ঢাকা ১২:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

সমঝোতার আশায় দোহায় তালেবান ও আফগান সরকারের বৈঠক

  • আপডেট সময় : ০৯:৪৭:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুলাই ২০২১
  • ১২৪ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজতে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছে আফগান সরকারের প্রতিনিধিরা।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আফগানিস্তানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত বাড়ার মধ্যেই শনিবার দোহায় আফগান সরকার ও তালেবান প্রতিনিধিদের এই বৈঠক হয়।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করার পর তালেবান বাহিনী গত কয়েক সপ্তাহে সেদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ জোরদার করেছে। তালেবানের হামলার মুখে হাজার হাজার সাধারণ নাগরিক বাড়িঘর ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে।
তালেবান যোদ্ধারা এরইমধ্যে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কয়েকটি ক্রসিং এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছে, কিন্তু এখনও বাস্তব কোনো অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব বিদেশি সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে, তার আগেই দুই পক্ষের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় পৌছানোর চেষ্টা চলছে।
সেদেশের সরকারের ‘জাতীয় পুনঃএকত্রীকরণ উচ্চ পরিষদের’ প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ বলেন, “শান্তি প্রক্রিয়া চালু করার জন্য আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে, সেটা হল সাধারণ মানুষকে হত্যা বন্ধ করা।”
দোহায় দুই দিনের এই শান্তি আলোচনা শুরুর আগে এ কথা বলেন তিনি।
আবদুল্লাহ বলেন, “যেহেতু আমরা এই রক্তপাতের মূল্য চুকাতে পারব না, তাই আমরা এর দায়ও এড়াতে পারি না।”
আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় আক্ষেপ জানিয়েছেন তালেবানের উপপ্রধান এবং মধ্যস্ততাকারী মুল্লাহ আবদুল গানি বারদার।
তিনি বলেন, “তবে এখনও আশা আছে এবং এই আলোচনার ইতিবাচক ফল আনতে তালেবান উদ্যোগী থাকবে।”
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দেশটির উত্তরে তাখার প্রদেশে দুই পক্ষের লড়াইয়ের সাম্প্রতিক ধাক্কায় প্রায় ১২ হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
প্রাদেশিক রাজধানীর একটি বিদ্যালয়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন, কিন্তু তাদের খাবার-পানি ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে।
পালিয়ে আশ্রয় নেওয়াদের একজন মোহাম্মদ আমিন রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের সহায্য করার কেউ নেই। একটা কুকুরও এখানে বাঁচতে পারবে না।”
দক্ষিণে কান্দাহার প্রদেশেও তুমুল লড়াই চলছে। গত সপ্তাহে তালেবান যোদ্ধারা স্পিন বলদাক জেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে শুক্রবার আফগান সরকার জানিয়েছে, তারা ওই সীমান্ত ক্রসিংয়ের দখল ফিরে পেয়েছে।
রয়টার্সের সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকী শুক্রবার দুই পক্ষের লড়াইয়ের সংবাদ ও ছবি সংগ্রহের সময় নিহত হন।

সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার সীমানা ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে, যাতে লড়াইয়ের সময় আটকে পড়া আফগানরা নিজ এলাকায় ফিরতে পারেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে কান্দাহারে এ মাসে দুই হাজারের বেশি বাসিন্দা উদ্বাস্তু হয়েছেন এবং কান্দাহারের প্রাদেশিক গভর্নর রাতের বেলায় কারফিউ জারি করেছেন।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হিসাবে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার আফগান নিজের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সব মিলিয়ে সেদেশে এ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

সমঝোতার আশায় দোহায় তালেবান ও আফগান সরকারের বৈঠক

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুলাই ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজতে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছে আফগান সরকারের প্রতিনিধিরা।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আফগানিস্তানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত বাড়ার মধ্যেই শনিবার দোহায় আফগান সরকার ও তালেবান প্রতিনিধিদের এই বৈঠক হয়।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করার পর তালেবান বাহিনী গত কয়েক সপ্তাহে সেদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ জোরদার করেছে। তালেবানের হামলার মুখে হাজার হাজার সাধারণ নাগরিক বাড়িঘর ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে।
তালেবান যোদ্ধারা এরইমধ্যে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কয়েকটি ক্রসিং এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনা চলছে, কিন্তু এখনও বাস্তব কোনো অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব বিদেশি সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে যাবে, তার আগেই দুই পক্ষের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় পৌছানোর চেষ্টা চলছে।
সেদেশের সরকারের ‘জাতীয় পুনঃএকত্রীকরণ উচ্চ পরিষদের’ প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ বলেন, “শান্তি প্রক্রিয়া চালু করার জন্য আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে, সেটা হল সাধারণ মানুষকে হত্যা বন্ধ করা।”
দোহায় দুই দিনের এই শান্তি আলোচনা শুরুর আগে এ কথা বলেন তিনি।
আবদুল্লাহ বলেন, “যেহেতু আমরা এই রক্তপাতের মূল্য চুকাতে পারব না, তাই আমরা এর দায়ও এড়াতে পারি না।”
আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় আক্ষেপ জানিয়েছেন তালেবানের উপপ্রধান এবং মধ্যস্ততাকারী মুল্লাহ আবদুল গানি বারদার।
তিনি বলেন, “তবে এখনও আশা আছে এবং এই আলোচনার ইতিবাচক ফল আনতে তালেবান উদ্যোগী থাকবে।”
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দেশটির উত্তরে তাখার প্রদেশে দুই পক্ষের লড়াইয়ের সাম্প্রতিক ধাক্কায় প্রায় ১২ হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
প্রাদেশিক রাজধানীর একটি বিদ্যালয়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন, কিন্তু তাদের খাবার-পানি ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে।
পালিয়ে আশ্রয় নেওয়াদের একজন মোহাম্মদ আমিন রয়টার্সকে বলেন, “আমাদের সহায্য করার কেউ নেই। একটা কুকুরও এখানে বাঁচতে পারবে না।”
দক্ষিণে কান্দাহার প্রদেশেও তুমুল লড়াই চলছে। গত সপ্তাহে তালেবান যোদ্ধারা স্পিন বলদাক জেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে শুক্রবার আফগান সরকার জানিয়েছে, তারা ওই সীমান্ত ক্রসিংয়ের দখল ফিরে পেয়েছে।
রয়টার্সের সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকী শুক্রবার দুই পক্ষের লড়াইয়ের সংবাদ ও ছবি সংগ্রহের সময় নিহত হন।

সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার সীমানা ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে, যাতে লড়াইয়ের সময় আটকে পড়া আফগানরা নিজ এলাকায় ফিরতে পারেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে কান্দাহারে এ মাসে দুই হাজারের বেশি বাসিন্দা উদ্বাস্তু হয়েছেন এবং কান্দাহারের প্রাদেশিক গভর্নর রাতের বেলায় কারফিউ জারি করেছেন।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হিসাবে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার আফগান নিজের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সব মিলিয়ে সেদেশে এ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৩৫ লাখের বেশি।