ঢাকা ০৩:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

অনলাইনে জালনোটের কারবার

  • আপডেট সময় : ১০:৫৬:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩
  • ৭০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি জালনোট তৈরি করে ফেসবুক ও অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে অবাধ কারবার করে আসছিল একটি চক্র। জালনোট প্রস্তুতকারী এই চক্রের অন্যতম হোতাসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। গত সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরখান থানা এলাকার উজাপাড়া মাস্টারপাড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো, জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের অন্যতম হোতা মো. শাহজাদা আলম (৩৩), মো. মাহেদী হাসান (১৯) ও আবু হুরায়রা ওরুফে তুষার (২২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই লাখ জাল টাকা ও জালনোট প্রস্তুতের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলীর র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শাখাটির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, চক্রটি জালনোট তৈরি করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জালনোটের কারবার করে আসছিল। এ নিয়ে দেশব্যাপী গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলে র‌্যাব চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তরখানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। অধিনায়ক আরিফ জানান, গ্রেফতার শাহজাদা, মাহেদী ও তুষার ছয় মাস ধরে জালটাকার কার্যক্রম শুরু করে। মাহেদী আগে থেকেই ফটোশপ ও গ্রাফিকসের কাজ জানতো। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জালটাকা তৈরির কাজ শুরু করে। তাকে সহযোগিতা করে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া দুই বন্ধু শাহজাদা ও তুষার। শাহজাদা ও তুষার দীর্ঘদিন ধরেই জালটাকা কেনাবেচার কাজ করে আসছে। এবার মাহেদীকে নিয়ে শুরু করে। র‌্যাব-৩ অধিনায়ক জানান, আসামিরা প্রথমত অনলাইন থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন টাকার ছবি ডাউনলোড করে। সেসব ছবি অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরে এপিঠ-ওপিঠ সমন্বয় করে লিপি গোল্ডের মোটা ও পিচ্ছিল অফসেট কাগজের ওপর এক পাতায় চারটি নোট প্রিন্ট করে। সেই কাগজে তারা গোল্ডেন কালার মার্কার দিয়ে নিরাপত্তা সুতার আদলে মার্কিং করে। সবশেষে তারা স্টিলের স্কেল ও এনটিকাটারের সাহায্যে জালনোটগুলো কেটে বান্ডেল করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে। প্রক্রিয়াটি খুব সূক্ষভাবে সম্পন্ন করতে তারা বিভিন্ন কোম্পানির কাগজ ব্যবহার করে। এভাবে ৫০টি নোটের একটি বান্ডেল তৈরিতে তাদের আনুমানিক ২০০ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ ১ লাখ টাকা তৈরিতে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। শাহজাদা ও তুষার মিলে ফেসবুকে জালটাকা বেচাকেনার বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ খোলে। সেগুলো হলো গ্রেড জালনোট, টাকা চাই, জালনোট, জালটাকা এক্সেঞ্জ ও বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয় কেন্দ্র, রিয়েল সেলস, টাকা বিজনেস ইত্যাদি। এগুলোতে পোস্ট দিলে আগ্রহী কমেন্টকারীদের সঙ্গে ইনবক্সে যোগাযোগ করে। পরে তারা ফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাতের মাধ্যমে জালটাকা ডেলিভারির কাজ করে থাকে। চক্রটি এ পর্যন্ত চারটি বড় ডেলিভারি দিয়েছে। লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, চক্রের মূলহোতা শাহজাদার বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বোচাগছ গ্রামে। তারা বাবা মইনুল হক। তিনি ২০০৮ সালে বিজিবিতে যোগ দেন। ২০২০ সালে নৈতিক স্খলন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চাকরিচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে ফেসবুকে জালটাকা বিক্রির পেজ থেকে পরিচিত হন মাহেদী ও তুষারের সঙ্গে। তাদের নিয়ে জালটাকা প্রস্তুতের চক্রটি গড়ে তোলেন তারা। রাজধানীর উত্তরখানের ভাড়া বাসা থেকেই তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকে। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রধান উপদেষ্টা হতাশ-ক্ষুব্ধ, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

অনলাইনে জালনোটের কারবার

আপডেট সময় : ১০:৫৬:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি জালনোট তৈরি করে ফেসবুক ও অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে অবাধ কারবার করে আসছিল একটি চক্র। জালনোট প্রস্তুতকারী এই চক্রের অন্যতম হোতাসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩। গত সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরখান থানা এলাকার উজাপাড়া মাস্টারপাড়া থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো, জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের অন্যতম হোতা মো. শাহজাদা আলম (৩৩), মো. মাহেদী হাসান (১৯) ও আবু হুরায়রা ওরুফে তুষার (২২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই লাখ জাল টাকা ও জালনোট প্রস্তুতের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলীর র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান শাখাটির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, চক্রটি জালনোট তৈরি করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জালনোটের কারবার করে আসছিল। এ নিয়ে দেশব্যাপী গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলে র‌্যাব চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তরখানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। অধিনায়ক আরিফ জানান, গ্রেফতার শাহজাদা, মাহেদী ও তুষার ছয় মাস ধরে জালটাকার কার্যক্রম শুরু করে। মাহেদী আগে থেকেই ফটোশপ ও গ্রাফিকসের কাজ জানতো। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জালটাকা তৈরির কাজ শুরু করে। তাকে সহযোগিতা করে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া দুই বন্ধু শাহজাদা ও তুষার। শাহজাদা ও তুষার দীর্ঘদিন ধরেই জালটাকা কেনাবেচার কাজ করে আসছে। এবার মাহেদীকে নিয়ে শুরু করে। র‌্যাব-৩ অধিনায়ক জানান, আসামিরা প্রথমত অনলাইন থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন টাকার ছবি ডাউনলোড করে। সেসব ছবি অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরে এপিঠ-ওপিঠ সমন্বয় করে লিপি গোল্ডের মোটা ও পিচ্ছিল অফসেট কাগজের ওপর এক পাতায় চারটি নোট প্রিন্ট করে। সেই কাগজে তারা গোল্ডেন কালার মার্কার দিয়ে নিরাপত্তা সুতার আদলে মার্কিং করে। সবশেষে তারা স্টিলের স্কেল ও এনটিকাটারের সাহায্যে জালনোটগুলো কেটে বান্ডেল করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে। প্রক্রিয়াটি খুব সূক্ষভাবে সম্পন্ন করতে তারা বিভিন্ন কোম্পানির কাগজ ব্যবহার করে। এভাবে ৫০টি নোটের একটি বান্ডেল তৈরিতে তাদের আনুমানিক ২০০ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ ১ লাখ টাকা তৈরিতে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। শাহজাদা ও তুষার মিলে ফেসবুকে জালটাকা বেচাকেনার বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ খোলে। সেগুলো হলো গ্রেড জালনোট, টাকা চাই, জালনোট, জালটাকা এক্সেঞ্জ ও বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয় কেন্দ্র, রিয়েল সেলস, টাকা বিজনেস ইত্যাদি। এগুলোতে পোস্ট দিলে আগ্রহী কমেন্টকারীদের সঙ্গে ইনবক্সে যোগাযোগ করে। পরে তারা ফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাতের মাধ্যমে জালটাকা ডেলিভারির কাজ করে থাকে। চক্রটি এ পর্যন্ত চারটি বড় ডেলিভারি দিয়েছে। লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, চক্রের মূলহোতা শাহজাদার বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বোচাগছ গ্রামে। তারা বাবা মইনুল হক। তিনি ২০০৮ সালে বিজিবিতে যোগ দেন। ২০২০ সালে নৈতিক স্খলন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চাকরিচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি হতে ফেসবুকে জালটাকা বিক্রির পেজ থেকে পরিচিত হন মাহেদী ও তুষারের সঙ্গে। তাদের নিয়ে জালটাকা প্রস্তুতের চক্রটি গড়ে তোলেন তারা। রাজধানীর উত্তরখানের ভাড়া বাসা থেকেই তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকে। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় র‌্যাব।