ঢাকা ১২:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

এবার চাহিদার তুলনায় কোরবানিযোগ্য পশু বেশি ২১ লাখ ৪১ হাজার

  • আপডেট সময় : ০২:০৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩
  • ৮৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। এরমধ্যে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার। সে হিসেবে এবার ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত আছে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ তথ্য জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গতবছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। তিনি জানান, এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসেবে এ বছর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, গত চার-পাঁচ বছরের মতো এবারও দেশে উৎপাদিত গবাদিপশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। বিদেশ থেকে পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত পথে যাতে অবৈধভাবে গবাদিপশু আসতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে পত্র দেওয়া হয়েছে। কোরবানি সামনে রেখে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য, স্টেরয়েড, হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া নিরাপদ পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে এ বছরও স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ বছর ৭২ হাজার ৫৬৩ জন খামারিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এ সময় পশুখাদ্যে ভেজাল বা নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোনের ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত সার্ভিল্যান্স ও প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এ বছর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সারাদেশে ৮৭ হাজার ৯৫টি খামার পরিদর্শন করে। এসব খামারে স্টেরয়েড বা হরমোনের অপপ্রয়োগ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। কোরবানির হাটে এ বছর কোনোভাবেই রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ পশু বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যে গত বছরের মতো এবারও সারাদেশে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। গত বছর সারাদেশে ৩ হাজার ১৯৫টি কোরবানির পশুর হাটে দায়িত্ব পালনের জন্য ১ হাজার ৬২৩টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করেছে। কোরবানির হাট ব্যবস্থাপনার জন্য মনিটরিং টিম গঠন ও কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। এ বছরও সড়কপথ, রেলপথ এবং নৌপথে গবাদিপশু পরিবহনের সময় পশু ও পশু বিক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ কোরবানির পশুর ট্রাক ছিনতাই রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর যৌথভাবে কাজ করবে বলেও জানান প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। তিনি জানান, এবারও কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে, রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকার ইউনিট তথা পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে। হাটে আনার পথে কেউ প্রাণী বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল আদায় করতে পাবে না। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বিগত বছর ৬টি পশুর হাটে ৩৩ কোটি টাকার ডিজিটাল লেনদেন হয়েছে। এ বছর ঢাকা ও চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোতে ক্যাশলেস বা নগদ টাকাবিহীন লেনদেনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে কিউআর কোড, স্মার্ট অ্যাপ, এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেলস মেশিন, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করা হবে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় ২৬টি জেলায় ১০টি ব্যাংক ও ৩টি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রোভাইডারের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের কার্যক্রম শুরু করেছে। এ বছর স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গবাদিপশু কোরবানির জন্য কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ বিষয়ে ৩১ হাজার ৭৯৯ জন পেশাদার ও অপেশাদার কসাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী আরও বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে সড়কের ওপরে যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাই না করে যথাসম্ভব নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করার জনসচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিগত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশু বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। এক্ষেত্রে অনলাইনে প্রতারণা রোধে অনলাইনে আপলোড করা পশুর মালিকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, পশুর বয়স, ওজন, মূল্য ও ছবি সংযোজন করতে হবে।
সন্ধ্যার মধ্যেই কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ: কোরবানির ঈদে দিন সন্ধ্যার মধ্যে পশুর বর্জ্য অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। একইসঙ্গে এবারও নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি দিতে হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক সভা সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। তিনি জানান, সাধারণত সন্ধ্যার মধ্যেই পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হয়। এবারও সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এবারও নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি দিতে হবে। এটা অত্যন্ত দৃঢ়ভবে নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে দূষণ না হয়।
হাইওয়েতে পশুবাহী গাড়ি থামানো যাবে না: কোরবানির পশুবাহী গাড়ি হাইওয়েতে থামানো যাবে না বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান।
গতকাল বুধবার (১৪ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে ‘ঈদুল আজহা ২০২৩ উপলক্ষ্যে মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত’ রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত সমন্বয় সভায় এ কথা বলেন তিনি। মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, পশুবাহী গাড়ির সামনে ও পেছনে গন্তব্য লেখা থাকবে। হাইওয়েতে কোরবানির পশুবাহী গাড়ি থামানো যাবে না। কেউ বাধা দিলে কোনোভাবে বরদাশত করা হবে না।
সভায় এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, সড়কে পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি করা হয়। এই অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, কোনো গরুর হাটের ভলান্টিয়ার জোরপূর্বক বা বাধা দিয়ে গাড়ি হাটে ঢোকাতে পারবে না। এজন্য পশুবাহী প্রত্যেক গাড়িকে সামনে ও পেছনে গন্তব্য লিখে রাখতে হবে। তাহলে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সুযোগ থাকবে না। যারা যাত্রী আছেন, পরিবহন সংশ্লিষ্ট আছেন, চাঁদাবাজি হবে না এটা নিশ্চিত থাকুন। পশুবাহী ট্রাকে মাদক পরিবহন করা হয় এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট নজরদারি থাকবে। মাদক কারবারিরা যাতে কোনো ধরনের সুযোগ না পায় সেজন্য আমাদের নজরদারি ও তদারকি থাকবে। বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজির সমস্যা সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে, হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে বলছি- চাঁদাবাজির কোনো সুযোগ নেই, থাকবে না। যারা মহাসড়ক ব্যবহার করবেন, তারা একটি নিরাপদ পরিবেশ পাবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং আমরা এটি বাস্তবায়ন করব। সেই সঙ্গে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি। এবারই প্রথমবার করা সমন্বয় সভার কার্যকারিতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খুবই কার্যকরী হবে। আমরা আমাদের কাজটি তখনই সুন্দরভাবে করতে পারি, যখন আমাদের যারা অংশীজন বা স্টেকহোল্ডার, সহযোগী সংস্থা, জনসাধারণ রয়েছেন তাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারি। সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেকটি জায়গা ধরে খুঁটিনাটি সমস্যা চিহ্নিত করে আলোচনা করছি। সেই সঙ্গে কার কোন দায়িত্ব এবং চ্যালেঞ্জগুলো কী তা চিহ্নিত করছি। আমি আশা করি, এই সমন্বয় সভাটি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমনে এবং সুন্দর নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে।
মহাসড়ক অবরোধ করে হাটের লোকজন বল প্রয়োগ করে গরুর গাড়ি ঢুকিয়ে যানজট সৃষ্টি করে, এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ইন্টেলিজেন্সের তথ্যমতে আমরা এই সমস্যার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তাই আমরা জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং অন্যান্য যারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য রয়েছেন, যারা অংশীজন রয়েছেন, আমাদের এটা নিশ্চিত করবেন, যাতে কোনো হাটে কোনো সদস্য, সে ভলান্টিয়ার হোক বা অন্য কোনো লোকই হোক, কোনো গরুর গাড়ি জোরপূর্বক বাধা দিতে পারবে না। তিনি বলেন, আমাদের একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে, আমরা সবাই মিলে (জনগণ, স্টেকহোল্ডার) ক্রমান্বয়ে প্রতি বছরই ঈদযাত্রা, মানুষের স্বস্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। এবারও আমরা ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, কিছু গাড়ি সড়কে চলার সময় বিকল হয়, অল্প মেরামত করে সেগুলো চালু করা যায়। কিন্তু দেখা যায় যানজটের মধ্যে সেখানে দ্রুত পৌঁছানো যায় না। সে কারণে সারা বাংলাদেশে হাইওয়ে সংলগ্ন যত গ্যারেজ আছে, যারা এসব যানবাহন মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান বা মেরামতকারী আছেন, তাদের একটি তালিকা আমরা তৈরি করেছি। সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করছি, প্রত্যেকটি কন্ট্রোল, সাব কন্ট্রোলে দেওয়া আছে।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এবার চাহিদার তুলনায় কোরবানিযোগ্য পশু বেশি ২১ লাখ ৪১ হাজার

আপডেট সময় : ০২:০৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। এরমধ্যে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার। সে হিসেবে এবার ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত আছে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ তথ্য জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গতবছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। তিনি জানান, এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসেবে এ বছর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, গত চার-পাঁচ বছরের মতো এবারও দেশে উৎপাদিত গবাদিপশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। বিদেশ থেকে পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত পথে যাতে অবৈধভাবে গবাদিপশু আসতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে পত্র দেওয়া হয়েছে। কোরবানি সামনে রেখে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য, স্টেরয়েড, হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া নিরাপদ পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে এ বছরও স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ বছর ৭২ হাজার ৫৬৩ জন খামারিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। মন্ত্রী বলেন, এ সময় পশুখাদ্যে ভেজাল বা নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোনের ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত সার্ভিল্যান্স ও প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এ বছর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সারাদেশে ৮৭ হাজার ৯৫টি খামার পরিদর্শন করে। এসব খামারে স্টেরয়েড বা হরমোনের অপপ্রয়োগ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। কোরবানির হাটে এ বছর কোনোভাবেই রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ পশু বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যে গত বছরের মতো এবারও সারাদেশে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। গত বছর সারাদেশে ৩ হাজার ১৯৫টি কোরবানির পশুর হাটে দায়িত্ব পালনের জন্য ১ হাজার ৬২৩টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করেছে। কোরবানির হাট ব্যবস্থাপনার জন্য মনিটরিং টিম গঠন ও কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। এ বছরও সড়কপথ, রেলপথ এবং নৌপথে গবাদিপশু পরিবহনের সময় পশু ও পশু বিক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ কোরবানির পশুর ট্রাক ছিনতাই রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর যৌথভাবে কাজ করবে বলেও জানান প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। তিনি জানান, এবারও কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে, রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকার ইউনিট তথা পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে। হাটে আনার পথে কেউ প্রাণী বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল আদায় করতে পাবে না। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বিগত বছর ৬টি পশুর হাটে ৩৩ কোটি টাকার ডিজিটাল লেনদেন হয়েছে। এ বছর ঢাকা ও চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোতে ক্যাশলেস বা নগদ টাকাবিহীন লেনদেনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে কিউআর কোড, স্মার্ট অ্যাপ, এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেলস মেশিন, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করা হবে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় ২৬টি জেলায় ১০টি ব্যাংক ও ৩টি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রোভাইডারের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের কার্যক্রম শুরু করেছে। এ বছর স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গবাদিপশু কোরবানির জন্য কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ বিষয়ে ৩১ হাজার ৭৯৯ জন পেশাদার ও অপেশাদার কসাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী আরও বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে সড়কের ওপরে যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাই না করে যথাসম্ভব নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করার জনসচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিগত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশু বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। এক্ষেত্রে অনলাইনে প্রতারণা রোধে অনলাইনে আপলোড করা পশুর মালিকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, পশুর বয়স, ওজন, মূল্য ও ছবি সংযোজন করতে হবে।
সন্ধ্যার মধ্যেই কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণের নির্দেশ: কোরবানির ঈদে দিন সন্ধ্যার মধ্যে পশুর বর্জ্য অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। একইসঙ্গে এবারও নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি দিতে হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এক সভা সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান। তিনি জানান, সাধারণত সন্ধ্যার মধ্যেই পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হয়। এবারও সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এবারও নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি দিতে হবে। এটা অত্যন্ত দৃঢ়ভবে নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে দূষণ না হয়।
হাইওয়েতে পশুবাহী গাড়ি থামানো যাবে না: কোরবানির পশুবাহী গাড়ি হাইওয়েতে থামানো যাবে না বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান।
গতকাল বুধবার (১৪ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে ‘ঈদুল আজহা ২০২৩ উপলক্ষ্যে মহাসড়ক নিরাপদ ও যানজটমুক্ত’ রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত সমন্বয় সভায় এ কথা বলেন তিনি। মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, পশুবাহী গাড়ির সামনে ও পেছনে গন্তব্য লেখা থাকবে। হাইওয়েতে কোরবানির পশুবাহী গাড়ি থামানো যাবে না। কেউ বাধা দিলে কোনোভাবে বরদাশত করা হবে না।
সভায় এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, সড়কে পশুবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি করা হয়। এই অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, কোনো গরুর হাটের ভলান্টিয়ার জোরপূর্বক বা বাধা দিয়ে গাড়ি হাটে ঢোকাতে পারবে না। এজন্য পশুবাহী প্রত্যেক গাড়িকে সামনে ও পেছনে গন্তব্য লিখে রাখতে হবে। তাহলে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সুযোগ থাকবে না। যারা যাত্রী আছেন, পরিবহন সংশ্লিষ্ট আছেন, চাঁদাবাজি হবে না এটা নিশ্চিত থাকুন। পশুবাহী ট্রাকে মাদক পরিবহন করা হয় এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট নজরদারি থাকবে। মাদক কারবারিরা যাতে কোনো ধরনের সুযোগ না পায় সেজন্য আমাদের নজরদারি ও তদারকি থাকবে। বিভিন্ন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজির সমস্যা সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে, হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে বলছি- চাঁদাবাজির কোনো সুযোগ নেই, থাকবে না। যারা মহাসড়ক ব্যবহার করবেন, তারা একটি নিরাপদ পরিবেশ পাবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং আমরা এটি বাস্তবায়ন করব। সেই সঙ্গে আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি। এবারই প্রথমবার করা সমন্বয় সভার কার্যকারিতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খুবই কার্যকরী হবে। আমরা আমাদের কাজটি তখনই সুন্দরভাবে করতে পারি, যখন আমাদের যারা অংশীজন বা স্টেকহোল্ডার, সহযোগী সংস্থা, জনসাধারণ রয়েছেন তাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারি। সমন্বিত আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেকটি জায়গা ধরে খুঁটিনাটি সমস্যা চিহ্নিত করে আলোচনা করছি। সেই সঙ্গে কার কোন দায়িত্ব এবং চ্যালেঞ্জগুলো কী তা চিহ্নিত করছি। আমি আশা করি, এই সমন্বয় সভাটি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমনে এবং সুন্দর নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক হবে।
মহাসড়ক অবরোধ করে হাটের লোকজন বল প্রয়োগ করে গরুর গাড়ি ঢুকিয়ে যানজট সৃষ্টি করে, এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ইন্টেলিজেন্সের তথ্যমতে আমরা এই সমস্যার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তাই আমরা জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং অন্যান্য যারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য রয়েছেন, যারা অংশীজন রয়েছেন, আমাদের এটা নিশ্চিত করবেন, যাতে কোনো হাটে কোনো সদস্য, সে ভলান্টিয়ার হোক বা অন্য কোনো লোকই হোক, কোনো গরুর গাড়ি জোরপূর্বক বাধা দিতে পারবে না। তিনি বলেন, আমাদের একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে, আমরা সবাই মিলে (জনগণ, স্টেকহোল্ডার) ক্রমান্বয়ে প্রতি বছরই ঈদযাত্রা, মানুষের স্বস্তি ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। এবারও আমরা ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, কিছু গাড়ি সড়কে চলার সময় বিকল হয়, অল্প মেরামত করে সেগুলো চালু করা যায়। কিন্তু দেখা যায় যানজটের মধ্যে সেখানে দ্রুত পৌঁছানো যায় না। সে কারণে সারা বাংলাদেশে হাইওয়ে সংলগ্ন যত গ্যারেজ আছে, যারা এসব যানবাহন মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান বা মেরামতকারী আছেন, তাদের একটি তালিকা আমরা তৈরি করেছি। সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করছি, প্রত্যেকটি কন্ট্রোল, সাব কন্ট্রোলে দেওয়া আছে।