নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত বনানী এবং গুলশান। এই দুইটি এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের কোনও স্টেশন নেই। অগ্নিকা-ের মতো ঘটনা ঘটলে আগুন নেভানোর জন্য পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে দমকল বাহিনী ছুটে যেতে হয়। আর যানজটসহ নানা কারণে দ্রুত পৌঁছাতে না পারলে অনেক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয় ভুক্তভোগীদের। এতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফায়ার স্টেশন না থাকার পেছনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) দায়ী করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অঞ্চলটিতে দেশি-বিদেশি সরকারি ও বেসরকারি অফিস-দফতর যেমন রয়েছে, তেমনি বসবাস করেন অনেক মানুষ। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পাশাপাশি বিদেশিরাও বসবাসের জন্য উপযুক্ত এবং নিরাপদ মনে করেন এই এলাকাটিকে। তাছাড়াও অনেক দেশের দূতাবাসের কার্যালয়ও এখানে। সবকিছু বিবেচনায় গুলশান-বনানী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নেওয়া হয়ে থাকে সবসময়ই। গুলশান-বনানীতে রয়েছে ডিএনসিসি মার্কেট। গুলশান-১ এর ডিএনসিসি মার্কেটটিতে গেলো কয়েক বছরে একাধিকবার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক সড়কের এফআর টাওয়ারে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকা-ে মুহূর্তেই ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই অগ্নিকা-ের ঘটনায় আহতও হয়েছেন শতাধিক মানুষ। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টা দিকে ২৩ তলা ভবনটির ৯ তলা থেকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ভয়াবহ ওই অগ্নিকা-ের ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা আজও প্রিয়জন হারানো ব্যথায় কাঁদছেন। ভুলতে পারছেন না বিয়োগব্যথা। ওই ঘটনায় উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীও মারা যান। দীর্ঘ পাঁচ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অব্স্থায় মারা যান তিনি। এছাড়াও প্রায়ই এ দুইটি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকা-ের ঘটছে।
ভয়াবহ এই অগ্নিকা-ের ঘটনার পর নগরীর বিভিন্ন ভবনে ‘অগ্নিকা-ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা বিভিন্ন ব্যানার লাগিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস। রাজউক, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচি ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়।
সবশেষ গত রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে গুলশান-২ নম্বরের ১০৪ নম্বর সড়কে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীত পাশে ২/এ হোল্ডিংয়ের ‘জাকির মোশাররফ স্কাইলেন’ নামে ১৩ তলা অত্যাধুনিক ভবনে আগুন লাগে। সম্মিলিত বাহিনীর প্রায় চার ঘণ্টা চেষ্টায় রাত ১১টার পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিন জনসহ বেশ কয়েকজন লাফিয়ে পড়ে আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আগুনে দগ্ধ ও লাফিয়ে পড়াদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভবনের বিভিন্ন তলা ও ছাদ থেকে ২২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়-থানায় আলাদা আলাদা ফায়ার স্টেশন রয়েছে। তবে এতো অগ্নিকা-ের ঘটনার পরও এখনো গুলশান-বনানীর মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে এখন কোনও ফায়ার স্টেশন চালু হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দুটিতে এতো অগ্নিকা-ের ঘটনার পর কেন এখনও কোনও ফায়ার স্টেশন হচ্ছে না জানতে চাইলে ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গুলশান ও বনানীতে জমি বরাদ্দ দেওয়ার মালিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ( রাজউক)। তারা যদি জায়গা বরাদ্দ না দেয় আমরা সেখানে কীভাবে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করবো। জায়গা বন্দোবস্ত না হওয়ায় এখানে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে না। স্টেশনের জন্য জায়গা বরাদ্দ পেলে দ্রুততার মধ্যে ফায়ার স্টেশন হবে।
এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গুলশান-বনানী এ দুইটি এলাকা কোনও বাণিজ্যিক এলাকা নয়, তারপরও বহু ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। বিশেষ করে সেখানকার ভবনগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা নেই। অগ্নিকা-ের জন্য যে পানি রিজার্ভ ট্যাংকি থাকার কথা, সেখানকার অধিকাংশ ভবনে সেই ব্যবস্থা নেই। বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকা-ের ঘটনার পর বিভিন্ন প্রদেক্ষেপ নিয়ে বিষয়ে স্থানীয়দের প্রত্যেককে আমরা সচেতন করেছি। তবে এখনও কোনও ফলাফল পাওয়া যায়নি। গতকাল রাতে গুলশানে-২ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও কিন্তু কোনও পানি পাওয়া যায়নি। আর সে কারণে গুলশান লেক থেকে আমাদের পানি নিয়ে আসতে হয়েছে। এইটা নিশ্চয়ই আমাদের কাজকে দীর্ঘায়িত করেছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়-উপজেলায় এখন ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। বনানী-গুলশানের মতো রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কেন এখনও ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন গড়ে ওঠেনি তা বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এ দুইটি এলাকায় যত দ্রুত সম্ভব ফায়ার সার্ভিসের স্টেশ চালু করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) বাবুল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় ফায়ার স্টেশন হোক। গুলশান-বনানীর পাশেই বারিধারা কুর্মিটোলা, তেজগাঁও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। গুলশান-বনানীতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে এই তিনটি এলাকার ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা ছুটে আসে। বর্তমানে এ দুইটি এলাকায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করার কোনও পরিকল্পনা আমার জানা মতে নেই। তবে যেখানে স্টেশন নেই, গ্যাপ রয়েছে সেগুলো পূরণ করা উচিত।’
গুলশান-বনানীতে নেই ফায়ার স্টেশন, রাজউককে দুষছেন মেয়র
ট্যাগস :
গুলশান-বনানীতে নেই ফায়ার স্টেশন
জনপ্রিয় সংবাদ




















