ঢাকা ০৭:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

চিনি নিয়ে ‘ছিনিমিনি’ চলছে

  • আপডেট সময় : ০২:৪৯:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩
  • ১০৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদপরবর্তী চিনির বাজারে শুরু হয়েছে বিশৃঙ্খলা। আগের মতোই বেশিরভাগ দোকান থেকেই উধাও হয়ে গেছে প্যাকেটজাত চিনি। খোলা চিনি মিললেও কিনতে হচ্ছে রেকর্ড দাম কেজি ১৪০ টাকায়। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে খোলা চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। ঈদের আগে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছিল সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা। যদিও গত মাসে সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১০৪ টাকা বেঁধে দিয়েছিল।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা গেছে, এক মাসে চিনির দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আর এক বছরে বেড়েছে ৬২ শতাংশের বেশি। এদিকে বাজারজুড়ে চিনির দামে এ কারসাজি জেনেও চুপচাপ চিনি উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা। চুপচাপ সরকারি সংস্থাগুলোও। তবে চিনির দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ায় চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা।
বাজারে রেকর্ড মূল্যে চিনি বিক্রি হওয়ার কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও গতকাল বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় চিনি আমদানি নিয়ে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ সংকটে চিনির বাজারে এই অস্থিরতা চলছে। অন্যদিকে মিল মালিকেরা বলছেন, দেশে চিনির কোনো সংকট নেই। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি। এ অবস্থায় চিনিকলের মালিকেরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক চিঠির মাধ্যমে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এর মধ্যেই চিনির দাম প্রতি কেজিতে রেকর্ড বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খুচরা বাজারে মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি। আর খোলা চিনি মিললেও ক্রেতাকে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ১২০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে প্যাকেটজাত চিনি নেই। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঈদের পর থেকে কোনো চিনির সরবরাহ নেই। কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা অন্য পণ্যের অর্ডার নিলেও চিনির সরবরাহ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে।
আমদানিকারকদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির রেকর্ড দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। এমন পরিস্থিতিতে বেশি দাম দিয়ে চিনি আমদানি করবেন কিনা, সেই বিষয়ে সরকারের মত চেয়েছেন তারা। তারাও বাড়তি দামের কারণে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনো কোনো ডিলার চিনি বিক্রি করছেন। কিন্তু তারা দাম বেশি নিলেও দিচ্ছেন না ক্রয় রসিদ। কারওয়ান বাজারের মুন্না জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী সালাম হোসেন বলেন, ‘প্যাকেটজাত চিনি অনেক দিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা চিনি পাইকারি পর্যায়ে কিনতে হচ্ছে ১৩০ টাকার বেশি। এরপরও ক্রয় রসিদ দিচ্ছেন না ডিলাররা।’ নোয়াখালী স্টোরের বিক্রয়কর্মী মনির বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই বাজারে চিনির সংকট। ঈদের পর সংকট যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে দাম। আমরা বিক্রি বন্ধ রেখেছি।’ বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মফিজুল হক বলেন, ‘কোম্পানিগুলো জানিয়েছে চিনির উৎপাদন নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি টন অপরিশোধিত দাম দাঁড়িয়েছে ৬৭০ ডলারে, যা আগে থেকে প্রায় ১০০ ডলার বেশি। তাই আমদানি কমেছে।’ চিনি পরিশোধনকারীরা জানান, চিনির পরিশোধন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। একইসঙ্গে ডলারের ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ায় অপরিশোধিত চিনি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি মণ চিনি এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৭৫০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে এখন ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টনের বেশি চিনি মজুত রয়েছে এবং চিনির কোনো ঘাটতি নেই।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

চিনি নিয়ে ‘ছিনিমিনি’ চলছে

আপডেট সময় : ০২:৪৯:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদপরবর্তী চিনির বাজারে শুরু হয়েছে বিশৃঙ্খলা। আগের মতোই বেশিরভাগ দোকান থেকেই উধাও হয়ে গেছে প্যাকেটজাত চিনি। খোলা চিনি মিললেও কিনতে হচ্ছে রেকর্ড দাম কেজি ১৪০ টাকায়। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে খোলা চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। ঈদের আগে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ছিল সর্বোচ্চ ১২৫ টাকা। যদিও গত মাসে সরকার প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১০৪ টাকা বেঁধে দিয়েছিল।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে দেখা গেছে, এক মাসে চিনির দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। আর এক বছরে বেড়েছে ৬২ শতাংশের বেশি। এদিকে বাজারজুড়ে চিনির দামে এ কারসাজি জেনেও চুপচাপ চিনি উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকরা। চুপচাপ সরকারি সংস্থাগুলোও। তবে চিনির দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ায় চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা।
বাজারে রেকর্ড মূল্যে চিনি বিক্রি হওয়ার কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও গতকাল বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় চিনি আমদানি নিয়ে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ সংকটে চিনির বাজারে এই অস্থিরতা চলছে। অন্যদিকে মিল মালিকেরা বলছেন, দেশে চিনির কোনো সংকট নেই। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি। এ অবস্থায় চিনিকলের মালিকেরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এক চিঠির মাধ্যমে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এর মধ্যেই চিনির দাম প্রতি কেজিতে রেকর্ড বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খুচরা বাজারে মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি। আর খোলা চিনি মিললেও ক্রেতাকে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ১২০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে প্যাকেটজাত চিনি নেই। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঈদের পর থেকে কোনো চিনির সরবরাহ নেই। কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা অন্য পণ্যের অর্ডার নিলেও চিনির সরবরাহ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে।
আমদানিকারকদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির রেকর্ড দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। এমন পরিস্থিতিতে বেশি দাম দিয়ে চিনি আমদানি করবেন কিনা, সেই বিষয়ে সরকারের মত চেয়েছেন তারা। তারাও বাড়তি দামের কারণে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনো কোনো ডিলার চিনি বিক্রি করছেন। কিন্তু তারা দাম বেশি নিলেও দিচ্ছেন না ক্রয় রসিদ। কারওয়ান বাজারের মুন্না জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী সালাম হোসেন বলেন, ‘প্যাকেটজাত চিনি অনেক দিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা চিনি পাইকারি পর্যায়ে কিনতে হচ্ছে ১৩০ টাকার বেশি। এরপরও ক্রয় রসিদ দিচ্ছেন না ডিলাররা।’ নোয়াখালী স্টোরের বিক্রয়কর্মী মনির বলেন, ‘কয়েক মাস ধরেই বাজারে চিনির সংকট। ঈদের পর সংকট যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে দাম। আমরা বিক্রি বন্ধ রেখেছি।’ বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মফিজুল হক বলেন, ‘কোম্পানিগুলো জানিয়েছে চিনির উৎপাদন নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি টন অপরিশোধিত দাম দাঁড়িয়েছে ৬৭০ ডলারে, যা আগে থেকে প্রায় ১০০ ডলার বেশি। তাই আমদানি কমেছে।’ চিনি পরিশোধনকারীরা জানান, চিনির পরিশোধন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। একইসঙ্গে ডলারের ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ায় অপরিশোধিত চিনি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি মণ চিনি এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৭৫০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে এখন ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টনের বেশি চিনি মজুত রয়েছে এবং চিনির কোনো ঘাটতি নেই।