেকদিন পর্যন্ত রক্ত পড়তে থাকা ইত্যাদি।
* এই রোগের বেলায় অনেক সময় বুকে পানি, পেটে পানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস হয়। আবার কিডনি আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম
* ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের সঙ্গে সার্কুলেটরি ফেইলিউর হয়ে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হয়। এর লক্ষণগুলো হলো-
* রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া।
* নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।
* শরীরের হাত পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়।
* প্রস্রাব কমে যাওয়।
* হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
যদিও ডেঙ্গু জ্বরের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। এই জ্বর সাধারণত নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তাই উপসর্গ অনুযায়ী সাধারণ চিকিৎসাই যথেষ্ট। তবে কিছু লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে-
* শরীরের যে কোনো অংশ থেকে রক্তপাত হলে।
* প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।
* শ্বাসকষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে।
* প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।
* জন্ডিস দেখা দিলে।
* অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
* প্রচ- পেটে ব্যথা বা বমি হলে।
ঘরে চিকিৎসা নিতে করণীয়-
* পর্যাপ্ত বিশ্রাম (জ্বর চলাকালীন এবং জ্বরের পর এক সপ্তাহ) নিতে হবে।
* স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খাবেন। যেমন-খাবার স্যালাইন, টাটকা ফলের রস ইত্যাদি।
* এ ছাড়া গ্লুকোজ, ভাতের মাড়, বার্লি, ডাবের পানি, দুধ/হরলিকস, বাসায় তৈরি স্যুপ ইত্যাদি খেতে পারেন।