নিজস্ব প্রতিবেদক : পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাড়া করা ইজিবাইক নিয়ে ঈদের দিন ঘুরতে বের হয় একটি চক্র। পরের দিনও একই ইজিবাইক ভাড়া করে চক্রের সদস্যরা। নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। একসময় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে উড়ালসেতুর ওপরে এসে ইজিবাইক থামিয়ে গল্প করে। কিছুক্ষণ পর আশপাশে কোনও লোকজন দেখতে না পেয়ে চালক শাহাদাত হাওলাদারের মুখ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকে। ভুক্তভোগী ডাকচিৎকার করলে মুখ চেপে ধরে। এক পর্যায় অজ্ঞান হয়ে গেলে শাহাদাতকে ব্রিজ থেকে ফেলে দিয়ে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। এর আগে, শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহাদাত হত্যা ও ইজিবাইক ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারীসহ সাত জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন– হত্যাকা-ের মূল পরিকল্পনাকারী মো. জুয়েল বেপারী, মো. সাজ্জাদ শেখ, মো. ইসমাইল হোসেন, মো. লিমন মাতুব্বর, মো. সোহাগ, রোমান শিকদার ও মো. জাকির।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইজিবাইকটি তারা সিরাজদিখানের মো. জাকির হোসেনেরর কাছে বিক্রি করে। আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ভোরে সিরাজদিখান থেকে মো. জাকিরকে গ্রেফতার করা হয়। জাকিরের গ্যারেজ থেকে ওই ইজিবাইকসহ বিভিন্ন সময়ে ছিনতাই হওয়া আরও পাঁচটি ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়েছে। মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘রাজধানীর কদমতলীর মদিনাবাগ এলাকায় বসবাসকারী শাহাদাত হাওলাদার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় একটি গ্যারেজ থেকে ভাড়া করে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ২৩ এপ্রিল বিকালে প্রতিদিনের মতো ওই গ্যারেজ থেকে ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহনের বের হন। ওইদিন রাতে তিনি বাসায় না ফিরলে পরিবারের লোকজন মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পান।’
তিনি বলেন, ‘২৪ এপ্রিল সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে শাহাদাতের মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি জানান, সিরাজদিখান এলাকার কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে উড়ালসেতুর নিচে একটি লাশ পড়ে আছে। সংবাদ পেয়ে শাহাদাতের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে যায়। মাথা, মুখ ও কপালে জখম অবস্থায় শাহাদাতের মরদেহ দেখতে পায়। খবর পেয়ে সিরাজদিখান থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।’ এ ঘটনায় মৃতের ভাই শহিদুল ইসলাম জসিম সিরাজদিখান থানায় অজ্ঞাত দুই-তিন জনের বিরুদ্ধে দস্যুতাসহ একটি হত্যা মামলা করেন।
যেভাবে হত্যা করা হয়: প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, গত ২২ এপ্রিল ঈদের দিন জুয়েল, সাজ্জাদ, লিমন, রোমান, ইসলাইল ও সোহাগ মিলে মাওয়া ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘণ্টায় ৩২০ টাকা হিসেবে ইজিবাইক ভাড়া করে। বেড়ানোর সময় তারা ইজিবাইকটি ছিনতাই করবে বলে পরিকল্পনা করে। কিন্তু ঈদের দিন হওয়ায় পরের দিন ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে তারা। সে অনুযায়ী ঈদের দিন শাহাদাতকে এক হাজার ৯০০ টাকা ভাড়া দেয়। পরের দিনও ঘুরতে যাবে বলে শাহাদাতের ফোন নম্বর রাখে জুয়েল।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল বিকালে মোবাইল ফোনে কল করে শাহাদাতকে কদমতলী লাবনী রেস্টুরেন্টের সামনে ডেকে আনা হয়। সেখান থেকে জুয়েল, সাজ্জাদ ও লিমন ইজিবাইকে ওঠে। কিছুক্ষণ পর ইসমাইলকে ফোন দিয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের কালীগঞ্জ, খালপাড় অবস্থান করতে বলে। কালীগঞ্জ এলাকা থেকে ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তারা শ্রীনগরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সময় পার করতে থাকে। মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘রাত আনুমানিক ১১টায় সিরাজদিখান কুচিয়ামোড়া রেলওয়ে উড়ালসেতুর ওপরে এসে ইজিবাইক থামিয়ে গল্প করতে থাকে তারা। এক সময় শাহাদাতের মুখ, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকে। পরে অজ্ঞান হয়ে গেলে শাহাদাতকে ব্রিজের নিচে ফেলে দিয়ে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়।’
ইজিবাইক বিক্রি করা হয় যেভাবে: গ্রেফতার জাকির জানান, আসামিদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকায় ইজিবাইকটি কেনে সে। পরে রঙ ও কাঠামো পরিবর্তন করে অন্যত্র বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। হত্যাকা-ে জড়িত চক্রটির কাছ থেকে বিভিন্ন সময় চোরাই-ছিনতাই করা ইজিবাইক-অটোরিকশা অল্প দামে কিনে রঙ ও কাঠামো পরিবর্তন করে বিক্রি করতো জাকির। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, গ্রেফতার ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় ইজিবাইক-অটোরিকশা ভাড়া করে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে যেতো। প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে ইজিবাইক-অটোরিকশা ছিনতাই করতো। এছাড়া গ্রেফতার জুয়েল, লিমন ও ইসমাইলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাচেষ্টা ও চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।