ঢাকা ১১:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

দুবাই বসে ইউরোপে মানবপাচার, হাতিয়েছে কোটি কোটি টাকা

  • আপডেট সময় : ০৩:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১
  • ৯৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের বাংলাদেশি এজেন্ট ‘রুবেল সিন্ডিকেট’ এর প্রধান সমন্বয়ক ‘ইউরো আশিক’সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত শনিবার রাত ১টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ এর যৌথ অভিযানে মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মো. আশিক, আজিজুল হক, মিজানুর রহমান মিজান, নাজমুল হুদা, সিমা আক্তার, হেলেনা বেগম, পলি আক্তার।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে- ১৭টি পাসপোর্ট, ১৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, দুটি এটিএম কার্ড, ১৫টি বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা বই, দুটি হিসাব নথি, এনআইডি, মোবাইলফোন ও নগদ টাকা।
র‌্যাব জানায়, ঢাকার কেরানীগঞ্জের মো. আশিক এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্যের পর মধ্যপ্রাচ্যে যান। লিবিয়ায় দুই বছর অবস্থান করে মানবপাচারের সিন্ডিকেটে জড়ান আশিক। ২০১৯ সালে দেশে ফিরে কেরানীগঞ্জে অবস্থান থেকে অবৈধ মানবপাচারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নেন। দুবাইয়ে থাকা মামা রুবেলের মাধ্যমে গড়ে তোলেন ‘রুবেল সিন্ডিকেট’। রুবেলের মাধ্যমে অনলাইন ভিসা, বাংলাদেশি সংগ্রহ ও নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে দুবাইয়ে মানবপাচার করতেন আশিক। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে ২০-২৫ সদস্য। বর্তমানে রুবেল দুবাইয়ে অবস্থান করছেন বলে জানতে পেরেছে র‌্যাব। গত দুই বছরে ৮০ বাংলাদেশিকে ইউরোপে পাচার করেছে তারা। গ্রেপ্তার ও তাদের আত্মীয়দের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মিলেছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন।
দেশে চক্রটির মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে। প্রধান সমন্বয়ক আশিক আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে মানবপাচারের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেন।
গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২৮ ও ২৯ জুন অবৈধভাবে ইউরোপে গমনকালে ভূমধ্যসাগরের তিউনেশিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে প্রায় ৪৩ জন নিখোঁজ হয়। তিউনিসার উপকূল থেকে বিধ্বস্ত নৌকা থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ, সুদান, মিসর, ইরিত্রিয়া ও চাঁদের নাগরিক রয়েছে বলে জানা যায়। আজও ৪৯ বাংলাদেশিকে উদ্ধারের সংবাদ জানা গিয়েছে।

কমান্ডার মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি মানবপাচারের ঘটনায় র‌্যাব এই চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন যাবত সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রটি বিদেশি চক্রের সঙ্গে যোগসাজসে অবৈধভাবে ইউরোপে মানবপাচার করে আসছে। সিন্ডিকেটটি তিনটি ধাপে মানবপাচারের কাজ করে আসছিল।
বিদেশে গমনেচ্ছুদের বাছাই : বিদেশে গমনেচ্ছুক নির্বাচনকালে চক্রটির দেশীয় এজেন্টরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষদের অল্প খরচে উন্নত দেশে গমনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে থাকে। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকেই তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। এই বিদেশ গমনেচ্ছুকদের বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকেট ক্রয়সহ যাবতীয় কাজ সিন্ডিকেট নিজস্ব চেইনে সম্পন্ন করতো। তবে পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথি পাচার চক্রের নিয়ন্ত্রণে রেখে দেয়। পরবর্তী সময়ে তাদের এককালীন বা ধাপে ধাপে কিস্তি নির্ধারণ করে ইউরোপের পথে পাড়ি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ইউরোপে যেতে তারা সাত থেকে আট লাখ টাকা নেয়। সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার আগে এবং বাকি টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার পর ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে নেয়।
বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় প্রেরণ : র‌্যাব মুখপাত্র জানান, চক্রটি বাংলাদেশ থেকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের মাধ্যমে লিবিয়া’ রুট ব্যবহার করছিল। পাচারের শিকারদের মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি এজেন্টদের যোগসাজসে ৭/৮ দিন অবস্থান করায়। বেনগাজীতে (লিবিয়া) প্রেরণের লক্ষ্যে বেনগাজী হতে এজেন্টরা কথিত ‘মারাকাপা’ নামক একটি ডকুমেন্ট দুবাইয়ে পাঠিয়ে থাকে। যা লিবিয়াতে যাত্রার আগে দুবাইয়ে অবস্থানরত ইউরোপে মানবপাচারের শিকারদের হস্তান্তর করা হয়। ওই ডকুমেন্টসহ বিদেশি এজেন্টদের সহায়তায় তাদেরকে বেনগাজী লিবিয়ায় পাঠানো হয়। লিবিয়া পর্যন্ত যারা অর্থ পরিশোধ করে থাকে তাদের স্বল্প সময়ের মধ্যপ্রাচ্যে ট্রানজিট করিয়ে সরাসরি লিবিয়ায় পাঠায়। মূল হোতা রুবেল দুবাই বসে সিন্ডিকেটের সব কার্যক্রম মনিটরিং করছেন।
লিবিয়া থেকে ইউরোপে প্রেরণ : পাচারের শিকার লোকদের ত্রিপলিতে পৌঁছানোর পর লিবিয়া এজেন্টদের সহায়তায় গাজী, কাজী ও বাবুল নামের তিন বাংলাদেশি তাদের গ্রহণ করেন বলে জানান র‌্যাব মুখপাত্র। র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ত্রিপলিতে ভিকটিমদের বেশ কয়েক দিন আটকে রাখা হয়। এ সময় সিন্ডিকেটটি বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রতিনিধিদের ইউরোপ গমনেচ্ছুকদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। এরপর ইউরোপে পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের হস্তান্তর করে। কোনো এক ভোররাতে একসঙ্গে কয়েকটি নৌযান লিবিয়া হয়ে তিউনেশিয়া উপকূলীয় চ্যানেল দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপে যায়। পথে ভূমধ্যসাগরে দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং জীবনাবসানের ঘটনাও ঘটে থাকে। গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ভূমধ্যসাগরের বিগত কয়েকটি নৌকাডুবি ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিখোঁজ ও নিহত বাংলাদেশিদের এই চক্র পাচার করেছে। চক্রটির মাধ্যমে ৭০ থেকে ৮০ বাংলাদেশি অবৈধপথে ইউরোপে পাচারের শিকার হয়েছেন। অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, ২০১২-২০১৭ সাল পর্যন্ত লিবিয়া অবস্থানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সঙ্গে রুবেলের বিশেষ যোগসাজস হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়াতে মানবপাচারসংক্রান্ত রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় রুবেল দুবাইয়ে অবস্থান করে সিন্ডিকেটটি পরিচালনা করছেন। রুবেল বাংলাদেশে তার পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে মূল নেটওয়ার্কটি পরিচালনা করছেন। এ চক্রের কেন্দ্রবিন্দুতে জড়িত রয়েছেন রুবেলের স্ত্রী গ্রেপ্তার সীমা, তার ভাগিনা গ্রেপ্তার আশিক, দুই বোন হেলেনা ও পলি। গ্রেপ্তাররা পাসপোর্ট সংগ্রহ ও অর্থ লেনদেনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

এক নারীকে দুই ভাই বিয়ে করে বললেন- আমরা গর্বিত

দুবাই বসে ইউরোপে মানবপাচার, হাতিয়েছে কোটি কোটি টাকা

আপডেট সময় : ০৩:৩০:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের বাংলাদেশি এজেন্ট ‘রুবেল সিন্ডিকেট’ এর প্রধান সমন্বয়ক ‘ইউরো আশিক’সহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গত শনিবার রাত ১টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ এর যৌথ অভিযানে মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও যাত্রাবাড়ী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মো. আশিক, আজিজুল হক, মিজানুর রহমান মিজান, নাজমুল হুদা, সিমা আক্তার, হেলেনা বেগম, পলি আক্তার।
তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে- ১৭টি পাসপোর্ট, ১৪টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, দুটি এটিএম কার্ড, ১৫টি বিভিন্ন ব্যাংকে টাকা জমা বই, দুটি হিসাব নথি, এনআইডি, মোবাইলফোন ও নগদ টাকা।
র‌্যাব জানায়, ঢাকার কেরানীগঞ্জের মো. আশিক এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্যের পর মধ্যপ্রাচ্যে যান। লিবিয়ায় দুই বছর অবস্থান করে মানবপাচারের সিন্ডিকেটে জড়ান আশিক। ২০১৯ সালে দেশে ফিরে কেরানীগঞ্জে অবস্থান থেকে অবৈধ মানবপাচারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নেন। দুবাইয়ে থাকা মামা রুবেলের মাধ্যমে গড়ে তোলেন ‘রুবেল সিন্ডিকেট’। রুবেলের মাধ্যমে অনলাইন ভিসা, বাংলাদেশি সংগ্রহ ও নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে দুবাইয়ে মানবপাচার করতেন আশিক। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে ২০-২৫ সদস্য। বর্তমানে রুবেল দুবাইয়ে অবস্থান করছেন বলে জানতে পেরেছে র‌্যাব। গত দুই বছরে ৮০ বাংলাদেশিকে ইউরোপে পাচার করেছে তারা। গ্রেপ্তার ও তাদের আত্মীয়দের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মিলেছে কোটি কোটি টাকার লেনদেন।
দেশে চক্রটির মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে। প্রধান সমন্বয়ক আশিক আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে মানবপাচারের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেন।
গত শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এলিট ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ২৮ ও ২৯ জুন অবৈধভাবে ইউরোপে গমনকালে ভূমধ্যসাগরের তিউনেশিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে প্রায় ৪৩ জন নিখোঁজ হয়। তিউনিসার উপকূল থেকে বিধ্বস্ত নৌকা থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ, সুদান, মিসর, ইরিত্রিয়া ও চাঁদের নাগরিক রয়েছে বলে জানা যায়। আজও ৪৯ বাংলাদেশিকে উদ্ধারের সংবাদ জানা গিয়েছে।

কমান্ডার মঈন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি মানবপাচারের ঘটনায় র‌্যাব এই চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন যাবত সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রটি বিদেশি চক্রের সঙ্গে যোগসাজসে অবৈধভাবে ইউরোপে মানবপাচার করে আসছে। সিন্ডিকেটটি তিনটি ধাপে মানবপাচারের কাজ করে আসছিল।
বিদেশে গমনেচ্ছুদের বাছাই : বিদেশে গমনেচ্ছুক নির্বাচনকালে চক্রটির দেশীয় এজেন্টরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বল্প আয়ের মানুষদের অল্প খরচে উন্নত দেশে গমনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে থাকে। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় অনেকেই তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। এই বিদেশ গমনেচ্ছুকদের বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট তৈরি, ভিসা সংগ্রহ, টিকেট ক্রয়সহ যাবতীয় কাজ সিন্ডিকেট নিজস্ব চেইনে সম্পন্ন করতো। তবে পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথি পাচার চক্রের নিয়ন্ত্রণে রেখে দেয়। পরবর্তী সময়ে তাদের এককালীন বা ধাপে ধাপে কিস্তি নির্ধারণ করে ইউরোপের পথে পাড়ি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। ইউরোপে যেতে তারা সাত থেকে আট লাখ টাকা নেয়। সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার আগে এবং বাকি টাকা লিবিয়ায় যাওয়ার পর ভিকটিমের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে নেয়।
বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় প্রেরণ : র‌্যাব মুখপাত্র জানান, চক্রটি বাংলাদেশ থেকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের মাধ্যমে লিবিয়া’ রুট ব্যবহার করছিল। পাচারের শিকারদের মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি এজেন্টদের যোগসাজসে ৭/৮ দিন অবস্থান করায়। বেনগাজীতে (লিবিয়া) প্রেরণের লক্ষ্যে বেনগাজী হতে এজেন্টরা কথিত ‘মারাকাপা’ নামক একটি ডকুমেন্ট দুবাইয়ে পাঠিয়ে থাকে। যা লিবিয়াতে যাত্রার আগে দুবাইয়ে অবস্থানরত ইউরোপে মানবপাচারের শিকারদের হস্তান্তর করা হয়। ওই ডকুমেন্টসহ বিদেশি এজেন্টদের সহায়তায় তাদেরকে বেনগাজী লিবিয়ায় পাঠানো হয়। লিবিয়া পর্যন্ত যারা অর্থ পরিশোধ করে থাকে তাদের স্বল্প সময়ের মধ্যপ্রাচ্যে ট্রানজিট করিয়ে সরাসরি লিবিয়ায় পাঠায়। মূল হোতা রুবেল দুবাই বসে সিন্ডিকেটের সব কার্যক্রম মনিটরিং করছেন।
লিবিয়া থেকে ইউরোপে প্রেরণ : পাচারের শিকার লোকদের ত্রিপলিতে পৌঁছানোর পর লিবিয়া এজেন্টদের সহায়তায় গাজী, কাজী ও বাবুল নামের তিন বাংলাদেশি তাদের গ্রহণ করেন বলে জানান র‌্যাব মুখপাত্র। র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ত্রিপলিতে ভিকটিমদের বেশ কয়েক দিন আটকে রাখা হয়। এ সময় সিন্ডিকেটটি বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রতিনিধিদের ইউরোপ গমনেচ্ছুকদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে। এরপর ইউরোপে পাচারের উদ্দেশ্যে তাদের হস্তান্তর করে। কোনো এক ভোররাতে একসঙ্গে কয়েকটি নৌযান লিবিয়া হয়ে তিউনেশিয়া উপকূলীয় চ্যানেল দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপে যায়। পথে ভূমধ্যসাগরে দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং জীবনাবসানের ঘটনাও ঘটে থাকে। গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ভূমধ্যসাগরের বিগত কয়েকটি নৌকাডুবি ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিখোঁজ ও নিহত বাংলাদেশিদের এই চক্র পাচার করেছে। চক্রটির মাধ্যমে ৭০ থেকে ৮০ বাংলাদেশি অবৈধপথে ইউরোপে পাচারের শিকার হয়েছেন। অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, ২০১২-২০১৭ সাল পর্যন্ত লিবিয়া অবস্থানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের সঙ্গে রুবেলের বিশেষ যোগসাজস হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়াতে মানবপাচারসংক্রান্ত রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকায় রুবেল দুবাইয়ে অবস্থান করে সিন্ডিকেটটি পরিচালনা করছেন। রুবেল বাংলাদেশে তার পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে মূল নেটওয়ার্কটি পরিচালনা করছেন। এ চক্রের কেন্দ্রবিন্দুতে জড়িত রয়েছেন রুবেলের স্ত্রী গ্রেপ্তার সীমা, তার ভাগিনা গ্রেপ্তার আশিক, দুই বোন হেলেনা ও পলি। গ্রেপ্তাররা পাসপোর্ট সংগ্রহ ও অর্থ লেনদেনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।