ঢাকা ১১:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

মন্দা কাটছেই না প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে

  • আপডেট সময় : ১০:৪৪:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৩
  • ১০৬ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক : প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে সময়টা খারাপ যাচ্ছে। ছয় মাস আগে যার নি¤œগতি শুরু হয়েছিল, এখনও সেই গতি মাথা তোলেনি। বরং আরও নিচের দিকেই নামছে যেন। সর্বশেষ ভরসা ছিল ঈদ। ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন ঈদে বাজারটা উঠতে পারে। কিন্তু দেখা গেছে উল্টোচিত্র, বাজার ওঠেনি।
দেশে ডলার সংকট, ঋণপত্র খুলতে না পারা, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ ইত্যাদি কারণে মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে গেছে, দাম বেড়েছে ল্যাপটপেরও। এ দুটি প্রযুক্তি পণ্য এখন অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে। দেশের মোবাইল ফোন উৎপাদকদের সংগঠন বিএমপিআইএ’র সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শাহিদ বলেন, মোবাইল ফোনের বাজার খুব খারাপ। কবে ভালো হবে বা আর কতদিন এমন খারাপ অবস্থা চলবে জানি না।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির এক তথ্যে দেখা গেছে, গত মার্চ মাসে (৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত আপডেটেড) দেশে টু-জি মোবাইল ফোন তৈরি হয়েছে ১১ লাখ ৭৭ হাজার পিস। ফেব্রুয়ারি মাসে যা ছিল ১৬ লাখ ৬৯ হাজার। দেশে থ্রি-জি মোবাইল ফোনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। একই মাসে ফোর-জি ফোন তৈরি হয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার। আর ফাইভ-জি ফোনের সংখ্যা ৩ হাজার একই মাসে দেশে মোবাইল ফোন আমদানির সংখ্যা দেখতে গিয়ে জানা যায়, এই সময়ে (গত মার্চে) দেশে কোনও টু-জি ও থ্রি-জি ফোন আমদানি করা হয়নি। গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে কোনও ফোর-জি ফোন আমদানি করা না হলেও মার্চ মাসে ১১ হাজার ফোর-জি ফোন এবং মাত্র ১৯৭টি ফাইভ-জি ফোন আমদানি করা হয়েছে। বাজারে চাহিদা না থাকায় ফোন উৎপাদন ও আমদানিতে ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বেশ দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে একটা-দুটো ব্র্যান্ড ছাড়া কারোরই নতুন মডেলের সেট নেই। নতুন দুই একটি মডেলে বাজারে এসে সাড়া ফেলতে পারেনি। দাম বেশি বলে ক্রেতাদের আগ্রহ কম বলে জানা গেছে বাজার সূত্রে। কোনও কোনও ব্র্যান্ড মোবাইলের দাম কমিয়েও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা পায়নি। ফলে বাজারের সার্বিক চিত্র হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন ট্রানশান বাংলাদেশের (আইটেল, ইনফিনিক্স ও টেকনো মোবাইলের উৎপাদক) প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য ঈদ মৌসুমের তুলনায় এবার অন্তত ২০ শতাংশ বিক্রি কম হয়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশে স্মার্টফোন আমদানি ২৩ শতাংশ কমেছে। মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বৈশ্বিক সরবরাহে ব্যাঘাত, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি এবং নতুন আরোপিত মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) কারণে এমনটি হয়েছে। বৈশ্বিক শিল্প বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্টের সর্বশেষ মার্কেট মনিটর সার্ভিসের গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
খারাপের বৃত্তেই আটকে আছে প্রযুক্তি পণ্যের বাজার: দেশের প্রযুক্তি পণ্যের বাজারও দীর্ঘদিন খারাপের বৃত্তেই আটকে আছে। প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রিতে ধস নামতে নামতে তা ৫০ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। রোজার শেষ ১০ দিনে প্রযুক্তি পণ্যের আমদানিকারকদের বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও উপহারের ঘোষণায় বাজার কিছুটা উঠেছে, ৫০ শতাংশের জায়গা থেকে ১০ শতাংশ উঠে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের সবচেয়ে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের আমদানিকারক অন্যতম প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডের পরিচালক (চ্যানেল সেলস) মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন বলেন, ঈদের বাজারটা ভালো যায়নি। তবে ঈদের আগের ১০ দিনে কিছু পণ্য বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ট্যাব, পেইন্টিং ট্যাব, ল্যাপটপ, কালার প্রিন্টার ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে ঘরে বসে কাজ করার জন্য পেশাদার লোকজন এসব কিনেছে বলে আমরা জেনেছি। ঈদ শেষে বাজার আবার কোন রূপে ফিরবে বিষয়টা নিয়ে তিনি ধারণা করতে পারছেন না বলে জানান।
ফাইভ-জি কবে? ফাইভ-জি যন্ত্রাংশ আমদানি করতে না পারায় বাণিজ্যিকভাবে এই সেবা চালু কবে হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অপারেটরগুলো পরীক্ষামূলক অপারেশন চালিয়ে সফল হলেও বাণিজ্যিক অপারেশনে এখনই যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশে ফাইভ-জি মোবাইলের উৎপাদন শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ব্র্যান্ডের ফাইভ-জি মোবাইল ফোন আমদানিও হচ্ছে। কিন্তু কবে থেকে ফাইভ-জি ব্যবহার করা যাবে তা এখনও জানা যায়নি। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদেই ফাইভ-জি চালুর পরিকল্পনা থাকলেও বাণিজ্যিক অপারেশনে যাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফাইভ-জির বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ব্যবহারকারীরা যতক্ষণ না ফাইভ-জি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন ততক্ষণ আমরা অপারেটরগুলোকে চাপ দিতে পারছি না। আমরা এ ক্ষেত্রে এখন ধীরে চলছি। আমরা যেটার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি তা হলো ফোর-জির সম্প্রসারণ। আমরা জেনেছি, ফোর-জিকে আমরা সহজেই ফাইভ-জিতে রূপান্তর করতে পারবো। এজন্য আমরা ফোর-জি সম্প্রসারণে কাজ করছি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মন্দা কাটছেই না প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে

আপডেট সময় : ১০:৪৪:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৩

প্রযুক্তি ডেস্ক : প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে সময়টা খারাপ যাচ্ছে। ছয় মাস আগে যার নি¤œগতি শুরু হয়েছিল, এখনও সেই গতি মাথা তোলেনি। বরং আরও নিচের দিকেই নামছে যেন। সর্বশেষ ভরসা ছিল ঈদ। ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন ঈদে বাজারটা উঠতে পারে। কিন্তু দেখা গেছে উল্টোচিত্র, বাজার ওঠেনি।
দেশে ডলার সংকট, ঋণপত্র খুলতে না পারা, মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ আমদানিতে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ ইত্যাদি কারণে মোবাইল ফোনের দাম বেড়ে গেছে, দাম বেড়েছে ল্যাপটপেরও। এ দুটি প্রযুক্তি পণ্য এখন অনেকটাই সাধারণের নাগালের বাইরে। দেশের মোবাইল ফোন উৎপাদকদের সংগঠন বিএমপিআইএ’র সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শাহিদ বলেন, মোবাইল ফোনের বাজার খুব খারাপ। কবে ভালো হবে বা আর কতদিন এমন খারাপ অবস্থা চলবে জানি না।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির এক তথ্যে দেখা গেছে, গত মার্চ মাসে (৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত আপডেটেড) দেশে টু-জি মোবাইল ফোন তৈরি হয়েছে ১১ লাখ ৭৭ হাজার পিস। ফেব্রুয়ারি মাসে যা ছিল ১৬ লাখ ৬৯ হাজার। দেশে থ্রি-জি মোবাইল ফোনের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। একই মাসে ফোর-জি ফোন তৈরি হয়েছে ৫ লাখ ৭০ হাজার। আর ফাইভ-জি ফোনের সংখ্যা ৩ হাজার একই মাসে দেশে মোবাইল ফোন আমদানির সংখ্যা দেখতে গিয়ে জানা যায়, এই সময়ে (গত মার্চে) দেশে কোনও টু-জি ও থ্রি-জি ফোন আমদানি করা হয়নি। গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে কোনও ফোর-জি ফোন আমদানি করা না হলেও মার্চ মাসে ১১ হাজার ফোর-জি ফোন এবং মাত্র ১৯৭টি ফাইভ-জি ফোন আমদানি করা হয়েছে। বাজারে চাহিদা না থাকায় ফোন উৎপাদন ও আমদানিতে ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বেশ দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে একটা-দুটো ব্র্যান্ড ছাড়া কারোরই নতুন মডেলের সেট নেই। নতুন দুই একটি মডেলে বাজারে এসে সাড়া ফেলতে পারেনি। দাম বেশি বলে ক্রেতাদের আগ্রহ কম বলে জানা গেছে বাজার সূত্রে। কোনও কোনও ব্র্যান্ড মোবাইলের দাম কমিয়েও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা পায়নি। ফলে বাজারের সার্বিক চিত্র হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছেন ট্রানশান বাংলাদেশের (আইটেল, ইনফিনিক্স ও টেকনো মোবাইলের উৎপাদক) প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যান্য ঈদ মৌসুমের তুলনায় এবার অন্তত ২০ শতাংশ বিক্রি কম হয়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশে স্মার্টফোন আমদানি ২৩ শতাংশ কমেছে। মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, বৈশ্বিক সরবরাহে ব্যাঘাত, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি এবং নতুন আরোপিত মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) কারণে এমনটি হয়েছে। বৈশ্বিক শিল্প বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্টের সর্বশেষ মার্কেট মনিটর সার্ভিসের গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
খারাপের বৃত্তেই আটকে আছে প্রযুক্তি পণ্যের বাজার: দেশের প্রযুক্তি পণ্যের বাজারও দীর্ঘদিন খারাপের বৃত্তেই আটকে আছে। প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রিতে ধস নামতে নামতে তা ৫০ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। রোজার শেষ ১০ দিনে প্রযুক্তি পণ্যের আমদানিকারকদের বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও উপহারের ঘোষণায় বাজার কিছুটা উঠেছে, ৫০ শতাংশের জায়গা থেকে ১০ শতাংশ উঠে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের সবচেয়ে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের আমদানিকারক অন্যতম প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) লিমিটেডের পরিচালক (চ্যানেল সেলস) মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন বলেন, ঈদের বাজারটা ভালো যায়নি। তবে ঈদের আগের ১০ দিনে কিছু পণ্য বিক্রি হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ট্যাব, পেইন্টিং ট্যাব, ল্যাপটপ, কালার প্রিন্টার ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, ঈদের ছুটিতে ঘরে বসে কাজ করার জন্য পেশাদার লোকজন এসব কিনেছে বলে আমরা জেনেছি। ঈদ শেষে বাজার আবার কোন রূপে ফিরবে বিষয়টা নিয়ে তিনি ধারণা করতে পারছেন না বলে জানান।
ফাইভ-জি কবে? ফাইভ-জি যন্ত্রাংশ আমদানি করতে না পারায় বাণিজ্যিকভাবে এই সেবা চালু কবে হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অপারেটরগুলো পরীক্ষামূলক অপারেশন চালিয়ে সফল হলেও বাণিজ্যিক অপারেশনে এখনই যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দেশে ফাইভ-জি মোবাইলের উৎপাদন শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ব্র্যান্ডের ফাইভ-জি মোবাইল ফোন আমদানিও হচ্ছে। কিন্তু কবে থেকে ফাইভ-জি ব্যবহার করা যাবে তা এখনও জানা যায়নি। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদেই ফাইভ-জি চালুর পরিকল্পনা থাকলেও বাণিজ্যিক অপারেশনে যাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফাইভ-জির বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ব্যবহারকারীরা যতক্ষণ না ফাইভ-জি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন ততক্ষণ আমরা অপারেটরগুলোকে চাপ দিতে পারছি না। আমরা এ ক্ষেত্রে এখন ধীরে চলছি। আমরা যেটার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি তা হলো ফোর-জির সম্প্রসারণ। আমরা জেনেছি, ফোর-জিকে আমরা সহজেই ফাইভ-জিতে রূপান্তর করতে পারবো। এজন্য আমরা ফোর-জি সম্প্রসারণে কাজ করছি।