নিজস্ব প্রতিবেদক : গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর ঢাকার বাইরে ২৪ এবং ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনে ৩৮টি রাজনৈতিক দল সম্পৃক্ত হয়। এদের মধ্যে ৭ দলের গণতন্ত্র মঞ্চ, ১১ দলের ১২ দলীয় জোট, ১০ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও ৪ দলের গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য রয়েছে। এ ছাড়া, বিএনপি, জামায়াত, এলডিপি ও লেবার পার্টি পৃথকভাবে এবং গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) যৌথভাবে আন্দোলনে যুক্ত রয়েছে। লেবার পার্টি প্রথমে ১২ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরে জোট ত্যাগ করে এককভাবে যুগপতের কর্মসূচি পালন করছে।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শরিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বিএনপি লিয়াজোঁ কমিটি পৃথকভাবে বৈঠক করে কর্মসূচি ঠিক করছে। নতুন কৌশল নিয়ে শিগগিরই বিএনপি তার মিত্রদের নিয়ে আন্দোলনের মাঠে নামার আভাস দিয়েছে। আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও পরবর্তী কঠিন কর্মসূচি বিষয়ে কাজ করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে সরকারবিরোধী আন্দোলন ক্রমেই বেগবান করার পরিকল্পনা করেছে দলটি।
বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের সময়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে আন্দোলন হবে এক দফা। সেটা সরকার পতনের আন্দোলন। ইতোমধ্যে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠকে সবাই বিএনপিকে এক দফা আন্দোলন শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। বিএনপি নীতিগতভাবে এ ব্যাপারে একমত হলেও তাদের আশঙ্কা, অচিরেই সরকারবিরোধী বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর আন্দোলন দমনে সরকার আরও কঠোর অবস্থানে যাবে। সেক্ষেত্রে হামলা, মামলা, ধরপাকড় আরও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে সরকার কঠোর অবস্থানে গেলে; সেই পরিস্থিতিতে সমমনা দল ও জোটের সবার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন কর্মসূচি ঠিক করা সম্ভব হবে না। তাই যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএনপি সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এ লক্ষে যুগপতের শরিক সব দল ও জোট থেকে প্রতিনিধি নিয়ে স্বল্প পরিসরে একটি ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ বা ‘পরিচালনা পর্ষদ’ করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। প্রয়োজন হলে যেন এক বৈঠকেই আন্দোলনের সবকিছু চূড়ান্ত করা যায়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে গত ৩০ এপ্রিল যুগপতের শরিক গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাতে এই ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বাম ঐক্যের এক নেতা নিশ্চিত করেন। বাম ঐক্যের ওই নেতা বলেন, নতুন করে গঠিত ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ যুগপৎ আন্দোলন পরিচালনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ছাড়াও দাবি আদায় সাপেক্ষে আগামী নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠন নিয়েও আলোচনা করবে। তবে, এই বিষয়ে একাধিক বিএনপি নেতার কাছে মতামত জানতে চাইলেও তাদের কেউ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ১০ দফার ভিত্তিতে সুশৃঙ্খলভাবে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে। সব শরিক দল ও জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেই যুগপতের কর্মসূচি এবং সরকারবিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করা হচ্ছে। আন্দোলনের এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। তবে নতুন কর্মসূচির ব্যাপারে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নতুন কর্মসূচি বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। সময় হলে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সব সমমনা দল ও জোটের সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ প্রসঙ্গে বাম ঐক্যের এক নেতা বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সঙ্গে ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেছেন, সরকারবিরোধী এই আন্দোলন সামনে আরও বেগবান হবে, পর্যায়ক্রমে তা এক দফায় পরিণত হবে। আন্দোলন দমনে যদি সরকার কঠোর অবস্থানে যায়, সেই পরিস্থিতিতে যুগপতের শরিক সব দলকে নিয়ে তখন বৈঠক করা সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই আন্দোলন পরিচালনার সুবিধার্থে শরিক প্রতিটি জোট থেকে এক বা দুজন করে সদস্য নিয়ে একটি ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ গঠন করা হবে। বিএনপি থেকে ওই কমিটিতে ৫ জন অন্তর্ভুক্ত হবেন, যার প্রধান হবেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সম্প্রতি (২ মে) গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠক প্রসঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের এক নেতা জানান, আলোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্দোলন জোরদার হলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে; যখন যুগপতের শরিক সব দল ও জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বসে আলোচনা করা সম্ভব না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে শুধু জোটের সমন্বয়কের সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে স্বল্প পরিসরে এমন একটি কমিটি গঠন নিয়ে প্রথম আলোচনা হয় বলেও জানান এই নেতা। তিনি বলেন, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে একটি ‘কোর কমিটি’ গঠনের কথা বলা হয়েছিল। তাই কমিটির জন্য গণতন্ত্র মঞ্চের কাছে দুই জনের নামও চাওয়া হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি গণতন্ত্র মঞ্চ নিজেরা এ ব্যাপারে বৈঠক করে। সে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, গণতন্ত্র মঞ্চের যখন যিনি সমন্বয়ক থাকবেন, তখন তিনি ওই ‘কোর কমিটিতে’ প্রতিনিধিত্ব করবেন। যদিও এই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আর কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।