উত্তরা ও আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চলাচল করছে। যাতায়াতের এ মাধ্যমটি মানুষের কাছে প্রিয় হলেও শুধু একটি রুটে চলাচল করায় সুবিধার বাইরেই থাকছেন বেশিরভাগ যাত্রী। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, বাকি রুটগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে গোটা শহরের মানুষ মেট্রোরেলের সুবিধা পাবেন। যানবাহনের মধ্যে একক দাপট থাকবে মেট্রোরেলের।
জানা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ অর্থাৎ সাত বছর পর গোটা ঢাকাশহর মেট্রোরেলের নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে। চালু হবে পাতালসহ মোট ৬টি রুটে মেট্রোরেল চলাচল। আর এই নতুন সম্ভাবনা নিয়েও দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে মেট্রোরেলের অন্য রুটগুলোর নির্মাণকাজ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাত্র তিন মাস আগে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করা বাংলাদেশে সাত বছর পর থাকবে মেট্রোর একক আধিপত্য। সম্প্রতি রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ভবনের মেট্রোরেলের সভা কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানান, গত ১ মার্চ মেট্রোরেলের পঞ্চম স্টেশন হিসেবে চালু করা হয় মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন। এর আগে, উত্তরা থেকে উত্তর, আগারগাঁও, পল্লবী ও উত্তরা সেন্টার স্টেশন চালু হয়। ১৫ মার্চ কাজীপাড়া ও মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশন চালু করা হয়। এরপর উত্তরা-আগারগাঁও সব স্টেশন উন্মুক্ত করা হয়। ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, জুলাই থেকে পুরো দমে শুরু হবে ট্রেন চলাচল। তখন ভোর থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলবে।
এদিকে রাজধানীর যানজট কমিয়ে মানুষের যাতায়াত সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগে ২০১২ সালে সায় দেয় সরকার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ছয় ধাপে মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনার প্রথম ধাপে গঠন করা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল। উড়াল ও পাতাল রেলপথ মিলিয়ে ছয়টি ধাপ রয়েছে। এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫, এমআরটি লাইন-২, নর্দার্ন ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-৪। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, এমআরটি লাইন-৬, ১ ও ৫ এই তিন লাইন যথাক্রমে ২০২৫ সালের জুন, ২০২৬ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে এমআরটি লাইন-১ ও ৫ এর কাজ শেষ হতে ২০৩০ সাল লেগে যেতে পারে।
এদিকে, ২০২৮ সালের মধ্যে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত উড়াল-পাতাল মিলিয়ে মোট ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে উড়াল এবং সাত কিলোমিটারে পাতাল রেলপথ নির্মাণ হবে। এই রুটের মোট ১৪টি স্টেশনের মধ্যে নয়টি উড়াল পথে আর পাঁচটি স্টেশন থাকবে পাতাল পথে।
এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন রুট নামে পরিচিত এই অংশের সার্ভে কাজ চলছে এখন। ২০২৮ সালে লাইনটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জনিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসেবে করোনা মহামারির কথা বলা হচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘ সময় থেমে ছিল প্রকল্পের নির্মাণকাজ।
ঢাকায় মেট্রোরেল পথ নির্মাণের উদ্যোগের সূচনা হয় এমআরটি লাইন-৬ এর হাত ধরে। উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথের ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটারের কাজ শেষ করা হয় প্রথম ধাপে। গেল বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা। উদ্বোধনের পর ২৯ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করছে মেট্রোরেল।
সাত বছরে মেট্রোরেলের আওতায় আসবে পুরো রাজধানী
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ