ঢাকা ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

প্রথম আলোর শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

  • আপডেট সময় : ০১:৫৩:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩
  • ১১৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে, যাকে আগের রাতে তার বাসা থেকে ‘পুলিশ পরিচয়ে’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মো. গোলাম কিবরিয়া নামে কল্যাণপুরনিবাসী এক ব্যক্তি গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ২টার দিকে তেজগাঁও থানায় ওই মামলা করেন। তিনি নিজেকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার আজিমুল হক বলেন, “ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। মামলায় কেবল একজনের নাম রয়েছে। আমরা আসামিকে বুঝে পাইনি। মামলাও সিআইডিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
মামলার বাদী গোলাম কিবরিয়া বলেন, “এটা দলীয় কোনো বিষয় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছি।” শামসুজ্জামান শামসকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিগণ অনুমতি ব্যাতিরেকে মিথ্যা তথ্য উপাত্তসহ মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার (করে) আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাবার উপক্রম ও সহায়তার অপরাধ করিয়াছে।”
গত ২৬ মার্চ প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একজনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”
প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও ওই প্রতিবেদনের সমালোচনায় মুখর হন। পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি সংশোধন করে এবং শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়। ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে মঙ্গলবার রাতে তার সাভারের বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সিআইডি তাকে আটকের বিষয়টি স্বীকার না করলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন সাংবাদিক, শামসের বাড়িওয়ালা এবং পাশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, যারা শামসকে ধরে নিয়ে গেছেন, তারা সিআইডি পুলিশ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার সাংবদিকদের বলেন, “স্বাধীনতা দিবসের দিন যেভাবে অসত্য বক্তব্যটি প্রচার করা হয়েছে, তাতে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হতে পারেন। কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে বিচার চায় তাহলে পুলিশ কিন্তু ব্যবস্থা নিতেই পারে। আমি যতটুকু জানি, এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে, সে কারণেই হয়ত সিআইডি…।”
মামলা হলেও রাতের আঁধারে এভাবে কোন ব্যক্তিকে বাসা থেকে তুলে আনা যায় কি না– এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমার কাছে সব টুকরো টুকরো খবর আসছে। পুরো বিষয়টা বলতে হলে আমাকে আর একটু সময় দিতে হবে।” তিনি বলেন, “প্রথম কথা হল সাংবাদিক সাহেব যে উদ্ধৃতিটা ব্যবহার করেছেন, তা সঠিক ছিল না। আপনারাই তা প্রচার করেছেন। আপনারা সাংবাদিকরাই ৭১ টিভির মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ হয়ে তা প্রচার করেছেন যে এই সংবাদটি ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা ৭১ টিভিতে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।”
প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রেস কাউন্সিলে নিষ্পত্তির আহ্বান এডিটরস গিল্ডের: প্রথম আলোর সাভার প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে এডিটরস গিল্ড। গতকাল বুধবার (২৯ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এডিটরস গিল্ড জানায়, গণমাধ্যমের জন্য মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা সবার কর্তব্য। প্রথম আলো যদি সাংবাদিকতার নীতি বিরুদ্ধ কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে, তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারে। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমেই এর নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মনে করে এডিটরস গিল্ড।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগান এলাকার ভাড়াবাসা থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। স্থানীয় পুলিশ জানায়, তারা এ বিষয়ে কিছু জানে না। পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা হয়। স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ এনে তার নামই উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া।
ধরে নিল কেন, ডাকলে তো নিজেই যেত: শামসের মা: সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেওয়ার খবর শুনে উৎকণ্ঠিত তার মা করিমন নেসা। ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনে কথা বলতে চাইলে শামস নিজেই যেত। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার মধ্যে সাভারে কর্মরত সংবাদপত্রটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসকে বুধবার ভোররাতে সিআইডি পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়া হয়। পুলিশের কোনো সংস্থা শামসকে ধরে নেওয়ার কথা স্বীকার না করলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, কেউ বিচার চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে। সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমবাগান এলাকায় একটি বাসা নিয়ে থাকেন শামস। তার ভাই ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারানো পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। শামসের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়; সেখানে থাকেন তার মা। তিনি ছেলেকে তুলে নেওয়ার খবর পান সকাল ১০টায়। দুপুরে সাটুরিয়া কাটিগ্রাম শামসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সব ঘর তালা মারা। উঠানে বসেছিলেন আমেনা বেগমসহ স্থানীয় কয়েকজন নারী। শামসের মায়ের চাচি শাশুড়ি আমেনা বলেন, শামসের খবর পেয়েই ‘পাগলের মতো’ আচরণ করতে থাকেন তার মা। বুক চাপড়ে, কপাল চাপড়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। কান্না শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। করিমন স্বামীকে হারান ২০০৬ সালে। দুই ছেলে তখনও ছাত্র। স্বামী হারিয়ে দুই ছেলেকে ঘিরেই জীবন চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। বড় ছেলে রবিউল সহকারী পুলিশ সুপার হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফেরে তার জীবনে। কিন্তু ২০১৬ সালে রবিউল মারা যাওয়ার পর শামসই তার জীবনের একমাত্র অবলম্বন। প্রতিবেশীরা বলেন, করিমনকে এমন কাঁদতে তারা দেখেছিলেন রবিউলের মৃত্যুর পর। তাই তারা ভয় পেয়ে যান। আমেনা বেগম বলেন, তখন তারা করিমনের ভাইদের খবর দেন। তখন ভাই ইসমাইল হোসেন গাড়ি নিয়ে এসে করিমনকে তার বাড়ি ধামরাইয়ে নিয়ে যান। ধামরাইয়ের ডাউটিয়া গ্রামে ইসমাইলের বাড়িতে ঢোকার আগেই করিমন নেসার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, “আল্লা আমার স্বামী নিছ, এক সন্তানরে নিছ। আমার এই সন্তানকে বুকে ফিরায় দাও আল্লাহ, আমি আর কিচ্ছু চাই না। আমার সন্তান ঘরে থাকব, আমি ওর মা ডাক শুনবো।”
শামসের বিরুদ্ধে ঢাকার তেজগাঁও থানায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে একটি মামলা হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। গত ২৬ মার্চ প্রথম আলোর যে প্রতিবেদনটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার প্রতিবেদক ছিলেন শামস। ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। মামলা খবর শুনে করিমন নেসা বলেন, “আমার পোলায় কি চোর না ডাকাত? ওরে কীসের মামলায় দিছে।
“আর ওরে ধইরা নিল কেন, আমার ছেলেরে বললে তো নিজেই যাইতো, এমনি কইরা ওরে তুলে নিল ক্যান?” করিমন নেসার ভাই ইসমাইল হোসেন বলেন, “দুর্ভাগ্য! আমার বোনটার পিছু ছাড়ছে না। বড় ছেলে যাওয়ার পর এই ছোট ছেলেই তার সবকিছু। তেলের খবর শোনার পর থেকেই পাগলের মত আচরণ করছে ও।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

প্রথম আলোর শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

আপডেট সময় : ০১:৫৩:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে, যাকে আগের রাতে তার বাসা থেকে ‘পুলিশ পরিচয়ে’ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মো. গোলাম কিবরিয়া নামে কল্যাণপুরনিবাসী এক ব্যক্তি গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ২টার দিকে তেজগাঁও থানায় ওই মামলা করেন। তিনি নিজেকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার আজিমুল হক বলেন, “ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। মামলায় কেবল একজনের নাম রয়েছে। আমরা আসামিকে বুঝে পাইনি। মামলাও সিআইডিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
মামলার বাদী গোলাম কিবরিয়া বলেন, “এটা দলীয় কোনো বিষয় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছি।” শামসুজ্জামান শামসকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিগণ অনুমতি ব্যাতিরেকে মিথ্যা তথ্য উপাত্তসহ মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচার (করে) আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাবার উপক্রম ও সহায়তার অপরাধ করিয়াছে।”
গত ২৬ মার্চ প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একজনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”
প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও ওই প্রতিবেদনের সমালোচনায় মুখর হন। পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি সংশোধন করে এবং শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়। ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে মঙ্গলবার রাতে তার সাভারের বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সিআইডি তাকে আটকের বিষয়টি স্বীকার না করলেও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন সাংবাদিক, শামসের বাড়িওয়ালা এবং পাশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, যারা শামসকে ধরে নিয়ে গেছেন, তারা সিআইডি পুলিশ হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বুধবার সাংবদিকদের বলেন, “স্বাধীনতা দিবসের দিন যেভাবে অসত্য বক্তব্যটি প্রচার করা হয়েছে, তাতে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হতে পারেন। কেউ যদি সংক্ষুব্ধ হয়ে বিচার চায় তাহলে পুলিশ কিন্তু ব্যবস্থা নিতেই পারে। আমি যতটুকু জানি, এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে, সে কারণেই হয়ত সিআইডি…।”
মামলা হলেও রাতের আঁধারে এভাবে কোন ব্যক্তিকে বাসা থেকে তুলে আনা যায় কি না– এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমার কাছে সব টুকরো টুকরো খবর আসছে। পুরো বিষয়টা বলতে হলে আমাকে আর একটু সময় দিতে হবে।” তিনি বলেন, “প্রথম কথা হল সাংবাদিক সাহেব যে উদ্ধৃতিটা ব্যবহার করেছেন, তা সঠিক ছিল না। আপনারাই তা প্রচার করেছেন। আপনারা সাংবাদিকরাই ৭১ টিভির মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ হয়ে তা প্রচার করেছেন যে এই সংবাদটি ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা ৭১ টিভিতে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।”
প্রথম আলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রেস কাউন্সিলে নিষ্পত্তির আহ্বান এডিটরস গিল্ডের: প্রথম আলোর সাভার প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে তার বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে এডিটরস গিল্ড। গতকাল বুধবার (২৯ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এডিটরস গিল্ড জানায়, গণমাধ্যমের জন্য মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা সবার কর্তব্য। প্রথম আলো যদি সাংবাদিকতার নীতি বিরুদ্ধ কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে, তাহলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারে। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমেই এর নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মনে করে এডিটরস গিল্ড।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৯ মার্চ) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাভারে কর্মরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগান এলাকার ভাড়াবাসা থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। স্থানীয় পুলিশ জানায়, তারা এ বিষয়ে কিছু জানে না। পরে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলা হয়। স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ এনে তার নামই উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া।
ধরে নিল কেন, ডাকলে তো নিজেই যেত: শামসের মা: সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেওয়ার খবর শুনে উৎকণ্ঠিত তার মা করিমন নেসা। ছেলেকে নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে তিনি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনে কথা বলতে চাইলে শামস নিজেই যেত। প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার মধ্যে সাভারে কর্মরত সংবাদপত্রটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসকে বুধবার ভোররাতে সিআইডি পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়া হয়। পুলিশের কোনো সংস্থা শামসকে ধরে নেওয়ার কথা স্বীকার না করলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, কেউ বিচার চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতেই পারে। সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আমবাগান এলাকায় একটি বাসা নিয়ে থাকেন শামস। তার ভাই ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারানো পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। শামসের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়; সেখানে থাকেন তার মা। তিনি ছেলেকে তুলে নেওয়ার খবর পান সকাল ১০টায়। দুপুরে সাটুরিয়া কাটিগ্রাম শামসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সব ঘর তালা মারা। উঠানে বসেছিলেন আমেনা বেগমসহ স্থানীয় কয়েকজন নারী। শামসের মায়ের চাচি শাশুড়ি আমেনা বলেন, শামসের খবর পেয়েই ‘পাগলের মতো’ আচরণ করতে থাকেন তার মা। বুক চাপড়ে, কপাল চাপড়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। কান্না শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। করিমন স্বামীকে হারান ২০০৬ সালে। দুই ছেলে তখনও ছাত্র। স্বামী হারিয়ে দুই ছেলেকে ঘিরেই জীবন চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। বড় ছেলে রবিউল সহকারী পুলিশ সুপার হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফেরে তার জীবনে। কিন্তু ২০১৬ সালে রবিউল মারা যাওয়ার পর শামসই তার জীবনের একমাত্র অবলম্বন। প্রতিবেশীরা বলেন, করিমনকে এমন কাঁদতে তারা দেখেছিলেন রবিউলের মৃত্যুর পর। তাই তারা ভয় পেয়ে যান। আমেনা বেগম বলেন, তখন তারা করিমনের ভাইদের খবর দেন। তখন ভাই ইসমাইল হোসেন গাড়ি নিয়ে এসে করিমনকে তার বাড়ি ধামরাইয়ে নিয়ে যান। ধামরাইয়ের ডাউটিয়া গ্রামে ইসমাইলের বাড়িতে ঢোকার আগেই করিমন নেসার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, “আল্লা আমার স্বামী নিছ, এক সন্তানরে নিছ। আমার এই সন্তানকে বুকে ফিরায় দাও আল্লাহ, আমি আর কিচ্ছু চাই না। আমার সন্তান ঘরে থাকব, আমি ওর মা ডাক শুনবো।”
শামসের বিরুদ্ধে ঢাকার তেজগাঁও থানায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে একটি মামলা হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। গত ২৬ মার্চ প্রথম আলোর যে প্রতিবেদনটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার প্রতিবেদক ছিলেন শামস। ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। মামলা খবর শুনে করিমন নেসা বলেন, “আমার পোলায় কি চোর না ডাকাত? ওরে কীসের মামলায় দিছে।
“আর ওরে ধইরা নিল কেন, আমার ছেলেরে বললে তো নিজেই যাইতো, এমনি কইরা ওরে তুলে নিল ক্যান?” করিমন নেসার ভাই ইসমাইল হোসেন বলেন, “দুর্ভাগ্য! আমার বোনটার পিছু ছাড়ছে না। বড় ছেলে যাওয়ার পর এই ছোট ছেলেই তার সবকিছু। তেলের খবর শোনার পর থেকেই পাগলের মত আচরণ করছে ও।”