ঢাকা ০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

গ্রামীণ নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্য বাজেটে বরাদ্দ প্রয়োজন

  • আপডেট সময় : ০১:২২:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩
  • ৮১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন নতুন বাজেটে (২০২৩-২৪) পারিবারিক কৃষিকে স্বীকৃতি দিয়ে এ খাতকে বাস্তবায়নে এই বর্গের মানুষদের জন্য মাথাপিছু বাজেট বরাদ্দ ধীরে ধীরে জাতীয় মাথাপিছু বরাদ্দের সমপরিমাণ করতে হবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে। একইসঙ্গে গ্রামীণ নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্যও বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অংশীদারিত্ব, বাজেট ভাবনা এবং মনিটরিং’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এইচডিআরসি) সহায়তায় সেমিনারটি আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘বৈষম্যে হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনে জাতীয় বাজেট যথেষ্ট কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে, যদি বাজেটের মূল লক্ষ্য হয় বৈষম্য হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচন। করোনার পরে দেশে বহুমাত্রিক দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। গত ২/৩ বছরে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। এসব নব্য দরিদ্ররা আছেন পারিবারিক কৃষিতে, গ্রামীণ নারী সমাজে, আদিবাসী সমাজে, শহর-নগরের বস্তি ও স্বল্প আয়ী আবাসস্থলে।’
ড. বারকাত বলেন, ‘সরকারের আসন্ন বাজেট ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। সে হিসাবে আমাদের গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় ৪৪ হাজার ৯৫১ টাকা। এই টাকাটা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ, অবহেলিত মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। দেশে গ্রামীণ নারীদের সংখ্যা ৪১ শতাংশ। কিন্তু এই গ্রামীণ নারীরা বাজেটে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ পান। এটা চরম বাজেট বৈষম্য। আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এক্ষেত্রেও বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। কৃষি, ভূমি, জলা সংস্কার হলে ৮২ শতাংশ মানুষ সুবিধা পাবে। তাই এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। পারিবারিক কৃষিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এটি স্বীকৃতি পেলে কৃষি অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।’
কালো টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ কালো টাকা আছে, তার ২ শতাংশও যদি উদ্ধার করা হয়, তাহলে এর পরিমাণ হবে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এই কালো টাকার উদ্ধারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ সাবেক মন্ত্রী এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আইএমএফের শর্ত পূরণ করে কীভাবে বাজেট প্রণয়ন করা যায়, মুদ্রাস্ফীতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেটিই হয়তো এবার বিবেচ্য হবে। আগে পার্লামেন্টারি মেম্বারদের নিয়ে একটি প্রাক-বাজেট আলোচনা করা হতো, এখন আর তেমন করা হয় না। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। তারপর প্রধানমন্ত্রী তার বিবেচনা অনুযায়ী, তা পাস করেন। তারপর সংসদে হ্যাঁ না ভোটের দিয়ে বাজেট পাস করা হয়। কিন্তু সংসদ সদস্যদের হ্যাঁ না ভোটের মধ্যে না রেখে বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত করলে আরও ভালো হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্য কমিয়ে আনার বিষয়টি বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গ্রামীণ নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন অবহেলিত কমিউনিটিকে চিহ্নিত করে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা উচিত। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যতে বাজেটে যাতে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে, সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।’ এ সময় মেনন বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, সংসদ সদস্যদের অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রের একটি টাকাও খরচ করা যাবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের স্বীকৃতি দিয়ে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। তাদের সঙ্গে হরিজনসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকেও চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দিয়ে বাজেটের আওতায় আনা উচিত।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন-মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, নিজেরা করির চেয়ারপারসন খুশী কবির, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ আদবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিক উজ জামান প্রমুখ।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গ্রামীণ নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্য বাজেটে বরাদ্দ প্রয়োজন

আপডেট সময় : ০১:২২:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন নতুন বাজেটে (২০২৩-২৪) পারিবারিক কৃষিকে স্বীকৃতি দিয়ে এ খাতকে বাস্তবায়নে এই বর্গের মানুষদের জন্য মাথাপিছু বাজেট বরাদ্দ ধীরে ধীরে জাতীয় মাথাপিছু বরাদ্দের সমপরিমাণ করতে হবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে। একইসঙ্গে গ্রামীণ নারী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্যও বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে ‘জাতীয় বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অংশীদারিত্ব, বাজেট ভাবনা এবং মনিটরিং’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এইচডিআরসি) সহায়তায় সেমিনারটি আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)।
ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘বৈষম্যে হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচনে জাতীয় বাজেট যথেষ্ট কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে, যদি বাজেটের মূল লক্ষ্য হয় বৈষম্য হ্রাস ও দারিদ্র্য বিমোচন। করোনার পরে দেশে বহুমাত্রিক দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। গত ২/৩ বছরে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। এসব নব্য দরিদ্ররা আছেন পারিবারিক কৃষিতে, গ্রামীণ নারী সমাজে, আদিবাসী সমাজে, শহর-নগরের বস্তি ও স্বল্প আয়ী আবাসস্থলে।’
ড. বারকাত বলেন, ‘সরকারের আসন্ন বাজেট ৭ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। সে হিসাবে আমাদের গড় মাথাপিছু জাতীয় আয় ৪৪ হাজার ৯৫১ টাকা। এই টাকাটা প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ, অবহেলিত মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। দেশে গ্রামীণ নারীদের সংখ্যা ৪১ শতাংশ। কিন্তু এই গ্রামীণ নারীরা বাজেটে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ পান। এটা চরম বাজেট বৈষম্য। আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ ১ দশমিক ৪২ শতাংশ। এক্ষেত্রেও বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। কৃষি, ভূমি, জলা সংস্কার হলে ৮২ শতাংশ মানুষ সুবিধা পাবে। তাই এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। পারিবারিক কৃষিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এটি স্বীকৃতি পেলে কৃষি অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।’
কালো টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ কালো টাকা আছে, তার ২ শতাংশও যদি উদ্ধার করা হয়, তাহলে এর পরিমাণ হবে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এই কালো টাকার উদ্ধারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ সাবেক মন্ত্রী এবং সমাজকল্যাণ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আইএমএফের শর্ত পূরণ করে কীভাবে বাজেট প্রণয়ন করা যায়, মুদ্রাস্ফীতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেটিই হয়তো এবার বিবেচ্য হবে। আগে পার্লামেন্টারি মেম্বারদের নিয়ে একটি প্রাক-বাজেট আলোচনা করা হতো, এখন আর তেমন করা হয় না। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। তারপর প্রধানমন্ত্রী তার বিবেচনা অনুযায়ী, তা পাস করেন। তারপর সংসদে হ্যাঁ না ভোটের দিয়ে বাজেট পাস করা হয়। কিন্তু সংসদ সদস্যদের হ্যাঁ না ভোটের মধ্যে না রেখে বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত করলে আরও ভালো হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈষম্য কমিয়ে আনার বিষয়টি বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গ্রামীণ নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ প্রান্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন অবহেলিত কমিউনিটিকে চিহ্নিত করে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা উচিত। এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যতে বাজেটে যাতে তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে, সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।’ এ সময় মেনন বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, সংসদ সদস্যদের অনুমোদন ছাড়া রাষ্ট্রের একটি টাকাও খরচ করা যাবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের স্বীকৃতি দিয়ে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। তাদের সঙ্গে হরিজনসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকেও চিহ্নিত করে স্বীকৃতি দিয়ে বাজেটের আওতায় আনা উচিত।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন-মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, নিজেরা করির চেয়ারপারসন খুশী কবির, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ আদবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিক উজ জামান প্রমুখ।