ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত অঞ্চল ময়মনসিংহের ত্রিশাল। ত্রিশালের নামাপাড়ার একটি বিলের ধারে একটি বটগাছে বসে বাঁশি বাজাতেন নজরুল। সেই বটগাছের কোল ঘেঁষে ২০০৬ সালের ৯ মে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। নজরুলের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণও হয় কবির নামেই- ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়’। গতকাল ৯ মে, বিশ্ববিদ্যালয়টি পদার্পণ করতে যাচ্ছে ১৮ তম বছরে। শুরু থেকে এই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির নানা দিক নিয়ে পড়ুন এই লেখায়।
অবকাঠামো : ১৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টির কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। হোক সেটি আয়তন, অবকাঠামো, একাডেমিক কিংবা গবেষণার দিক থেকে। শুরুতে ২০ একর জায়গা নিয়ে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কাজ। সেখানেই ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। তিনতলা বিশিষ্ট কলা অনুষদ ভবন, বিজ্ঞান অনুষদ ভবন এবং তার সামনে একটি প্রশাসনিক ভবন- এই ছিল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর। বর্তমানে সেটি প্রসারিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন ৫৭ একরের ক্যাম্পাস। পুরনো ঐ ভবন তিনটিকে উন্নীত করা হয়েছে পাঁচতলা পর্যন্ত। এখানে রয়েছে অগ্নিবীণা ছাত্র হল ও দোলনচাঁপা ছাত্রী হল। এর পাশাপাশি ২০২২ সাল থেকে নতুন করে যুক্ত হয়েছে সুবিশাল আরো দুইটি আবাসিক হল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। যেগুলোতে রয়েছে অত্যাধুনিক সুবিধা। নির্মিত হয়েছে ১০ তলাবিশিষ্ট বেশ কয়েকটি ভবন। এর মধ্যে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন অন্যতম। এছাড়াও নির্মিত হয়েছে পাঁচতলা বিশিষ্ট লাইব্রেরি ভবন। সুশীতল ছায়াঘেরা পরিবেশে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাংলো, টিচার্স অফিসারস ক্লাব, ক্যাফেটেরিয়া। বর্তমানে নির্মাণকাজ চলছে ১০ তলাবিশিষ্ট নতুন বিজ্ঞান ভবন, তিনতলা ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র, ১০তলা ইন্সটিটিউট ভবন, নতুন দুটি ১০তলা আবাসিক ভবন, কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য পৃথক দুটি আবাসিক ভবনের। এককথায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুবিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে।
শিক্ষা কার্যক্রম : ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে মাত্র চারটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৪টি বিভাগ। অনুষদের সংখ্যা মোট ছয়টি। কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ, চারুকলা অনুষদ, আইন অনুষদ ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ। মাত্র ১৮৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন অধ্যয়নরত ৭ হাজার ১৯৮ শিক্ষার্থী। প্রতি বছর এখানে ভর্তি হন এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী।
গবেষণা : বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখন গবেষণার বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। এখানকার ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ, গবেষণা সম্প্রসারণ দফতর ছাড়াও বিভাগগুলোর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে গবেষণা কার্যক্রম। গত বছর প্রথমবারের মত আয়োজিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এ বছরের জুনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম গবেষণা মেলা। গবেষণার জন্য বাজেট বৃদ্ধিসহ গবেষণার উন্নয়নে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন।
স্থাপনা : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি পয়েন্টে রয়েছে তিনটি দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে জয় বাংলা ভাস্কর্যটি হচ্ছে এ ক্যাম্পাসের প্রথম ভাস্কর্য। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু হলের পাশে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ও অগ্নিবীণা হলের পেছনে নজরুল ভাস্কর্য রয়েছে। রয়েছে চির উন্নত মম শির স্মৃতিস্তম্ভ। নির্মাণাধীন রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লেক, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার ও শেখ রাসেল শিশু পার্ক। বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র পুকুরটিকে ঢেলে সাজানোর উদ্দেশ্যে চলছে সংস্কারকাজ।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা : বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর এখানে নিযুক্ত হওয়ার পরে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি নির্মাণের কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এটি। এছাড়াও পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসারও কার্যক্রম চলছে।
নামকরণে নজরুলের ছোঁয়া : বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনসহ বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণে শুরু থেকেই যেন নজরুলের ছোঁয়া লেগেই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুইটি আবাসিক হল নির্মিত হয়েছে নজরুলের দুটি কাব্যগ্রন্থের নামে। অগ্নিবীণা ও দোলনচাঁপা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার নাম চক্রবাক, যেটিও তার একটি কাব্যগ্রন্থ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনগুলোর নামেও মিশে আছে নজরুল। বাঁধনহারা, প্রলয়শিখা, কুহেলিকা, প্রভাতী, ঝিলিমিলিসহ আরো অনেক। নজরুলের পরিবারের সদস্যদের নামে চালু রয়েছে মেধাবৃত্তি।
১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন-এটিকে মটো করে আমাদের অভিযাত্রা চলমান। আমরা মনে করি একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে নিয়ে যাওয়ার জন্যে যে উপাদানগুলো প্রয়োজন, সেগুলো ইতিমধ্যেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে। এখন সেটিকে বিকশিত করার পালা। আমি সেই বিকশিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাই। সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সব দিক থেকে বিশ্বমানের করা সম্ভব। আগামীতে এটিই আমাদের প্রত্যয়। আমাদের টুইন ক্যাম্পাসের স্বপ্ন রয়েছে। আশা করি সেটিও বাস্তবায়িত হবে।’
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় : জাতীয় কবির স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে ১৮ বছর
জনপ্রিয় সংবাদ