ঢাকা ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

সিন্ডিকেটের কবলে কাঁচা চামড়া

  • আপডেট সময় : ০১:১৯:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুলাই ২০২১
  • ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম অতি সামান্য বাড়লেও এই চামড়ার বাজার একাধিক চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। এই চক্রগুলো সিন্ডিকেট করে অল্প দামে কাঁচা চামড়ার বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, কয়েক বছর আগেও যে চামড়া বিক্রি হতো ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। এবার সেই একই ধরনের চামড়ার দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এর ফলে গত দুই-তিন বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ায় যাদের হক রয়েছে, সেই এতিম ও দুস্থরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সাধারণ ব্যবসায়ীরাও পড়ছেন আর্থিক ক্ষতির মুখে। ২১ জুলাই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজারীবাগে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল শত শত পিস অবিক্রিত কোরবানির পশুর চামড়া। অবশ্য শুরুর দিকে গরুর চামড়া ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ এবং ছাগলের চামড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে চামড়ার দাম ততই নিম্নমুখী হয়েছে। চামড়া সংগ্রহকারী একজন জানান, দিনের বেলায় চামড়ার রেট কিছুটা ভালো ছিল। তবে রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চামড়ার রেট কমতে থাকে। ঢাকা শহরের চামড়ার একটু কদর বেশি থাকে। কারণ, চামড়ার পুরত্ব বেশি হয়। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার চামড়ার দাম বাড়ালেও আড়তদাররা কৌশলে দাম দিচ্ছেন না তাদের। মূলত কোরবানির পশুর চামড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ী আর ফঁড়িয়ারা। তারা সেই চামড়া বিক্রি করে আড়তদারদের কাছে। সেখান থেকে চামড়া যায় ট্যানারিতে। ট্যানারি মালিকরা কত দামে আড়তদারদের কাছ থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করবে, সে দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বছর প্রতি বর্গফুট গরু-মহিষের চামড়া ঢাকায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি মালিকদের; গত বছর এই দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়, গত বছর যা ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল। এ ছাড়া সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
ঈদের দিন সিন্ডিকেটের কৌশল দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। প্রথমত, তারা দুপুর পর্যন্ত চামড়ার কাছে যায়নি। এর ফলে চামড়ার কদর নেই মনে করে লাখ লাখ কোরবানিদাতা বাধ্য হয়ে চামড়া কোনও এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকেই দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে ক্রেতা না পেয়ে নামমাত্র দামে বিক্রি করেন। সিন্ডিকেট চক্রটি জানে ফঁড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া নেওয়ার চেয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানার কাছ থেকে সস্তায় চামড়া কেনা যায়।
রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া বলছেন, সকালে কোরবানি দেওয়ার পর দুপুর ১টা পর্যন্ত চামড়া কিনতে কেউ আসেনি। আমরা জানি ৪ ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ না লাগালে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। সে কারণে বাধ্য হয়ে চামড়া মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছি।
শুধু মানিকনগর নয়, রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় একই চিত্র ছিল, তা হলো চামড়া কেনার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানা ছাড়াও অনেক স্থান থেকে আড়তদার ও ট্যানারির প্রতিনিধি এবং মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফঁড়িয়ারা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে মাঠে তৎপর ছিলো। শাজাহানপুর এলাকার মকবুল হোসেন জানালেন, তিন চার বছর আগেও এক চামড়া কেনার জন্য তিন চার গ্রুপ আসতো। তখন তিন হাজার টাকা পর্যন্ত একটা চামড়া বিক্রি করা গেছে। কিন্তু এবার একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী ৩০০ টাকা বলে চলে যান, আর কেউ চামড়া কিনতে আসেনি। মৌসুমি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছরও চামড়ার ভালো দাম পাননি তারা। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বাজার কিছুটা ভালো হলেও তা আশাব্যঞ্জক নয়। অন্যদিকে করোনার কারণে এবার মাদ্রাসা থেকেও সেভাবে শিক্ষার্থীদের কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য পাড়া-মহল্লায় দেখা যায়নি। এদিকে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার তারা অন্তত দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেশি দিয়ে প্রতি পিস চামড়া কিনছেন। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি সবার প্রচেষ্টায় এবার চামড়ার বাজারের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে প্রতি পিস চামড়া দেড় থেকে ২০০ টাকা বেশি দিয়ে আমরা কিনেছি।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

তলবের পাল্টা তলব দিল্লির, উল্টো দুষল ইউনূস সরকারকে

সিন্ডিকেটের কবলে কাঁচা চামড়া

আপডেট সময় : ০১:১৯:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ জুলাই ২০২১

বিশেষ সংবাদদাতা : গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম অতি সামান্য বাড়লেও এই চামড়ার বাজার একাধিক চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। এই চক্রগুলো সিন্ডিকেট করে অল্প দামে কাঁচা চামড়ার বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, কয়েক বছর আগেও যে চামড়া বিক্রি হতো ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়। এবার সেই একই ধরনের চামড়ার দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এর ফলে গত দুই-তিন বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ায় যাদের হক রয়েছে, সেই এতিম ও দুস্থরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সাধারণ ব্যবসায়ীরাও পড়ছেন আর্থিক ক্ষতির মুখে। ২১ জুলাই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজারীবাগে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল শত শত পিস অবিক্রিত কোরবানির পশুর চামড়া। অবশ্য শুরুর দিকে গরুর চামড়া ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ এবং ছাগলের চামড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে চামড়ার দাম ততই নিম্নমুখী হয়েছে। চামড়া সংগ্রহকারী একজন জানান, দিনের বেলায় চামড়ার রেট কিছুটা ভালো ছিল। তবে রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চামড়ার রেট কমতে থাকে। ঢাকা শহরের চামড়ার একটু কদর বেশি থাকে। কারণ, চামড়ার পুরত্ব বেশি হয়। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার চামড়ার দাম বাড়ালেও আড়তদাররা কৌশলে দাম দিচ্ছেন না তাদের। মূলত কোরবানির পশুর চামড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করেন মৌসুমি ব্যবসায়ী আর ফঁড়িয়ারা। তারা সেই চামড়া বিক্রি করে আড়তদারদের কাছে। সেখান থেকে চামড়া যায় ট্যানারিতে। ট্যানারি মালিকরা কত দামে আড়তদারদের কাছ থেকে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করবে, সে দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বছর প্রতি বর্গফুট গরু-মহিষের চামড়া ঢাকায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় কেনার কথা ট্যানারি মালিকদের; গত বছর এই দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়, গত বছর যা ২৮ থেকে ৩২ টাকা ছিল। এ ছাড়া সারাদেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
ঈদের দিন সিন্ডিকেটের কৌশল দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। প্রথমত, তারা দুপুর পর্যন্ত চামড়ার কাছে যায়নি। এর ফলে চামড়ার কদর নেই মনে করে লাখ লাখ কোরবানিদাতা বাধ্য হয়ে চামড়া কোনও এতিমখানা ও মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকেই দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে ক্রেতা না পেয়ে নামমাত্র দামে বিক্রি করেন। সিন্ডিকেট চক্রটি জানে ফঁড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া নেওয়ার চেয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানার কাছ থেকে সস্তায় চামড়া কেনা যায়।
রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া বলছেন, সকালে কোরবানি দেওয়ার পর দুপুর ১টা পর্যন্ত চামড়া কিনতে কেউ আসেনি। আমরা জানি ৪ ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ না লাগালে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। সে কারণে বাধ্য হয়ে চামড়া মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছি।
শুধু মানিকনগর নয়, রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় একই চিত্র ছিল, তা হলো চামড়া কেনার জন্য লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানা ছাড়াও অনেক স্থান থেকে আড়তদার ও ট্যানারির প্রতিনিধি এবং মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফঁড়িয়ারা কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে মাঠে তৎপর ছিলো। শাজাহানপুর এলাকার মকবুল হোসেন জানালেন, তিন চার বছর আগেও এক চামড়া কেনার জন্য তিন চার গ্রুপ আসতো। তখন তিন হাজার টাকা পর্যন্ত একটা চামড়া বিক্রি করা গেছে। কিন্তু এবার একজন মৌসুমি ব্যবসায়ী ৩০০ টাকা বলে চলে যান, আর কেউ চামড়া কিনতে আসেনি। মৌসুমি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, গত বছরও চামড়ার ভালো দাম পাননি তারা। তবে গত বছরের তুলনায় এবার বাজার কিছুটা ভালো হলেও তা আশাব্যঞ্জক নয়। অন্যদিকে করোনার কারণে এবার মাদ্রাসা থেকেও সেভাবে শিক্ষার্থীদের কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য পাড়া-মহল্লায় দেখা যায়নি। এদিকে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা বলছেন, গতবারের চেয়ে এবার তারা অন্তত দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা বেশি দিয়ে প্রতি পিস চামড়া কিনছেন। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি সবার প্রচেষ্টায় এবার চামড়ার বাজারের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে প্রতি পিস চামড়া দেড় থেকে ২০০ টাকা বেশি দিয়ে আমরা কিনেছি।’