ঢাকা ০৭:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না, আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট সময় : ০২:৪৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মার্চ ২০২৩
  • ১৫৪ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে বলে আবারো জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে আশ্রিত এই শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ আলোচনা শুরু করলেও মিয়ানমারের ইতিবাচক সাড়া না দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের দোহায় স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ৫ম জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। আল জাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্কের নেওয়া সাক্ষাতকারটির সংক্ষিপ্ত একটি অংশ সম্প্রচার করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি। পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি শনিবার বাংলাদেশ সময় ১০টায় প্রচার করা হবে। সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি এবং সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন। এই শরণার্থীরা যে নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত এবং মাদক ও মানবপাচারসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে তাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক অগ্নিকা- ও পরিস্থিতির বিষয়ে নিক ক্লার্কের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়ন শুরু হলে তারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়। সেখানে তখন অনেক কিছুই ঘটেছে।’
‘সত্যিকার অর্থে এটা আমাদের খুব খারাপ লেগেছিল। এরপর আমরা সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আসতে দিই। পাশাপাশি আমরা মানবিক দিক থেকে তাদের সকলের জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসা দিই।’
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের উদ্যোগের বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করি। মিয়ানমারকে বলি, রোহিঙ্গারা তোমাদের দেশের নাগরিক এবং তাদের ফিরিয়ে নেওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যক্রমে, তারা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। আমি মনে করি, এই লোকদের তাদের নিজেদের বাড়ি এবং দেশে ফিরে যাওয়া উচিত।’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সৃষ্টি করার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এটাকে কঠিন বলেও মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ যে নোয়াখালীর অদূরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বিকল্প আবাসন তৈরি করেছে সে বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের আলাদা জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ভাসান চর একটি ভালো জায়গা, থাকার জন্য ভালো জায়গা…আমরা সেখানে তাদের শিশুদের জন্য ভালো থাকার এবং চমৎকার সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’
বর্তমানে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অবস্থা যে খুব একটা ভালো নয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা নিজেরাই এখন একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। তারা মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচারের মতো অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত। এছাড়া তাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।’ বর্তমানে বিশ্বের নজর ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি খুবই কঠিন কারণ বিশ্বের মনোযোগ এখন ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং দেশটির উদ্বাস্তুদের দিকে।’
দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী: কাতারে জাতিসংঘের এলডিসি সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাসস জানিয়েছে, গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সফরসঙ্গীদের নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছান বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।
গত মঙ্গলবার কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর এ সম্মেলনে ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক একীভূতকরণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ শীর্ষক গোলটেবিলে বক্তব্য দেন তিনি। বক্তব্যে বাণিজ্য অবকাঠামো ও উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি অগ্রাধিকারমূলক বাজারে প্রবেশাধিকারকে কাজে লাগাতে স্বল্পোন্নত দেশের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
সোমবার দোহায় ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যবসায়িক সম্মেলনে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ফোরাম গঠনের আহ্বান জানান তিনি। কাতার সফরে দেশটির আামির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাদেশি কূটনীতিকদের অংশগ্রহণে আঞ্চলিক দূত সম্মেলনেও তিনি অংশ নেন। পাশাপাশি দোহায় বাংলাদেশ এমএইচ স্কুলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কাতারে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি ছিলেন।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না, আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০২:৪৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ মার্চ ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে বলে আবারো জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে আশ্রিত এই শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ আলোচনা শুরু করলেও মিয়ানমারের ইতিবাচক সাড়া না দেয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের দোহায় স্বল্পোন্নত দেশসমূহের ৫ম জাতিসংঘ সম্মেলনের ফাঁকে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। আল জাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্কের নেওয়া সাক্ষাতকারটির সংক্ষিপ্ত একটি অংশ সম্প্রচার করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি। পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি শনিবার বাংলাদেশ সময় ১০টায় প্রচার করা হবে। সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি এবং সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন। এই শরণার্থীরা যে নিজেরাই নিজেদের সঙ্গে সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত এবং মাদক ও মানবপাচারসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে তাও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক অগ্নিকা- ও পরিস্থিতির বিষয়ে নিক ক্লার্কের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়ন শুরু হলে তারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়। সেখানে তখন অনেক কিছুই ঘটেছে।’
‘সত্যিকার অর্থে এটা আমাদের খুব খারাপ লেগেছিল। এরপর আমরা সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আসতে দিই। পাশাপাশি আমরা মানবিক দিক থেকে তাদের সকলের জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসা দিই।’
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের উদ্যোগের বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করি। মিয়ানমারকে বলি, রোহিঙ্গারা তোমাদের দেশের নাগরিক এবং তাদের ফিরিয়ে নেওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যক্রমে, তারা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। আমি মনে করি, এই লোকদের তাদের নিজেদের বাড়ি এবং দেশে ফিরে যাওয়া উচিত।’ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ সৃষ্টি করার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এটাকে কঠিন বলেও মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ যে নোয়াখালীর অদূরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বিকল্প আবাসন তৈরি করেছে সে বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের আলাদা জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেছি। ভাসান চর একটি ভালো জায়গা, থাকার জন্য ভালো জায়গা…আমরা সেখানে তাদের শিশুদের জন্য ভালো থাকার এবং চমৎকার সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’
বর্তমানে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অবস্থা যে খুব একটা ভালো নয় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা নিজেরাই এখন একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। তারা মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচারের মতো অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত। এছাড়া তাদের নিজেদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।’ বর্তমানে বিশ্বের নজর ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি খুবই কঠিন কারণ বিশ্বের মনোযোগ এখন ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং দেশটির উদ্বাস্তুদের দিকে।’
দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী: কাতারে জাতিসংঘের এলডিসি সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাসস জানিয়েছে, গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সফরসঙ্গীদের নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিষয়ে পঞ্চম জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছান বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।
গত মঙ্গলবার কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (কিউএনসিসি) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর এ সম্মেলনে ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক একীভূতকরণে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি’ শীর্ষক গোলটেবিলে বক্তব্য দেন তিনি। বক্তব্যে বাণিজ্য অবকাঠামো ও উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তোলার পাশাপাশি অগ্রাধিকারমূলক বাজারে প্রবেশাধিকারকে কাজে লাগাতে স্বল্পোন্নত দেশের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
সোমবার দোহায় ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যবসায়িক সম্মেলনে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ফোরাম গঠনের আহ্বান জানান তিনি। কাতার সফরে দেশটির আামির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাদেশি কূটনীতিকদের অংশগ্রহণে আঞ্চলিক দূত সম্মেলনেও তিনি অংশ নেন। পাশাপাশি দোহায় বাংলাদেশ এমএইচ স্কুলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কাতারে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি ছিলেন।