প্রত্যাশা ডেস্ক: বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশেও সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি পায়। কিন্তু চার মাস ধরে বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম কমলেও দেশে কমেনি। উল্টো গত বৃহস্পতিবার দেশের বাজারে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৯ টাকা।
সরকার সয়াবিন আমদানিতে যে ভ্যাট অব্যাহতি দিয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন আমদানিকারকদের ভ্যাট বাবদ যে বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে, সেটি ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করতে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে দেশের বাজারে চিনির দামও বাড়ছে। তবে এই বৃদ্ধির কারণ বিশ্ববাজার। কারণ, বিশ্ববাজারে চিনির দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। বাড়তি দামে বিশ্ববাজার থেকে চিনি কিনে এনে দেশে দাম পাওয়া যাবে কি না, সেই শঙ্কায় আমদানিও কমিয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। অর্থাৎ চিনি আমদানিতে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সরকার দুই বছর আগে থেকে তেল–চিনির খুচরা দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। তবে সয়াবিন তেলে এখন সরকারের নির্ধারিত দাম কার্যকর থাকলেও চিনিতে তা নেই। সরবরাহ–সংকটের কারণে খুচরা বাজারে খোলা চিনি সহজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
ভ্যাটের প্রভাব সয়াবিনে: দেশে চলতি ২০২৩ সালের প্রথম চার মাস জানুয়ারি–এপ্রিলে অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার টন। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ১ লাখ ৮৪ হাজার টন। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় এবার একই সময়ে সয়াবিন আমদানি ১৩ শতাংশ বেশি হয়েছে। বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম ক্রমাগত কমছে। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এ বছরের জানুয়ারিতে আমদানি হওয়া অপরিশোধিত সয়াবিনের প্রতি টনের দাম ছিল ১ হাজার ৩৮০ ডলার। এরপর প্রতি মাসেই দাম কমেছে সয়াবিনের। চার মাসের ব্যবধানে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ১১০ ডলার কমে ১ হাজার ২৬০ ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ প্রতি লিটারে ১২ টাকা কমেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ধারাবাহিকভাবে সয়াবিনের দাম কমছে, তখনই দেশে লিটারে দাম বাড়ানো হয়েছে ১২ টাকা। এতে প্রতি লিটারের দাম দাঁড়িয়েছে ১৯৯ টাকা। এ সম্পর্কে ভোজ্যতেল উৎপাদক সমিতি গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকারের দেওয়া ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ গত ৩০ এপ্রিল শেষ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাট সুবিধা প্রত্যাহারের আগে প্রতি কেজিতে ভ্যাট দিতে হতো ৫ টাকা। এখন ভ্যাট দিতে হবে প্রায় ২০ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে নতুন করে বাড়তি ১৫ টাকা (লিটার হিসেবে ১৬ টাকা) ভ্যাট দিতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে।
অন্যতম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের পরিচালক মো. শফিউল আথহার তাছলিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সয়াবিনে ভ্যাট সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সর্বশেষ আমদানি দর বিবেচনা করে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। সয়াবিনের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল গত বছরের জুনে। তখন প্রতি লিটারের দাম ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে কয়েক দফা দাম বাড়ানো-কমানো হয়।
এর আগে সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমিয়ে ১৮৭ টাকা করা হয়েছিল। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার ১২ টাকা বাড়িয়ে সয়াবিনের প্রতি লিটারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৯ টাকা।
চিনিতে বিশ্ববাজারের প্রভাব: দেশে এখন চিনি আমদানি কম হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে চিনি আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল সাড়ে ১০ লাখ টন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় এবার আমদানি কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ বা ৩ লাখ টন।
বিশ্ববাজারে ধারাবাহিকভাবে চিনির দাম বাড়ছে। এর বিপরীতে আমদানি কমছে। এ বছর জানুয়ারিতে প্রতি টন কাঁচা চিনি আমদানি হয় ৪৭০ ডলারে, যা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে এপ্রিলে দাঁড়ায় ৫৩০ ডলারে। অর্থাৎ চার মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে চিনির টনপ্রতি দাম ৬০ ডলার বেড়েছে। প্রতি ডলারের দাম ১০৭ টাকা ধরলে চিনির দাম কেজিপ্রতি প্রায় সাড়ে ছয় টাকা বেড়েছে বলা যায়। তবে দেশের বাজারে চিনির দাম বেড়েছে অনেক বেশি।
এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম রহমান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেন। এই চিঠিতে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির দাম অনেকটাই বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টন চিনির দাম ৬৭৫ মার্কিন ডলার। অথচ এক মাস আগেও তা ছিল ৫২০ মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও দেশের বাজারে সে হারে বৃদ্ধি না পাওয়ায় সংগঠনের সদস্যরা চিনি আমদানির সাহস পাচ্ছেন না। গোলাম রহমান বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাজারের দামে চিনি আমদানি করলে বাজারে খুচরা মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত জানতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববাজারে চিনির দাম এখন বেশি। কিন্তু এই দরে চিনি আমদানি হয়নি। অথচ এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। যেমন সরবরাহ কমে গেছে। তাই সরকারের নির্ধারিত দরে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এপ্রিল মাসের শুরুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি কেজি খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল ১০৪ টাকা। তখন মোড়কজাত চিনির দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৯ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে এখন প্রতি কেজি চিনি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তেল-চিনির দাম বৃদ্ধির কারণ কী?
ট্যাগস :
তেল-চিনির দাম বৃদ্ধির কারণ কী?
জনপ্রিয় সংবাদ