ঢাকা ০২:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

  • আপডেট সময় : ০১:৪৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩
  • ১৩৯ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : শায়খ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ হজের খুতবায় বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের মাঝে দ্বন্দ ও দল উপদল তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। আরাফার ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিয়ায় হাজিদের উদ্দেশে দেওয়া খুতবায় একথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি একত্রে বসবাস করার মাঝে শান্তি রেখেছেন এবং পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ ও বিচ্ছেদের বিষয়টিকে অপছন্দ করেছেন। এবং আমরা আল্লাহকে ভয় করি, তিনি করুণাময় ও দয়ালু। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সা. তার রসূল বান্দা, যিনি সহাবস্থান ও সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন এবং অন্যের সঙ্গে শত্রুতা করতে নিষেধ করেছেন। খুতবায় তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে মানুষের অন্তরকে একত্রিত করেছেন এবং মানুষের অবস্থা সংশোধন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার ঘরে জিয়ারত ও মানুষকে জাকাত প্রাদানের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তার রাসুল (সা.)-কে পাঠিয়েছেন এবং মানবতার সংস্কার করেছেন, তিনি আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঐক্যের মধ্যেই দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণ রয়েছে, মুসলমানদের একে অপরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দিলে কোরআন-সুন্নাহ থেকে সমাধান খুঁজে নিতে হবে। শায়খ ইউসুফ খুতবায় আরও বলেছেন, একজন আরবের কোন বিদেশীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই, একজন শ্বেতাঙ্গের কোন কালোর উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই, হজরত মুহাম্মদ বলেছেন, কারো উপর কারো শ্রেষ্ঠত্ব থাকলে তা কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে, সদাচরণের ভিত্তিতে। মুসলমানরা, তাকওয়া অবলম্বন কর, আল্লাহকে ভয় কর এবং সংস্কারের চেষ্টা কর, শিরক করো না এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর, আল্লাহ পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের অধিকার সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমাদের সব আমল কিয়ামতের দিন আল্লাহ সামনে উপস্থাপন করা হবে। মুসলমান তোমরা অপকে পাপ কাজে সহযোগিতা করো না, সৎকাজে সহযোগিতা করো, শয়তান মানুষের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করে, সব মুসলমান এক দেহের মতো। হজের সমাবেশে থেকে পুরো বিশ্বের মুসলিমদের তিনি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
লাখো হাজিতে মুখর আরাফাত ময়দান: লাখো হাজির ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে আরাফাতের ময়দান। গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুন) পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিতে আরাফাতে উপস্থিত হন লাখ লাখ হাজি। তাদের মধ্যে অনেকে একসঙ্গে মসজিদে নামিহরাতে ফজরের নামাজ আদায় করেন। মসজিদ হারামাইন শরীফাইন (ঐধৎধসধরহ ঝযধৎরভধরহ) ফেসবুক পেইজে ও সৌদির টিভি চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে হজের যাবতীয় কার্যক্রম। এছাড়া ইউটিউব চ্যানেলেও দেখা যাচ্ছে পবিত্র হজ।
মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই বাসে করে আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হওয়া শুরু করেন হাজিরা। এ সময় যানবাহনের দীর্ঘ সারি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া অনেককে ফজর নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে নামিরাহতে উপস্থিত হতে দেখা যায়। দিনের আলো ফোটার পর অনেকে পায়ে হেঁটেও আসতে থাকেন।
মঙ্গলবার মসজিদে নামিরাহতেই হজের খুতবা পাঠ করেন শেখ ডক্টর ইউসুফ বিন মোহাম্মদ বিন সাঈদ। এই মসজিদে যোহর এবং আসর নামাজেও ইমামতি করেন তিনি। মাগরিবের নামাজ শেষে হাজিরা যাবেন মুজদালিফায় এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করবেন। সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতিহাসে এবারই (২০২৩ সালে) সবচেয়ে বেশি হাজির পদচারণায় মুখরিত হবে কাবা প্রাঙ্গণ।
গত রোববার (২৫ জুন) বিশ্বের ১৬০টি দেশ থেকে আসা লাখ লাখ হাজিদের কাবা প্রদক্ষিণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় হজ। ইতিহাসের সবচেড়ে বড় হজ হওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ বছর, আমরা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হজ প্রত্যক্ষ করব।’ ২০২০ সালের করোনা মহামারি হানা দেওয়ার পর— এবার প্রথমবারের মতো সব ধরনের স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার একসঙ্গে হজ করছেন ২৫ লাখেরও বেশি মানুষ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস জানিয়েছিল, ২০১২ সালে হজ করেছিলেন ৩১ লাখ ৬১ হাজার ৫৭৩ জন হাজি। যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হজ ছিল। এবার এ সংখ্যাটি পার হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে হজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র ১০ হাজার মানুষ; ২০২১ সালে ৫৯ হাজার। আর গত বছর এ সংখ্যাটি ছিল ১০ লাখ। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় হাজিরা মিনার দিকে যাবেন। যা কাবা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এরপর আরাফাত ময়দানে যাবেন তারা। শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এই আরাফাতের ময়দানেই তার সর্বশেষ ভাষণটি দিয়েছিলেন।

 

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

আপডেট সময় : ০১:৪৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুন ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : শায়খ ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ হজের খুতবায় বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের মাঝে দ্বন্দ ও দল উপদল তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। আরাফার ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিয়ায় হাজিদের উদ্দেশে দেওয়া খুতবায় একথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি একত্রে বসবাস করার মাঝে শান্তি রেখেছেন এবং পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ ও বিচ্ছেদের বিষয়টিকে অপছন্দ করেছেন। এবং আমরা আল্লাহকে ভয় করি, তিনি করুণাময় ও দয়ালু। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সা. তার রসূল বান্দা, যিনি সহাবস্থান ও সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন এবং অন্যের সঙ্গে শত্রুতা করতে নিষেধ করেছেন। খুতবায় তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তাঁর রাসূলের মাধ্যমে মানুষের অন্তরকে একত্রিত করেছেন এবং মানুষের অবস্থা সংশোধন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার ঘরে জিয়ারত ও মানুষকে জাকাত প্রাদানের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তার রাসুল (সা.)-কে পাঠিয়েছেন এবং মানবতার সংস্কার করেছেন, তিনি আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঐক্যের মধ্যেই দ্বীন ও দুনিয়ার কল্যাণ রয়েছে, মুসলমানদের একে অপরের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দিলে কোরআন-সুন্নাহ থেকে সমাধান খুঁজে নিতে হবে। শায়খ ইউসুফ খুতবায় আরও বলেছেন, একজন আরবের কোন বিদেশীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই, একজন শ্বেতাঙ্গের কোন কালোর উপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই, হজরত মুহাম্মদ বলেছেন, কারো উপর কারো শ্রেষ্ঠত্ব থাকলে তা কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে, সদাচরণের ভিত্তিতে। মুসলমানরা, তাকওয়া অবলম্বন কর, আল্লাহকে ভয় কর এবং সংস্কারের চেষ্টা কর, শিরক করো না এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর, আল্লাহ পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের অধিকার সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমাদের সব আমল কিয়ামতের দিন আল্লাহ সামনে উপস্থাপন করা হবে। মুসলমান তোমরা অপকে পাপ কাজে সহযোগিতা করো না, সৎকাজে সহযোগিতা করো, শয়তান মানুষের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করে, সব মুসলমান এক দেহের মতো। হজের সমাবেশে থেকে পুরো বিশ্বের মুসলিমদের তিনি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।
লাখো হাজিতে মুখর আরাফাত ময়দান: লাখো হাজির ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে আরাফাতের ময়দান। গতকাল মঙ্গলবার (২৭ জুন) পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিতে আরাফাতে উপস্থিত হন লাখ লাখ হাজি। তাদের মধ্যে অনেকে একসঙ্গে মসজিদে নামিহরাতে ফজরের নামাজ আদায় করেন। মসজিদ হারামাইন শরীফাইন (ঐধৎধসধরহ ঝযধৎরভধরহ) ফেসবুক পেইজে ও সৌদির টিভি চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে হজের যাবতীয় কার্যক্রম। এছাড়া ইউটিউব চ্যানেলেও দেখা যাচ্ছে পবিত্র হজ।
মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই বাসে করে আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হওয়া শুরু করেন হাজিরা। এ সময় যানবাহনের দীর্ঘ সারি পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া অনেককে ফজর নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে নামিরাহতে উপস্থিত হতে দেখা যায়। দিনের আলো ফোটার পর অনেকে পায়ে হেঁটেও আসতে থাকেন।
মঙ্গলবার মসজিদে নামিরাহতেই হজের খুতবা পাঠ করেন শেখ ডক্টর ইউসুফ বিন মোহাম্মদ বিন সাঈদ। এই মসজিদে যোহর এবং আসর নামাজেও ইমামতি করেন তিনি। মাগরিবের নামাজ শেষে হাজিরা যাবেন মুজদালিফায় এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করবেন। সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতিহাসে এবারই (২০২৩ সালে) সবচেয়ে বেশি হাজির পদচারণায় মুখরিত হবে কাবা প্রাঙ্গণ।
গত রোববার (২৫ জুন) বিশ্বের ১৬০টি দেশ থেকে আসা লাখ লাখ হাজিদের কাবা প্রদক্ষিণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় হজ। ইতিহাসের সবচেড়ে বড় হজ হওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ বছর, আমরা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হজ প্রত্যক্ষ করব।’ ২০২০ সালের করোনা মহামারি হানা দেওয়ার পর— এবার প্রথমবারের মতো সব ধরনের স্বাস্থ্য বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার একসঙ্গে হজ করছেন ২৫ লাখেরও বেশি মানুষ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস জানিয়েছিল, ২০১২ সালে হজ করেছিলেন ৩১ লাখ ৬১ হাজার ৫৭৩ জন হাজি। যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হজ ছিল। এবার এ সংখ্যাটি পার হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে হজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র ১০ হাজার মানুষ; ২০২১ সালে ৫৯ হাজার। আর গত বছর এ সংখ্যাটি ছিল ১০ লাখ। স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় হাজিরা মিনার দিকে যাবেন। যা কাবা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এরপর আরাফাত ময়দানে যাবেন তারা। শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এই আরাফাতের ময়দানেই তার সর্বশেষ ভাষণটি দিয়েছিলেন।