ঢাকা ০৪:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

নগরে বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

  • আপডেট সময় : ১০:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার : রেশমা বেগম ঢাকার নাখালপাড়ায় থাকেন। বিভিন্ন বাসায় গৃহসহায়িকার কাজ করেন। কিছুদিন হলো তিনি মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভব করছেন। মাঝে মাঝে মাথা ব্যথার জন্য কাজে যেতে পারেন না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখানো তার জন্য সাশ্রয়ী, কিন্তু তিনি যাচ্ছেন না। কেন যাচ্ছেন না— জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে সারাদিন লাগে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়াতে হয়, চিকিৎসক ঠিক করে কথাও শোনেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন ভালো চিকিৎসক আছেন, যিনি কাছাকাছি একটা বেসরকারি হাসপাতালে চেম্বার করেন। তাকেই দেখাতে চাই। কিছু টাকা জমিয়েছি। এ মাসের টাকাটা পেলে তার (চিকিৎসক) কাছে যাব।’ রেশমা বেগমের মতে, টাকা কিছু বেশি লাগলেও বেসরকারি হাসপাতালের ওই চিকিৎসককে দেখানো ভালো। কারণ, তিনি সময় করে দেখে ওষুধ দেবেন। দ্রুত সুস্থ হয়ে যাব।
বেশির ভাগ সময় দেখা যায় চিকিৎসকরা চেম্বার করেন বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে লম্বা লাইন ধরতে হয় না। সময়ক্ষেপণও কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। নগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতি বছর গড়ে তিন শতাংশ এবং বস্তিতে প্রতি বছরে প্রায় সাত শতাংশ। যদি এ প্রবণতা অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি শহরাঞ্চলে বাস করবে
যেমনটি বলছিলেন রেশমা বেগম, বেশির ভাগ সময় দেখা যায় চিকিৎসকরা চেম্বার করেন বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে লম্বা লাইন ধরতে হয় না। সময়ক্ষেপণও কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। নগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতি বছর গড়ে তিন শতাংশ এবং বস্তিতে প্রতি বছরে প্রায় সাত শতাংশ। যদি এ প্রবণতা অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি শহরাঞ্চলে বাস করবে। [১]
বিশাল এ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব একা সরকারি হাসপাতালগুলোর পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা পূরণ করতে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যাদের আর্থিক সামর্থ্য কিছুটা ভালো তারা তো বটেই, যাদের সামর্থ্য তেমন নেই তারাও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান।
অন্যদিকে, সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা স্বল্প মূল্যে করানোর কথা থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় মেশিন নষ্ট। যারা সেখানে চিকিৎসা নিতে যান তাদের শারীরিক পরীক্ষা করাতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। সরকারি হাসপাতালের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে অর্থাৎ একই ছাতার নিচে সব সুবিধা পেতে মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছেন। [২]
আবার সরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যক্রম বেলা ২টা পর্যন্ত চলে। ফলে নির্ধারিত সময়ের পর কেউ অসুস্থ হলে তাকে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হয়। কখনও রোগীর অবস্থা খারাপ হলে অথবা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার প্রয়োজন হলে প্রায়ই সরকারি হাসপাতাল থেকে উন্নত স্বাস্থ্য সেবার জন্য অন্য হাসপাতালে যেতে বলা হয়।
ডেলিভারির ক্ষেত্রেও বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবহার বাড়ছে। ২০১৬ সালের মাতৃমৃত্যু জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০১ সালে মাত্র ২.৬ শতাংশ মায়ের ডেলিভারি হয়েছিল বেসরকারি হাসপাতালে যা ২০১০ সালে বেড়ে ১১.৩ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৬ সালে তা বেড়ে ২৯ শতাংশে উন্নীত হয়। [৩]
সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা স্বল্প মূল্যে করানোর কথা থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় মেশিন নষ্ট। যারা সেখানে চিকিৎসা নিতে যান তাদের শারীরিক পরীক্ষা করাতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। সরকারি হাসপাতালের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে অর্থাৎ একই ছাতার নিচে সব সুবিধা পেতে মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছেন
আধুনিক চিকিৎসা সেবার অনেক কিছুই এখন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে পাওয়া যায়। হৃদরোগের উন্নত ও সর্বাধুনিক চিকিৎসা এখন দেশেই হচ্ছে। এমন একটা সময় ছিল এনজিওগ্রামের মতো পরীক্ষা করতে রোগীকে বিদেশে যেতে হতো। শুধু হৃদরোগই নয় কিডনি প্রতিস্থাপন, হাঁটুর হাড়, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ইত্যাদি চিকিৎসা সেবা এখন দেশেই সম্ভব হচ্ছে।
অনেকে অভিযোগ করেন, সরকারি হাসপাতালগুলো অপরিষ্কার, দুর্গন্ধময় পরিবেশ, মশা-মাছির উপদ্রবও বেশি। এ কারণে সেখানে কম টাকায় রোগ সারাতে গিয়ে শরীরে অন্যান্য রোগের জীবাণু নিয়ে ফিরতে হচ্ছে।
বেসরকারি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রেও অভিযোগের পাল্লা কম ভারী নয়। সেবার মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। অনেক ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে সেখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন না। মাঝে মাঝে চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক আসেন জটিল রোগীর ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা খারাপ থাকলে এবং চিকিৎসক সময় মতো এসে না পৌঁছালে রোগীর মৃত্যু হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। অনেকে মনে করেন, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোর সেবা থেকে বাণিজ্যিক মানসিকতা বেশি। এ কথার যৌক্তিকতা অবশ্য আমরা অনুভব করি যখন পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালে দেখতে পাই, ‘সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় লাশ নামাতে দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ’। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অবশ্যই নিজেদের ভালোর জন্য এবং ভোক্তার ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার জন্য আরও ভালো মানের সেবা দিতে হবে। ব্যবসায়িক কৌশলের পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য সেবা এবং ভোক্তাদের সুবিধা যেমন রোগী-বান্ধব পরিষেবাগুলোর ওপর জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করে বেসরকারি খাতকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ দেওয়া, একই সঙ্গে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু লাভের কথা ভাবলে হবে না, দরিদ্র রোগীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থাও তাদের করতে হবে।
ব্যবসায়িক কৌশলের পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য সেবা এবং ভোক্তাদের সুবিধা যেমন রোগী-বান্ধব পরিষেবাগুলোর ওপর জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করে বেসরকারি খাতকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ দেওয়া, একই সঙ্গে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু লাভের কথা ভাবলে হবে না, দরিদ্র রোগীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থাও তাদের করতে হবে।
সেবার গুণগত মান বাড়াতে পুরষ্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব যেমন বাড়বে এবং সেবার মানও বাড়বে। স্বাস্থ্য খাতের তেমন কোনো সুফল বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পায় না। ফলে এ খাতে বিনিয়োগের উৎসাহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ) হতে পারে এর যথাযথ সমাধান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে চাহিদা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে যদি আর্থিক সহযোগিতা করা যায় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারবে।
লেখক : প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এমিনেন্স এসোসিয়েটস ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট; কনসালটেন্ট, ইউনিসেফ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নগরে বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

আপডেট সময় : ১০:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ডা. মো. শামীম হায়দার তালুকদার : রেশমা বেগম ঢাকার নাখালপাড়ায় থাকেন। বিভিন্ন বাসায় গৃহসহায়িকার কাজ করেন। কিছুদিন হলো তিনি মাথায় তীব্র ব্যথা অনুভব করছেন। মাঝে মাঝে মাথা ব্যথার জন্য কাজে যেতে পারেন না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখানো তার জন্য সাশ্রয়ী, কিন্তু তিনি যাচ্ছেন না। কেন যাচ্ছেন না— জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে সারাদিন লাগে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়াতে হয়, চিকিৎসক ঠিক করে কথাও শোনেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন ভালো চিকিৎসক আছেন, যিনি কাছাকাছি একটা বেসরকারি হাসপাতালে চেম্বার করেন। তাকেই দেখাতে চাই। কিছু টাকা জমিয়েছি। এ মাসের টাকাটা পেলে তার (চিকিৎসক) কাছে যাব।’ রেশমা বেগমের মতে, টাকা কিছু বেশি লাগলেও বেসরকারি হাসপাতালের ওই চিকিৎসককে দেখানো ভালো। কারণ, তিনি সময় করে দেখে ওষুধ দেবেন। দ্রুত সুস্থ হয়ে যাব।
বেশির ভাগ সময় দেখা যায় চিকিৎসকরা চেম্বার করেন বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে লম্বা লাইন ধরতে হয় না। সময়ক্ষেপণও কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। নগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতি বছর গড়ে তিন শতাংশ এবং বস্তিতে প্রতি বছরে প্রায় সাত শতাংশ। যদি এ প্রবণতা অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি শহরাঞ্চলে বাস করবে
যেমনটি বলছিলেন রেশমা বেগম, বেশির ভাগ সময় দেখা যায় চিকিৎসকরা চেম্বার করেন বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে লম্বা লাইন ধরতে হয় না। সময়ক্ষেপণও কম হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। নগরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রতি বছর গড়ে তিন শতাংশ এবং বস্তিতে প্রতি বছরে প্রায় সাত শতাংশ। যদি এ প্রবণতা অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি শহরাঞ্চলে বাস করবে। [১]
বিশাল এ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব একা সরকারি হাসপাতালগুলোর পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা পূরণ করতে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যাদের আর্থিক সামর্থ্য কিছুটা ভালো তারা তো বটেই, যাদের সামর্থ্য তেমন নেই তারাও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চান।
অন্যদিকে, সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা স্বল্প মূল্যে করানোর কথা থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় মেশিন নষ্ট। যারা সেখানে চিকিৎসা নিতে যান তাদের শারীরিক পরীক্ষা করাতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। সরকারি হাসপাতালের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে অর্থাৎ একই ছাতার নিচে সব সুবিধা পেতে মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছেন। [২]
আবার সরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যক্রম বেলা ২টা পর্যন্ত চলে। ফলে নির্ধারিত সময়ের পর কেউ অসুস্থ হলে তাকে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটতে হয়। কখনও রোগীর অবস্থা খারাপ হলে অথবা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার প্রয়োজন হলে প্রায়ই সরকারি হাসপাতাল থেকে উন্নত স্বাস্থ্য সেবার জন্য অন্য হাসপাতালে যেতে বলা হয়।
ডেলিভারির ক্ষেত্রেও বেসরকারি হাসপাতালের ব্যবহার বাড়ছে। ২০১৬ সালের মাতৃমৃত্যু জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০১ সালে মাত্র ২.৬ শতাংশ মায়ের ডেলিভারি হয়েছিল বেসরকারি হাসপাতালে যা ২০১০ সালে বেড়ে ১১.৩ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৬ সালে তা বেড়ে ২৯ শতাংশে উন্নীত হয়। [৩]
সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা স্বল্প মূল্যে করানোর কথা থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় মেশিন নষ্ট। যারা সেখানে চিকিৎসা নিতে যান তাদের শারীরিক পরীক্ষা করাতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। সরকারি হাসপাতালের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে অর্থাৎ একই ছাতার নিচে সব সুবিধা পেতে মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছেন
আধুনিক চিকিৎসা সেবার অনেক কিছুই এখন বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে পাওয়া যায়। হৃদরোগের উন্নত ও সর্বাধুনিক চিকিৎসা এখন দেশেই হচ্ছে। এমন একটা সময় ছিল এনজিওগ্রামের মতো পরীক্ষা করতে রোগীকে বিদেশে যেতে হতো। শুধু হৃদরোগই নয় কিডনি প্রতিস্থাপন, হাঁটুর হাড়, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন ইত্যাদি চিকিৎসা সেবা এখন দেশেই সম্ভব হচ্ছে।
অনেকে অভিযোগ করেন, সরকারি হাসপাতালগুলো অপরিষ্কার, দুর্গন্ধময় পরিবেশ, মশা-মাছির উপদ্রবও বেশি। এ কারণে সেখানে কম টাকায় রোগ সারাতে গিয়ে শরীরে অন্যান্য রোগের জীবাণু নিয়ে ফিরতে হচ্ছে।
বেসরকারি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রেও অভিযোগের পাল্লা কম ভারী নয়। সেবার মান নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। অনেক ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে সেখানে অভিজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন না। মাঝে মাঝে চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক আসেন জটিল রোগীর ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা খারাপ থাকলে এবং চিকিৎসক সময় মতো এসে না পৌঁছালে রোগীর মৃত্যু হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। অনেকে মনে করেন, বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোর সেবা থেকে বাণিজ্যিক মানসিকতা বেশি। এ কথার যৌক্তিকতা অবশ্য আমরা অনুভব করি যখন পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালে দেখতে পাই, ‘সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় লাশ নামাতে দিচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ’। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অবশ্যই নিজেদের ভালোর জন্য এবং ভোক্তার ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখার জন্য আরও ভালো মানের সেবা দিতে হবে। ব্যবসায়িক কৌশলের পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য সেবা এবং ভোক্তাদের সুবিধা যেমন রোগী-বান্ধব পরিষেবাগুলোর ওপর জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করে বেসরকারি খাতকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ দেওয়া, একই সঙ্গে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু লাভের কথা ভাবলে হবে না, দরিদ্র রোগীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থাও তাদের করতে হবে।
ব্যবসায়িক কৌশলের পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য সেবা এবং ভোক্তাদের সুবিধা যেমন রোগী-বান্ধব পরিষেবাগুলোর ওপর জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করে বেসরকারি খাতকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ দেওয়া, একই সঙ্গে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু লাভের কথা ভাবলে হবে না, দরিদ্র রোগীদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থাও তাদের করতে হবে।
সেবার গুণগত মান বাড়াতে পুরষ্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ফলে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব যেমন বাড়বে এবং সেবার মানও বাড়বে। স্বাস্থ্য খাতের তেমন কোনো সুফল বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পায় না। ফলে এ খাতে বিনিয়োগের উৎসাহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি (পিপিপিএ) হতে পারে এর যথাযথ সমাধান। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে চাহিদা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে যদি আর্থিক সহযোগিতা করা যায় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারবে।
লেখক : প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এমিনেন্স এসোসিয়েটস ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট; কনসালটেন্ট, ইউনিসেফ