ঢাকা ১০:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

ধোঁয়ায় শেষ হয়ে যাচ্ছে মশক নিধনের বরাদ্দ

  • আপডেট সময় : ১০:৩২:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মার্চ ২০২৩
  • ১৮৫ বার পড়া হয়েছে

মহানগর প্রতিবেদন : নাম মশার উৎপাত-এই মুহূর্তে ঢাকার নাগরিকদের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। অথচ নগর কর্তৃপক্ষ প্রায় নির্বিকার। মশা কমাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই, এমনকি নিয়মিত কার্যক্রমও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। যদিও এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি।
চলতি অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশা নিধনে ১৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জন্য ৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্য ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মশক নিধনে বরাদ্দের ক্ষেত্রে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মশক নিধনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দুই সিটি কর্পোরেশনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৫ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৭ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯৩ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৬ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এ বছর সবচেয়ে বেশি ১৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে ৫৪ কোটি টাকা বেশি।
অর্ধ বিলিয়ন টাকার বেশি বরাদ্দ বাড়লেও এর সুফল কতটা বেড়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে জনমনে। ফগার মেশিন দিয়ে একটু ধোঁয়া উড়িয়েই মশক নিধনে বরাদ্দ দেওয়া টাকা পুরোটা সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।
রাজধানীর বাড্ডা, সাঁতারকুল, মিরপুর, কমলাপুর, খিলগাঁও ও মালিবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন মশার উপদ্রব বেশি। এসব এলাকার কোথাও কোথাও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, রাস্তা বা বাসা বাড়ির পাশে খোলা ড্রেন, অপরিষ্কার ডোবা-নালা-ছোট খাল রয়েছে। কিছু জায়গায় রাস্তার পাশে যত্রতত্র শৌচাগারও তৈরি হয়েছে। ফলে এসব এলাকায় মশার উপদ্রব অপেক্ষাকৃত বেশি।
কমলাপুরের আইসিডি গেট এলাকার বাসিন্দা শহিদুল মিয়া বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকেরা মাঝে মাঝে স্প্রে করে যায়। কেরোসিন তেলের মতো এসব স্প্রেতে মশা তো যায়ই না বরং স্প্রে করলে ড্রেনের মশাও বাইরে বের হয়ে আসে। ফগার মেশিনের ধোঁয়াও ঠিকমতো দেয় না। আগে নিয়মিত দিলেও এখন তাদের কালে-ভাদ্রে দেখা মেলে। তিনি বলেন, সারাদিন ঘরে মশা থাকে। বাচ্চারা মশার কামড়ে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারে না।
বাড্ডার সাঁতারকুলের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাউসার হোসেন বলেন, সাঁতারকুল একটা মশার রাজ্য। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় মশা। এ এলাকা বেশি অপরিষ্কার হওয়ায় মশাও বেশি। মশার কারণে ঘরে শান্তি নেই, বাইরে এসেও শান্তি নেই। এমনকি ইউনিভার্সিটির ক্লাস রুমে বসেও শান্তি নেই, সেখানেও মশা। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকেরা কেবল সপ্তাহে এক-দুবার ধোঁয়া দিয়ে যায়। এতেই যেন তাদের দায়িত্ব শেষ। এভাবে কি মশা কমবে? এখন প্রতিদিন স্প্রে করা দরকার, প্রতিদিন ধোঁয়া দেয়া দরকার। দক্ষিণ সিটির ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হোক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নিয়মিত মশার ওষুধ দিয়ে স্প্রে করছি। মশক নিধন কার্যক্রমে আমরা সরেজমিন থাকছি, তদারকি করছি। সাধারণ মানুষের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকে অনেক কিছুই বলে। সরকারি সেবা তো নিয়ম মেনে চলছে। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে হবে। মার্চের শেষের দিকে মশার উপদ্রব আরও বাড়তে পারে। সুতরাং যা করার এখনই করতে হবে।
আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. তারেক এম হোসেন বলেন, আমাদের দেশে ভুল পদ্ধতিতে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কেমিক্যাল ব্যবহারের মাত্রা এবং প্রয়োগবিধি নিয়ে বেশ অসচেতনতা রয়েছে। কখন কখন মশা বেশি হয় তা মাথায় রেখে ফগিং করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী টেকসই পরিকল্পনা করতে হবে। তিনি বলেন, শুধু সিটি করপোরেশনকে দোষ দিলে হবে না। আমদের নাগরিকদেরও আরও সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জুলকার নাইন বলেন, আমরা মশার প্রজনন কেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকায় নিয়মিত কীটনাশক ফগিং করছি। আমাদের একটি বিশেষায়িত টিম দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। তবে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি মশক নিধনে সাধারণ মানুষকেও আরও সচেতন হতে হবে। সবাই মিলে যার যার এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে মশা কম উৎপন্ন হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ধোঁয়ায় শেষ হয়ে যাচ্ছে মশক নিধনের বরাদ্দ

আপডেট সময় : ১০:৩২:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মার্চ ২০২৩

মহানগর প্রতিবেদন : নাম মশার উৎপাত-এই মুহূর্তে ঢাকার নাগরিকদের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। অথচ নগর কর্তৃপক্ষ প্রায় নির্বিকার। মশা কমাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই, এমনকি নিয়মিত কার্যক্রমও অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। যদিও এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি।
চলতি অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশা নিধনে ১৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জন্য ৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জন্য ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মশক নিধনে বরাদ্দের ক্ষেত্রে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মশক নিধনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দুই সিটি কর্পোরেশনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৫ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৭ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯৩ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৬ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এ বছর সবচেয়ে বেশি ১৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা আগের বছরের চেয়ে ৫৪ কোটি টাকা বেশি।
অর্ধ বিলিয়ন টাকার বেশি বরাদ্দ বাড়লেও এর সুফল কতটা বেড়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে জনমনে। ফগার মেশিন দিয়ে একটু ধোঁয়া উড়িয়েই মশক নিধনে বরাদ্দ দেওয়া টাকা পুরোটা সাবাড় করে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা।
রাজধানীর বাড্ডা, সাঁতারকুল, মিরপুর, কমলাপুর, খিলগাঁও ও মালিবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন মশার উপদ্রব বেশি। এসব এলাকার কোথাও কোথাও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, রাস্তা বা বাসা বাড়ির পাশে খোলা ড্রেন, অপরিষ্কার ডোবা-নালা-ছোট খাল রয়েছে। কিছু জায়গায় রাস্তার পাশে যত্রতত্র শৌচাগারও তৈরি হয়েছে। ফলে এসব এলাকায় মশার উপদ্রব অপেক্ষাকৃত বেশি।
কমলাপুরের আইসিডি গেট এলাকার বাসিন্দা শহিদুল মিয়া বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকেরা মাঝে মাঝে স্প্রে করে যায়। কেরোসিন তেলের মতো এসব স্প্রেতে মশা তো যায়ই না বরং স্প্রে করলে ড্রেনের মশাও বাইরে বের হয়ে আসে। ফগার মেশিনের ধোঁয়াও ঠিকমতো দেয় না। আগে নিয়মিত দিলেও এখন তাদের কালে-ভাদ্রে দেখা মেলে। তিনি বলেন, সারাদিন ঘরে মশা থাকে। বাচ্চারা মশার কামড়ে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারে না।
বাড্ডার সাঁতারকুলের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাউসার হোসেন বলেন, সাঁতারকুল একটা মশার রাজ্য। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় মশা। এ এলাকা বেশি অপরিষ্কার হওয়ায় মশাও বেশি। মশার কারণে ঘরে শান্তি নেই, বাইরে এসেও শান্তি নেই। এমনকি ইউনিভার্সিটির ক্লাস রুমে বসেও শান্তি নেই, সেখানেও মশা। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকেরা কেবল সপ্তাহে এক-দুবার ধোঁয়া দিয়ে যায়। এতেই যেন তাদের দায়িত্ব শেষ। এভাবে কি মশা কমবে? এখন প্রতিদিন স্প্রে করা দরকার, প্রতিদিন ধোঁয়া দেয়া দরকার। দক্ষিণ সিটির ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হোক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নিয়মিত মশার ওষুধ দিয়ে স্প্রে করছি। মশক নিধন কার্যক্রমে আমরা সরেজমিন থাকছি, তদারকি করছি। সাধারণ মানুষের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকে অনেক কিছুই বলে। সরকারি সেবা তো নিয়ম মেনে চলছে। আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে হবে। মার্চের শেষের দিকে মশার উপদ্রব আরও বাড়তে পারে। সুতরাং যা করার এখনই করতে হবে।
আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. তারেক এম হোসেন বলেন, আমাদের দেশে ভুল পদ্ধতিতে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। কেমিক্যাল ব্যবহারের মাত্রা এবং প্রয়োগবিধি নিয়ে বেশ অসচেতনতা রয়েছে। কখন কখন মশা বেশি হয় তা মাথায় রেখে ফগিং করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী টেকসই পরিকল্পনা করতে হবে। তিনি বলেন, শুধু সিটি করপোরেশনকে দোষ দিলে হবে না। আমদের নাগরিকদেরও আরও সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জুলকার নাইন বলেন, আমরা মশার প্রজনন কেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকায় নিয়মিত কীটনাশক ফগিং করছি। আমাদের একটি বিশেষায়িত টিম দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। তবে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি মশক নিধনে সাধারণ মানুষকেও আরও সচেতন হতে হবে। সবাই মিলে যার যার এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে মশা কম উৎপন্ন হবে।