ঢাকা ১১:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

তৃণমূলকে বয়কটের হুমকি মতুয়াদের

  • আপডেট সময় : ১২:৪৯:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ১৩০ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : মতুয়াদের আরাধ্য দেবতা হরিগুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম বিকৃতির প্রভাব পড়েছে এবার বিধানসভা ভোটে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভুল উচ্চারণের প্রতিবাদে তৃণমূলকে বয়কটের ডাক দিয়েছে ত্রিপুরার মতুয়ারা। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ জানিয়েছে, ত্রিপুরায় বসবাসরত মতুয়ারা তাদের আরাধ্য দেবতাকে অপমানের প্রতিবাদে চলতি মাসে অনুষ্ঠিত ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না।
ভারতের উত্তরপূর্বে বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরায় মোট জনসংখ্যার ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ তফশিলি সম্প্রদায়ের মানুষ। এর মধ্যে অধিকাংশ মতুয়া। ত্রিপুরায় বাঙালি-আদিবাসী ভোটাররা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর নজরে রয়েছে মতুয়া ভোটব্যাংক। রাজ্যের মতুয়া ভোট এখনও কার্যত শাসক দল বিজেপির দখলে। গত পুরভোটে ওই ভোটব্যাংকে থাবা বসাতে চাইলেও সফলতা পায়নি তৃণমূল। রাজ্যে মতুয়া ভোটারের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। ত্রিপুরা বিধানসভার মোট ৬০টি আসনের মধ্যে তপশিলি আসন ১০ টি। আসনগুলোর মধ্যে ২০১৮ এর বিধানসভা ভোটে বামুটিয়া, বড়জোলা, প্রতাপগড়, বাধারঘাট, নলছড়, সুরমা, পাবিয়াছড়া আর ফটিকরায় ৮টি আসন পেয়েছিল বিজেপি।
কাকড়াবন-শালগড়া ও রাজনগর এই ২টি আসন পেয়েছিল সিপিএম। এরমধ্যে মতুয়া অধ্যুষিত কাকড়াবন-শালগড়া, বামুটিয়া, বড়জলা, প্রতাপগড়, সুরমা, পাবিয়াছড়া ও ফটিকরায়। তৃণমূল কংগ্রেস ২০১৮ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ২৪ আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র ৬ হাজার ৮০৮টি (০.৩ শতাংশ) ভোট পেয়ে সবকটি আসন জামানত খুয়েছিল। এবার তারা ২৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে তপশিলি সংরক্ষিত আসন সুরমা, নলছড়, প্রতাপগড় ও বামুটিয়া। যার মধ্যে মতুয়া অধ্যুষিত সুরমা, প্রতাপগড় ও বামুটিয়া বিধানসভা। কিন্তু তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের জন্য ৩৭ তারকা প্রচারকের নাম রয়েছে তাতে বনগাঁর সাবেক সাংসদ ঠাকুর পরিবারের সদস্য মমতাবালা ঠাকুর বা নমশুদ্র উন্নয়ণ পর্ষদের চেয়ারম্যান মুকুল বৈরাগ্যের নাম নেই। অথচ, ত্রিপুরার পৌরসভা ভোটে নমশুদ্র উন্নয়ণ পর্ষদের চেয়ারম্যান মুকুল বৈরাগ্যে বাংলা থেকে এসে মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় প্রচার করেছিলেন তৃণমূলের পক্ষে।
অপরদিকে, বিজেপির পক্ষ থেকে প্রচারে নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া অধ্যুষিত বিধানসভা কল্যানীর বিধায়ক অম্বিকা রায়। এ ছাড়াও মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকেও বিজেপিকে ভোট দিতে প্রচার চালানো হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, প্রচারণায় আসতে পারেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও। বিধায়ক অম্বিকা রায়ের দাবি, ‘তৃণমূল এখানে কোনো বিষয় নয়। বিজেপিই ফের ক্ষমতায় আসছে। তারওপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমাদের আরাধ্য দেবতা হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামের বিকৃতি উচ্চারণ করে আমাদের অপমান করেছেন, তাতে একজন মতুয়াও তৃণমূলকে ভোট দেবে না। এবারও সব আসনে জামানত চলে যাওয়া সম্ভবনা রয়েছে তৃণমূলের।’
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদক প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘বামেরা চিরকালই আমাদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করেছে। ওই আমলে প্রচুর জাল এসটি প্রশংসাপত্র বানিয়ে অনেকেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। আর তারাই সরকার চালিয়েছে। কেন্দ্র বা রাজ্যে সব উন্নয়ন থেকে প্রকৃত তপশিলিরা বঞ্চিত হয়েছে। নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদের এখানে তেমন কোনো প্রভাব নেই। আসলে এখানে সিপিএম তলায় তলায় তৃণমূল হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের আরাধ্য দেবতার নামকে কলুষিত করেছেন। এরজন্য ত্রিপুরায় মতুয়া ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। এখনও তিনি এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চাননি। এই ঘটনার প্রতিবাদে আমরা আসন্ন বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে বয়কটের ডাক দিয়েছি। ত্রিপুরার রাজবাসী সহ-মতুয়া সম্প্রদায় তৃণমূল কংগ্রেসকে কখনও গ্রহণ করবেন না।’ প্রকাশ আরও বলেন, ‘ত্রিপুরায় তপশিলি সম্প্রদায়ের মধ্যে মতুয়াদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ বিধানসভা পাবিয়াছড়া ৩৬ হাজার, সুরমা ২৪ হাজার, বামুটিয়া ২১ হাজার, কাকড়া-শালমারা ১ হাজার ৭৬০,বড়জলা ১৬ হাজার ৩০০ মতুয়া ভোটার রয়েছেন। মতুয়া অধ্যুষিত সুরমা, প্রতাপগড় ও বামুটিয়া বিধানসভায় প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। লাভ নেই। গোটা ত্রিপুরায় মতুয়া ভোট এবার তৃণমূলের বিপক্ষে পড়বে। আর ঠাকুরবাড়ির মমতা ঠাকুর বা মুকুল বৈরাগ্যরা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যর পর কী করে ভোট চাইতে আসবেন ত্রিপুরারা মতুয়াদের কাছে? এটা ভেবেই তারা হয়তো আসতে সাহস করছেন না।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

তৃণমূলকে বয়কটের হুমকি মতুয়াদের

আপডেট সময় : ১২:৪৯:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

প্রত্যাশা ডেস্ক : মতুয়াদের আরাধ্য দেবতা হরিগুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম বিকৃতির প্রভাব পড়েছে এবার বিধানসভা ভোটে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভুল উচ্চারণের প্রতিবাদে তৃণমূলকে বয়কটের ডাক দিয়েছে ত্রিপুরার মতুয়ারা। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ জানিয়েছে, ত্রিপুরায় বসবাসরত মতুয়ারা তাদের আরাধ্য দেবতাকে অপমানের প্রতিবাদে চলতি মাসে অনুষ্ঠিত ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না।
ভারতের উত্তরপূর্বে বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরায় মোট জনসংখ্যার ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ তফশিলি সম্প্রদায়ের মানুষ। এর মধ্যে অধিকাংশ মতুয়া। ত্রিপুরায় বাঙালি-আদিবাসী ভোটাররা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর নজরে রয়েছে মতুয়া ভোটব্যাংক। রাজ্যের মতুয়া ভোট এখনও কার্যত শাসক দল বিজেপির দখলে। গত পুরভোটে ওই ভোটব্যাংকে থাবা বসাতে চাইলেও সফলতা পায়নি তৃণমূল। রাজ্যে মতুয়া ভোটারের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। ত্রিপুরা বিধানসভার মোট ৬০টি আসনের মধ্যে তপশিলি আসন ১০ টি। আসনগুলোর মধ্যে ২০১৮ এর বিধানসভা ভোটে বামুটিয়া, বড়জোলা, প্রতাপগড়, বাধারঘাট, নলছড়, সুরমা, পাবিয়াছড়া আর ফটিকরায় ৮টি আসন পেয়েছিল বিজেপি।
কাকড়াবন-শালগড়া ও রাজনগর এই ২টি আসন পেয়েছিল সিপিএম। এরমধ্যে মতুয়া অধ্যুষিত কাকড়াবন-শালগড়া, বামুটিয়া, বড়জলা, প্রতাপগড়, সুরমা, পাবিয়াছড়া ও ফটিকরায়। তৃণমূল কংগ্রেস ২০১৮ সালে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে ২৪ আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র ৬ হাজার ৮০৮টি (০.৩ শতাংশ) ভোট পেয়ে সবকটি আসন জামানত খুয়েছিল। এবার তারা ২৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে তপশিলি সংরক্ষিত আসন সুরমা, নলছড়, প্রতাপগড় ও বামুটিয়া। যার মধ্যে মতুয়া অধ্যুষিত সুরমা, প্রতাপগড় ও বামুটিয়া বিধানসভা। কিন্তু তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের জন্য ৩৭ তারকা প্রচারকের নাম রয়েছে তাতে বনগাঁর সাবেক সাংসদ ঠাকুর পরিবারের সদস্য মমতাবালা ঠাকুর বা নমশুদ্র উন্নয়ণ পর্ষদের চেয়ারম্যান মুকুল বৈরাগ্যের নাম নেই। অথচ, ত্রিপুরার পৌরসভা ভোটে নমশুদ্র উন্নয়ণ পর্ষদের চেয়ারম্যান মুকুল বৈরাগ্যে বাংলা থেকে এসে মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় প্রচার করেছিলেন তৃণমূলের পক্ষে।
অপরদিকে, বিজেপির পক্ষ থেকে প্রচারে নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া অধ্যুষিত বিধানসভা কল্যানীর বিধায়ক অম্বিকা রায়। এ ছাড়াও মতুয়া মহাসংঘের পক্ষ থেকেও বিজেপিকে ভোট দিতে প্রচার চালানো হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, প্রচারণায় আসতে পারেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরও। বিধায়ক অম্বিকা রায়ের দাবি, ‘তৃণমূল এখানে কোনো বিষয় নয়। বিজেপিই ফের ক্ষমতায় আসছে। তারওপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমাদের আরাধ্য দেবতা হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামের বিকৃতি উচ্চারণ করে আমাদের অপমান করেছেন, তাতে একজন মতুয়াও তৃণমূলকে ভোট দেবে না। এবারও সব আসনে জামানত চলে যাওয়া সম্ভবনা রয়েছে তৃণমূলের।’
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের ত্রিপুরার রাজ্য সম্পাদক প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘বামেরা চিরকালই আমাদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করেছে। ওই আমলে প্রচুর জাল এসটি প্রশংসাপত্র বানিয়ে অনেকেই সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। আর তারাই সরকার চালিয়েছে। কেন্দ্র বা রাজ্যে সব উন্নয়ন থেকে প্রকৃত তপশিলিরা বঞ্চিত হয়েছে। নমঃশূদ্র বিকাশ পরিষদের এখানে তেমন কোনো প্রভাব নেই। আসলে এখানে সিপিএম তলায় তলায় তৃণমূল হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের আরাধ্য দেবতার নামকে কলুষিত করেছেন। এরজন্য ত্রিপুরায় মতুয়া ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। এখনও তিনি এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চাননি। এই ঘটনার প্রতিবাদে আমরা আসন্ন বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে বয়কটের ডাক দিয়েছি। ত্রিপুরার রাজবাসী সহ-মতুয়া সম্প্রদায় তৃণমূল কংগ্রেসকে কখনও গ্রহণ করবেন না।’ প্রকাশ আরও বলেন, ‘ত্রিপুরায় তপশিলি সম্প্রদায়ের মধ্যে মতুয়াদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ বিধানসভা পাবিয়াছড়া ৩৬ হাজার, সুরমা ২৪ হাজার, বামুটিয়া ২১ হাজার, কাকড়া-শালমারা ১ হাজার ৭৬০,বড়জলা ১৬ হাজার ৩০০ মতুয়া ভোটার রয়েছেন। মতুয়া অধ্যুষিত সুরমা, প্রতাপগড় ও বামুটিয়া বিধানসভায় প্রার্থী দিয়েছে তৃণমূল। লাভ নেই। গোটা ত্রিপুরায় মতুয়া ভোট এবার তৃণমূলের বিপক্ষে পড়বে। আর ঠাকুরবাড়ির মমতা ঠাকুর বা মুকুল বৈরাগ্যরা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যর পর কী করে ভোট চাইতে আসবেন ত্রিপুরারা মতুয়াদের কাছে? এটা ভেবেই তারা হয়তো আসতে সাহস করছেন না।’