ঢাকা ০২:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিছুতেই কমছে না করোনা সংক্রমণ

  • আপডেট সময় : ০২:১৭:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : লকডাউন চলছে। এর মধ্যেও বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যু। টানা লকডাউনের ১১তম দিনেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না কেউই। খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- এভাবে চলতে থাকলে খুব তাড়াতাড়িই পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে ২৪ ঘণ্টায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাফে সাড়ে ১৩ হাজারের ঘরও ছাড়িয়ে গেল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৪ হাজার নমুন পরীক্ষা করে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ২২০ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, “সংক্রমণের সংখ্যা কিছুতেই কমছে না। যে হারে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে তাহলে আগামী সাত থেকে ১০ দিন পর আর হাসপাতালে বেড পাওয়া যাবে না।”
তিনি বলেন, “সব জেলাতেই কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে এবং সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। গত মাসে সারা দেশে সংক্রমণের হার অনেক বেশি ছিল। জুন মাসে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী সংক্রমিত হয়েছেন। অথচ শুধু জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে রোগী প্রায় এক লাখ হয়ে গেছে।”
এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ হয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বতর্মানে দৈনিক শনাক্ত ১১ হাজারের ঘরে আছে। এভাবে চলতে থাকলে এক দিনে ১৪ থেকে ১৫ হাজারে পৌঁছে যেতে বেশি সময় লাগবে না। আর তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সবাইকে বিপদে পড়তে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমন শঙ্কার সঙ্গে একমত দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম স্বাস্থ্য অধিদফতরের শঙ্কা প্রসঙ্গে বলেন, “এটা সাবধান বাণী। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ কেবল সাবধানবাণী দেওয়া না। যত রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তাদের প্রত্যেককে কঠোর ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “যে লকডাউন চলছে তা কোন কাজেই আসছে না। কেউ ঘরে নেই, সুযোগ পেলেই সবাই বের হয়ে আসছে। আসলে, রোগীদের শনাক্ত করে আইসোলেশনে নিতে হবে, তার পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিন করতে হবে। সেই সঙ্গে, যারা টেস্ট করতে পারছে না, তাদের জন্য শতভাগ মাস্ক পরার নির্দেশনা দিতে হবে। এই কাজ করতে হবে আরও কঠোরভাবে। নয়তো সংক্রমণের এই চেইন ভাঙ্গা যাবে না।”
তবে এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, “শনাক্ত হওয়ার পর বাসায় যারা থাকবে তাদেরকে খাবার দিতে হবে। এই খাবার দেওয়ার কাজটা করতে হবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কিংবা প্রশাসন থেকে। একইসঙ্গে শহরেও এটা করতে হবে, যেটা এখন হচ্ছে না। যার কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে রাস্তায় বের হতে হচ্ছে।”
এই লকডাউনে কাজ হচ্ছে কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। তার মতে, শনাক্তের সুফল এখন থেকে কিছুটা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেরকম কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, “যেটা আমি ধারণা করেছিলাম, শনাক্তে আজ থেকে একটা স্ট্যাবিলিটি আসবে। কিন্তু তা হয়নি, দেখা যাক আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে কিছু হয় কিনা। ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে যদি লকডাউনের ইফেক্ট না হয়, তাহলে ধরতে হবে চলমান বিধিনিষেধ আরও কঠোর করতে হবে।”
তার মতে, সারা দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে, আর মৃত্যুও হচ্ছে। সেক্ষেত্রে শুধু রাস্তাঘাট বন্ধ করাটা কাজে আসছে না। বিশেষ করে মসজিদগুলোতে ভিড় বন্ধ করা দরকার। এই মহামারি বিশেষজ্ঞ বলেন, ধীরে ধীরে সংক্রমণ শহরের দিকে আসছে।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “রাস্তাঘাটে ভিড় বাড়ছে, কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার চাইতেও অ্যালার্মিং হচ্ছে রাস্তার ধারের, গলির ভেতরের দোকানগুলোতে আড্ডা, মসজিদে নামাজের পরে আড্ডা এবং মানুষের বেড়াতে যাওয়া। মানুষের এইসব ভিড় থেকেই আসলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।”
পরিস্থিতির ভয়াবহতা টের পেতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরও একটি পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যায়। তারা জানিয়েছে, গত সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের চেয়ে রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ আর মৃত্যুহার বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
দেশে একদিনে রেকর্ড ১৩৭৬৮ রোগী শনাক্ত, ২২০ মৃত্যু : করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাফে সাড়ে ১৩ হাজারের ঘরও ছাড়িয়ে গেল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৪ হাজার নমুন পরীক্ষা করে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ২২০ জনের। ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। কিন্তু এর মধ্যেই ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। আগের দিন রোববার সারা দেশে রেকর্ড ১১ হাজার ৮৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত এবং ২৩০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্যা অধিদপ্তর। পরদিন মৃত্যুর সংখ্যা দশজন কমলেও এক দিনেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে দুই হাজারের কাছাকাছি। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ জনে। তাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৬৩৯ জনের প্রাণ গেছে করোনাভাইরাসে।
গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৬৪১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় অর্ধেক। চট্টগ্রাম বিভাগেও এক দিনে শনাক্ত রোগী দুই হাজার ছাড়িয়েছে। আর যে ২২০ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬৪ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৭ হাজার ২০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২১ জন। গত ৬ থেকে ৯ জুলাই টানা চারদিন দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজারের ওপরে। মাঝখানে ১০ জুলাই তা কমে আট হাজারের ঘরে থাকলেও পরদিনই ১১ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। সোমবার তা আরও বেড়ে সাড়ে ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেল। গত ২৭ জুন থেকে টানা ১৬ দিন ধরে একশোর বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে করোনাভাইরাসে। এরমধ্যে ৭ জুলাই তা প্রথমবারের মত ২০০ ছাড়ায় এবং ১১ জুলাই ২৩০ মৃত্যুর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ৯ জুলাই দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ পেরিয়ে যায়, সেদিনই মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়ায়। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৮ কোটি ৬৭ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৪০ লাখ ২৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ মহামারীতে।
করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ‘গোড়াতেই গলদ’ : দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। করোনা প্রতিরোধে দেশব্যাপী চলছে কঠোর লকডাউন। তারপরেও করোনা ভাইরাসের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না, ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে, মানুষ থেকে মানুষে। অতিমারি এ ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গোড়াতেই গলদ রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরো।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অন্যতম প্রধান উপায়গুলো হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে যত বেশি সম্ভব করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করা, আক্রান্ত বা সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন), কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করা যেন তার দ্বারা আর কেউ সংক্রমিত না হতে পারে। এর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
সম্প্রতি করোনা পজিটিভ হয়েছেন মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা ফেরদৌস নামের এক ব্যক্তি। করোনা সনাক্তের পর তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন। আইসোলেশন বা চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন দিক নির্দেশনা বা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেস্টের পর শুধু আমার পজিটিভ রিপোর্টের এসএমএস এসেছে। এছাড়া আর কেউ আমার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। কেউ কোন দিক নির্দেশনাও দেয়নি। শুধু ফেরদৌস নয়, অধিকাংশ করোনা রোগীর ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটছে। করোনা ভাইরাস টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ লক্ষণীয় হচ্ছে না, যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন, শুধু তারাই স্বেচ্ছায় করোনা টেস্ট করাচ্ছেন। ফলে অনেকেই সংক্রমিত হয়েও শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন এবং তারা বুঝে বা না বুঝেই অন্যদের আক্রান্ত করছেন।
অন্যদিকে আবার যারা করোনা পজিটিভ হচ্ছেন, তাদেরকে আইসোলেশনে রাখার বিষয়েও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের নেই কোনো উদ্যোগ। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি আইসোলেশনে থাকছেন, না রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেই বিষয়েও নেই কোনো তদারকি। সম্প্রতি লকডাউন চলাকালে চেকপোস্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে করোনা পজিটিভ হয়েও বাসার বাইরে বের হওয়ার কয়েকটি ঘটনা নজরে আসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত বেশি টেস্ট করা যায়, ততোই ভালো। করোনা টেস্ট করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি দ্রুত অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়,তাহলে তার থেকে অন্যরা সংক্রমিত হবে না। বেশি বেশি করোনা টেস্ট এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশন করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট সামর্থ্য বা যথাযথ পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলেও মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, করোনা ভাইরাসবাহী লোকজনকে আমরা যদি অন্যদের থেকে আলাদা করতে না পারি, তাহলে সেই ভাইরাসবাহীত লোক দ্বারা অন্যের শরীরে সংক্রমণ ছড়াবেই। এ কারণেই আমরা বলছি, প্রচুর সংখ্যক করোনার টেস্ট করা দরকার। প্রতিদিন আমরা যদি অন্তত এক থেকে দেড় লাখ করোনা পরীক্ষা করতে পারতাম, তাহলে বেশিরভাগ ভাইরাসবাহীত লোককে শনাক্ত করা যেত। ভারত, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল থেকেও আমাদের করোনা টেস্টের পরিমাণ কম। টেস্ট করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের ওপরে রয়েছে।
টেস্ট করে রোগী শনাক্ত, রোগীকে আলদা করা, তার সংস্পর্শে কারা এসেছে তাদেরকে চিহ্নিত করা, তাদেরকে কোয়ারেন্টাইন রাখা এবং যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, এটাইতো এখন কাজ, এসব না করে শুধু বক্তৃতা দিলেইতো করোনা প্রতিরোধ হবে না বলেও যোগ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমরা করোনার উৎসস্থলে হাত দিচ্ছি না। করোনা রোগে ভাইরাসের উৎস হচ্ছে করোনা রোগী। করোনা রোগের ভাইরাস আকাশ থেকেও পড়ে না, অন্য কোথাও থেকেও আসে না। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে, আমরা যদি তাকে আইসোলেটেড করতে পারি, তাহলে তার থেকে অন্যরা আর সংক্রমিত হবে না। অন্যদিকে একজন আক্রান্ত রোগী যদি রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তার দ্বারা অন্যরা আক্রান্ত হবেই। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা মনে করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় লকডাউন দিলেই করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও মনে করছে হাসপাতালে রোগী এলে চিকিৎসা করাই শুধু তাদের দায়িত্ব। কিন্তু বিষয়টাতো এমন নয়। আমাদেরকে সকলে মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। করোনা ভাইরাসের উৎস থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণের ওপরে আমাদেরকে জোর দেওয়া প্রয়োজন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মহান বিজয়ের মাস শুরু

কিছুতেই কমছে না করোনা সংক্রমণ

আপডেট সময় : ০২:১৭:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : লকডাউন চলছে। এর মধ্যেও বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যু। টানা লকডাউনের ১১তম দিনেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী হতে পারছেন না কেউই। খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- এভাবে চলতে থাকলে খুব তাড়াতাড়িই পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে ২৪ ঘণ্টায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাফে সাড়ে ১৩ হাজারের ঘরও ছাড়িয়ে গেল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৪ হাজার নমুন পরীক্ষা করে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ২২০ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, “সংক্রমণের সংখ্যা কিছুতেই কমছে না। যে হারে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে তাহলে আগামী সাত থেকে ১০ দিন পর আর হাসপাতালে বেড পাওয়া যাবে না।”
তিনি বলেন, “সব জেলাতেই কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়েছে এবং সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। গত মাসে সারা দেশে সংক্রমণের হার অনেক বেশি ছিল। জুন মাসে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী সংক্রমিত হয়েছেন। অথচ শুধু জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে রোগী প্রায় এক লাখ হয়ে গেছে।”
এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ হয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বতর্মানে দৈনিক শনাক্ত ১১ হাজারের ঘরে আছে। এভাবে চলতে থাকলে এক দিনে ১৪ থেকে ১৫ হাজারে পৌঁছে যেতে বেশি সময় লাগবে না। আর তাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সবাইকে বিপদে পড়তে হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমন শঙ্কার সঙ্গে একমত দেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম স্বাস্থ্য অধিদফতরের শঙ্কা প্রসঙ্গে বলেন, “এটা সাবধান বাণী। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ কেবল সাবধানবাণী দেওয়া না। যত রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তাদের প্রত্যেককে কঠোর ব্যবস্থাপনার আওতায় আনার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “যে লকডাউন চলছে তা কোন কাজেই আসছে না। কেউ ঘরে নেই, সুযোগ পেলেই সবাই বের হয়ে আসছে। আসলে, রোগীদের শনাক্ত করে আইসোলেশনে নিতে হবে, তার পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টিন করতে হবে। সেই সঙ্গে, যারা টেস্ট করতে পারছে না, তাদের জন্য শতভাগ মাস্ক পরার নির্দেশনা দিতে হবে। এই কাজ করতে হবে আরও কঠোরভাবে। নয়তো সংক্রমণের এই চেইন ভাঙ্গা যাবে না।”
তবে এখানে স্বাস্থ্য বিভাগের একার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, “শনাক্ত হওয়ার পর বাসায় যারা থাকবে তাদেরকে খাবার দিতে হবে। এই খাবার দেওয়ার কাজটা করতে হবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কিংবা প্রশাসন থেকে। একইসঙ্গে শহরেও এটা করতে হবে, যেটা এখন হচ্ছে না। যার কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে রাস্তায় বের হতে হচ্ছে।”
এই লকডাউনে কাজ হচ্ছে কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। তার মতে, শনাক্তের সুফল এখন থেকে কিছুটা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেরকম কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, “যেটা আমি ধারণা করেছিলাম, শনাক্তে আজ থেকে একটা স্ট্যাবিলিটি আসবে। কিন্তু তা হয়নি, দেখা যাক আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে কিছু হয় কিনা। ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে যদি লকডাউনের ইফেক্ট না হয়, তাহলে ধরতে হবে চলমান বিধিনিষেধ আরও কঠোর করতে হবে।”
তার মতে, সারা দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে, আর মৃত্যুও হচ্ছে। সেক্ষেত্রে শুধু রাস্তাঘাট বন্ধ করাটা কাজে আসছে না। বিশেষ করে মসজিদগুলোতে ভিড় বন্ধ করা দরকার। এই মহামারি বিশেষজ্ঞ বলেন, ধীরে ধীরে সংক্রমণ শহরের দিকে আসছে।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “রাস্তাঘাটে ভিড় বাড়ছে, কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার চাইতেও অ্যালার্মিং হচ্ছে রাস্তার ধারের, গলির ভেতরের দোকানগুলোতে আড্ডা, মসজিদে নামাজের পরে আড্ডা এবং মানুষের বেড়াতে যাওয়া। মানুষের এইসব ভিড় থেকেই আসলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।”
পরিস্থিতির ভয়াবহতা টের পেতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের আরও একটি পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যায়। তারা জানিয়েছে, গত সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের চেয়ে রোগী শনাক্তের হার বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ আর মৃত্যুহার বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
দেশে একদিনে রেকর্ড ১৩৭৬৮ রোগী শনাক্ত, ২২০ মৃত্যু : করোনাভাইরাস মহামারীতে দেশে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাফে সাড়ে ১৩ হাজারের ঘরও ছাড়িয়ে গেল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৪ হাজার নমুন পরীক্ষা করে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ২২০ জনের। ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। কিন্তু এর মধ্যেই ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। আগের দিন রোববার সারা দেশে রেকর্ড ১১ হাজার ৮৭৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত এবং ২৩০ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্যা অধিদপ্তর। পরদিন মৃত্যুর সংখ্যা দশজন কমলেও এক দিনেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে দুই হাজারের কাছাকাছি। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ জনে। তাদের মধ্যে ১৬ হাজার ৬৩৯ জনের প্রাণ গেছে করোনাভাইরাসে।
গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৬৪১৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় অর্ধেক। চট্টগ্রাম বিভাগেও এক দিনে শনাক্ত রোগী দুই হাজার ছাড়িয়েছে। আর যে ২২০ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৬৪ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৭ হাজার ২০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২১ জন। গত ৬ থেকে ৯ জুলাই টানা চারদিন দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১১ হাজারের ওপরে। মাঝখানে ১০ জুলাই তা কমে আট হাজারের ঘরে থাকলেও পরদিনই ১১ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। সোমবার তা আরও বেড়ে সাড়ে ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেল। গত ২৭ জুন থেকে টানা ১৬ দিন ধরে একশোর বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে করোনাভাইরাসে। এরমধ্যে ৭ জুলাই তা প্রথমবারের মত ২০০ ছাড়ায় এবং ১১ জুলাই ২৩০ মৃত্যুর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ৯ জুলাই দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ পেরিয়ে যায়, সেদিনই মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়ায়। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ১৮ কোটি ৬৭ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৪০ লাখ ২৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ মহামারীতে।
করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ‘গোড়াতেই গলদ’ : দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। করোনা প্রতিরোধে দেশব্যাপী চলছে কঠোর লকডাউন। তারপরেও করোনা ভাইরাসের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না, ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে গ্রামে, মানুষ থেকে মানুষে। অতিমারি এ ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গোড়াতেই গলদ রয়েছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরো।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অন্যতম প্রধান উপায়গুলো হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে যত বেশি সম্ভব করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করা, আক্রান্ত বা সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন), কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করা যেন তার দ্বারা আর কেউ সংক্রমিত না হতে পারে। এর পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
সম্প্রতি করোনা পজিটিভ হয়েছেন মিরপুর ১২ নম্বরের বাসিন্দা ফেরদৌস নামের এক ব্যক্তি। করোনা সনাক্তের পর তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন। আইসোলেশন বা চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন দিক নির্দেশনা বা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেস্টের পর শুধু আমার পজিটিভ রিপোর্টের এসএমএস এসেছে। এছাড়া আর কেউ আমার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। কেউ কোন দিক নির্দেশনাও দেয়নি। শুধু ফেরদৌস নয়, অধিকাংশ করোনা রোগীর ক্ষেত্রেই একই ঘটনা ঘটছে। করোনা ভাইরাস টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ লক্ষণীয় হচ্ছে না, যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে মনে করছেন, শুধু তারাই স্বেচ্ছায় করোনা টেস্ট করাচ্ছেন। ফলে অনেকেই সংক্রমিত হয়েও শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন এবং তারা বুঝে বা না বুঝেই অন্যদের আক্রান্ত করছেন।
অন্যদিকে আবার যারা করোনা পজিটিভ হচ্ছেন, তাদেরকে আইসোলেশনে রাখার বিষয়েও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরের নেই কোনো উদ্যোগ। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি আইসোলেশনে থাকছেন, না রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সেই বিষয়েও নেই কোনো তদারকি। সম্প্রতি লকডাউন চলাকালে চেকপোস্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে করোনা পজিটিভ হয়েও বাসার বাইরে বের হওয়ার কয়েকটি ঘটনা নজরে আসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত বেশি টেস্ট করা যায়, ততোই ভালো। করোনা টেস্ট করে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যদি দ্রুত অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়,তাহলে তার থেকে অন্যরা সংক্রমিত হবে না। বেশি বেশি করোনা টেস্ট এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশন করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট সামর্থ্য বা যথাযথ পদক্ষেপের অভাব রয়েছে বলেও মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, করোনা ভাইরাসবাহী লোকজনকে আমরা যদি অন্যদের থেকে আলাদা করতে না পারি, তাহলে সেই ভাইরাসবাহীত লোক দ্বারা অন্যের শরীরে সংক্রমণ ছড়াবেই। এ কারণেই আমরা বলছি, প্রচুর সংখ্যক করোনার টেস্ট করা দরকার। প্রতিদিন আমরা যদি অন্তত এক থেকে দেড় লাখ করোনা পরীক্ষা করতে পারতাম, তাহলে বেশিরভাগ ভাইরাসবাহীত লোককে শনাক্ত করা যেত। ভারত, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল থেকেও আমাদের করোনা টেস্টের পরিমাণ কম। টেস্ট করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের ওপরে রয়েছে।
টেস্ট করে রোগী শনাক্ত, রোগীকে আলদা করা, তার সংস্পর্শে কারা এসেছে তাদেরকে চিহ্নিত করা, তাদেরকে কোয়ারেন্টাইন রাখা এবং যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, এটাইতো এখন কাজ, এসব না করে শুধু বক্তৃতা দিলেইতো করোনা প্রতিরোধ হবে না বলেও যোগ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আমরা করোনার উৎসস্থলে হাত দিচ্ছি না। করোনা রোগে ভাইরাসের উৎস হচ্ছে করোনা রোগী। করোনা রোগের ভাইরাস আকাশ থেকেও পড়ে না, অন্য কোথাও থেকেও আসে না। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে, আমরা যদি তাকে আইসোলেটেড করতে পারি, তাহলে তার থেকে অন্যরা আর সংক্রমিত হবে না। অন্যদিকে একজন আক্রান্ত রোগী যদি রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তার দ্বারা অন্যরা আক্রান্ত হবেই। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওপর। তারা মনে করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় লকডাউন দিলেই করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও মনে করছে হাসপাতালে রোগী এলে চিকিৎসা করাই শুধু তাদের দায়িত্ব। কিন্তু বিষয়টাতো এমন নয়। আমাদেরকে সকলে মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। করোনা ভাইরাসের উৎস থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণের ওপরে আমাদেরকে জোর দেওয়া প্রয়োজন।