ঢাকা ১১:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

জুন পর্যন্ত রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক

  • আপডেট সময় : ১২:০২:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ সংবাদদাতা : ধীরে ধীরে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারণা অনুযায়ী আগামী জুন মাস নাগাদ রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে সাত শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ ৫৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে। এছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স ৪ শতাংশ বেড়ে চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় ২৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে। এই অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। তবে ডলার সংকটের সমাধান রাতারাতি হবে না। যদিও বেশ কয়েক মাস ধরে কাঁচামাল আমদানির জন্য অনেকেই ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না। রফতানিকারকরা বলছেন, তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি ইস্পাত, সিমেন্ট, টেক্সটাইল, এমনকি ওষুধ প্রস্তুতকারকরাও কাঁচামালের জন্য এলসি খুলতে পারছেন না। ধারণা করা যাচ্ছে, আগামী কয়েক মাস এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন বাংলাদেশে ডলার সংকটের অন্যতম কারণ হলো দেশের অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতা এবং স্থানীয় পর্যায়ে কাঁচামাল ও পণ্য উৎপাদন না হওয়া। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে। মূলত খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশকে চিনি, ভোজ্য তেল, মসলা, পেট্রোলিয়াম পণ্য, সার, তুলা, সুতা, রাসায়নিক, শিল্পের যন্ত্রপাতি, সিমেন্ট ও ইস্পাত কারখানার কাঁচামালসহ প্রায় সব পণ্যই আমদানি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে আমদানির দায় হিসেবে রিজার্ভ থেকে ১০৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এর ফলে (১৫ মার্চ) রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারে। এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের (প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন হিসাবে) আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আন্তর্জাতিক মানদ-ের আলোকে হিসাব করলে রিজার্ভ এখন ২৩ বিলিয়নের কিছু বেশি। এই অবস্থার মধ্যেও আইএমএফের পূর্বাভাস বলছে, আগামী অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ বাড়বে। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন বৈশ্বিক বাস্তবতায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘আমি আশাবাদী ধীরে ধীরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। সামনে দুটি ঈদ আছে। কয়দিন পর শুরু হচ্ছে রমজান মাস। এই রমজান ও ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবেন। রমজানের পর কোরবানির ঈদেও প্রবাসীরা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। পাশাপাশি রফতানিতেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। বিদেশি ঋণের বড় কিস্তি পরিশোধ যদি না থাকে তাহলে জুন পর্যন্ত রিজার্ভ থাকবে স্বস্তিদায়ক।’ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন,‘রেমিট্যান্স, রফতানি আয়সহ বাংলাদেশের অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকই ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। সবচেয়ে খুশির খবর হলো দীর্ঘ সময়ের অতিমারির পরও আমাদের উৎপাদনে কোনও সমস্যা হয়নি। এখন পর্যন্ত অর্থনীতির সব সেক্টরেই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক সংকটের কারণে আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে কিছুটা চাপ আছে। এই চাপ মূলত আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে। আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ার মূল কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুদহার বাড়ানোর কারণে বিশ্ব বাজার থেকে আমাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে ডলারের কিছুটা সংকট থাকলেও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এখন পর্যন্ত যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে আগামী চার থেকে পাঁচ মাস চলা যাবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে আমদানি কমছে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে তিন হাজার ৭০৭ কোটি ডলারের রফতানি আয় হয়েছে, যা প্রতি মাসে গড়ে ৪৬৩ কোটি ডলার। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে গড়ে ৫২০ কোটি ডলার রফতানি হয়েছে। একই সময়ে বেড়েছে রেমিট্যান্স। ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় বেড়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ কোটি ডলার বেশি। গত মাসে দেশে এসেছে ১৫৬ কোটি ডলার। আগের মাস জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বরে এটি ছিল প্রায় ১৭০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) যাতে বৈধ পথে দেশে আসে-তা নিশ্চিত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে প্রবাসী আয়ে গতি বেড়েছে। সামনে রোজা ও দুটি ঈদ থাকায় রেমিট্যান্সের এই ধারা চলতি মার্চ ও এপ্রিলে অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আমদানি ব্যয়
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সরবরাহ চেইন বিঘিœত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যমূল্যও বেড়ে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি বিল ৮২.৪৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি। যদিও চলতি অর্থবছরে আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গত অর্থবছরে যেখানে মাসে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল আসত, এ বছর তা কমে মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার আসছে। আমদানি কমাতে শতভাগ পর্যন্ত এলসি মার্জিন, বিলাসীপণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে আমদানি ব্যয় ২ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে তিন হাজার ৮১৩ কোটি ডলারে নেমেছে। এসবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। আর ব্যাংকারদের বক্তব্য হলো-কয়েক মাস আগে খোলা এলসিগুলোর বিপরীতে অর্থপ্রদানের বাধ্যবাধকতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর এখনও চাপ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন আগামী জুন পর্যন্ত বিদেশি ঋণের বিপরীতে বড় কোনও কিস্তি পরিশোধ নেই। ফলে আগামী মে মাস পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আশা, এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৩২ বিলিয়নে দাঁড়াবে। তবে আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ থেকে আকু পেমেন্ট বা এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) কাছে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এতে আগামী মে মাস পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে অবস্থায় আছে মার্চ শেষে প্রায় সেই অবস্থাতেই থাকবে। এপ্রিলে একটু বাড়তে পারে। তবে মে মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের কাছে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে এখন রিজার্ভ একটু একটু বাড়লেও মে শেষে ৩২ বিলিয়ন ডলারের আশপাশেই থাকবে। তিনি উল্লেখ করেন, এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি বাজার স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নতুন আপদ ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ

জুন পর্যন্ত রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক

আপডেট সময় : ১২:০২:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মার্চ ২০২৩

বিশেষ সংবাদদাতা : ধীরে ধীরে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারণা অনুযায়ী আগামী জুন মাস নাগাদ রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে সাত শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ ৫৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে। এছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স ৪ শতাংশ বেড়ে চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় ২৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে। এই অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। তবে ডলার সংকটের সমাধান রাতারাতি হবে না। যদিও বেশ কয়েক মাস ধরে কাঁচামাল আমদানির জন্য অনেকেই ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না। রফতানিকারকরা বলছেন, তৈরি পোশাক শিল্পের পাশাপাশি ইস্পাত, সিমেন্ট, টেক্সটাইল, এমনকি ওষুধ প্রস্তুতকারকরাও কাঁচামালের জন্য এলসি খুলতে পারছেন না। ধারণা করা যাচ্ছে, আগামী কয়েক মাস এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন বাংলাদেশে ডলার সংকটের অন্যতম কারণ হলো দেশের অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতা এবং স্থানীয় পর্যায়ে কাঁচামাল ও পণ্য উৎপাদন না হওয়া। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে। মূলত খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশকে চিনি, ভোজ্য তেল, মসলা, পেট্রোলিয়াম পণ্য, সার, তুলা, সুতা, রাসায়নিক, শিল্পের যন্ত্রপাতি, সিমেন্ট ও ইস্পাত কারখানার কাঁচামালসহ প্রায় সব পণ্যই আমদানি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে আমদানির দায় হিসেবে রিজার্ভ থেকে ১০৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এর ফলে (১৫ মার্চ) রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারে। এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের (প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন হিসাবে) আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আন্তর্জাতিক মানদ-ের আলোকে হিসাব করলে রিজার্ভ এখন ২৩ বিলিয়নের কিছু বেশি। এই অবস্থার মধ্যেও আইএমএফের পূর্বাভাস বলছে, আগামী অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ বাড়বে। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন বৈশ্বিক বাস্তবতায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘আমি আশাবাদী ধীরে ধীরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। সামনে দুটি ঈদ আছে। কয়দিন পর শুরু হচ্ছে রমজান মাস। এই রমজান ও ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবেন। রমজানের পর কোরবানির ঈদেও প্রবাসীরা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। পাশাপাশি রফতানিতেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। বিদেশি ঋণের বড় কিস্তি পরিশোধ যদি না থাকে তাহলে জুন পর্যন্ত রিজার্ভ থাকবে স্বস্তিদায়ক।’ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন,‘রেমিট্যান্স, রফতানি আয়সহ বাংলাদেশের অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকই ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। সবচেয়ে খুশির খবর হলো দীর্ঘ সময়ের অতিমারির পরও আমাদের উৎপাদনে কোনও সমস্যা হয়নি। এখন পর্যন্ত অর্থনীতির সব সেক্টরেই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক সংকটের কারণে আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে কিছুটা চাপ আছে। এই চাপ মূলত আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে। আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ার মূল কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুদহার বাড়ানোর কারণে বিশ্ব বাজার থেকে আমাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে ডলারের কিছুটা সংকট থাকলেও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এখন পর্যন্ত যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে আগামী চার থেকে পাঁচ মাস চলা যাবে।’ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে আমদানি কমছে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে তিন হাজার ৭০৭ কোটি ডলারের রফতানি আয় হয়েছে, যা প্রতি মাসে গড়ে ৪৬৩ কোটি ডলার। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে গড়ে ৫২০ কোটি ডলার রফতানি হয়েছে। একই সময়ে বেড়েছে রেমিট্যান্স। ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় বেড়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ কোটি ডলার বেশি। গত মাসে দেশে এসেছে ১৫৬ কোটি ডলার। আগের মাস জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বরে এটি ছিল প্রায় ১৭০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) যাতে বৈধ পথে দেশে আসে-তা নিশ্চিত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে প্রবাসী আয়ে গতি বেড়েছে। সামনে রোজা ও দুটি ঈদ থাকায় রেমিট্যান্সের এই ধারা চলতি মার্চ ও এপ্রিলে অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
আমদানি ব্যয়
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সরবরাহ চেইন বিঘিœত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যমূল্যও বেড়ে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি বিল ৮২.৪৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি। যদিও চলতি অর্থবছরে আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গত অর্থবছরে যেখানে মাসে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল আসত, এ বছর তা কমে মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার আসছে। আমদানি কমাতে শতভাগ পর্যন্ত এলসি মার্জিন, বিলাসীপণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে আমদানি ব্যয় ২ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে তিন হাজার ৮১৩ কোটি ডলারে নেমেছে। এসবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। আর ব্যাংকারদের বক্তব্য হলো-কয়েক মাস আগে খোলা এলসিগুলোর বিপরীতে অর্থপ্রদানের বাধ্যবাধকতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর এখনও চাপ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন আগামী জুন পর্যন্ত বিদেশি ঋণের বিপরীতে বড় কোনও কিস্তি পরিশোধ নেই। ফলে আগামী মে মাস পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আশা, এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৩২ বিলিয়নে দাঁড়াবে। তবে আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ থেকে আকু পেমেন্ট বা এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) কাছে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এতে আগামী মে মাস পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে অবস্থায় আছে মার্চ শেষে প্রায় সেই অবস্থাতেই থাকবে। এপ্রিলে একটু বাড়তে পারে। তবে মে মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের কাছে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে এখন রিজার্ভ একটু একটু বাড়লেও মে শেষে ৩২ বিলিয়ন ডলারের আশপাশেই থাকবে। তিনি উল্লেখ করেন, এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি বাজার স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকবে।