ঢাকা ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ঢাকার পথে রোগীরা

  • আপডেট সময় : ০১:১৪:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১
  • ৪৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : পিরোজপুর সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার মর্জিনা সুলতানা (৫৫)। হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রেফার করেন। গত বুধবার (৭ জুলাই) দুপুরে মর্জিনা সুলতানাকে পিরোজপুর থেকে ঢাকা মেডিক্যালের করোনা ইউনিটে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। এসব তথ্য জানিয়েছেন মর্জিনার মেয়ে সিনথিয়া শারমিন।
সাভারের নবীনগরের বাসিন্দা আসাদ মিয়ার স্ত্রী সালমা বেগম (৪০)। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বলে জানান তার ছেলে শিমুল। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে স্থানীয় ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায়, সেখানকার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে খুবই ভিড়। রোগী দেখাতে অনেক সময় লাগে। আবার ভর্তি করালে লকডাউনের মধ্যে বাসা থেকে যাতায়াতেও কষ্ট হবে। থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের অসুবিধার কথা ভেবেই মাকে বুধবার সকালে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে এসেছি। আমাদের আত্মীয়স্বজনও ঢাকায় থাকেন, এছাড়া এই হাসপাতালে সব ব্যবস্থা আছে।’
একইদিনে ঢাকা মেডিক্যালে এসেছেন টাঙ্গাইলের শফীপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেন (৫০)। তারও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে স্বজনরা প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢামেক হাসপাতালে রেফার করেন। একারণে অ্যাম্বুলেন্সে করে মকবুল হোসেনকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।
বুধবার ঢাকা মেডিক্যালের করোনা ইউনিট ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের জেলাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে একের পর এক রোগী আসছেন। আবার অনেক রোগী চিকিৎসা নিয়ে চলেও যাচ্ছেন।
ঢাকা মেডিক্যালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় অনেক রোগীরই আইসিইউ বেডের প্রয়োজন হয়, কিন্তু সিরিয়াল দিয়েও বেড না পেয়ে কেউ কেউ প্রাইভেট হাসপাতালে যাচ্ছেন। এমনই এক রোগীর মেয়ের সাথে কথা হয়। ওই রোগীর মেয়ে সুবর্ণা মোস্তফা জানান, তাদের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। করোনা উপসর্গ নিয়ে তার মাকে গত ২১ জুন ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করান। এখানে তার করোনা পজিটিভ ধরা পরে। চিকিৎসাধীন থাকাকালে তার মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে নেওয়ার কথা বলেন। সুবর্ণা মোস্তফা বলেন, ‘আমরা ঢামেকের আইসিইউতে সিরিয়াল দিয়ে দুই দিন অপেক্ষা করেও পাইনি। এখন বাধ্য হয়ে মাকে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।’
ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের করোনা ইউনিটে ভর্তির কাউন্টারে দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৩২ জন রোগী করোনা উপসর্গ ও করোনা পজিটিভ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের রোগীই বেশী। এছাড়া ঢাকা, পাবনা, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, সাভারসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী এসেছেন। কাউন্টারে কর্মরত হাসপাতালের এক স্টাফ নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ভর্তি বেশিরভাগ রোগীই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা। তিনি জানান, অনেক রোগীই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে আসলেও ভর্তির সময় তাদের ঠিকানা ব্যবহার করেন ঢাকায় থাকা আত্মীয়ের।
ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে করোনা পজিটিভ ও করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের জন্য আইসিইউ ও এইচডিইউসহ মোট ৭৮০টি বেড রয়েছে। বর্তমানে রোগীর চাপ খুবই বেশী। বুধবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি আছেন ৬৩০ জন।’ আইসিইউ বেডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢামেকে কোনও আইসিইউ বেড খালি নেই। কারণ, ভর্তি রোগীদের মধ্যে অনেকের আইসিইউর প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে একটি বেড ফাঁকা হলেই সিরিয়ালে থাকা এখানকার রোগীকে দেওয়া হয়।’ আশরাফুল আলম জানান, একটি বেডের জন্য অনেক রোগীর সিরিয়াল দেওয়া থাকে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আইসিইউতে আগুনে পুরে যাওয়া ওয়ার্ডে নতুন করে বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহ থেকে চালু করতে পারবো। সেক্ষেত্রে আইসিইউ বেডের সংকট কিছুটা হলেও কাটবে।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ঢাকার পথে রোগীরা

আপডেট সময় : ০১:১৪:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১

প্রত্যাশা ডেস্ক : পিরোজপুর সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার মর্জিনা সুলতানা (৫৫)। হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি ছিলেন। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রেফার করেন। গত বুধবার (৭ জুলাই) দুপুরে মর্জিনা সুলতানাকে পিরোজপুর থেকে ঢাকা মেডিক্যালের করোনা ইউনিটে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। এসব তথ্য জানিয়েছেন মর্জিনার মেয়ে সিনথিয়া শারমিন।
সাভারের নবীনগরের বাসিন্দা আসাদ মিয়ার স্ত্রী সালমা বেগম (৪০)। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন বলে জানান তার ছেলে শিমুল। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে স্থানীয় ডাক্তার দেখিয়েছি। কিন্তু অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায়, সেখানকার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে খুবই ভিড়। রোগী দেখাতে অনেক সময় লাগে। আবার ভর্তি করালে লকডাউনের মধ্যে বাসা থেকে যাতায়াতেও কষ্ট হবে। থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের অসুবিধার কথা ভেবেই মাকে বুধবার সকালে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে এসেছি। আমাদের আত্মীয়স্বজনও ঢাকায় থাকেন, এছাড়া এই হাসপাতালে সব ব্যবস্থা আছে।’
একইদিনে ঢাকা মেডিক্যালে এসেছেন টাঙ্গাইলের শফীপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেন (৫০)। তারও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে স্বজনরা প্রথমে তাকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢামেক হাসপাতালে রেফার করেন। একারণে অ্যাম্বুলেন্সে করে মকবুল হোসেনকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।
বুধবার ঢাকা মেডিক্যালের করোনা ইউনিট ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের জেলাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে একের পর এক রোগী আসছেন। আবার অনেক রোগী চিকিৎসা নিয়ে চলেও যাচ্ছেন।
ঢাকা মেডিক্যালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় অনেক রোগীরই আইসিইউ বেডের প্রয়োজন হয়, কিন্তু সিরিয়াল দিয়েও বেড না পেয়ে কেউ কেউ প্রাইভেট হাসপাতালে যাচ্ছেন। এমনই এক রোগীর মেয়ের সাথে কথা হয়। ওই রোগীর মেয়ে সুবর্ণা মোস্তফা জানান, তাদের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। করোনা উপসর্গ নিয়ে তার মাকে গত ২১ জুন ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করান। এখানে তার করোনা পজিটিভ ধরা পরে। চিকিৎসাধীন থাকাকালে তার মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে নেওয়ার কথা বলেন। সুবর্ণা মোস্তফা বলেন, ‘আমরা ঢামেকের আইসিইউতে সিরিয়াল দিয়ে দুই দিন অপেক্ষা করেও পাইনি। এখন বাধ্য হয়ে মাকে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।’
ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের করোনা ইউনিটে ভর্তির কাউন্টারে দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ৩২ জন রোগী করোনা উপসর্গ ও করোনা পজিটিভ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে মুন্সীগঞ্জের রোগীই বেশী। এছাড়া ঢাকা, পাবনা, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, সাভারসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী এসেছেন। কাউন্টারে কর্মরত হাসপাতালের এক স্টাফ নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ভর্তি বেশিরভাগ রোগীই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা। তিনি জানান, অনেক রোগীই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে আসলেও ভর্তির সময় তাদের ঠিকানা ব্যবহার করেন ঢাকায় থাকা আত্মীয়ের।
ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে করোনা পজিটিভ ও করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের জন্য আইসিইউ ও এইচডিইউসহ মোট ৭৮০টি বেড রয়েছে। বর্তমানে রোগীর চাপ খুবই বেশী। বুধবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি আছেন ৬৩০ জন।’ আইসিইউ বেডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢামেকে কোনও আইসিইউ বেড খালি নেই। কারণ, ভর্তি রোগীদের মধ্যে অনেকের আইসিইউর প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে একটি বেড ফাঁকা হলেই সিরিয়ালে থাকা এখানকার রোগীকে দেওয়া হয়।’ আশরাফুল আলম জানান, একটি বেডের জন্য অনেক রোগীর সিরিয়াল দেওয়া থাকে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আইসিইউতে আগুনে পুরে যাওয়া ওয়ার্ডে নতুন করে বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহ থেকে চালু করতে পারবো। সেক্ষেত্রে আইসিইউ বেডের সংকট কিছুটা হলেও কাটবে।’