ঢাকা ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

বাঁশের ঘরে ব্যবসায় ফেরার চেষ্টা

  • আপডেট সময় : ০২:০৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩
  • ৬৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার বঙ্গবাজারে ঘটা ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ‘পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা’ এখনো না হলেও সেখানে বাঁশের ঘর তুলে বেচাকেনার কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন করে মার্কেট তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এই বাঁশের ঘরেই ব্যবসা করতে চান।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে বঙ্গবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে যে সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারেননি। ফলে এবার তাঁরা বাঁশের ঘর তৈরি করে তার ওপর ত্রিপলের ছাউনি বসিয়ে ব্যবসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেখানকার কয়েক ব্যবসায়ী মিলে একসঙ্গে ঘর তৈরি করছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতরের আগে জানানো হয়েছিল যে বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঈদের পর পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। তবে সেটা কীভাবে হবে, তার কোনো রূপরেখা দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে ঈদের আগে অর্ধেক ব্যবসায়ী চৌকিতে বসে ছাতা টানিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও তাতে তাঁদের খুব একটা সুবিধা হয়নি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পুনর্বাসন কাজের যেহেতু কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না, তাই রোদ-বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে তাঁরা বঙ্গবাজারে বাঁশের ঘর তুলছেন।
গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে আগুন লাগে এবং সেখানকার মার্কেটগুলোতে কয়েক শ দোকান পুড়ে যায়। এরপর ঈদের আগে সেখানকার খুচরা ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে চৌকি পেতে ও ছাতা টানিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তবে অতিরিক্ত রোদের কারণে তখন ক্রেতারা বঙ্গবাজারে আসেননি। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় সুবিধা করতে পারেননি।
ব্যবসায়ীরা এবার আগামী ঈদুল আজহার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কথা বলার সময় তাঁরা এমন ধারণা প্রকাশ করেন যে সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় শিগগিরই এখানে নতুন মার্কেট না-ও হতে পারে। তাই আগামী শীতের মৌসুম বাঁশের অস্থায়ী দোকান বসিয়ে কোনোভাবে চালিয়ে দিতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করেন তাঁরা। মোল্লা গার্মেন্টসের মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঈদের আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা ছাতা টানিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু আমাদের মতো পাইকারি ব্যবসায়ীরা বসেননি। এখন আমরা বসার মতো একটা জায়গা করছি। যত দিন নতুন মার্কেট না হয়, তত দিনে এভাবে ব্যবসা চালাতে হবে।’
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘যেহেতু নতুন মার্কেট করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই আশা করছি আগামী ছয় মাস, এক বছর এভাবে ব্যবসা করতে পারব।’ এই ব্যবসায়ী মনে করেন, ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে তিনি আবার নতুন করে ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন। আনিয়া প্যান্ট হাউসের বিক্রেতা আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আজই প্রথম ত্রিপলের ছাউনির নিচে মালামাল নিয়ে বসেছি। তবে সকাল থেকে এখনো কোনো ক্রেতা পাইনি। ব্যবসা করা কঠিন হবে, সেই বাস্তবতা মেনেই আমরা নতুন করে শুরু করতে চাইছি। আশা করছি, পুরো মার্কেটে এভাবে দোকান তৈরি হয়ে গেলে কিছু ক্রেতা নিয়মিতভাবে বঙ্গবাজারে আসবেন।’
জাকিয়া গার্মেন্টসের মালিক সৈয়দ আহমেদ বলেন, দোকানপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ছয়টি বা তার চেয়ে বেশিসংখ্যক দোকান একত্র করে একটি ঘর বানানো হচ্ছে। এতে ব্যবসা করার মতো একটা পরিবেশ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বসতে শুরু করলে একসময় এখানে ক্রেতারাও কমবেশি আসবেন।’ এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে ঈদের পর আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। দায়িত্বশীল অনেকে এখনো দেশের বাইরে থাকায় আলোচনা শুরু করা সম্ভব হয়নি। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য স্থায়ী একটা ব্যবস্থা করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অগ্নিকা-ে ভস্মীভূত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটে (বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, মহানগরী ও আদর্শ) মোট দোকান ছিল ২ হাজার ৯৬১টি। এখন এই দোকানগুলোর চিহ্ন নেই। এ ছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে ৭৯১টি, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে ৫৯টি ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ৩৪টি দোকান আগুনে পুড়েছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বঙ্গবাজারে সব মিলিয়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মালপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকার বেশি। আর মার্কেটগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

বাঁশের ঘরে ব্যবসায় ফেরার চেষ্টা

আপডেট সময় : ০২:০৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার বঙ্গবাজারে ঘটা ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ‘পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা’ এখনো না হলেও সেখানে বাঁশের ঘর তুলে বেচাকেনার কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নতুন করে মার্কেট তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এই বাঁশের ঘরেই ব্যবসা করতে চান।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে বঙ্গবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এর আগে যে সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারেননি। ফলে এবার তাঁরা বাঁশের ঘর তৈরি করে তার ওপর ত্রিপলের ছাউনি বসিয়ে ব্যবসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেখানকার কয়েক ব্যবসায়ী মিলে একসঙ্গে ঘর তৈরি করছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতরের আগে জানানো হয়েছিল যে বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঈদের পর পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। তবে সেটা কীভাবে হবে, তার কোনো রূপরেখা দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে ঈদের আগে অর্ধেক ব্যবসায়ী চৌকিতে বসে ছাতা টানিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও তাতে তাঁদের খুব একটা সুবিধা হয়নি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পুনর্বাসন কাজের যেহেতু কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না, তাই রোদ-বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে তাঁরা বঙ্গবাজারে বাঁশের ঘর তুলছেন।
গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে আগুন লাগে এবং সেখানকার মার্কেটগুলোতে কয়েক শ দোকান পুড়ে যায়। এরপর ঈদের আগে সেখানকার খুচরা ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে চৌকি পেতে ও ছাতা টানিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তবে অতিরিক্ত রোদের কারণে তখন ক্রেতারা বঙ্গবাজারে আসেননি। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ব্যবসায় সুবিধা করতে পারেননি।
ব্যবসায়ীরা এবার আগামী ঈদুল আজহার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কথা বলার সময় তাঁরা এমন ধারণা প্রকাশ করেন যে সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় শিগগিরই এখানে নতুন মার্কেট না-ও হতে পারে। তাই আগামী শীতের মৌসুম বাঁশের অস্থায়ী দোকান বসিয়ে কোনোভাবে চালিয়ে দিতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে মনে করেন তাঁরা। মোল্লা গার্মেন্টসের মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঈদের আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা ছাতা টানিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু আমাদের মতো পাইকারি ব্যবসায়ীরা বসেননি। এখন আমরা বসার মতো একটা জায়গা করছি। যত দিন নতুন মার্কেট না হয়, তত দিনে এভাবে ব্যবসা চালাতে হবে।’
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘যেহেতু নতুন মার্কেট করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই আশা করছি আগামী ছয় মাস, এক বছর এভাবে ব্যবসা করতে পারব।’ এই ব্যবসায়ী মনে করেন, ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে তিনি আবার নতুন করে ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন। আনিয়া প্যান্ট হাউসের বিক্রেতা আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আজই প্রথম ত্রিপলের ছাউনির নিচে মালামাল নিয়ে বসেছি। তবে সকাল থেকে এখনো কোনো ক্রেতা পাইনি। ব্যবসা করা কঠিন হবে, সেই বাস্তবতা মেনেই আমরা নতুন করে শুরু করতে চাইছি। আশা করছি, পুরো মার্কেটে এভাবে দোকান তৈরি হয়ে গেলে কিছু ক্রেতা নিয়মিতভাবে বঙ্গবাজারে আসবেন।’
জাকিয়া গার্মেন্টসের মালিক সৈয়দ আহমেদ বলেন, দোকানপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ছয়টি বা তার চেয়ে বেশিসংখ্যক দোকান একত্র করে একটি ঘর বানানো হচ্ছে। এতে ব্যবসা করার মতো একটা পরিবেশ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বসতে শুরু করলে একসময় এখানে ক্রেতারাও কমবেশি আসবেন।’ এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে ঈদের পর আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। দায়িত্বশীল অনেকে এখনো দেশের বাইরে থাকায় আলোচনা শুরু করা সম্ভব হয়নি। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের জন্য স্থায়ী একটা ব্যবস্থা করা হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অগ্নিকা-ে ভস্মীভূত বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটে (বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, মহানগরী ও আদর্শ) মোট দোকান ছিল ২ হাজার ৯৬১টি। এখন এই দোকানগুলোর চিহ্ন নেই। এ ছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে ৭৯১টি, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে ৫৯টি ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ৩৪টি দোকান আগুনে পুড়েছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বঙ্গবাজারে সব মিলিয়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মালপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকার বেশি। আর মার্কেটগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।