নিজস্ব প্রতিবেদক : গৃহস্থালিতে নারীর মজুরিবিহীন শ্রমের মূল্যায়ন এবার হতে যাচ্ছে। এতদিন ধরে উপেক্ষিত এই শ্রমের আর্থিক মূল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার একনেক সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মহিলাদের অবদান আন্ডার রিপোর্টেড। গত সভায়ও তিনি আমাকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন যে এটা আমাদের (জিডিপিতে) অন্তর্ভুক্ত করার জন্য।” বাংলাদেশে গৃহস্থালিতে মজুরিবিহীন যে শ্রম যায়, তার প্রায় পুরোটাতেই অবদান নারীর। তবে জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান উপেক্ষিত রয়েছে বলে বিভিন্ন নারী সংগঠন তা জিডিপিতে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে। ঘরের কাজের আর্থিক মূল্যায়ন আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে জিডিপিতে যুক্ত করতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মান্নান।
“বিবিএসকে অলরেডি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবারেরটা তো (২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট) অলরেডি অনেক কিছু হয়ে গেছে, বেশি কিছু করতে পারব না। এর পরবর্তী (২০২৪-২৫) বাজেটে মহিলাদের কাজের মূল্যায়ন করে আমরা জিডিপিতে প্রকৃতভাবে দেখাতে পারি।”
বিবিএসের ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরুষদের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি মজুরিবিহীন কাজ করেন নারীরা। একজন নারী সপ্তাহে গড়ে ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ দিনে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা গৃহস্থালির মজুরিবিহীন কাজ করেন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গৃহস্থালির কাজের চাপে অনেক নারী চাকরিতে যেতে পারেন না কিংবা চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার ভাষায় বলছিলেন, এটা এমন এক চাকরি, যার কোনো কর্মঘণ্টা নেই, বিশ্রাম নেই, ছুটি নেই, বেতন নেই, পেনশন নেই। “এগুলো মূল্যায়ন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ খুব বেশি। আমরাও তার সঙ্গে শতভাগ একমত।”
তিনি বলেন, “আমাদের বাস্তব জিডিপি আমরা যা দেখাচ্ছি তার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ আমাদের অর্ধেক জনশক্তির কাজ জিডিপিতে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।” গত ২০২১-২২ অর্থবছরের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে বাংলাদেশের মোট জিডিপির আকার ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার।
নারীর শ্রম জিডিপিতে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “সম্প্রতি পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত শ্রম জরিপে কৃষিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অবদান বেশি বলে তথ্য উঠে এসেছে। মহিলাদের শুধু মাঠে গিয়ে কাজ নয়, ঘরে হাঁস-মুরগি গরু-ছাগল পালন, বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনসহ নানা হিসাব করে দেখা গেছে, কৃষিতে পূরুষের তুলনায় নারীদের অবদান বেশি। “অদুর ভবিষ্যতে দুটি একত্র হবে। এবং একটি সুষম অর্থনীতিতে যা হওয়ার কথা তা যথাযথভাবে এখাতে প্রতিফলন হবে।” গৃহস্থালি শ্রমের স্বীকৃতির পক্ষে হলেও এর আর্থিক মূল্য পরিমাপের জটিল দিকটির কথাও বলছেন অর্থনীতিবিদরা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “মায়ের ভালবাসার মূল্যায়ন করা তো সম্ভব নয়। কিন্তু মায়ের রান্না, ধান বানা, পানি গরম, কাপড় ধোয়া এইগুলোর তো মূল্যায়ন করা সম্ভব।” পুরুষদের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ বেশি মজুরিবিহীন কাজ করেন নারীরা, দেখিয়েছে বিবিএসের প্রতিবেদন
এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, “আমরা যে জিডিপি তৈরি করি, তাতে আমাদের দেশীয় কোনো পদ্ধতি বা মডেল ফলো করে করি না। সিস্টেম অব ন্যাশনাল একাউন্টের মাধ্যমে জিডিপির হিসাব করা হয়। সারাবিশ্বেই ওই পদ্ধতি অনুসরণ করে করা হয়। সব দেশ এক রকমই করে থাকে।”
গৃহস্থালিতে শ্রমের আর্থিক মূল্যমাণের পরিমাপ কী হতে পারে, তার একটি ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, “সাধারণত বাজারে কোনো পণ্যের মূল্য বিনিময় না হলে তা জিডিপিতে আসে না। এজন্য আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী বলেছেন একটি স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট করা যায়। যেমন ঘরে একজন মহিলা যতক্ষণ কাজে সময় দিচ্ছেন, সেই সময়টা যদি বাইরে দিতেন, সেই কাজের মূল্য কত পেতে পারতেন। “এই রকম একটি ছায়া একাউন্ট করে মহিলাদের কাজের শ্যাডো প্রাইসিং বা মূল্যায়ন করা যায়। যেমন নারী ঘরে যে ভাত-তরকারি রান্না করে খাওয়াচ্ছেন, তা বাজারে বিক্রি করলে কত টাকা মজুরি পেতে পারতেন, তা স্যাটেলাইট একাউন্টে যুক্ত করার প্রস্তাব অর্থনীতিবিদদের আছে।”
গৃহস্থালির শ্রম যুক্ত হচ্ছে জিডিপিতে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ